![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
আমি এমন একজন মানুষকে চিনি যিনি ঠিক করেছিলেন বিশ বছর নিজেকে আয়নায় দেখবেন না । খুবই অদ্ভুত ব্যাপার । আমি বাবু ভাইকে বললাম, ‘এরকম ঠিক করলেন কেন ?’
বাবু ভাই গম্ভীর স্বরে জবাব দিল, ‘জিনিসটা ইন্টারেস্টিং হবার কথা না টগন ? অনেকদিন না দেখে দেখে নিজের চেহারা যখন ভুলে যাবো তখন শখ করে একদিন আয়নার সামনে দাঁড়ালে কি অবস্থাটা হবে চিন্তা করতে পারছো ? নার্সিসাসের মত নিজের প্রেমে পড়ে যাওয়া ধরণের একটা অনুভূতি হবে । অথবা হয়তো অবাক হবো । অচেনা একজন মানুষকে দেখে অবাক হবো যাকে সঙ্গে নিয়ে আমাকে বছরের পর বছর ঘুরে বেড়াতে হয়েছে । অথচ তাকে দেখবার সুযোগ হয় নি ।’
ধরুন, আপনি কারো বাসায় গিয়ে কলিংবেল চাপলেন । ওপাশ থেকে প্রশ্ন আসল, ‘কে ?’ আপনি কি করবেন ? বলবেন, ‘আমি অমুক । দরজা খোল ।’ বাবু ভাই কখনোই তা করবেন না । তিনি ‘কে’-জাতীয় প্রশ্নের উত্তরে গলা উঁচু গলায় বলবেন, ‘আমি মানুষ !’ এর পরপরই গুরুগম্ভীর গলায় কবি নজরুলের ‘মানুষ’ কবিতা আবৃত্তি করা শুরু করবেনঃ
‘গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান্ !’
আনইউজুয়াল ব্যাপার । আমাদের বাসায় তিনি প্রথম যেদিন এলেন, মা ভাবলেন পাগল । অনেক ভদ্রবেশী পাগল থাকে না ? ঐরকম কিছু একটা । মেরিটোরিয়াস মানুষগুলি একটু বোধহয় ‘আউলা’ স্বভাবের হয় । বাবু ভাই সিভিল সার্ভিসে পরীক্ষা দিয়ে প্রথম দফাতেই ফরেন ক্যাডারে চাকরী পেয়ে গেছেন । একবারে চান্স পাওয়া কঠিন ব্যাপার । প্রিলিমিনারী টেনেটুনে পার করতে পারলে রিটেন । রিটেন পার হলে ভাইভা । সেই ভাইভাতেও আবার লিংক লাগে, তদবির লাগে । এইসব স্টেপ প্রায় কেউই এক ধাক্কায় পার করতে পারে না । জাল কেটে নাক-মুখ বের হলেও হাত-পা কিছু একটা আটকা পড়েই যায় । সেখানে একচান্সে যেই লোক সব ধাপ পার করে চাকরী পেয়ে যেতে পারে সে নিশ্চয়ই হেঁজিপেঁজি টাইপ কেউ না । বাবু ভাই চাকরী যে পুরোপুরি পেয়ে গেছেন, ব্যাপারটা তা না । জয়েনিং এখনও হয় নি । তার আগের টার্মের লোকজনই এখনো অপেক্ষা করে বসে আছে । তার তো দিল্লী হনুজ দূর অস্ত । তবে তিনি এ বিষয় নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন । তার নাকি এখন চাকরি-বাকরি করার ইচ্ছেও ছিল না । বেকার থাকবার শখ নাকি তার অনেকদিনের ।
বাবু ভাইয়ের সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় ধানমন্ডি লেকের এক ‘উইড’ আসরে । চমকে গেলেন ভাই ? গাঁজা নামটা শুনলে আমিও আগে নাক কুঁচকে ফেলতাম । আমার মনেই হতো ঐ জিনিসটার সর্বস্বত্ত কেবলমাত্র রিকশাওয়ালা আর বস্তিবাসীদের । এখন ঠিক ওরকম মনে হয় না । গাঁজা হচ্ছে ‘কেউ বলে শাহ আবদুল করিম, কেউবা বলে পাগল...’ ঐরকম একটা ব্যাপার । লৌহ যুগেরও আগ থেকে মানুষ গাঁজা খেয়ে আসছে । যীশু খ্রীষ্টের জন্মের প্রায় ১০০০ বছর আগের এক মমিতে গাঁজার উপাদান পাওয়া গেছে । তুজক-ই-জাহাঙ্গীরী’তে আছে বাদশাহ জাহাঙ্গীর গাঁজা খেয়ে কিভাবে অচৈতন্য হয়েছিলেন । এইসব তথ্য বাবু ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া । তিনি যদিও গাঁজা নিয়মিত খান না । কারন তিনি রাফায়েল মিকোলাম নামের এক ব্যক্তির লেখা জার্নালে পেয়েছেন গাঁজার টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল নামের উপাদান স্মৃতিকোষ নষ্ট করে দেয় । বাবু ভাই নিজের স্মৃতিকোষগুলিকে প্রচন্ড পরিমাণে ভালবাসেন । তিনি মজার মজার সব তথ্য দিয়ে তার স্মৃতিকোষে রাখা শেলফগুলিকে সাজিয়েছেন । সেগুলিকে তিনি হারিয়ে ফেলতে চান না ।
তবে বাবু ভাই গাঁজার আসরে আড্ডা দিতে পছন্দ করেন । নেশাগ্রস্থ মানুষের সাথে কথা বলতে তার ভাল লাগে । তার কাছ থেকে বিষয়টা আমার মধ্যেও সংক্রামিত হয়েছে । আমিও গাঁজা খাই না । একবার টেস্ট করার জন্যে টেনেছিলাম । পেটে সয় নি । বমি হয়ে গিয়েছিল । আমি সেদিন লেকে গিয়েছিলাম গিয়েছিলাম চাঁদ দেখতে । বৈশাখ মাসের ভরা পূর্ণিমা ছিল সেদিন । এমনই এক বৈশাখী পূর্ণিমাতেই হয়তো গৌতম বুদ্ধ গৃহত্যাগ করেন । লেকে একটা ঝাঁকড়া পিপল গাছের নীচে ঘাসে ঢাকা চমৎকার একটা জায়গা আছে । জায়গাটা অন্ধকার । আশেপাশে কোন স্ট্রীটল্যাম্পও নেই । ওখানে ঘাসের ওপর সারা রাত শুয়ে শুয়ে চাঁদ দেখার প্ল্যান ভাল লেগেছিল বলেই তমালের সাথে যাওয়া । চাঁদের আলোয় জনাপঞ্চাশেক অচেনা মানুষের ভীড়ে গোল হয়ে বসে জ্যোৎস্না দেখাটাও তো আনন্দময় । আমরা গিয়ে দেখি ভীড়ের এক মাথায় মবিন-মঞ্জুসহ পাঁচ-ছয়টা ছেলে ভুতের মত মুখ করে গোল হয়ে বসে আছে । হীরু ভাইকেও দেখলাম এক কোণায় । তাদের সবার মুখই গম্ভীর, মন প্রচন্ড খারাপ । কোন খালার কাছেই তাদের অভীষ্ট গাঁজা পাওয়া যায় নি । সিনেমা হলে সেজেগুজে কোন পছন্দের মুভি দেখতে গিয়ে টিকেট না পেলে যেমন মুখের অবস্থা হয়, সবাই তেমনি মুখ ঝুলিয়ে রেখেছে । তমাল বলল, ‘কেন ? আজ সমস্যা কি ?’
