![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।
আশ শাম্মারী গোত্রের একজন বড় শেখ। তার ছেলেকে কে বা কারা ধরে কী বুঝিয়েছে, ছেলে তাবলীগে যেতে চায়। আরে তাবলীগ কী? এরা কী করে? তোমার কীসের অভাব? তুমি কেন ওখানে যাবে? বাবার সাথে তার হরদম বিতর্ক চলে দিন রাত। এরপর এভাবে একদিন ছেলে তার মাকে বলে চলে আসে বাংলাদেশে, চিল্লা লাগায় দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতে।
পেট্রোডলারের বিলাসে বড় হওয়া মুহাম্মদ আশ শাম্মারীর জীবন চলনের সব কিছু বদলে যায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাটির মসজিদগুলোতে সে সাধারণ বিছানা বিছিয়ে ঘুমায়, মশারা তাকে ঘিরে রাখে, তবু তার শান্তিনিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না কেউ।
কাদামাটি আর গ্রামের পরিবেশে মানুষজনের সহৃদয় ব্যবহার, দারিদ্রতা সত্বেও দ্বীনের জন্য তাদের দিলউজাড় করা ভালোবাসা দেখে মুহাম্মদের স্মৃতির আয়নায় ভেসে ওঠে রিয়াদের সুশোভিত মসজিদ, ঐখানকার সুগন্ধিময় পরিবেশেও সে এমন আল্লাহমগ্নতা দেখেনি।
একসময় তার চিল্লার মেয়াদ শেষ হয়ে আসে। চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে টাখনুর নীচে হেলে দুলে জুব্বা পরা আর উদকাঠের কড়া সুগন্ধি মেখে রিয়াদের রাজপথে বিএমডব্লিউ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো মুহ্ম্মাদ আশশাম্মারী দীর্ঘ চল্লিশ দিন পর যখন তার বাবাকে সালাম করছিল আশপাশের সবগুলো মানুষ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়েছিল। এ কী? তার মাথায় পাগড়ী, মুখে এক মুষ্ঠি দাড়ি, পায়ে সাধারণ স্যান্ডেল, চোখে মুখে তার কী এক প্রাপ্তির আবেশ- ওর বাবা শেখ আশ শাম্মারী এসব দেখে বলে উঠলো- তুই তো পাগল হয়ে গেছিস, এসব কী করছিস, তোকে আমি আজই মানসিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।
এরপরের ঘটনা খুবই সরল। মুহাম্মদ দিনরাত তার বাবাকে বলতো, বাবা তুমিও এসো, চল্লিশ দিন লাগিয়ে দেখো, মনের ভেতর কেমন কেমন করে!! সুন্নাতের যিন্দেগী মানো, প্রশান্তি আর সাফল্যে দুনিয়া আখেরাতে কামিয়াব হয়ে যাবে।
কিছুতেই শেখ আশ শাম্মারীর মন গলেনা। তিনি ভাবলেন, আমার ছেলেকে যে পাকিস্তানী জামাত ধরে বাংলাদেশ পাঠিয়েছিল, আমি ওদের খুঁেজ বের করবো, আমি পাকিস্তান যাবো। মুহাম্মদ এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাকে নিয়ে এল পাকিস্তানের ইজতেমায়।
ওর বাবা মুরব্বীদের খাস কামরায় গিয়ে তার নালিশ জানালো। মুরব্বীরা তাকে আশ্বস্ত করলেন, ইজতেমা শেষ হলে ঐ জামাতের সাথে তার দেখা করিয়ে দিবেন। শেখ অপেক্ষায় থাকলেন, কখন ইজতেমা শেষ হবে। এর ফাঁকে তিনি মুখ কালো করে ঘুরে বেড়ান মাঠের এখানে ওখানে। এরা কী করে? এত মানুষ কেন? এরা কী পাগল নাকি? এসব ভাবনায় ডুবে থাকলেন দুইদিন।
