![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইস্কাটন রোডের রাস্তা ধরে আসছি । দেখি এক শ্রীহীন বৃদ্ধ ফুটপাথের ওপর তার শিশুটিকে কোলের উপরে বাম হাতে ধরে বসে আছে । অন্য হাতে শাদা শাদা পান্তা ভাত মাখাচ্ছে । একটু আগের হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়া বর্ষার পানিতে পুরো ফুটপাথ কাদায় মাখামাখি । নোংরা পানি সেই প্যাসেজ বেয়ে অনবড়ত নালার দিকে গড়াচ্ছে । থেকে থেকে প্রস্রাবের বিকট গন্ধ বেরুচ্ছে ওখান থেকে । একটু দাঁড়ালে মাথা ধরে যায় এমনই জঘন্য অবস্থা । তারই ভেতর সংকীর্ণ হয়ে এক কোণায় বসে তাদের খাওয়া-দাওয়ার পর্ব চলছে ! আমি অবাক হয়ে দেখলাম নিজের মুঠোতে খাবলা খাবলা করে খালি ভাত সে শিশুটির মুখে চেপে ধরছে । শিশুটি প্রানপণে চিৎকার করে কাঁদছে আর বৃদ্ধ অসহায় প্রানহীন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে । আমি কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে গেলাম । পাশে বসে বললাম, ‘চাচামিয়া ! বাচ্চা কার ?’
বৃদ্ধ একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল । আমার আথে কথা বলবার আগ্রহ তার নেই । বাচ্চা তারস্বরে চেঁচাচ্ছে । তাকে খাওয়াতে হবে । পঁচে যাওয়া ভাত থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে ।
আমি কিছুক্ষণ বসে থেকে ভাবলাম আমার আসলে কি করা উচিত । পরে মানিব্যাগ থেকে ১০০ টাকা বের করে বৃদ্ধের হাতের কাছে রেখে বললাম, ‘বাচ্চাটাকে বাসি ভাত জোর করে না খাইয়ে কিছু কিনে দিয়েন ...’
বুড়ো খেঁকিয়ে উঠলো, ‘ভিক্ষা করতে বই নাই । টাকা ফেরত নিয়া যান ।’
‘বাচ্চাটাকে দেখে মায়া লেগেছে বলে দিয়েছি । ভিক্ষা দেই নাই । আর টাকাটা তো আপনাকে দেয়া হয়নি । ওকে দিয়েছি । ওর নাম কি ?’
‘সালমা । ওর নাম সালমা ।’
‘টাকাটা সালমাকে উপহার দিয়েছি । এর বেশী টাকা এখন মানিব্যাগে নাই । এইজন্যেই ছোট উপহার ।’
বৃদ্ধ অবাক চোখে তাকিয়ে কেঁদে ফেলল । তারপর আর্দ্রকন্ঠে বলল, ‘বাবারে, সকাল থেকে কিছুই খাই নাই । অয়’ও খায় নাই । সালমা আমার নাতনী । ওর বাপে রিকশা চালাইতো । তারে পুলিশ হরতালের মধ্যে ধইর্যাক নিয়া গেছে । টুপি দাড়ি ছিল তো, এইজন্য । আমি রাস্তায় নাইম্যা গেছি । থাকোনের জায়গা নাই । ইনকামের রাস্তা নাই । পঁচা-বাসি ভাত খাওয়া ছাড়া উপায় কি ? আমি বুঝি । বাচ্চা মাইয়া তো এইটা বুঝে না । তারে চাইপ্যা ধইরা খাওয়ান লাগে ।’
আমার অদ্ভুত রকম কষ্ট হতে লাগলো । বৃদ্ধ যেখানে বসে আছে তার ঠিক পেছনেই জাসদের দেয়াল লিখন । যাদের কাছে গরীব আর পেটেভাতে বেঁচে থাকা শ্রমিকই সব । এরা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারায় সেক্যুলার কমিউনিজম আনতে চায় । গণতন্ত্রের ছাপে গড়া এদের লাল রঙ কি সত্যিই এই বৃদ্ধকে বুঝতে পারবে ? অথবা জামাত, বাসদ ? সবাই গণতন্ত্র চায় । কারণ ক্ষমতায় যাবার সবচে’ নির্ভেজাল কৌশল এটি । এখন আবার ‘জোট পদ্ধতি’ চলছে । খুব ভালো । সবাই ভাগাভাগি করে খাচ্ছে । গণতন্ত্র আমাদের কি দিয়েছে ? কিছু অপ-রাজনীতি দিয়েছে । কিছু রাজনীতিবিদ দিয়েছে । যারা একে অন্যকে প্রতিনিয়ত কামড়াকামড়ি করছে । জনগণকে নিয়ে পরেরবার ক্ষমতায় গেলে ভাবা যাবে । আগে আখের গুছাই ।