‘খালারা বলছে আজকে বড় চান রাত । মাল সব সোল্ড আউট ।’
‘এইগুলা ভুং চুং কথাবার্তা । ওদের কাছে আছে । কিন্তু পরে বেঁচবে । চুন্নীর দল । এগুলি ওদের রেট বাড়ানোর কৌশল । যত ডিমান্ড প্রাইজের তত ইনক্রিজ । আমাদের দেশে গাঁজার অভাব ? এই দেশে লিচু খেয়ে যেখানে সেখানে আঁটি ছুঁড়ে ফেললে সেখান থেকে গাছ বেড়িয়ে আসে ।’
বাবু ভাই তমালের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, ‘এটা তো তুমি ঠিক বললে না তমাল । গাঁজা আম-জাম-লিচুর মত না । যে মাটিতে এরা জন্মায় ঐ জায়গা অন্য যে কোন কিছু চাষের অনুপযুক্ত হয়ে যায় । বুঝতে পারছো ? কুষ্টিয়ার মাত্র কয়েকটা গ্রামে শুধুমাত্র গাঁজার চাষ হয় । গ্রামগুলিকে বলা হয় ‘গোল্ডেন ভিলেজ’ ।’
আমি আগ্রহ নিয়ে বললাম, ‘গোল্ডেন ভিলেজ নাম কেন ?’
‘মোঘল সম্রাট শাহজাহানের সময় ঐখানে একটা নদীবন্দর বানানো হয়েছিল । সেখানে গাঁজা খুব উঁচু দরে বিদেশীদের কাছে বিকতো । স্বর্ণের বিনিময়ে গাঁজার লেনদেন হতো এরকমও শোনা গেছে । ওখান থেকে নামের উৎপত্তি হতে পারে ।’
বাবু ভাইয়ের গাঁজা বিষয়ক জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় মবিন তেমন উৎসাহ পেল না । সে হাই তুলতে তুলতে বলল, ‘ঐ চিপায় এক মামা তাড়ি নিয়ে বসে আছে । তাড়ি খাবি নাকি ?’
তমাল চোখ-মুখ কুঁচকে একটা মুখভঙ্গি করে বলল, ‘তাড়ির এক গ্লাস দু’টাকা করে । আমরা সাতজন খেতে গেলে চৌদ্দ টাকার মত বেড়িয়ে যাবে । চৌদ্দ টাকায় কয় পোঁটলা গাঁজা পাওয়া যাবে তোর আইডিয়া আছে ?’
তবে শেষ পর্যন্ত তাড়ি খাওয়া হয়েছিল । একটু টক টক, ঝাঁঝালো স্বাদ । ধীরে ধীরে দাঁতে এক ধরনের আবেশ বসে যায় । কাঁচা তেঁতুল ক্রমাগত খেতে থাকলে দাঁতে যেমন কিড়মিড় ভাব হয় অনেকটা তেমন । এক গ্লাস না, সবাই মজা পেয়ে পরপর দু’গ্লাস খেয়ে পাগলাটে দৃষ্টি নিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলাম । মবিন হঠাৎ বলল, ‘চাঁদ জিনিসটা ভয়ংকর প্যারা দিচ্ছে । পেইন আর পেইন ।’
তমাল ক্রুদ্ধ ভঙ্গিতে বলল, ‘ফালতু কথা বলবি না । ফালতু কথা বললে ঠেলে এখান থেকে লেকের পানিতে ফেলে দেবো । পেইন লাগলে পেইনকিলার কিনে খা ।’
‘বাবু ভাই, আপনি একটা সত্যি কথা বলেন । চাঁদের আলো সুন্দর হতে পারে । চাঁদকে সুন্দর ভাবার কি কোন কারন আছে ? পাঁচ ব্যাটারীর টর্চবাতির মত সারাক্ষণ জ্বলে আছে । শালার দুশো পাওয়ারের বালবও তো এক বছর পরে ফিউজ হয়ে যায় । আর এই ব্যাটা বদমায়েশ ননষ্টপ বাত্তি জ্বালিয়েই রেখেছে । কোন কথা হল এটা ?’
বাবু ভাই জ্যোৎস্না দেখতে দেখতে শান্ত স্বরে বললেন, ‘মবিন তুমি যদি আর একটা কথা বলো তাহলে আমি নিজে তোমাকে কোলে করে লেকের ভিতর ফেলে দেবো ।’
মবিন থেমে গেল । জায়গাটায় খানিকক্ষণের জন্য নৈঃশব্দ নেমে এল । সবাই নেশাগ্রস্থের মত জ্যোৎস্না ধরার চেষ্টা করছে । চাঁদ ক্রমেই বড় হচ্ছে । আলোর তীব্রতাও বাড়ছে । অনেকক্ষণ পর শিপলু ভাই নীরবতা ভাঙলেন । তিনি বাবু ভাইয়ের সমবয়েসী এবং অনেক দিনের বন্ধু । স্কুল কলেজও এক ছিল । শিপলু ভাই গলা নামিয়ে বললেন, ‘খিদে লেগে গেছে ।’
হীরু ভাই বললেন, ‘বাসায় চলে যেতে চাচ্ছিস ?’
‘আরে না । সারারাত জ্যোৎস্না দেখার প্ল্যান না ? বাসায় ঢুকলে আর রাত করে বেড়োতে দেবে ? দেশের যা অবস্থা । আওয়ামী লীগ বেশী তাফালিং শুরু করে দিয়েছে ।’
হীরু ভাই বললেন, ‘তোর কি মনে হয় তাফালিং এমনি এমনি হচ্ছে ? কারন আছে বলেই হচ্ছে । দেশ ঠিক করতে দরকার একটা রেভোল্যুশন ।’
‘বালের রেভোল্যুশন । রেভোল্যুশনের তুই বুঝিসটা কি ? দু’কলম মার্কস-এঙ্গেলস্ পড়ে আর চে গুয়েভারা আঁকা টি-শার্ট গায়ে হাঁকিয়ে ঘুরলেই রেভোল্যুশন হয় না বুঝেছিস ? দু-চার পাতা মাও-সে-তুং পড়ে তিনি এসেছেন নিজেকে প্রগতিশীল তরুন দাবী করতে ! জঙ্গী-জঙ্গী বলে সবাই চেঁচাচ্ছে । আসলে তোরাই হচ্ছিস সেই জঙ্গী বাঙালী । দেশ কিভাবে চলে, আমাদের এই দেশটা কিভাবে চলছে এই সম্পর্কে কোন আইডিয়া আছে তোর ?’
