![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার লেখা ‘ত্রয়ী’ গল্পের একটা জায়গা এমন ছিলঃ
“সুবর্ণার কোলে ফুটফুটে একটা মেয়ে । আট-ন’ বছর বয়স অথচ কি বিশাল চুল ! দুপাশে বেনী করে ঝুলিয়ে রেখেছে । এতো মায়া লাগলো দেখে... । আমি সাধারনত বাচ্চাদের কোলে নেই না । ঐদিন নিলাম ।”
একজন গল্পকার সবটা কল্পনা থেকে আনতে পারে না । গল্পকারের কল্পনার বৃত্ত সবসময়ই তার দেখা ভুবনের পরিধি ছুঁয়ে যায় । কখনো বেশি কখনো কম । ‘ত্রয়ী’ গল্পের এই বাচ্চা মেয়েটিকে আমি দেখেছিলাম । ভেরোনিকা ফুলের মতন শঙ্খশাদা মুখ । মাথাভর্তি চুল, সেই চুল নেমে এসেছে হাঁটু ভেঙে ! দেখে মনে হল- আরে ! এই বাচ্চা মেয়েটি তো রূপাঞ্জেল ! ‘ট্যাঙ্গেলড্’ ছবি তখনও হলিউডে আসে নি । আমি রূপাঞ্জেলকে চিনি রূপকথার ‘কেশবতী রাজকন্যা’ নামে । তার প্রতি আমার গভীর মমতা– যাকে একবার হলেও দেখবার তীব্র আকাংখা মনের ভেতর জিইয়ে রাখাছিল । আমার মনে হয় জীবনানন্দের ‘আকাশে সাতটি তারা’ পড়লে যে কারো মনে একই রকম আকাংখা জন্ম নিতে বাধ্যঃ
কেশবতী কন্যা যেন এসেছে আকাশে :
আমার চোখের ’পরে আমার মুখের ’পরে চুল তার ভাসে;
পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখেনিকো- দেখি নাই অত
অজস্র চুলের চুমা হিজলে কাঁঠালে জামে ঝরে অবিরত,
জানি নাই এত স্নিগ্ধ গন্ধ ঝরে রূপসীর চুলের বিন্যাসে
যাই হোক, আমি সৌভাগ্যবান । পৃথিবীর কোন এক পথে তার সাথে আমার দেখা তো হয়েছিল ! ক্লাস সিক্স কি সেভেনে পড়ি তখন- সবটা মনে নেই । মায়ের এনজিও’র কোন এক কলিগের মেয়ে সম্ভবতঃ । কোন্ কলিগ তাও মনে নেই । দু’ভাইবোন –এটা মনে আছে । ওদের দেখে আমার মনে হল, এরকম একটা ছোট বোন কি আমার থাকতে পারত না ? থাকলে কি চমৎকারই না হতো ! তার এক বছর যেতে না যেতেই আমারও একটা মিষ্টি দেখতে বোন হল । আমি আহ্লাদ করে নাম রাখলাম ‘স্পৃহা’ । বাস্তবটা কল্পনার মত হয় না । স্পৃহার মধ্যে রূপাঞ্জেলের কোন গুনাবলিই নাই । রূপাঞ্জেলের ঠিক বিপরীত যদি কিছু থেকে থাকে, সেটা সে । তার চুলও বব-কাট, কেন জানি কখনোই এর বেশী বড় হয় না । কেন হয় না- এও এক রহস্য । সম্ভবতঃ কাপড় কাটা কাচির ধ্বংসাত্মক ব্যবহারসে আয়ত্ত করে ফেলেছে এবং গোপনে গোপনে নিজের চুলের ওপর প্রয়োগ করছে । আমার বোন যারপরনাই দুষ্ট । মহাদুষ্টকন্যা যাকে বলে । তার পাঁচ বছর বয়সে তাকে নিয়ে লেখা আমার একটা ছড়া তার দুষ্টামির ইতিহাসের অন্যতম দলিল । কিয়দাংশ তুলে দিচ্ছিঃ
“...শীলা’র মায়ের মত বোকা আছে দুনিয়াতে ?
মাটির চুলা রাখে পেতে পাহারা নাই তাতে !
উঠিয়ে মাটি সেখান থেকে নিয়ে আসি ঘরে
শাওন-সাগর দুষ্টু ছেলে- নষ্ট যদি করে !!
যদিও ওরা খেলা করে, গায়ে মাখে কালি
আমিও রোজই ওদের থেকে শিখি নূতন গালি
তাইতো আমি ওদের সাথে বন্ধু পাতাই বেশ
কাঁচি নিয়ে হাতে আমার কেশ করি নিঃশেষ ।
ফুপির গায়ে মারি আমি ফুলের ঝাড়ুর বাড়ি
প্যান্টে ‘শিশু’ করে ভেজাই মায়ের নতুন শাড়ি ।
ইচ্ছে হলেই এঘর ওঘর ভিজিয়ে দেই তাই
সবাই বলে ‘পা বাঁধবার বিকল্প আর নাই !’
