![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাননীয় আদালত !
যখন কোন সরস্বতী পূজোর মন্ডপে দাঁড়িয়ে কিশোর ছেলেটি
গাঢ় স্বরে আবৃত্তি করে যায় জীবনানন্দ দাশের প্রেমের কবিতা
‘১৩৩৩’ :
‘আমারে চাও না তুমি আজ আর, জানি;
তোমার শরীর ছানি
মিটায় পিপাসা
কে সে আজ !- তোমার রক্তের ভালবাসা
দিয়েছ কাহারে !
কে বা সেই- ...’
আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়, “না-----,
এ কবিতা জীবনানন্দের নয়, এটি আমার কবিতা !
এ কবিতা আমার লেখার কথা ছিল,
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়ঃ জীবনানন্দ দাশ !
আপনি জানেন না-, আপনি একজন তরুন কবির নির্মম হত্যাকারী ।
শুধু তিনি নন মাননীয় আদালত !
এমন অসংখ্য-অসংখ্য কবিতা আমায় পীড়া দেয়,
আমি জীবনের গভীরতম বিষাদ ভরে লিখেছিলাম, ‘এই দ্যাখো !
আমার দুহাতে আগুন, এখন আমি সমুদ্র পোড়াতে যাবো’,
রুদ্র গোস্বামী পড়বার আগ পর্যন্ত আমি বুঝতেই পারিনি
ও কবিতা আমি লিখলেও- ‘কবি’ রীতিমতো অন্য কেউ !
বিশ্বাস করুন মাননীয় আদালত,
আমি বুঝতেই পারিনি !
যখন, “জাম আর জামরুলের পাতায়
অজস্র জোনাকী পোকার দল ভালবাসা-
প্রেম ফেরি করে...”, লিখে তৃপ্তি নিয়ে লেপমুড়ি-ঘুমুতে গিয়েছি
গভীর রাতে ঘুম ভাঙিয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রজ্ঞাপন জারি করে
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর “অমলকান্তি”:
“জাম-জামরুল পদ আমি লিখে গেছি ঢের আগে
ঢের ঢের আগে-
এই পদ নিয়ে তুমি লিখতে পারো না !”
আমার চোখে জল আসে মাননীয় আদালত ...
আমি এই ভরা কোর্টরুমে দাঁড়িয়ে কি করে বলি,
অমলকান্তিও একজন কবির হত্যাকারী
যে হয়তো একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল...
তবু সে আজ হত্যাকারী বটে !
আমি কি করে বলি,
“আজ আমি কাঁদতে আসিনি,
একজন কবি-হত্যার বিচার চাইতে এসেছি”
এই ক্ষুদ্র বাক্যটি বলতেও আমার ভয় হয়,
পাছে ওরা বলেঃ
আমি মাহবুব উল আলম চৌধুরীর কবিতার পংক্তি চুরি করে এনেছি !
তবু আজ সাহস করে বলে ফেলছিঃ
“ধৈর্য ধরে থেকেছি বহুদিন...
আজ আর নয়, আর নয় !”
যদিও জানি আল মাহমুদের নাম করবেন আপনিও মাননীয় আদালত !
কিন্তু আপনাকে তার আগেই জানিয়ে রাখতে চাই,
এই কবিতাটিও আমারই লিখবার কথা ছিল !
মাননীয় আদালত !
আজ আমায় সত্যিই বাধ্য হয়ে এই বিচারসভায় দাঁড়াতে হয়েছে
কি করবো বলুন ?
যখন আমার প্রেমিকার একটি কথার দ্বিধাথরথর চূড়ে
ভর করেছিল সাতটি অমরাবতী,
সেদিনকেও সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
তাকে নিয়ে আমায় কোন কবিতা লিখতে দেয়নি !
তার পাশে শুয়ে হাত ছুঁয়ে বলতে দেয় নি বুদ্ধদেব বসুঃ
“শুয়ে শুয়ে মোরা দেখবো আকাশ, আকাশ মস্ত বড়ো
পৃথিবীর যত নীল রঙ সব সেখানে করেছে জড়ো...”
তার চোখে চোখ রেখে
নতুন করে বলবার সুযোগ রাখেন নি কবি কাজী নজরুলঃ
“তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় ...”
শুধুমাত্র অমিয় চক্রবর্তীর কারনে
তাকে কখনো আমি ‘অতন্দ্রিলা’ বলে ডাকতে পারিনি !
কখনো তার উদ্দেশ্যে লিখতে পারিনি, “কথা আছে
ঢের কথা আছে...”
সেটি সম্ভবতঃ নীরার জন্যে লিখে গিয়েছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় !
প্রেমিকাকে গভীরভাবে জড়িয়ে যেবার বললেম,
“পাগলী ! তোমার সঙ্গে ‘কী মিথ্যুক’ কাটাবো জীবন !”
সে চোখ পাল্টে বলেছিল মনে আছে, ‘জয় গোস্বামী ?’
কতটা কষ্টের শংখনীল কারাগারে আটকা পরেছিলাম সেদিন,
ভাবতে পারেন মাননীয় আদালত ?
পারেন না, পারবেন না...