‘অন্ততঃ তোর চাইতে বেশী আছে । তুই আমাকে বলতো এই চলতি বছরের বৈদেশিক ঋণের মে-জুন মাসের কিস্তি কত ? কত টাকা শোধ দিতে হবে ?’
শিপলু ভাই একটু থতমত খেয়ে গেলেন । হীরু ভাই ভাষন দেয়ার ভঙ্গিতে বলে যেতে লাগলেন, ‘তিন কোটি ডলার । তিন কোটি । আর এই টাকাটাও শোধ করা হবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে । সরকার স্বেচ্ছাচারী হয়ে পড়েছে । অনৈতিকভাবে ক্ষমতা কামড়ে ধরে পড়ে আছে । এর বিরূদ্ধে যেই মুখ খুলছে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইন্টারোগেশনের নামে । দিনরাত খুন-গুম চলছে । দেশ অচল হয়ে পড়ছে । দেশ অচল হয়ে পড়ছে কারন এখনও তোর আমার মত ছেলেরা রেভোল্যুশনে না জড়িয়ে এখানে লেকের ধারে বসে বসে চাঁদ দেখছে ।’
‘এখন কি করতে বলিস তুই । আমি, তুই, আমরা দুই-তিনটা পটকা ফুটিয়ে দেশ দখল করে নেবো ? আমাদের...’
‘আমি তা বলছি না...’
‘না..., না... তোকে বলতে হবে তুই চাচ্ছিসটা কি ?’
মবিন দুই হাত নেড়ে বলল, ‘বাদ দেন তো ভাই, পিনিকে রাজনীতি নিয়ে তর্ক করার মত ক্ষতিকর চীজ এই দুনিয়ায় নাই । এই জিনিস পৌনঃপনিক অংকের মত চলতেই থাকবে । আমারও ব্যাপক ক্ষিধে পেয়েছে । খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেন । তিন কোটি ডলারের দরকার নেই । সবাই মিলে তিনশ টাকার মত বের করেন । কোন দোকানে গিয়ে বার্গার-ফার্গার কিছু খাবো ।’
তর্ক থেমে গেল । সবাই পকেট হাতরে নিরাশ ভঙ্গিতে তাকাচ্ছে । সবার পকেটেরই বেহাল অবস্থা । বাবু ভাই হঠাৎ দুআঙুলে তুড়ি বাজিয়ে বললেন, ‘আরে, খাওয়াদাওয়া করতে পয়সা লাগে নাকি ? লাগে সাহস আর বুদ্ধি । মানুষ হয়ে জন্মেছো । মাথাটা খাটাও । চলো একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে ঢুকে পড়ি । রাত দশটার মত বাজে । কোন একটা বিয়ের পার্টি শিউর শট পেয়ে যাবো ।’
কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবু ভাই হনহন করে হাঁটতে শুরু করলেন । শিপলু ভাইয়ের মুখ চিমশা মেরে গেছে । মবিনও স্থির করতে পারছে না বাবু ভাইয়ের পেছন পেছন যাবে কি যাবে না । আমি কিছু একটা না ভেবেই বাবু ভাইয়ের পিছু নিলাম । আমার সাথে সাথে তমাল আর হীরু ভাইও হাঁটা শুরু করলো । অগত্যা মঞ্জু আর প্রদীপও এগুতে লাগলো । এক মাইল হেঁটে একটা বিয়ে ধরা গেল । তিনতলা দালানের দোতলায় বেশ বড়সড় একটা কমিউনিটি সেন্টার । একতলায় নামার চাপা সিঁড়ির সামনে জমকালো কাপড়ের গেট বানানো হয়েছে । লাইটিং-ফাইটিং দিয়ে এলাহী কারবার । কিছু লোকজন খাওয়াদাওয়া করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে । একতলার কনফেকশনারীর মত দোকানটায় দাওয়াতী ছেলে-ছোকড়াদের ভীড় । ভরপেট খাওয়াদাওয়ার পরপর সবাই সিগারেট খাওয়ার জন্য ব্যস্ত । পাশেই ফার্মেসীর দোকানে এক বুড়ো বিষণ্ণ মুখ করে বসে আছে । তার দোকানে মাছিও পড়ছে না । বাবু ভাই বললেন, ‘তোমরা উপরে উঠে গেটের সামনে দাঁড়াও । আমি আসছি ।’
‘ভাই, আমাদের প্যাঁদানি খাওয়ানোর জন্য রেখে গিয়ে নিজে সটকে পড়ছেন না তো ?’
‘আরে ধুর ! পাগল নাকি ? তোমরা ওঠো । আমার জাস্ট দুটা মিনিট লাগবে ।’
আমরা আলোয় আলোয় সাজানো কমিউনিটি সেন্টারের গেট দিয়ে ঢুকলাম । মহিলাদের পারফিউমের গন্ধে নিঃশ্বাস নেয়া যাচ্ছে না । দূরেই মূল মঞ্চ দেখা যাচ্ছে । সেখানে ক্যামেরায় খটাখট ছবি তোলা হচ্ছে । সবাই পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । চোখের পাতা টেনে খুলে রাখবার প্রানান্তকর চেষ্টা । ছবিতে ক্লিক পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের পলক যাতে না পড়ে । পড়লেই গ্রুপ ফটোতে নিজের ছবি খারাপ আসবে । হাবলার মত তাকিয়ে থাকবার জন্যও গুণ লাগে । সবার সে গুণ থাকে না ।
বাবু ভাই সত্যিই খানিকক্ষণের মধ্যেই উঠে এলেন । আমাদের নিয়ে উপহার দেয়ার জায়গাটার দিকে এগিয়ে গেলেন । সেখানে শাদা পাঞ্জাবী পড়া মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক রূলটানা খাতা খুলে বিরস ভঙ্গিতে বসে আছে । এখন সম্ভবতঃ অনুষ্ঠানের শেষভাগ । বেশীরভাগের খাওয়াদাওয়া শেষ । গিফট দেয়ার কাজ সবাই সেরে ফেলেছে । এদিকটাতে ভীড়ও তাই তেমন একটা নেই । গিফটের বিশাল বিশাল বক্সে জায়গাটা ভরে গেছে । বাবু ভাই শার্টের পকেট থেকে একটা র্যাপিং করা ছোট্ট চৌকো বক্স বের করলো । আমরা সবাই চমকে গেলাম । যদিও মুখের ভাবভঙ্গিতে তার ছাপ পড়তে দিলাম না । বাবু ভাইয়ের কনুই ধরে শিপলু ভাই আস্তে করে চাপ দিলেন । বাবু ভাই তা গ্রাহ্যই করলেন না । বক্সটা এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘আপনি ছেলের কি হন ?’
