![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তার জীবনের দ্বিতীয় চিত্র যা আমাদের জন্য বর্ণনা করেছেন তাবারী তুফায়েল ইবনে মিরদাস এর সুত্রে, তিনি বলেন-
আমিরুল মুমিনীন উমর ইবনে আব্দুল আযীয যখন খেলাফতের( শাসন পরিচালনার)দায়িত্ব পেলেন, তখন মধ্য এশিয়ার ছুগুদ অন্চলের গভর্ণর সুলাইমান ইবনে আবি সারীর এর নিকট এক চিঠিতে নির্দেশ দিলেন-
' তোমার অন্চলের মুসলিম পথিকদের সেবা ও অপ্যায়নের উদ্দেশ্যে কয়েকটি পান্থশালা তৈরি কর। কেও সেখানে এলে একরাত একদিন তার মেহমানদারী করবে, তার সমস্যার সামধান করবে, তার বাহনের পরিচর্যা করবে।
যদি কেও ক্লান্তি ও কষ্টের কথা বলে তবে দুইদিন দুইরাত তার বিশ্রামের ব্যাবস্থা করবে।
তার প্রতি সহমর্মিতা দেখাবে আর তাকে সাহায্য সহযোগিতা করবে।
আর এমন কেও যদি আসে যার কাছে নেই কোন খাবার, নেই কিছু পাথেয় ও পথচলার বাহন, তবে তাকে প্রয়োজন পরিমান অর্থ ও খাবার দিবে। শেষে তাকে নিজের ঠিকানায় পোছে দেবার ব্যবস্থা করবে।'
গভর্ণর আমীরুল মুমিনীনের এই নির্দেশ প্রধান প্রধান শহর গুলিতে জানিয়ে দিলেন। নির্দেশ মোতাবেক বেশ কয়েকটি সরকারী পন্থশালা তৈরী হল। অতি দ্রুত এই খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। বিষয়টি ইসলামী জনপদের পূর্ব ও পশ্চিমে মুখে মুখে আলোচিত হতে লাগল। খলীফার ন্যায়্বিচার ও পরহেযগারীর অকুন্ঠ প্রশংসা হতে থাকল।
অপরদিকে সামারকন্দ অধিবাসীদের একটি প্রতিনিধী দল গভর্ণর সুলাইমানের দরবারে হাজির হল।
তারা বললেন-
' আপনার পূর্বসুরী কুতাইবা ইবনে মুসলিম আল বাহেলী কোন হুশিয়ারী ছাড়াই আচমকা আমাদের দেশ দখল করে নিয়েছেন। মুসলিম জাতীর যুদ্ধনীতির বিরুদ্ধে আমাদের সংগে লড়ায় করেছেন।
কারণ আমরা জেনেছি যে, আপনারা শত্রুদেরকে প্রথমে ইসলাম গ্রহনের আহব্বান করে থাকেন।
এ আহব্বান প্রত্যাখ্যান করলে আপনারা ইসলামী সরকারকে কর প্রদান করতে( ইসলামী সরকার অমুসলিম নাগরিকদের কর গ্রহণের মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দান করে) আহব্বান জানান।
এটাও অস্বীকার করলে অবশেষে ইসলামী সেনাদল লড়াইয়ের ঘোষণা দেয়।
আপনাদের খলিফার অনন্য ন্যায় বিচার আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছে আপনাদের সৈনিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আপনার দরবারে উথ্থাপন করতে। আর মুসলিম সেনাপতি কর্তৃক আমাদের প্রতি কৃত জবরদস্তির ব্যাপারে আপনাদের কাছে সুবিচার চাইতে।
মাননীয় গভর্ণর! আপনাদের খলীফার দরবারে আমাদেরকে যাওয়ার এবং তার কাছে ফরিয়াদ জানানোর অনুমতি দিন। কিছু প্রাপ্য যদি আমাদের হয় তবে তিনি আমাদের নিশ্চয়তা প্র্দান করবেন। না হলে আমরা ফিরে আসবো।'
গভর্ণর সুলাইমান প্রতিনিধিদলকে খলীফার দরবারে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করলেন। তারা গিয়ে খলীফার কাছে তাদের অর্জি পেশ করলেন।
উমর ইবনে আব্দুল আযীয মনোযোগ দিয়ে তাদের সব কথা শুনলেন।
অতঃ পর গভর্ণর সুলাইমানের নিকট লিখলেন--
'.… অতঃ পর আমার এই পত্র তোমার হাতে পোছা মাত্রই একজন বিজ্ঞ বিচারক পাঠিয়ে দিবে সামরকন্দে তাদের অভিযোগ তদন্তের উদ্দেশ্যে.…
বিচারকের ফায়্সালা যদি তাদের পক্ষে হয়, তবে মুসলিম সেনাবাহীনিকে তাৎক্ষণিক নির্দেশ দিবে ওদের শহর ছেড়ে সেনা ছাউনিতে ফিরে আসতে।
ওদের শহরে যে সকল মুসলিম বসবাস করা শুরু করেছে ওদের পরিস্কার ভাষায় জানিয়ে দিবে-- কুতাইবা ইবনে মুসলিম আল বাহেলী ঐ জনপদে প্রবেশের পূর্বে ওরা যেভাবে ছিল সেভাবেই থাকবে, তোমরা যেখানে ছিলে সেখানে ফিরে যাবে।'
এই প্রতিনিধী দল যখন ফিরে এসে গভর্ণর সুলাইমানের হাতে আমীরুল মুমিনীনের চিঠি হস্তান্তর করলেন। তিনি অতি দ্রুত প্রধান বিচারপতি জুমাই ইবনে হাজের আস সনাজীকে তদন্তের দায়িত্ব অর্পন করলেন।
বিচারপতি তাদের অভিযোগ গুলো লিখলেন। ঘভীরভাবে পর্যালোচনা করলেন। তিনি ব্যাপকভাবে তদন্তকাজ পরিচালোনা করলেন।
একদল সেনা সদস্য ও সেনা অফিসারদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করলেন। সৈনিকদের বিরুদ্ধ্যে রাই প্রদান করলেন।
এই রায় পেয়ে গভর্ণর সংগে সংগে মুসলিম সৈনিকদের নির্দেশ পাঠালেন তারা দ্রুত সমরকন্দ ছেড়ে সেনা ছাউনিতে ফিরে আসার জন্য। এবং ঐ অন্চল ছেড়ে আসার পর পুনরাই প্রবেশ করতে হলে তাদেরকে হয়তো নতুন করে যুদ্ধ জয় করতে হবে অথবা তাদের সংগে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হবে, নতুবা ঐ অন্চল তারা জয় করেছে বলে বিবেচিত হবে না।
সে অন্চলের নেতৃবৃন্দ যখন মুসলিম বিচারপতির তাদের পক্ষের ঘোষনা করার কথা জানতে পারলেন, তখন তারা একে অপরকে তিরস্কার করে বলতে লাগলো--
' হায় রে কপাল পোড়ার দল! এমন ন্যায় নিষ্ঠ জাতির সংগে বসবাসের সুবর্ণ সুযোগ তোমাদের কপালে জুটেছিল। যাদের নিষ্কুলুষ চরিত্র, সার্বজনীন ন্যায় বিচার আর সততা তোমরা প্রত্যেক্ষ করেছ। এখনো সময় আছে তাদেরকে তোমরা নিজেদের সংগে থাকতে দাও। জীবনে শান্তি পাবে। পাবে সামাজিক নিরাপত্তা ।'
( চলবে..…)
©somewhere in net ltd.