![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রবীন্দ্রনাথ রৌদ্রস্নান নিয়ে লিখে গেছেন ঠিকই । তবে আমার মনে হয় রোদে ভেজাটাকে তিনি পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত করে যেতে পারেন নি । যেমন, ‘এসো নীপবনে’ শুনলেই আমাদের মনে বৃষ্টিতে ভেজার ক্ষীণ ইচ্ছা জাগে । ‘আজ জোছনা রাতে’ শুনলে মনে হয় বাইরে হয়তো উথাল পাথাল জোছনা । জোছনা দেখছে সবাই চলে গেছে বনে । জোছনা দেখার একটা ইচ্ছা মনের ভেতর চলতে থাকে । কিন্তু ‘রৌদ্রমাখানো অলস বেলায়’ আমাদের রোদে ভিজতে এমন প্রলুব্ধ করে না ।
আমার কথাই ধরা যাক । আমি খালি পায়ে রোদে রোদে হাঁটি এই বিষয়টা অনেকেই হজম করতে পারে না । হজম করার মত বিষয়ও না । রোদে ভেজা তো ভেজা । তার উপর খালি পা । এই পৃথিবীতে মাত্র দুজনকে দেখেছি যারা আমার এই ব্যাপারটিতে একেবারেই নির্বিকার । যেন এটাই স্বাভাবিক । তাদের অনুভূতি দেখে মনে হবে তিনবেলা ভাত খাওয়ার মত তিনবেলা খালি পায়ে রোদে হাঁটাটাও অবশ্য কর্তব্য ।
প্রথমজন অবশ্যই আমার ফুপাতো ভাই বাদল । সে আমার ভাবশিষ্য । কাজেই আমি যা করবো, তাই তার গুরু আজ্ঞা । এয়ারকুলার ছাড়া বাসার ভেতর থাকতে না পারলেও রোদে হাঁটার ব্যাপারে সে যথেষ্টই আগ্রহী । সে শুধু একা রোদে হেঁটেই ক্ষান্ত হলে কথা ছিল । ঘটনা তা না । তার পরিকল্পনা ভয়াবহ । সে পুরো পরিবার নিয়ে রাস্তায় হাঁটাহাঁটির চিন্তাভাবনা করছে । ফুপাকে এখনও ম্যানেজ করা যায় নি বলেই পরিকল্পনা সম্পন্ন করা যাচ্ছে না । বাদল আমার সাথে হাঁটতে বেড়িয়ে একবার বলল, ‘হিমুদা, এই দেশের নারীসমাজকে আগে রোদে ভেজা শেখাতে হবে । তাদেরকে বোঝাতে হবে শপিং এর জন্য মলে মলে হাঁটাহাঁটি করার চেয়ে কড়া রোদে হাঁটাহাঁটি করায় বেশি আনন্দ ।’
আমি বললাম, ‘তাদের শিখিয়ে লাভ কি ?’
বাদল চোখ বড় বড় করে বলল, ‘ধরো, তুমি এক রূপবতী তরুনীকে রোদে ভেজার কৌশল শিখিয়ে দিলে । সে কি করবে ? এই নিয়ে আরও দশজন বন্ধু বান্ধবের সাথে আলাপ করবে । তার যত অন্ধপ্রেমিক আছে তারা রোদে ভিজে এই মেয়েকে ইম্প্রেস করার চিন্তাভাবনা শুরু করবে । ইউরেনিয়ামের ফিউশান চেইন রিএকশনের মত আমাদের দল ভারী হতে থাকবে । একদিন হয়তো দেখবে ঢাকা শহরের সব ওভারব্রীজের ঢাকনা খুলে দেয়া হয়েছে । সব লোকাল বাসের ছাদ উন্মুক্ত । সবাই চাইছে রোদে ভেজাভিজি করতে ।’
‘ছাদহীন লোকাল বাস ভাবতেই তো কেমন জানি লাগছে ।’
‘শুধু লোকাল বাস না । প্রথমে ধরতে হবে লেখকদের । আমাদের বানী যাতে প্রত্যেক প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে যায় সেই চেষ্টা নিতে হবে । এই যে আজকে আমাদের রোদের প্রতি তিক্ততা, এটা কাদের সৃষ্টি করা ? অকালপক্ব লেখকদের ।’
‘লেখকদের ?’