হুমকি এ নয়- হুমকি এ নয়- সত্যি একেবারে !
বারান্দাতে আটকে রাখে, আমায় ধরে মারে...
যখন-তখন কানে ধরায়, কানমলা দেয় জোরে
সক্কলেরই সামনে আমায় লজ্জ্বিত দেয় করে...”
আমি সবসময় চাইতাম, আমার বোনের যেন আমার সাথে একটা কঠিন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে । হল ঠিক তার উলটো । তাকে শাসন করার ভার পড়ল আমার ওপর । ছোট বেলা থেকে তার ওপর কঠিন অত্যাচার নির্যাতন করে এসেছি । আমার মত ‘দ্যাঁড়া’কেও এখন সে বাঘের মত ভয় পায় । আমি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলি । কিছুতেই তার সঙ্গে সহজ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি না ।
স্পৃহা টু’তে পড়ছে । বর্তমানে তার প্রিয় রঙ হচ্ছে গোলাপী । বিরোধী দলীয় নেত্রীকে সমর্থন করে বলে নয় এটা পাঠকমাত্রই বুঝতে পারছেন; সে এবার বরিশাল সদর গার্লস স্কুলে থ্রি’র ভর্তিপরীক্ষা দিতে যাচ্ছে । গোলাপী রঙের স্কুলড্রেস পড়বার স্বপ্ন দেখছে । আমি বরিশাল জিলা স্কুলে পড়তাম । সেই সুবাদে গোলাপি রঙ আমার বরাবরই অপ্রিয় ছিল । আমাদের সময়ের কথা বলি । শাদা শার্ট- শাদা প্যান্ট- শাদা কেডস পরা জিলা স্কুলের যেসব ছেলেকে রিকশায় করে সদর গার্লস স্কুলের সামনের রাস্তা ধরে বাসায় যেতে হতো –তারা যথেষ্ট পরিমানেই ভদ্র ছিল, সামান্য টিটকিরিও দিতে শোনা যেতো না । এই ভদ্র ছেলেদের শতকরা হিসাবটা যদিও মাত্র ২ শতাংশের কোটাতে ছিল । স্কুলে সেই ২ শতাংশকে ‘লেহু’-জাতীয় নামে ডেকে পঁচানো হতো । নাইন-টেনে পড়ার সময় সেই ধারনা বদলে গেল । ভদ্র-অভদ্র ছেলেদের প্রায় সবাই তখন ‘প্রেম’ শব্দটির মর্মার্থ গোলাপী রঙের ভেতর আবিষ্কার করতে শুরু করেদিয়েছে । কয়েকজন প্রেমিক তো মেয়েদের স্কুলের সামনে মারামারি পর্যন্ত করেছে । সে ইতিহাস মহাভারত-সম, বৃহৎ এবং বড়ই রোমাঞ্চকর । বৃহৎ বলেই এ প্রসংগে তেমন কিছু লিখছিনা । একটা উদাহরন দিয়ে যাই শুধু ।
আমরা যেবার এসএসসি দিয়েছিলাম, তার আগের ব্যাচের এসএসসি’র রেজাল্ট জিলা স্কুলের ভাল ছিল না । সদর গার্লসের এ-প্লাস সে বছর বেশী ছিল । আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় বাংলার একজন শিক্ষক ফয়সাল স্যার সেবার খুব হতাশ হয়েছিলেন । এক কনফারেন্সে সদর গার্লসের এক টিচার তাকে বললঃ ‘স্যার ! হেরে গেলেন তো !’