ভদ্রলোক বাবু ভাইকে তেমন পাত্তা দিল না । তিনি সম্ভবতঃ পরিবারের হোমরাচোমরা কেউ । যাকে দেখে ‘আপনি কে’ জাতীয় প্রশ্ন করা চলে না । যারা এ জাতীয় প্রশ্ন করেন তাদেরকে দূরতম আত্মীয়দের কোঠায় সহজে ফেলে দেয়া যায় । ভদ্রলোক কলম তুলে হাই তুলতে তুলতে বললেন, ‘নাম ঠিকানা তো কিছু লেখা নেই । কি নামে লিখবো ?’
‘লিখুনঃ ওয়াসিম উদ্দিন পাটওয়ারী । ঠিকানা গুলশান, ঢাকা । পাত্র যিনি- উনার শিক্ষক ছিলেন । নিজে গিয়ে এতো করে দাওয়াত দিয়ে আসল । অথচ আব্বা আসতে পারলেন না । হার্টের সমস্যা তো । বয়স হয়েছে । হুটহাট শরীর খারাপ করে ।’
বাবু ভাই অবলীলায় বানোয়াট কথাগুলি বলে গেল, বাবু ভাইয়ের দিগদারি । মিথ্যে কথা সুন্দর করে বলতে পারাটাও একটা শিল্প । ছেলেটি গিফটে নাম্বার ফেলে দিয়ে বাবু ভাইর বক্সটা এক কোণায় রাখতে গেল । বাবু ভাই মাথা নিচু করে প্রায় ফিসফিস করে বললেন, ‘ভাই বক্সটা একটু সাবধানে রাখবেন, স্বর্ণালংকার আছে । আব্বা ছেলের হাতে হাতে দিতে বলেছিলেন । এই মুহূর্তে তো সেটা সম্ভব না । আমাদেরও একটু তাড়া আছে । খেয়ে যেতে পারবো কি না কে জানে ।’
এই পর্যায়ে এসে ভদ্রলোকটিকে বেশ সচকিত মনে হল । তিনি গলার স্বর উঁচু করে বলল, ‘সে কী কথা ! না খেয়ে যাবেন নাকি ? এই শামীম ! শামীম ! উনাদের বসাও । টেবিল খালি আছে না ? তাড়াতাড়ি বসাও । উনাদের যেতে হবে তাড়াতাড়ি ।’
শামীম নামের লোকটি আমাদেরকে প্রচন্ড যত্ন নিয়ে খাওয়ালো । বাবু ভাই খাওয়া শেষ করে টুথপিক দিয়ে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে বললেন, ‘একটু মৌরী হলে ভাল হতো, পাওয়া যাবে ?’ মৌরী ছিল না । শামীম নামের লোকটি আতিথেয়তার সর্বোচ্চ করল । দৌঁড়ে রাস্তার ওপারের দোকান থেকে মৌরী যোগাড় করে নিয়ে এল । আমরা মৌরী চিবুতে চিবুতে রাস্তায় নেমে এলাম । শিপলু ভাই উত্তেজিত কন্ঠে বললেন, ‘বাবু, গিফটটা কি ছিল ? সিগারেটের প্যাকেট বলেও তো মনে হল না । সিগারেটের প্যাকেট এত ছোট হয় না । ছিলটা কি ?’
বাবু ভাই নির্লিপ্ত গলায় বললেন, ‘কনডমের প্যাকেট কিনে কনফেকশনারীর দোকান থেকে র্যাপিং করে দিয়ে দিয়েছি । বিয়ের পরে হাইলি ডিমান্ডেবল জিনিস । নতুন জামাইরা লজ্জ্বার কারনে ফার্মেসীর দোকানে যেতে পারে না । পরিচিত বন্ধু এর-তার কাছে ‘জিনিস’ চেয়ে বেড়ায় । সেই ঝামেলা থেকে এ যাত্রায় শালাকে উদ্ধার করে দিলাম । যা ব্যাটা, এখন ইচ্ছেমতো চড়ে খা ।’
আমরা সবাই হো-হো করে হাসতে লাগলাম । চাঁদ এখন মাথার ওপরে । আমাদের সাথে সাথে চাঁদও উড়ে চলেছে । মাঝে মাঝে মৃদু হাওয়া দিয়ে যাচ্ছে । নিয়ন বাতির নীচে হাঁটতে বড় ভাল লাগছে । এই সুবর্ণনগর এতদিন কোথায় ছিল ? বাবু ভাই হঠাৎ বললেন, ‘সবার কি মন খারাপ নাকি ?’
‘নাতো ।’
বাবু ভাই মাথা নাড়তে নাড়তে বাচ্চাদের মত অদ্ভুত মুখভঙ্গী করে বললেন, ‘তাহলে সবাই হাসি থামিয়ে দিল কেন ?’
সবাই আবার হেসে উঠল । বাবু ভাই হাসতে হাসতে বললেন, ‘গিফটটার কথা থেকে একটা জোক মনে পড়ে গেল । কলেজে থাকতে আমাদের ক্যাজা সজীব শুনিয়েছিল । সেইরকম জোক । হেভী ইন্টারেস্টিং । কিন্তু বলা যাবে না ।’
মবিন আগ্রহ নিয়ে বলল, ‘বলা যাবে না কেন ?’
‘ডার্টি জোক । ভয়াবহ ডার্টি ।’
‘আরে ভাই বলেন না । এখানে তো মেয়েমানুষ কেউ নেই ।’
‘আচ্ছা শোনো । এক ফার্মেসীর দোকানে... । নাহ্ । এই জোক বলা যাবে না । সেইমাত্রার ডার্টি জোক । আর শুনলে এখানের কেউ হাসি থামাতে পারবে না । হাসতে হাসতে হিস্টেরিয়ার মত হয়ে যাবে । হাহাহা ।’
আমরা সবাই আরেক দফা হেসে উঠলাম । যে জোক শোনাই হয় নি সেই অশ্রুত রসিকতা নিয়েই আমাদের হাসাহাসি চলতে লাগল সারা রাত্রি ধরে যতক্ষন না চাঁদ ডুবে যায় ।
২
বাবু ভাইয়ের সাথে সেই হচ্ছে আমার প্রথম পরিচয় । প্রথম পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার । খুব সজ্জন মানুষের সাথেও যদি প্রথম পরিচয়টা সুখকর না হয়, দেখা যাবে সেই মানুষটির কোন কিছুতেই পরবর্তীতে আপনি আগ্রহ পাচ্ছেন না । আবার সুন্দর একটি ইন্ট্রোডাকটরী আলাপের কারনে সাধারন একটা মানুষকেও আমাদের চোখে অসাধারন লাগে । আমি অনেক ভেবে দেখেছি বাবু ভাইয়ের ক্ষেত্রে আমার ঠিক এমন কিছু ঘটেছিল কিনা । তিনি প্রথম পরিচয়ে আমাকে সত্যিই চমৎকৃত করতে পেরেছিলেন । তাই হয়তো বাবু ভাই তার দিলু রোডের বাড়িতে গলা নামিয়ে যেদিন আমাকে বললেন গোপন একটা সরকারবিরোধী দলের সঙ্গে তিনি অনেকদিন ধরেই যুক্ত, সেদিনও আমার কাছে মনে হয়েছিল তিনি ঠিক । ঠিক বেঠিকের হিসেবটা আসলে আপেক্ষিক । বৌদ্ধধর্মে জীবহত্যা মহাপাপ, ইসলাম ধর্ম বলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী আবশ্যক । আবার ইসলাম ধর্ম বলে মদ খাওয়া হারাম, অথচ ইহুদী এবং খ্রীস্টানদের জন্য তা হালাল । বাইবেলে ওয়াইনের প্রশংসায় বলা আছে, gladdens the human heart ! তাই না ?