‘অবশ্যই লেখকদের । তুমি কি রেনুকার কাহিনী জানো ?’
‘রেনুকা কে ?’
‘রেনুকা হচ্ছে মহাভারতের একটি নারী চরিত্র । তার স্বামী জমদগ্নি ছিলেন অসাধারন ধনুকধারী । তীর নিক্ষেপে তার সমতুল্য কেউ ছিল না । তিনি তীর নিক্ষেপ করার পরপরই পতিব্রতা রেনুকাকে সেই তীর খুঁজে এনে দিত । একবার তীর খুঁজে আনতে অনেক দেরী হল । রেনুকা তার স্বামীকে বলল সূর্যের প্রখর তাপের কারনেই তার তীর খুঁজে আনতে এতো দেরী হয়েছে । জমদগ্নি ক্ষেপে গিয়ে সূর্যকেই তীর মারতে উদ্যত হলেন । সূর্যদেব ভয় পেয়ে তার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করলেন এবং জমদগ্নির স্ত্রী রেনুকাকে ছাতা উপহার দিলেন । মহাভারতের মতে এভাবেই মানুষ ছাতার সাথে পরিচিত হয় । এখন চিন্তা কর, ব্যাসদেব রচিত মহাভারত পড়ে পরবর্তী কয়েক প্রজন্মের মনে হল সূর্যের আলো জঘন্য । সূর্যের আলোর বিরুদ্ধে ছাতা ধরতে হবে । একজন লেখকের কারনে সূর্যালোকের প্রতি মানুষের মমত্ব কমে গেল । আমরা যেই মুহূর্তে ছাতা ধরে রাখছি, ঠিক সেই মুহূর্তে কোটি কোটি বৃক্ষ মনের আনন্দে তাদের পাতায় পাতায় ক্লোরোফিলের ভাঙাগড়া শুরু করে দিয়েছে । লেখকদের এই জিনিসগুলোকে তুলে ধরতে হবে । কবি-লেখকদের শুধু বৃষ্টিস্নান করলে হবে না । খালি পায়ে রৌদ্রস্নানও করতে হবে ।’
বাদল এমন মুগ্ধস্বরে কথাগুলি বলছিল যেন সে চোখের সামনে দেখছে সব কবি সাহিত্যিকরা দলবেঁধে রৌদ্রস্নান করতে বেড়িয়েছে । সবাই বাদলের মতই মুগ্ধ । সবার চোখের পাতায় রোদের ঝকঝকে গাঢ় আলো ঝরে ঝরে পড়ছে ।
দ্বিতীয়জন হচ্ছে রূপা । প্রথমদিকে আমার সবকিছুতেই সে বিস্মিত হত । তার বিস্ময় গোপন করার শত চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যেত তার অপূর্ব সুন্দর চোখজোড়ার কারনে । আমি যদি বলতাম, ‘রূপা, চল এক জায়গায় ঘুরতে যাই ।’ সে সঙ্গে সঙ্গে বলতো, ‘কোথায় ?’
‘ফার্মগেট ওভারব্রীজের ওপর । দুজন হাত ধরাধরি করে বসে থাকি । মানুষের ছোটাছুটি কাছ থেকে দেখে আসি, যাবে ?’