স্যার তার স্বভাবসিদ্ধ রসিক কন্ঠে বললেন, ‘তা স্যার হারবো না কেন বলেন ? জানলা পেতে বসে আছেন আপনারা... হারতে তো হবেই ।’
‘আপনার কথার অর্থ ঠিক বুঝলাম না ।’
‘আহা ! বোঝেন না কেন ? প্রেম-ট্রেমের বেলায় মেয়েরা কি ছেলেদের বাসায় গিয়ে নোটপত্র-ফুল এসব দিয়ে আসতে যায় নাকি ? মেয়েরা জানলা খুলে বসে থাকলেই হল । ছেলেরা আপনাতেই ছুটে যাবে- পরীক্ষা-পড়াশুনার খেয়াল কি আর তখন মাথায় থাকে ? বোঝেনই তো স্যার, নাইন-টেন-এসএসসি এইসব হচ্ছে ইটিশ-পিটিশের বয়স । হাহাহা ।’
সময় অনেক দ্রুত কেটে যায় । একটা সময় খুব কষ্ট নিয়ে লক্ষ্য করতে হয়, স্কুলের মহা-আনন্দের সেই শাদা-শাদা দিনগুলি পেছনে ফেলে রেখে এসেছি । বয়স বেড়েই চলেছে । যৌবন দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে । আমার ছোট্ট বোনটিও বড় হয়ে গেছে । কিন্ডারগার্টেন ছেড়ে আজ সে বিরোধী পার্টিতে জয়েন করবার স্বপ্ন বুকের ভেতর ধারন করছে । গোলাপী-শাদার মধ্যে শাদাকে সে ক্রমেই অপছন্দ করতে শুরু করবে । বব-চুল রূপাঞ্জেল একদিন আরও বড় হয়ে যাবে । কোন একদিন হয়ত হঠাৎ দেখব শাদাকেও সে ভালবাসতে শুরু করে দিয়েছে, সাজগোজের হার বেড়ে গেছে, অকারনেই ছটফট করছে কিংবা বৃষ্টি-বিকেলে জানলা খুলে দিয়ে রোমান্টিক মুডে বসে আছে –ওদের সময়ের ক্ষেত্রেও ‘জানালা’-শব্দটা সত্যি । ওরা খুলবে গুগল ক্রোমের জানালা !
আমি ভাবতে চেষ্টা করি সেদিন আমি কতটা বুড়ো হবো ? আমাকে কি সেদিনও ওর সামনে বাঘ হয়ে দাঁড়াতে হবে ? কল্পনার রূপাঞ্জেলের মত আমার বোন হয়ে উঠতে পেরেছে কিনা- চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে যে ভাবনাটা সবচে বড় হয়ে দাঁড়ায় সেটা হচ্ছেঃ আমি কি কোনদিনই আমার কল্পনার মতো নরম-চমৎকার একজন ‘ভাই’ হয়ে উঠতে পারবো না ? যার সম্পর্কে গভীর মমতা নিয়ে আমার বোনটা তার ড্রয়ারে তালাবন্ধ ব্যক্তিগত ডায়েরীটিতে লিখতে পারবেঃ
“আমি প্রায়ই ভাবি আমার ভাইয়ের মত করে অন্য ভাইরাও কি তাদের বোনকে এতোটা ভালবাসে?”
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২২
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: 'র্যাপাঞ্জেল' ??
অপূর্ণ রূপাঞ্জেলের ভাল সংস্করন !
অনেক ধন্যবাদ আপু !
২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৫
লাবনী আক্তার বলেছেন: পৃথিবীর মধুর একটা সম্পর্ক হচ্ছে ভাই-বোনের সম্পর্ক।
শুভকামনা রইল আপনাদের জন্য।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩২
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ !
৩| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১০
জেমস বন্ড বলেছেন: ভাল লেগেছে ভাইয়া । শেয়ার করেছেন এজন্য কৃতজ্ঞ । দোয়া করি বন্ধন অটুট থাকুক আমরন ।
শুভকামনা
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৯
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: এটা একেবারেই ব্যক্তিগত ডায়েরী বা নিজস্ব ফেসবুকের দেয়ালে শোভা দেয় এমন একটা লেখা । 'ত্রয়ী' গল্পটা ব্লগের অনেকে পড়েছেন । ভাবলাম এটা ব্লগে শেয়ার দিলে ক্ষতি তো কিছু নেই । তাই- 'ডিয়ার-ডায়েরী' নাম দিয়ে চালিয়ে দেয়া ! ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল । অনেক ধন্যবাদ জানবেন !
৪| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩২
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো। শুভকামনা।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৯
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৩
শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: খুব সুন্দর.. অনেক শুভ কামনা রইল
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫৪
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: বোনটা আজ পরীক্ষা দিয়ে এসে যে কথাটা প্রথম বলেছে তা হচ্ছে, 'দাদা, আমি পঞ্চাশে 'একচল্লিশ' পাবো । এতে কি এলাউ হওয়া যাবে ?' সে পরীক্ষার হলে বসে বসে কত পেতে পারে তার একটা হিসেব কষেছে । মজার ব্যাপার হল আমিও এই একই কাজ করতাম । দেখে তাই ভালই লাগল ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ শুকনোপাতা !
৬| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৬
মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লাগলো ভাই
২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৫
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন:
৭| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১১
শুঁটকি মাছ বলেছেন: স্পৃহা ভাল থাকুক।ওরে কম কম মারিস!
২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৬
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: আচ্ছা
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:১৩
শায়মা বলেছেন: ভাইয়া

অনেক ভালো লাগা!!
তোমার র্যাপাঞ্জেল বোনটা ভালো থাকুক।