আমার তখন কাগজপত্রে আমেরিকায় এডমিশন কনফার্ম হয়ে গেছে । ভার্সিটিটাও বেশ ভাল । ইলিনয় ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং এর চার বছরের কোর্স । ক্লাস শুরু সেপ্টেম্বর থেকে । আগস্টের শেষ সপ্তাহ নাগাদ চলে যাবো । মা ভিসা-পাসপোর্ট ঠিকঠাক করতে লেগে পড়েছেন । আমার তেমন কোন কাজকর্ম নেই । আমাদের কালো রঙের মরিস মাইনর গাড়িটা নিয়ে যখন তখন বেড়িয়ে পড়ি এবং রোজ সন্ধ্যায় বাসায় ঢুকেই গালাগাল শুনতে হয় । আজকাল প্রায় প্রতিদিনই ঢাকায় হরতাল হচ্ছে । গাড়ি বের করা আসলেই নিরাপদ না । পরিবেশটাই অন্যরকম । কেমন অবরূদ্ধ, অবরূদ্ধ একটা ব্যাপার । আমার সঙ্গে যারা খুব গভীরভাবে মিশেছে তারা জানে যুদ্ধ-বিপ্লব এই ব্যাপারগুলি আমার রক্তে কিভাবে মিশে আছে । সেই এইট-নাইনে থাকতে যখন Don quixote পড়ি, তখনই আমার বিদ্রোহী হয়ে উঠতে ইচ্ছে করেছে । অথবা চে গুয়েভারার ডায়েরী ! আমার এখনও মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে দেশের গন্ডি পেরিয়ে ধূ-ধূ বালুময় কোন কারবালায় চলে যেতে । প্যালেস্টিনিয়ান কোন লিবারেশন আর্মিতে নাম লেখাতে । এমন একটা জীবন যেখানে অ্যাডভেঞ্চার থাকবে, থাকবে তুমুল বিষ্ময় । জীবনকে কখনও পুরোনো মনে হবে না । আপনার কি কখনো এরকম কিছু মনে হয়েছে ? অবশ্যই হওয়ার কথা । আমার মনে হয় এই ক্ষুদ্র মানব জীবনে কমবেশী এমন ইচ্ছে সবারই মনের ভেতর কখনো না কখনো ঝড় তুলেছে । রবীন্দ্রনাথেরও কিন্তু এরকম ইচ্ছে হয়েছিল । তিনি লিখেছেনঃ ‘ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন...’ ।
আমি বাবু ভাইকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম । তার এধরনের কোন ইচ্ছে আছে কিনা । তিনি হাত উলটে বললেন, ‘আরে দূর- দূর- ! এইসব এডভেঞ্চার বইতে পড়তেই ভাল লাগে ।’ আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘আপনার কখনোই এমন কিছু মনে হয় নি ? শার্লক হোমস পড়ার সময় শার্লকের মতো হয়ে যেতে মন চায় নি ?’
বাবু ভাই বললেন, ‘উহুঁ । তবে হ্যাঁ, জুল ভার্ন পড়ে মনে হয়েছে আমি কেন পৃথিবীর এই প্রান্তে পড়ে আছি ? পৃথিবীতে জন্ম হয়েও কেন পৃথিবীর এত চমৎকার, এত অলৌকিক সব দৃশ্য দেখতে পারছি না ? এত এত সৌন্দর্য আমার পায়ে পায়ে- অথচ কিছুই দেখা হচ্ছে না । আমি একটা লিস্ট বানিয়েছি, জানো টগন ? কোনদিন টাকাপয়সা হলে কোন কোন জায়গা ঘুরে দেখবো তার লিস্ট ।’
আমি বাবু ভাইয়ের লিস্ট দেখলাম । আমি ভেবেছিলাম তাজমহল-নায়াগ্রা জলপ্রপাত টাইপ জায়গার নাম দেখবো । বাবু ভাইয়ের লিস্ট দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম । একটা প্রমান সাইজের ডায়েরী জুড়ে ৯২ টা জায়গার নাম এবং বর্ণনা । শিরোনামঃ ইচ্ছে দ্বিনবতি । অস্ট্রেলিয়ার গোলাপী বর্ণের হ্রদ লেক হিলার থেকে শুরু করে রাশিয়ার কামচাটকার বর্ণিল বরফগুহা, নেদারল্যান্ডের শত শত বর্গমাইল জোড়া টিউলিপ বাগান, ভাদু দ্বীপের নক্ষত্র-সমুদ্র, চীনের ঝানজাই পর্বতের চূড়ায় বসে সূর্যোদয়ের সময় বিস্তর দানজিয়ার রঙধনু-মৃত্তিকা দেখা । শখ ব্যাপারটাই আসলে বিস্ময়কর !