তার কনিনীকা চমকে উঠতো । আমার এ ধরনের উদ্ভট পরিকল্পনাতেও সে বিস্ময়মাখা আগ্রহ নিয়ে বলতো, ‘চল, যাই ।’
কোন কিছুর প্রতি বিস্ময় জন্মে গেলে তার সবকিছুতেই আমরা মুগ্ধ হই । যে জিনিস যত অচেনা সেখানে বিস্ময় তত বেশি । কিন্তু অচেনাকে যতই চেনা যায়, বিস্ময়ও ততটাই কমে আসে । মুগ্ধতাও কমে । আমার বাবা তার মহাপুরুষ হিসেবে তৈরী করতে চাওয়া ছেলের জন্য বিস্ময় নিয়ে তার ডায়েরীতে কিছু উপদেশ লিখে গেছেন:
"বাবা হিমালয় ! প্রকৃতিতে তোমাকে ঘিরিয়া যাহা কিছু দেখিতে
পাও তাহার সবটাই বিস্ময় । আবার প্রকৃতির চিরাচরিত বস্তুদির
নিকট তুমিও স্বয়ং এক বিস্ময় । দুই পক্ষ হইতেই এই বিস্ময়
যখন ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাইতে পাইতে একটি নির্দিষ্ট পরিচিতির
গন্ডিতে সমন্বয়তা লাভ করিতে সক্ষম হয়, সেই মুহূর্তেই তুমি
প্রকৃতিকে স্বাভাবিক বলিয়া গন্য করিতে পারো এবং প্রকৃতি
তোমাকে । এই কারনে প্রকৃত বিস্ময়কাল সম্পর্কের শৈশব এবং
বার্ধক্য এই দুই প্রান্তের ভিতর পর্যবসিত । ইহা যেন হ্যামকের
দুই সুউচ্চ ঝুলনবিন্দু । জন্মের সময় তুমি যেই সর্বোচ্চ বিস্ময়
লইয়া পৃথিবীতে আসিয়াছো সেই বিস্ময় কমিতে কমিতে
যৌবনের শেষে কোন বিশেষ ক্ষণে আসিয়া নিঃশেষ হইয়া যাইবে
। তাহার পর আবার ঐ শূন্য হইতেই বিস্ময়ের নতুন ধারা জন্মিবে
। অতঃপর সেই বিস্ময় তীব্রতা লাভ করিতে করিতে তোমার
মৃত্যুতে আবার সর্বোচ্চ বিস্ময়ের রূপ লাভ করিবে । এইভাবেই
চক্র সম্পন্ন হয় ।"
রূপা এখন আমাকে অনেক বেশী চেনে । কাজেই তার চোখের সেই বিস্ময় এখন আর নেই । সে আমার সব কিছুতেই নির্বিকার । আমি যদি বলি, ‘রূপা, চল এক জায়গায় ঘুরতে যাই ।’
সে বলে, ‘আজ ইচ্ছে করছে না । থাক । তাছাড়া আমাকে আসমানী শাড়ি পড়িয়ে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করে অপেক্ষা করানো তো অনেকবার হল । এবার নতুন কিছু ট্রাই করো । তোমার এক ট্রিক বারবার দেখবার তো কোন অর্থ নেই, তাইনা ?’
‘ভাইজান ।’
আমি চমকে তাকালাম । মজনু মিয়ার হেঁচকি থেমেছে । সে টেবিলে দুই কনুই রেখে ঝুঁকে এগিয়ে এসে বলল, ‘ভাইজান, সর্বুইচ্চ দুইশ আশি টেকা আছে পকেটে । না জানি কি আছে কপালে । এরা ডলা দিলে সাড়ে সর্বনাশ । ভাইজান কোন একটা গতিক করেন । কাউরে ফোন দ্যান ।’
‘মোফাজ্জ্বল আমার কাছে মোবাইল টেলিফোন নাই ।’
মোফাজ্জল তার লুঙ্গির কোঁচ থেকে মোবাইল টেলিফোন বের করল । আমার হাতে দিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল, ‘ফোন দ্যান ভাইজান ।’
আমি ফোন হাতে নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেলাম । মজার ব্যাপার হচ্ছে আমার কারো নাম্বারই মনে নেই । নাম্বার মুখস্ত করা আমার কাজ না । সাদাত সাহেবের মেয়ের নাম্বার আমাকে কাগজে লিখে দিয়েছিল । কাগজ নিশ্চয়ই তাদেরই বাসার খাটে কোথাও পড়ে আছে । বাদলের নাম্বারও মনে পড়ছে না । একটা নাম্বার অবশ্যি মনে আছে । রূপার । কিন্তু তাকে ফোন দিয়ে কোন লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না ।
মোফাজ্জ্বল আমাকে মোবাইল হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে মুখ করুণ করে বলল, ‘ভাইজান আপনার আল্লার দোহাই কিরা লাগে । ফোন টিপেন ।’
তার করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে আমি রূপাকে ফোন করলাম । অনেকক্ষণ রিং বাজার পর ওপাশ থেকে রূপা ফোন ধরল ।
‘হ্যালো । কে ?’