কারন আপনার মাথায়ও গেঁথে আছে রফিক আজাদের মতন
সুবিখ্যাত কবির নাম !
আমার প্রেমিকা আমায় ছেড়ে চলে যায়
সেকথা কাওকে আমি জানতে দেই না...
এই যাহ !
আবার অরুন মিত্র চলে এলো,
নতুবা এই কবিতাটিও আমি লিখে ফেলতাম ও চলে যাবার পরপর
কোন একদিন; প্রেমেন্দ্র মিত্রের “তারপরও কথা থাকে” অথবা পুর্ণেন্দু পত্রীঃ
“একান্তে যার হাসির কথা হাসে নি
যে টেলিফোন আসার কথা আসে নি...”
মাননীয় আদালত ! ও আমায় ভুলে যায়,
আমি শুধুমাত্র শামসুর রহমানের কারনে লিখতে পারি নাঃ
“তুমি আমাকে ভুলে যাবে আমি ভাবতেই পারি না...”
অভিমান নিয়ে এতোটুকুও পর্যন্ত লিখতে পারি নিঃ
“আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেও, আপত্তি নেই...
গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কি তাতে ?
আমি নাহয় ভালবেসেই ভুল করেছি, ভুল করেছি
নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে
পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কি আসে যায় ?
এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে ?
এক মানবী কতোটা আর কষ্ট দেবে ?”
আমায় লিখতে দেন না হেলাল হাফিজ !
মাননীয় আদালত ! অপদার্থ কবি-মন এটুকুও লিখতে পারে নাঃ
‘আমি আজ সব প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দী হবো ...’
কারন আবুল হাসান
এতোটুকুও ছেড়ে যায় নি আমার জন্যে স্থান
বৃথাই সুকান্ত চিৎকার করেছিল,
‘এসেছে নতুন শিশু তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান...’
কবি !
আপনি মিথ্যেবাদী -
আমার জন্যে আপনিও কোন কবিতার স্থান ফাঁকা রেখে যান নি
কারন, আমি জানি, কিছুমাত্র আগে জন্ম নিলে কবিদের মিছিলে
এই কবিতাটিও আমারই লিখবার কথা ছিল ...
মাননীয় আদালত !
সবথেকে কষ্ট হয় যখন “অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ”
কবিতার বিকল্পও বাঁচে না, লিখে রেখে যান স্পষ্টবাদী হুমায়ূন আজাদঃ
‘আমি জানি সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে...’
তারপরও মহামান্য আদালত !
তারপরও প্রধান আসামী হিসেবে আমি রবীন্দ্রনাথকে কাঠগড়ায় চাইঃ
“প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস
তোমার চোখে দেখেছিলেম আমার সর্বনাশ...’
‘ভালবেসে যদি সুখ নাহি...’
‘ভালবেসে সখী নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখো।
তোমার মনের মন্দিরে...’
আরও কত কত কবিতার নাম করবো !
আমি বিশ্বাস করি তিনি শুধু আমার নন,
ভূ-ভারতের আরও সহস্র কবির হত্যাকারী-
তিনি তার কবিতা উইথড্র করে নিলে
হয়তোবা কবি হতেন আরও সাড়ে সাত হাজার বাঙালি !
মাননীয় আদালত ! আমি অপটিমিস্ট; তাই-
শেষ পর্যন্তও আশা নিয়ে লিখতে বসেছিলাম এই শিরোনামে কবিতাঃ
‘রবীন্দ্রনাথ, তোমার কবিতা উইথড্র করো !’
কিন্তু হায় !
আজ দুপুরের লিটল ম্যাগাজিন খুলে দেখি
এক শিরোনামে একই কবিতা লিখে রেখে গেছেন
কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ !
মাননীয় আদালত !
আমি কি এরপরও বিচার চাইতে আসতে পারি না ?
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৫
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ !
২| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৫
স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: মাননীয় আদালত !
দ্রোহের কবিতা নাকি , কিছু জায়গায় দেখলাম আগুন ঝড়ে !
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৮
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: এই দ্যাখো !
আমার দুহাতে আগুন, এখন আমি সমুদ্র পোড়াতে যাবো
৩| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৪
হাসান মাহবুব বলেছেন: থিমটা চমৎকার। মাঝেমাঝে আমারও এমন মনে হয়।
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৯
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই !
৪| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫৬
সুমন কর বলেছেন: মাননীয় আদালত !
কবিতাটি অনেক সুন্দর হয়েছে; তাড়াতাড়ি রায় দিল।
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪০
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন:
৫| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০০
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: কবি হত্যার আবার বিচার। কবিতা অনেকের মতে নাথিং বাট ইভ টিজিং। কি বলবো সমাজ কবি হত্যা করে ।
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪১
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: // সমাজ কবি হত্যা করে--- //
যথার্থ বলেছেন ।
৬| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৩
বোধহীন স্বপ্ন বলেছেন:
ভালো লেগেছে । কবির এত আক্ষেপ!!!
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৪
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন:
৭| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৮
অ্যানোনিমাস বলেছেন: সুন্দর
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৫
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ ।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:২০
মামুন রশিদ বলেছেন: সুন্দর ।