তাই বলে বিস্ময়ের জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আমি বাবু ভাইয়ের প্ররোচনায় পড়ি এবং সরকারবিরোধী দলে সামিল হই, ভাবাটা ভুল হবে । এই বিদ্রোহ ব্যাপারটার প্রতি আমার আগ্রহ যে অনেক আগে থেকেই ছিল সেটা তো আমি আগেই স্বীকার করে নিয়েছি । তাই না ? আমার আজও ঐদিনটির কথা মনে আছে যেদিন আমি প্রথমবারের মত মানুষ খুন করি । স্পষ্টই মনে আছে । সেই কোন আদ্যিকালে আমার এনসিস্টর মানুষগুলো শুধুমাত্র সার্ভাইভ করার জন্যে আরেকটি মানুষের বুকে নির্দ্বন্দ্বে ক্রূঢ় বর্শার ফলা সেঁধিয়ে দিতো । গ্লাডিয়েটররা আরেক গ্লাডিয়েটরকে হারিয়ে শেষতক খুন করে লাল রক্ত দেখে তবে শান্ত হতো । শুধুমাত্র সার্ভাইভালের জন্য । আজও মানুষ মানুষকে খুন করে । কারনটা হয়তো প্রত্যক্ষভাবে সার্ভাইভাল না । তবে নিজস্ব গোষ্ঠীর আদর্শের সার্ভাইভালের জন্য তো বটেই । ধর্মান্ধরা আগুনে পুড়িয়ে- বিষ খাইয়ে মেরেছে সক্রেটিসদের, কমিউনিস্টরা ছিঁড়ে ফেলেছে ধর্মান্ধদের, আবার কমিউনিস্টদেরকেই হতে হয়েছে নাৎসীদের খাবার । চক্র চলছেই । আদর্শকে টিকিয়ে রাখবার চক্র । ভয়ংকর চক্র । তবু একটি বৃহৎ স্বার্থে কিছু ক্ষুদ্র সীমাবদ্ধ পাপ অবশ্যই ক্ষমার যোগ্য । যে পাপের নাম রেভোল্যুশন ! আলবেয়ার কামুর এই কথাটা আমার বড় ভাল লাগেঃ In order to exist, man must rebel, but rebellion must respect the limits that it discovers in itself – limits where minds meet, and in meeting, begin to exist ।
বাবু ভাই অবশ্যি পুরো প্রক্রিয়াটি আমাকে চমৎকারভাবে বুঝিয়ে বলেছিলেনঃ ‘রেভোল্যুশনের অনেকগুলি ধাপ আছে । রাশিয়ায় বলশেভিকদের উত্থানও কিন্তু একদিনে হয় নি । প্রথম ধাপে আমাদেরকে পালিয়ে পালিয়ে অপারেশন লীড করতে হবে । তুমি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র । তোমার মত মেরিটোরিয়াস ছেলেদের আমাদের দরকার । যাদের অস্ত্রচালনা হাতে ধরে ধরে বারবার শেখাতে হয় না । একবার দেখিয়ে দিলেই হয় । আমাদের পেছনে কে আছেন শুনলে তুমি অবাক হয়ে যাবে । ক্যাপ্টেন হায়দার । জেনারেল শাহনেওয়াজ খানের নিজের হাতে গড়া কমান্ডো । হায়দার ভাই ট্রেনিং নিয়েছিলেন পাকিস্তানের এটাকফোর্টে । স্পেশাল কমান্ডো ট্রেনিং । এস এস জি অথবা স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের দুর্ধর্ষ এই কমান্ডো এখন আমাদের ট্রেনিং দেবেন । ট্রেনিং হবে ঢাকার বাইরে । ইন্ডিয়া বর্ডারের কাছাকাছি । তমাল, হীরু, মবিন এরা সবাই অলরেডি সেখানে চলে গেছে...’ বাবু ভাই বলছিলেন আর আমার রক্ত মুহূর্তে মুহূর্তে স্পন্দিত হচ্ছিল । যা ঘটতে চলেছে তা কি আসলেই সত্যি নাকি স্বপ্ন ?
বাবু ভাইয়ের মুখের ওপর না বলার ক্ষমতা আমার ছিল না । আমি সম্মোহিতের মত ছিলাম । আমার বলা উচিত ছিল, ‘বাবু ভাই, আমার মা-বাবার আমাকে নিয়ে কিছু স্বপ্ন আছে । বিদেশী খুব নামকরা একটা টেকনোলজী ইউনিভার্সিটিতে আমার এডমিশন হয়ে গেছে । দেশের এইসব ঝামেলার মধ্যে আমি নিজেকে জড়াতে চাচ্ছি না । দেশ শান্ত হলে আমি ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশে ফিরবো । নয়তো ওখানেই সেটেল করবো । এদেশে থেকে, এইসব আন্দোলন করে হবেটা কি ?’ আমি বলতে পারি নি । আমার কাছে কেন যেন দেশটাকেই বড় বলে মনে হয়েছে ।
এরও দুমাস পরে আমি প্রথম খুনটা করি । সেই গল্পটা বলি । বারোজনের দলের একটা অপারেশন হবে ওয়াপদার এক পুরোনো বিল্ডিং এর অফিসে । মূল টার্গেট বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অফিসারকে কিডন্যাপ করা আর বাকী অধিকাংশকে খুন করা । বাবু ভাইকে লিস্ট পাঠানো হয়েছে ওপরের কমান্ড জোন থেকে । বস্তুতঃ হাই লেভেলের কিছু সিক্রেট মিশনের প্রি-ওয়ার্ক ছিল এটি । সেই মিশনটি কি তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা ছিল না । নিজেদের জায়গার ছোট কাজটা নিঁখুতভাবে করাটাই আসল ।
সন্ধ্যা ছ’টা-সাতটার দিকে বিল্ডিং এ ঢুকে প্রথমেই দোতলার করিডোর ধরে সোজা গিয়ে দক্ষিন দিকের ঘরটিতে ঢুকলাম । দরজা বন্ধ করে দিয়ে বাবুভাই দু’পা ফাক করে রিভলবার বের করে টেবিলে বসা সাস্থ্যবান গৌড়দর্শন বয়স্ক লোকটির দিকে তাক করলেন । লোকটি ওয়াপদার বিজলি সরবরাহকারী বিভাগের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার । চকচকে রিভলবার দেখে ভদ্রলোক ঘাবড়ে গেলেন বটে । তবে হাত ওপরে তুললেন না । ঠান্ডা গলায় বললেন, ‘আপনারা কি চান ?’
‘আমাদের কয়েকদিনের জন্য পুরো ঢাকা শহর অন্ধকার লাগবে ।’
‘মানে কি ? অন্ধকারে কি করবেন ?’
‘জ্যোৎস্না দেখবো ভাই । শহরের এত স্ট্রীটলাইট, বারান্দার বাতিতে জ্যোৎস্নায় স্নান করা যাচ্ছে না । এইজন্যেই অন্ধকার দরকার ।’, বাবু ভাই চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন ।
‘জ্যোৎস্না দেখতে চাইলে জয়দেবপুর-গাজীপুরের ওদিকটায় চলে যান । ঘন জঙ্গলে জ্যোৎস্না ভাল ফুটে ।’
‘এই, এরে একটা চড় লাগাও তো !’
হীরু ভাই এগিয়ে এসে প্রচন্ড শব্দে চড় কষালেন । ভদ্রলোক বিব্রত ভঙ্গিতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন । বাবু ভাই সময় নিলেন না । রিভলবার আঙুলে ঘোরাতে ঘোরাতে বললেন, ‘চাচা মিয়া ! চড় একটা খেয়েছেন । দরকার হলে আরো খাবেন । মাঝে মাঝে একটা দুটা চড় খাওয়া সাস্থ্যের জন্য ভাল । আমরা ক্র্যাক পাবলিক । আমাদের দলের নামও ক্র্যাক । এইজন্য চড়ের বদলে রিভলবারের ট্রিগারে চাপ লেগে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু না । সুতরাং, ভেজাল করবেন না । ভেজাল আমার পছন্দ না । এখন বলেন শহর অন্ধকার করে দিতে পারবেন ?’