নুরেম্বার্গে গণতান্ত্রিক ব্যাভেরিয়ান বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে হিটলার দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেছিলেন, ‘অভ্যুত্থানে গণতন্ত্রকে হত্যা করবার উদ্দেশ্য যদি আমার থেকেই থাকে তাহলে অবশ্যই আমি নির্দোষ । যেই গণতন্ত্রে ৩০০০ মার্কের বিনিময়ে এক টুকরো রুটি কিনে খেতে হয় সেই গণতন্ত্রকে আমি ঘৃণা করি ।
সালমার মুখ টিপে ধরে নষ্ট ভাত গেলানো হয়নি । গেলানো হয়েছে এদেশের নষ্ট গণতন্ত্রকে । যা মলদ্বার থেকে বেড়িয়ে এদেশের মাটিতে মিশে প্রথমে শস্যে ঢুকেছে, তারপর আবার মুখে ঢুকছে গণতন্ত্রের বিষ হয়ে । আমার বাংলাদেশ তাই বিষাক্ত ।
We need a triumph !
We really need a triumph
==========================
১৯ এপ্রিল ২০১৩
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৯
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ বিদ্রোহী চমৎকার মতামত জানানোর জন্য !
২| ১৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:২০
মামুন রশিদ বলেছেন: নষ্ট গলে যাওয়া পঁচে যাওয়া এই সমাজ আর এই রাষ্ট্রকে পুরো বদলে দেয়া এত সহজ নয় । অবশ্য চেষ্টাটাইবা হচ্ছে কই!
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৭
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: সত্যিকারের মন থাকাটা প্রয়োজন আসলে, মামুন ভাই !
৩| ২০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:১৩
মুদ্দাকির বলেছেন: আমি জানি না সমাধান কি বা কোথায় ?? কিন্তু সমাধানের আশায় আছি !! ধনীদের ঠিক মত যাকাত দেয়ার অভ্যাসে কি পরিবর্তন আশা সম্ভব নয় ??
৪| ২২ শে মে, ২০১৪ ভোর ৪:১১
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: We need a triumph !
We really need a triumph
এই কথাটাই বলি বারবার।
৫| ২২ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:০২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ফেইসবুকে আপনাকে কোন নামে পাওয়া যাবে? যাই হোক, ফেইসবুকের এ স্টেটাসটি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি। শীঘ্র রিসপন্স করবেন আশা করি।
শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:২৮
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আগুন!!!!!!!!!!!!!!!!!
সালমার মুখ টিপে ধরে নষ্ট ভাত গেলানো হয়নি । গেলানো হয়েছে এদেশের নষ্ট গণতন্ত্রকে । যা মলদ্বার থেকে বেড়িয়ে এদেশের মাটিতে মিশে প্রথমে শস্যে ঢুকেছে, তারপর আবার মুখে ঢুকছে গণতন্ত্রের বিষ হয়ে । আমার বাংলাদেশ তাই বিষাক্ত!!!!!!!!!!!!!!!!!!
‘অভ্যুত্থানে গণতন্ত্রকে হত্যা করবার উদ্দেশ্য যদি আমার থেকেই থাকে তাহলে অবশ্যই আমি নির্দোষ । যেই গণতন্ত্রে ৩০০০ মার্কের বিনিময়ে এক টুকরো রুটি কিনে খেতে হয় সেই গণতন্ত্রকে আমি ঘৃণা করি ।
একটা বদল চাই।
পরিপূর্ণ বদল
একটা প্রকৃত সত্য সুন্দর
সৎ মানুষের নেতৃত্বে জনতার বিপ্লব।