পরেরদিন সকালে এভাবে এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে তার টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হলো, বিদেশীদের তাঁবুতে না গিয়ে মাঠের মধ্যে করা অসংখ্য সাধারণ টাট্টিগুলোতে প্রয়োজন সারতে রওয়ানা হলো। এক বুড়ো দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবাইকে পানি ভরে দিচ্ছে বদনায়। জীবনভর অন্যের সেবা আর খেদমত পেয়ে দিনকাটানো বিলাসী আরব শেখের কাছে এ আর আশ্চর্যের কী? সেও তার বদনা এগিয়ে দিলো বুড়োর দিকে। একপলক সে দেখে নিলো বুড়োর চেহারা। চামড়ায় ভাঁজ পড়ে গেলেও এক অপার্থিব দ্যুাতি ছড়িয়ে রয়েছে তার মুখখানায়। পানি ভরা শেষ হলে শেখ যখন পিঠ ফিরিয়ে রওয়ানা হলেন, পেছন থেকে বুড়ো লোকটি তাকে বললো, জাযাকাল্লাহু খাইরান।
এ দুটি শব্দ থামিয়ে দিল তার গতি। শেখের মনে হঠাৎ এক ধাক্কা, আরে! পানি নিলাম আমি, খেদমত করলেন তিনি, জাযাকাল্লাহু তো আমার বলার কথা তার উপকারের কারণে, কিন্তু এই বুড়োমিয়া আমাকে জাযাকাল্লাহু বললো কেন? শেখ ভ্র“ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, আপনি আমাকে জাযাকাল্লাহু বললেন যে? এটাতো আমার বলা দরকার ছিলো।
শেখ আশশাম্মরীকে অবাক করে দিয়ে পাকিস্তানের বুড়ো সাধারণ মানুষটি তার ভাঙা ভাঙা আরবীতে বলতে লাগলেন, এই যে আমি আপনাকে পানি ভরে দিলাম, আপনি পানি নিলেন, আমাকে এতুটুকু খেদমত করার সুযোগ দিলেন, আমার খেদমতটুকু গ্রহণ করলেন, সওয়াব অর্জনের সুযোগ দিলেন, আমিই তো আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। জাযাকাল্লাহু তো আপনার প্রাপ্য এ মেহেরবানীর বিনিময়ে।
ভ্র“ কুঞ্চিত শেখের কপালের ভাজ সমান হয়ে এল। চোখের কোণে তার অশ্র“র বিন্দু। এ কেমন জগত, এরা কেমন মানুষ, এ কেমন ব্যবহার!
রিয়াদের শেখ তার এতক্ষণের সব অহমিকা আর ছেলের পরিবর্তনের জন্য দায়ী লোকগুলোকে খুঁেজ বের করার সব চিন্তা ভুলে জড়িয়ে ধরলেন এক সাধারণ বুড়োমিয়াকে। তাকে দিলের সবটুকু ভালোবাসা মিশিয়ে দোয়া করলেন। সব ভুলে আগলে নিলেন ছেলেকে। শুধু কি তাই! ছেলের হাত ধরে ইজতেমার পর তিনিও বের হয়ে গেলেন তাবলীগে।
এত বয়ান যার অন্তর গলাতে পারেনি, সামান্য একটু জাযাকাল্লাহু আর অন্যরকম খেদমতে তার জীবনের গতিপথ বদলে গেল নিমিষেই।
কাকরাইল মসজিদের সিঁড়িতে বসে বসে এ শেখের সেই ছেলেটি মুহাম্মদ আশ শাম্মারী যখন আমাকে এ ঘটনা শোনাচ্ছিল, আমি তাকিয়ে দেখি, চোখে মুখে তার ঐ সাধারণ নাম না জানা বুড়োমিয়ার জন্য এক রাশ কৃতজ্ঞতা আর শুকরিয়া ঝলমল করছে।
দলিল প্রমাণের জটিল বয়ান কিংবা বিতর্ক ছাড়াই এ মানুষগুলো এভাবে জয় করে চলেছে অসংখ্য মানুষের অশান্ত হৃদয়রাজ্য।
২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:২৮
আফিফা মারজানা বলেছেন: তামীম ভালোনা ।সবলেখায় আবেগ মিশিয়ে দেয় ,চোখে পানি এনে দেয় ।
৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪১
বাংলার হাসান বলেছেন: ভাল লাগল।
তাবলীগের বদৌলতে আল্লাহ অনেক মানুষকে হেদায়েত দান করেছেন এবং করবেন।
৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৫২
উদাসীফাহিম বলেছেন: darun...........sobi ALLAHr ichcha o doya
৫| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৩৩
রফিক আল জায়েদ বলেছেন: পরীক্ষা থাকাতে ইজতেমাতে যেতে পারিনি। বিদেশি তাবুতে ছিলাম দু'বার । অনেক স্মৃতি জমা আছে, আরব অনারবদের সাথের।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:২০
মাহিরাহি বলেছেন: ভাল লাগল।
তিনদিনে দুবার যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল।
দুতিনবছর গাশতও করা হয়েছিল নিয়মিত।