![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। দুঃখ ও বেদনাঘেরা তার জীবনে সুখ এসেছিল সত্য, তবে তা ছিল ণস্থায়ী। বেশিরভাগ সময় তার কেটেছে দারিদ্র ও অশান্তিতে।
তবে এতসব দুঃখ যন্ত্রণাকে জয় করে তিনি লিখেছিলেন কত শত অমর কাব্য কবিতা। অশান্ত মনের এ অস্থির ও বিদ্রোহী কবির জীবনে সবচেয়ে বড় অভিশাপ ছিল কোনটি?
তার জীবন ও জীবনী পড়লে একটি বিষয় খুব সহজে স্পষ্ট হয়ে যায় যা আজও অনেকের কাছে অস্পষ্ট ও আড়াল হয়ে আছে। কোন এক রহস্য কিংবা অজানা কারণে যারা তার জীবন নিয়ে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান, তারাও এ বিষয়ে মুখ বুঁজে থাকেন। কবির বিস্ময়কর প্রতিভার কাছে এ বিপদ কিংবা মুসিবত তেমন কিছুই নয়, এসব যন্ত্রণা তাকে দমাতে পারেনি তার বিদ্রোহের বিস্ফোরণ থেকে। তবুও অবাক হতে হয় এমন তেজোদ্দীপ্ত ও বিদ্রোহী কবির পারিবারিক অশান্তির দৃশ্য দেখে।
ঘরের বাইরে এখানে ওখানে কবি যতই বিদ্রোহী কিংবা জ্বালাময়ী কবিতা ও গান গেয়ে বেড়াতেন, নিজের ঘরের চারদেয়ালের ভেতর পরিবারের কাছে নিতান্তই অসহায় ছিলেন এ শক্তিমান কবি। এ কথা তো সত্য যে, একজন মুসলিম কবি হয়েও তিনি বিয়ে করেছিলেন হিন্দু নারীকে। যদিও তার প্রথম বিয়ে হয়েছিল নার্গিস নামের এক তরুণীর সাথে কুমিল্লায়, তবে সেটি কোন এক কারণে টিকেনি এবং প্রথমদিকেই তা ভেস্তে যায়।
কুমিল্লা শহরে এই ২য় বিয়ের পর থেকে কবি তার হিন্দুধর্মাবলম্বী স্ত্রী ও শ্বাশুড়ীর কাছে অসহায় ছিলেন। অবস্থা এতোই করুণ ছিল যে, কবি নিজের ঘরে তাদের সামনে ‘ভগবান’ ও ‘জল’ বলতেন আর বাইরে এসে বলতেন ‘পানি’ ও ‘আল্লাহ’। যদিও কবি হিন্দুদের জন্য শ্যামাসঙ্গীত লিখেছেন, ওদিকে ইসলামের জন্য এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের নামেও তিনি প্রচুর গজল ও লেখা রচনা করেছেন।
কিন্তু মুসলমান হয়ে তিনি ইসলামের জন্য হামদ নাত লিখবেন, এটা সহ্য হতো না তার গোঁড়া শ্বশুরগোষ্ঠীর। ইসলামী লেখার জন্য তারা সময় সুযোগ পেলেই কবিকে নির্মম কথা শোনাতো, উপহাস করতো। বিশেষ করে কবির শ্বাশুড়ী মহিলাটি এ বিষয়ে দারুণ ্যাপাটে ছিলেন।
তবুও কবি নজরুল এসব সয়ে এবং নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে লিখতেন আল্লাহ ও রাসুলের নামে, রচনা করতেন স্বজাতির জন্য গান ও গজলসঙ্গীত। এখানেই শেষ নয়, প্রিয়কবি তার দুই ছেলেকে খৎনা করার কথা বলারও সাহস পেতেন না তার পরিবারের কাছে।
‘মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করেছে’ এই অভিযোগে কবির স্ত্রীর পরে যেসব হিন্দুস্বজনরা ঐ পরিবারকে দূর দূর বলে তাড়িয়ে দিয়েছিল, কবির নাম ও যশ চারিদিকে প্রচার হলে এ লোকগুলোই সব গোঁড়ামী ভুলে আবার দলে দলে এসে কবির বাড়ীতে দীর্ঘদিন ধরে থাকতো, খেতো, আমোদ ফূর্তিতে মত্ত হয়ে থাকতো।