‘আমার একার ওপর তো সবকিছুর দায়িত্ব না । সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে বিদ্যুত সরবরাহকারী ৬ টা লাইন ঢাকার ৬ টা স্টেশনে আসে । ঐগুলি থেকেই অন্যান্য পাওয়ার স্টেশনে কারেন্ট ডিস্ট্রিবিশন হয় । আমি চেষ্টা করলে হয়তো একদিনের জন্য খিলগাঁও সাবস্টেশনের কারেন্ট বন্ধ করে রাখতে পারবো । তাও আমার চাকরী চলে যাবে ।’
‘অন্য কি উপায় আছে ?’
‘এই স্টেশনগুলি আর সেখানকার ট্রান্সফর্মারগুলি সব একদিনে নষ্ট করে দিতে পারলে পুরো ঢাকা শহর অন্ধকার করে দেয়া সম্ভব ।’
‘এছাড়া কোন উপায় নাই ?’
‘ভাইসাহেব, একটু দাঁড়ান ।’, লোকটি কথা বলতে বলতে চেয়ার থেকে উঠে সবুজ রঙ করা অয়োময় আলমারীটির দিকে এগুতে শুরু করলো । আমার মনে প্রথম যে প্রশ্নটি এল তা হচ্ছে আলমারীর মধ্যে কি আছে ?
মবিন খেঁকিয়ে উঠলো, ‘এই হারামজাদা, আলমারী খুলবি না । খুললে সমস্যা হবে ।’
‘ঠিক আছে । আমার খুলতে হবে এমন কোন কথা নেই । আপনারা খুলেন । ভেতরে লাল রঙের একটা ফাইল আছে । ওখানে স্টেশনের ডিজাইনিং ডাটা আছে । ট্রান্সফর্মারের কিছু ডায়াগ্রাম আছে । ওগুলি আপনাদের কাজে আসতে পারে ।’
বাবু ভাই এক হাতে লোকটাকে ধাক্কা মেরে মেঝেতে ফেলে দিলেন । তার আরেক হাতে এখনও রিভলবার । তার ইশারায় তমাল আলমারি খুলল । যা ভেবেছিলাম একেবারেই তা নয় । তমাল সারা আলমারী খুঁজেও কোন ধরনের অস্ত্রের নাম নিশানা পেল না । তাকভর্তি গাদা করে রাখা অজস্র ফাইল শুধু ।
বাবু ভাই কিছুক্ষণ কোন কথা বললেন না । ঘরটা জুড়ে শুধু পাখা ঘুরবার অস্বস্তিকর ঘটঘট শব্দ । বাবু ভাই গাল চুলকে একটু ইতস্ততঃ করে কাটা কাটা ভঙ্গিতে বললেন, ‘সাহায্য করতে চাচ্ছেন ?’
‘জ্বি ।’
‘কেন ? ভয়ে ?’
‘আপনারা ক্র্যাক প্লাটুনের জানলে প্রথম থেকেই সাহায্য করতাম ।’
‘নাম কি আপনার ?’
‘শওকত । শওকত ওসমান ।’
বাবু ভাই রিভলবারটা টেবিলে নামিয়ে রাখলেন । তার ভ্রূ কুঁচকে গেছে । তিনি চেয়ার টেনে বসলেন । শওকত নামের লোকটা তখনও মেঝেতে বসা । তার হালকা নীল রঙের শার্টটি ঘামে ভিজে কালো হয়ে গেছে । বাবু ভাই তাকে উঠে বসালেন । তারপর নীচু স্বরে বললেন, ‘শওকত সাহেব । একটু আগের ঘটনার জন্য আমি লজ্জ্বিত । মন থেকে লজ্জ্বিত । ইদানীং সবাইকেই শত্রু বলে মনে হয় । Everywhere the devil spits, poison ivy grows । আপনি আমার বাবার বয়েসী । আপনি চাইলে আমি আপনার পা ধরে মাফ চাইবো । আপনি কি তা চান ?’
আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে শওকত সাহেব বললেন, ‘অন্য কিছু চাওয়া যাবে ?’
‘যেমন ?’
‘দেশ স্বাধীন হলে আপনাদের দলের সাথে সত্যি সত্যি একদিন গাজীপুরের শালবনে জ্যোৎস্না দেখতে যাবো । রাজি আছেন ?’
বাবু ভাই হাসলেন । তার হাসি দেখে আমরা এতক্ষণের চেপে রাখা হাসির বিকট বিস্ফোরণ ঘটালাম । শওকত আংকেল খুব কম সময়েই আমাদের পরম প্রিয় একজন হয়ে উঠলেন । যুদ্ধ খুব অদ্ভুত একটা জিনিস । এটা খুব সহজেই মানুষকে বদলে দিতে পারে । আলাদা প্রজন্মের দুজন মানুষকে বন্ধু বানিয়ে দিতে পারে । শওকত আংকেলের জন্যেই আমাদের কিডন্যাপিং বা খুনোখুনির ঝামেলায় যেতে হল না । তিনি আমাদের দলের একজন হয়ে গেলেন । ডায়াগ্রাম এঁকে বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে ট্রান্সফর্মারগুলি বিকল করা যাবে । প্ল্যান অব একশন ঠিক করা হল তারও কয়েকদিন পরে ।
নিউ ইস্কাটনের একটি বাসার চিলেকোঠার ছোট্ট একটা ঘরে আমাদের গোপন বৈঠক বসলো । এখানে মঞ্জুরা গাঁজার আড্ডায় বসতো । সেফ জায়গা । শওকত আংকেল পাওয়ার স্টেশনগুলির ম্যাপ নিয়ে এলেন । চাদরবিহীন তোষকের ময়লা বিছানার ওপর ম্যাপগুলিকে বিছানো হল । আমরা সবাই ওগুলিকে ঘিরে বসলাম । যেন অসাধারন কিছু দেখছি । প্রায় তিনঘন্টা ধরে আলোচনা চলল । সবাই কিছু না কিছু ইনোভেটিভ আইডিয়া দিতে লাগল । সিগারেটের অ্যাশট্রেটা নিঃশব্দে ভরে উঠতে লাগলো ধীরে ধীরে । কিছুদিন যাবতই হালকা বৃষ্টি আর তার পরপর ভ্যাপসা গরম শুরু হয়েছে । অসহ্য আবহাওয়া । বদ্ধ ঘরে গরমে আর সিগারেটের ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করছে । বাবু ভাই চুপচাপ সবার কথা শুনলেন । সবার কথা শেষ হলে তিনি উঠে দাঁড়ালেন । দুহাত পেছনে নিয়ে বিছানাটাকে ঘিরে পায়চারী করতে করতে বললেন, ‘অপারেশন হবে রবিবার । আকাশকুসুম প্ল্যান করে লাভ নাই । ৬টা পাওয়ার হাউজ একসঙ্গে উড়িয়ে দেয়ার মত ক্যাপাবিলিটি আমাদের এখনও হয় নি । লোকও কম । আমরা ৫টা গ্রুপে ভাগ হয়ে ৫টা স্টেশন ডেমিলিশ করবো ।’
আমি বললাম, ‘কোন পাঁচটা ?’