‘রূপা ভাল আছো ?’
ওপাশ থেকে শোঁ-শোঁ আওয়াজ আসছে । আমি চুপ করে আছি । রূপাও চুপ করে আছে । হীরন্ময় নীরবতা । অনেকক্ষণ চুপচাপ ফোন ধরে থাকার পর রূপাই প্রথম কথা বলল, ‘বিয়ের কার্ড পেয়েছো ?’
‘কার্ডের ডিজাইনিং আইডিয়াটা কার ? বিয়ের কার্ড যে এতো সুন্দর হয়, আমার ধারনাই ছিল না । তোমার চারপাশ ঘিরে এত সৌন্দর্য কেন বলতো ? ও আচ্ছা ভাল কথা । তোমার বরের নামটা ভাল লাগে নি । তোমার পাশে অরন্য বা সুমন্ত নামের কেউ থাকলে মানাতো ।’
‘তাই নাকি ?’
‘হ্যাঁ । তাই ।’
‘বিয়েতে এসো । হলুদের দাওয়াত তোমাকে ইচ্ছে করেই দেই নি । কেন দেই নি জিজ্ঞেস কোরো না । বিয়েতে চলে এসো ।’
‘রূপা তুমি কি আমার সাথে এখন একটু দেখা করতে পারবে ?’
‘না ।’
‘আমি আসলে খুব বিপদে পড়ে গেছি । মগবাজারের একটা রেস্টুরেন্টে বসে এক হাজার বিয়াল্লিশ টাকার বিল হজম করে মনে পড়েছে তোমার দেয়া পকেটছাড়া পাঞ্জাবী পড়ে চলে এসেছি । তুমি যখন এই পাঞ্জাবীটা দিলে আমি কিন্তু তখনি বলেছিলাম পাঞ্জাবীর পকেট নেই কেন ? তুমি বললে পাঞ্জাবীর পকেট দিয়ে আমি কি করবো ? হাহাহা । মনে আছে ?’
‘আমার খুব মাথা ধরেছে । পরে তোমার সাথে কথা বলি ?’
‘পাঞ্জাবী উপহার দেয়ার অপরাধে অন্ততঃ টাকা নিয়ে এসো ।’
‘হিমু ডোন্ট ডেয়ার টু ট্রাই অ্যানাদার ট্রিক উইদ মি । তুমি মনে করো তুমি যেভাবে সুতা নাড়বে পুতুল নাচ সেভাবেই চলবে । আবার তোমার পাগলামীর প্রতি আমি আসক্ত হয়ে পড়বো, এই চিন্তা মাথায়ও আনবে না । পাগলামী উপভোগ করার একটা নির্দিষ্ট বয়স থাকে । আমার মনে হয় আমি সেই বয়সের সীমা থেকে বেড়িয়ে আসতে পেরেছি । আমাকে আর বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করো না । ফোন রাখছি ।’
‘হ্যালো রূপা ।’
‘আরো কিছু বলবে ?’
‘তোমাকে একটা জরুরী কথা বলা দরকার ।’
‘আর তোমার মনে হচ্ছে ঐ জরুরী কথাটি শুনতে আমি মগবাজারে তোমার সাথে দেখা করতে ছুটে আসবো ?’
‘রাগ করছো কেন রূপা ?’