কবির সমসাময়িক কালের বন্ধুদের লেখা থেকে জানা যায়, শ্বাশুড়ী পরিবারকে গ্রীষ্মের ছুটিতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য কবি একরকম বাধ্য হয়ে ট্রেনের দু বগি রিজার্ভ করতেন, সেইসাথে সামানপত্র নেয়ার জন্য ওয়াগন ভাড়া করতেন। আর এসবের এত খরচ মেটাতে গিয়ে কবি যে কত মানুষের কাছে হাত পেতে ধার করেছেন, দেনা শোধ করতে না পেরে কবি যে কি এক যন্ত্রণায় ভোগতেন, তার পূর্ণ বিবরণ এখানে সম্ভব নয়। তার জীবনে তাই ঋণ আর দায় দেনার জটলা লেগেই থাকতো। এজন্য কবি কয়েকবার নীরবে লাঞ্চিত ও অপমানিত হয়েছিলেন।
এতো খাতির তোয়ায করেও কিন্তু কবি তার স্ত্রীর পরিবারের মন ভরাতে পারতেন না। তার বন্ধু মুন্সী জুলফিকারের কাছে একসময় তিনি বলেই ফেললেন কথা প্রসঙ্গে, ‘‘তুমি তো আমার শ্বাশুড়ীকে চেন না। ওরা হচ্ছেন যেন রাঘব বোয়াল, কিছুতেই আমি ওদের পেট ভরাতে পারলাম না।’’
কবির এই বন্ধু জুলফিকার হায়দার তার প্রত্য বর্ণনায় আরও লিখেছেন, ‘‘কবির শ্বাশুড়ী যেন তার প্রতি আরোপিত অপবাদ ও ঘৃণার জবাব দিতে তার বাড়ী থেকে আগত অতিথিদেরকে দু হাত ঢেলে আপ্যায়ন করতেন। কখনো কখনো দু একজনের খাবার ব্যবস্থা করতে গিয়ে তিনি কবির পকেট থেকে তৎকালের দশ বিশ নয়, একেবারে চল্লিশ টাকা পর্যন্ত খরচ করাতেন।
নিজেদের আত্মঅহমিকা আর ভাব দেখানোর এতসব আয়োজনের সব দায় মেটাতে হতো একা কবি নজরুলের। ফলে অর্থ অভাব আর টানাটানি লেগেই থাকতো তার সংসারে। হিন্দু সাহিত্যিকদের একটি বিশেষ গোষ্ঠী ছিল যারা সর্বণ কবিকে নির্দয় ভাবে মানসিক যন্ত্রণা দিত, গোঁড়া হিন্দু সম্প্রদায় তাকে পরিহাস করত।’’
এই ছিল একদিকের দৃশ্য। আবার ওদিকে এক হিন্দু নারীকে বিয়ে করায় তৎকালের মুসলিম সমাজও কবিকে তিরস্কৃত করত যেখানে সেখানে, এমনকি তৎকালের মৌলভীরা তাকে ‘কাফের’ ফতোয়া দিয়েছিল। এ উপমহাদেশের মুসলমানদের আত্মজাগরণে যার গান প্রেরণা যোগায় ঘরে ঘরে, সেই কবি নজরুল স্বজাতির মৌলভীদের কাছে ছিলেন ঘৃণার পাত্র। এ বেদনা কবির জন্য ছিল অসহনীয়।
ফলে ‘ঘরের চারদেয়ালের ভেতর’ আর ‘বাইরের সমাজে’ এমন বিপরীত ও অসহনীয় একটি পরিবেশে কবি থাকতেন চরম দুঃখঘেরা মন ও মানসিক বেদনায়। আর এসব ভুলে থাকার জন্য তিনি সবসময় ছাদফাটানো হাসি আর আড্ডার উপায় বেছে নিতেন।
তবু আশ্চর্যের বিষয়, দুরন্ত মনের চঞ্চল কবি কাজী নজরুল ইসলাম কীভাবে তার জীবনের এ বৈপরীত্য মেনে দিন কাটাতেন, সুর সাগরে সাহিত্য ভান্ডারে প্রাণসঞ্চার করতেন, এমন অদম্য ফূর্তি ও শক্তি কিভাবে পেতেন তিনি ?