বাবু ভাই হাঁটু গেড়ে বসে তোশকের ওপর ছড়ানো ম্যাপের ওপর টোকা দিতে দিতে বললেন, ‘ধানমন্ডী আর তেজগাঁও এর এই দুটা পাওয়ার হাউজ । খিলগাঁও, কমলাপুরের সাবস্টেশন দুটা । আর উলানের পাওয়ার স্টেশন ।’
আমাদের গ্রুপে আমাদের মবিন ছাড়াও আরেক মবিন ঢুকেছিল । সেও দেখতে অবিকল মবিনের মতই । আমরা তার নাম দিয়েছিলাম দুই নম্বর মবিন । আলোচনার এই পর্যায়ে এসে দুই নম্বর মবিন বলল, ‘এক এক গ্রুপে কয়জন করে থাকবে ?’
‘ইট ডিপেন্ডস । তবে ছয়জনের কম না । প্রত্যেকটা গ্রুপ নিজেদের মত করে অপারেশন চালাবে । আমি, তমাল, টগন, মবিন, হীরু আর দুই নাম্বার মবিন, আমাদের এই গ্রুপটা যাবো উলানে । আমার আর তমালের হাতে স্টেনগান থাকবে । আমরা গেট দিয়ে আগে ঢুকবো । পুরো বিল্ডিং কন্ট্রোলে আসার পর সিগনাল দেবো । এরপর বাকীরা ভেতরে ঢুকবে । টগন আর হীরু গিয়ে ট্রান্সফর্মারের গায়ে চার্জ বসাবে । এক নম্বর মবিনকে গেটের কাছে রিভলবার নিয়ে বসিয়ে আমরা কভার দেবো । দুই নম্বর মবিনের কাছে কাটার আর গ্রেনেড থাকবে । সে প্রথমেই গিয়ে টেলিফোন লাইন নষ্ট করে দেবে । কারও কোন প্রশ্ন আছে ?’
‘অপারেশন কতক্ষণ চলবে ?’
‘অবশ্যই রাত সাড়ে আটটা থেকে পৌনে নয়টার মধ্যে অপারেশন শেষ করতে হবে । আর কিছু ?’
কেউ কোন কথা বলল না ।
(প্রথমার্ধ সমাপ্ত) [/sb
শেষার্ধঃ এই লিংকে যান !
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২৯
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: ধারনা থেকে বলা ঠিক হবে না । এই স্ট্যাট থেকে একটা আইডিয়া নেয়া যেতে পারে ---
http://www.statista.com/statistics/298355/value-of-the-mass-womens-fragrance-market-worldwide/
২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:১২
মহান অতন্দ্র বলেছেন: জ্যোৎস্না দেখবো ভাই । শহরের এত স্ট্রীটলাইট, বারান্দার বাতিতে জ্যোৎস্নায় স্নান করা যাচ্ছে না । এইজন্যেই অন্ধকার দরকারআমি এমন একজন মানুষকে চিনি যিনি ঠিক করেছিলেন বিশ বছর নিজেকে আয়নায় দেখবেন না
খুব ইউনিক কিছু আইডিয়া ছিল । বরাবরের মত ভাল লাগা অয়ন ভাই ।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩০
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ অতন্দ্র !
৩| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১০
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: লেখায় হুমায়ূন আহমেদের প্রভাব খুব প্রবল মনে হল আমার কাছে ।
ভালো থাকবেন ।।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫৭
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: হ্যাঁ । এটা ঠিক । প্রভাব থাকাটাও স্বাভাবিক । ইংরেজরীতিতে ভূদেব যখন উপন্যাস লিখলেন ঠিক ঐ সময় থেকেই কিন্তু প্রভাবের শুরু । সেইসাথে শুরু উপন্যাসের-গল্পের যুগবিভাগ । প্যারীচাঁদ মিত্রের বড় গল্পধর্মী উপন্যাসের পর বঙ্কিমচন্দ্রের ইয়োরোপীয় ধাঁচে লেখা প্রথম সার্থক উপন্যাস আসার পর সেই ইয়োরোপীয় ধারা অব্যাহত ছিল বহু বৎসর যাবত । অন্ততঃ শরৎচন্দ্রের সামাজিকধর্মী মাত্রা যোগ হওয়া পর্যন্ত । গল্পের ক্ষেত্রেও সে ধারা অক্ষুন্ন ছিল । বঙ্কিম-রবীন্দ্রোত্তর যুগে প্রমথ চৌধুরীর বাংলা সাহিত্যে সাধু গদ্যকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা- মীর মশাররফ-নজিবর রহমানের মুসলিম রীতি আনায়ন, কলকাতার আধুনিক ঔপন্যাসিকদের প্রভাব, সেই প্রভাব ভেঙে শওকত ওসমান-ওয়ালীউল্লাহদের হাতে আধুনিক গল্প-উপন্যাসের সফল রূপপ্রাপ্তি এবং সবশেষে হুমায়ূন আহমেদের হাতে সর্বশেষ সরল উত্তর-আধুনিকায়ন । কনজাংশন জড়ানো জটিল বড় বাক্যকে ভেঙে ছোট ছোট করে কথ্য-চলিত ভাষায় সহজ ভঙ্গিতে গল্প বলার ধারা । তাঁর এই পোস্ট মর্ডানিজম ধারায় লিখতেই আমার সাচ্ছ্বন্দবোধ হয় । আমি মনে করি আমি এই ধারার লেখক
ধন্যবাদ অপূর্ণ মন্তব্যের জন্য !
৪| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩০
মামুন রশিদ বলেছেন: চাঁদের আলোয় পিনিক লাগা কয়েক যুবক থেকে মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা অপারেশন- দারুণ হয়েছে । পুরোটা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম ।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫৭
ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই
৫| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৬
তাশমিন নূর বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদীয় স্টাইলের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটা ভালো লাগল। আমার মনে হয়, হুমায়ূনের লেখায়ও উনার প্রিয় লেখকের লেখার প্রভাব রয়েছে। সেটা উনি বলেছিলেনও কোনো একটা বইয়ে। বইয়ের নাম মনে করতে পারছি না।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:০০
তাশমিন নূর বলেছেন: বেশ ভালো লাগল। কিন্তু একটা প্রশ্ন ছিল। পারফিউম কি শুধু মহিলারা ইউজ করে? ছেলেরা সবচে কড়া পারফিউম ইউয করে। কারন- তাদের গায়ে ঘাম হয় বেশি। মহিলাদের পারফিউম তুলনামূলকভাবে হালকা গন্ধের হয়। অবশ্য তারা অন্যান্য প্রসাধনীও ইউয করে বলে গন্ধটা আরেকটু বেশি হয়। তবু-
মহিলাদের পারফিউমের গন্ধে নিঃশ্বাস নেয়া যাচ্ছে না - এখানে একটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।