‘তোমার উপর রাগ করার ক্ষমতা আমার নেই । আমি এখন ফোন রাখবো । জরুরী কথাটা ফোনে বলা গেলে বলতে পারো ।’
‘ফোনেই বলা যাবে ।’
‘বলো ।’
‘গায়ে হলুদের পরপরই তো তোমার বিয়ে । গায়েহলুদে হাতে-পায়ে হলুদ দাও । কিন্তু মুখে হলুদ ছুঁইয়ো না । চামড়ার যেখানে হলুদ লাগে সেখানে কয়েকদিন ধরে মেকাপ বসে না । আমার পরিচিত এক ফিল্মে মেকাপম্যান...’
আমি কথা শেষ করার আগেই দড়াম করে শব্দ হল । রূপা হয়তো ফোন ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে । তবে যোগাযোগ বোধহয় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় নি । জীবনানন্দের আহত ঘুঘুর ছেঁড়া পালক এখনও ঝুলছে । মোফাজ্জ্বল হতাশ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । ইতোমধ্যে সে হয়তো ধরে ফেলেছে ‘ডলা’ থেকে বাঁচার পথ বের করা যায় নি । তাকেও কেন জানি আহত ঘুঘুর মত দেখাচ্ছে । সে ক্ষীণস্বরে হোটেল বয় মজনু মিয়াকে ডাক দিল । মজনু মিয়া দৌঁড়ে এসে বলল, ‘জ্বি স্যার ।’
‘মজনু মিয়াভাইসাহেব । আমার আর হিমু ভাইজানের জন্য কষ্ট করে আর দুইটা স্পাইট নিয়া আসেন ।’
মজনু মিয়ার পিলে চমকে গেছে । মোফাজ্জ্বলের তুই থেকে আপনিতে চলে যাওয়ার ব্যাপারটা সে ঠিক ধরতে পারছে না । মাথা চুলকাতে চুলকাতে সে স্প্রাইট আনতে চলে গেল । মোফাজ্জেল আমার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল, ‘খাওয়া খাদ্যের জন্যে ‘ডলা’ যখন কপালে আছেই তখন খাওয়া খাদ্য সাধ মিটাইয়াই খাবো । কোন ছাড়াছাড়ি নাই । কি বলেন ভাইজান ?’
(চলবে)
=========================================
উৎসর্গঃ
রাজশেখর বসুর বাংলা অভিধানে ‘কুম্ভীলক’ শব্দের অর্থ দেয়া আছে- ‘যে অপরের রচিত সাহিত্য হইতে ভাব ভাষা প্রভৃতি চুরি করিয়া নিজের বলিয়া চালায়’ । সেই হিসেবে কালিদাস-কাশীরাম দাস থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত সবাই কুম্ভীলক । উদাহরন, কালিদাসের ‘শকুন্তলা’ কিংবা রবীন্দ্রনাথের ‘কচ ও দেবযানী’ । একই চরিত্র ঘুরে ফিরে অনেকের লেখায় এসেছে । সবটাই সেই আদিশ্লোক-ছন্দের অনুকরনে, নতুন ছন্দে নয় । তবে, রাজশেখর বসু এঁদেরকে plagiarist মানতে রাজী হন নি । তিনি বলেছেন, এঁরা plagiarist এর ঠিক উল্টোটা । যাঁরা অপরের তৈরী চরিত্র নিয়ে লিখেই খুশি । কবিযশঃপ্রাপ্তি এঁদের কারোরই লক্ষ্য ছিল না ।
এতোসব কথার সারমর্ম একটাই । ‘হিমু’কে নিয়ে লিখবার দায়মুক্তি । ফ্রান্সিসকো মেলজি ‘মোনালিসা’র কপি এঁকেছিলেন । ক্যানভাসের সাইজটা বদলে পুরোটাই কপি করা । সেই ছবি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম, কিন্তু ক্রিটিকরা এর দাম দেন নি । না দেওয়ারই কথা । সৃজনশীলতা এক, নকল করা অন্য । হিমুর স্রষ্টা আজ নেই । তিনি আজ অন্য কোন ভুবনে । আমি তাঁর পদধূলিকণা । তাঁর মত করে কখনই কেউ লিখতে পারবে না । আমিও পারিনি । পারার ইচ্ছাও নেই । অনেকের এই লেখা দেখে সঙ্গত কারনে খারাপ লাগতেই পারে । তাদের কিছু বলবার নেই । অন্যভুবনের জোছনা-পাগল মানুষটির কাছে দায়বদ্ধতা আছে । অন্যের লেখা ‘হিমুর পাশে তিনটি ছায়া’র উৎসর্গপত্রে তাঁর নামটাই থাকুক ।