কাজী নজরুল ইসলাম মানুষ হিসেবে যে কতটা নিঃসঙ্গ ছিলেন, তার মনের অবস্থা কতো বেদনাহত ছিলো, এর প্রমাণ মিলে তার বিভিন্ন চিঠি থেকে। আর এসব কারণেই হয়তো তিনি ঘুরে বেড়াতেন নানা জায়গায়। কয়েকবার তিনি এসেছেন আমাদের এই ঢাকায়, এসেছেন কুমিল্লায়, ফরিদপুরে, যশোরে, খুলনায়, চট্টগ্রামে, সিরাজগঞ্জে, ঠাঁকুরগায়ে।
বেগম মাহমুদ নাহারকে লেখা চিঠির এক জায়গায় কবি লিখেছেন, ‘‘তোমরা ভালবাস আমাকে নয়, আমার সুরকে, আমার কাব্যকে। তোমরা কবিকে জানতে চাও না নজরুল ইসলামকে জানতে চাও?”
কাজী মোতাহার হোসনকে লেখা এক চিঠিতে কবি নিতান্ত দুঃখের সাথেই লিখেছেন, “বন্ধু আমি পেয়েছি- যার সংখ্যা আমি নিজেই করতে পারবো না। এরা সবাই আমার হাসির বন্ধু, গানের বন্ধু। ফুলের সওদার খরিদ্দার এরা। এরা অনেকেই আমার আত্মীয় হয়ে উঠেছে, প্রিয় হয়ে ওঠেনি কেউ। আমার চোখের জলের বাদলা রাতে এরা কেউ এসে হাত ধরেনি।”
এমনই অসংখ্য চিঠি থেকে কবির মনোবেদনার যে দুঃখময় চিত্র ফুটে ওঠে, তার পূর্ণ বিবরণ দিলে চোখের পানি ধরে রাখা মুশকিল। কবির ব্যক্তিজীবন তাই সত্যিই অবাক হওয়ার মতো। একনিষ্ঠভাবে সেসব পড়লে এক অন্যরকম মায়া ও করুণার অপূর্ব অনুভুতি ছুঁয়ে যায় পাঠকের মনমানসে।
বি.দ্র- কোন ধরণের সাম্প্রদায়িকতা কিংবা অন্য মোহে নয়, একান্তই কবির জীবনের একটি নির্মোহ চিত্র এটি। কারো মনে আঘাত দেয়ার জন্য এ লেখা নয়। অজানা সত্যকে পাঠকের সামনে তুলে ধরার জন্যই এ প্রয়াস।
২| ২৯ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১:০৩
আবিদা পারভীন বলেছেন: প্রিয় কবিকে নিয়ে লেখাটি পড়ে চোখের জল গড়ালো। আটকাতে পারলাম না। আমাদের জাতীয় কবিকে নিয়ে কারও কোন শ্রদ্ধাঞ্জলী চোখে পড়ে না। শুধুই কষ্ট লাগে এসব দেখে।
৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৭
নৈশতরী বলেছেন:
খুব সুন্দর করে অনেক তথ্য একসাথে জানাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ .।
৪| ২৫ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৪২
হাসান ফেরদৌস বলেছেন: বন্ধু আমি পেয়েছি- যার সংখ্যা আমি নিজেই করতে পারবো না। এরা সবাই আমার হাসির বন্ধু, গানের বন্ধু। ফুলের সওদার খরিদ্দার এরা। এরা অনেকেই আমার আত্মীয় হয়ে উঠেছে, প্রিয় হয়ে ওঠেনি কেউ। আমার চোখের জলের বাদলা রাতে এরা কেউ এসে হাত ধরেনি।
আসলেই তাই
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:৫৩
আরজু পনি বলেছেন:



লেখাটা পড়ে শেষ করতে অনেক কষ্ট হলো। চোখের জল আটকে রাখা যাচ্ছে না!
আব্বাস উদ্দিনের জীবনী থেকে কবির জীবনের চরম দূর্দশার কথা পড়ে মনের মধ্যে যে অপরাধ বোধের সৃষ্টি হয়েছে তা বোঝাতে পারবো না
ওই যে একটা কথা আছে না...
বেচেঁ থাকতে দিলো না ভাঙ্গা পাটি
মরে গেলে দিবো শীতল পাঁটি...কবির সাথেও আমরা সেই অন্যায় করেছি।
আমাদের ক্ষমা করো কবি