কে লইবে মোর কার্য, কহে সন্ধ্যারবি—
শুনিয়া জগৎ রহে নিরুত্তর ছবি।
মাটির প্রদীপ ছিল; সে কহিল, স্বামী,
আমার যেটুকু সাধ্য করিব তা আমি॥
পরম শ্রদ্ধাষ্পদেষু, হুমায়ূন আহমেদ ।
===========================================
আগের পর্বের লিংকঃ
হিমুর পাশে তিনটি ছায়াঃ পর্ব (১)
হিমুর পাশে তিনটি ছায়াঃ পর্ব (২)
হিমুর পাশে তিনটি ছায়াঃ পর্ব (৩)
হিমুর পাশে তিনটি ছায়াঃ পর্ব (৪)
হিমুর পাশে তিনটি ছায়াঃ পর্ব (৫)
হিমুর পাশে তিনটি ছায়াঃ পর্ব (৬)
১৭ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:২৯
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ স্প্লিকনট !
২| ০১ লা মে, ২০১৪ সকাল ৭:৪১
মোঃ শিলন রেজা বলেছেন: অনেক দিন পর হিমুর স্বাদ পেলাম, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সারের অন্তর্ধানের পরে ভেবেছিলাম আর কখন হিমু কে পাবো না, কিন্তু আপনার লেখাতে উনার ছহায়া আছে। আরও লেখেন।
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৮
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন:
৩| ০১ লা মে, ২০১৪ সকাল ১০:৫৬
ফা হিম বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম, পুরোটা পড়তে হবে একদিন সময় করে।
৪| ০১ লা মে, ২০১৪ দুপুর ১২:২৫
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন: উৎসর্গটুকু খুব বেশী ভালো লাগলো , চালিয়ে যান
৫| ০১ লা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৩
কলিকালের কালপ্রিট বলেছেন: ভালো লাগলো, হিমুকে পড়ে
৬| ০১ লা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৫২
অরুদ্ধ সকাল বলেছেন: পুরোটা পড়তে হবে একদিন সময় করে।
৭| ০১ লা মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৮
পেন আর্নার বলেছেন: এই প্রথম কোনো পোস্ট পড়া হলো আপনার। পড়তে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই খচখচানি শুরু হয়েছিল, যদিও 'হিমু' চরিত্র নিয়ে আমার জ্ঞান কম। রোদ নিয়ে মহাভারতের অংশটুকু পড়তে গিয়ে উপলব্ধি করছিলাম, লেখাটি ভাল। এরপর, উৎসর্গ অংশে এসে খুবই ভাল লেগেছে আপনার দায়বদ্ধতা।
শুভকামনা।
৮| ০১ লা মে, ২০১৪ রাত ১০:৩৬
দ্য ইলিউশনিস্ট বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম, পুরোটা পড়তে হবে একদিন সময় করে।
৯| ০২ রা মে, ২০১৪ দুপুর ২:০০
আমিআকাশ বলেছেন: আপনার লেখার হাত সবসমই ভাল, এখানে য়েন সব record ব্রেক করে দিলেন। হুমায়ুন আহমেদ দেখলে বোধহয় খুশীই হতেন।চালিয়ে যান, সাথে আছি।
১০| ১৪ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৫৯
একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
বেশতো
১১| ২০ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:০৮
আমিআকাশ বলেছেন: পরবর্তী update কবে পাবো?
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা মে, ২০১৪ ভোর ৪:৪৫
স্প্লিকনট অয়ন বলেছেন: হুমায়ুন স্যারকে খুব বেশী মিস করছি। আজই মিসির আলি সমগ্র পড়ছিলাম। চালিয়ে যান। ভালো লাগা থাকলো।