![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।
গত শনিবারের ভ্রমণ নিয়ে লেখা।
প্রতিবার দেশে যাওয়া কিংবা ওখান থেকে প্রবাসে ফিরে আসার সময় আমার মনে মনে প্রার্থনা থাকে, আমার পাশের সহযাত্রী যেন কোন তরুণ অথবা কোন অভিজ্ঞ বুড়ো মিয়া হোন- বিমানযাত্রার দীর্ঘসময়টা যেন গল্পে গল্পে কেটে যায়, সেজন্যই আমার এ মনোবাসনা।
জীবনের অনেক বেলায় যা চেয়েছি তার চেয়ে বেশি পেলেও এ বেলায় আমার ভাগ্য ব্যতিক্রম। আমার পাশে হয়তো কোন এমন বুড়া চাচার সিট পড়েছে যে অনবরত কফজমা গলায় কাশি দিচ্ছেন। তার সাথে গল্প তো দূরের কথা- তিনি কিছুক্ষণ পর বিকটসুরে নাক ডেকে ঘুমিয়ে পড়েন। অথবা এমন মহিলা- যার নাকভর্তি সর্দি- এবং তিনি হা করে বিমানের ভেতরের পরিবেশ দেখে দেখে সময় পার করে দিচ্ছেন আর কিছুক্ষণ পরপর ওড়না কিংবা রুমাল দিয়ে নাক মুছছেন। জীবনে এই প্রথম হয়তো তার আকাশযাত্রা- কাজেই কথা বলে সেখানে বিঘœ ঘটানোর ইচ্ছা আমার হৃদয়ে জাগে না। অসহায় আমি সাথে করে নিয়ে আসা সবগুলো পত্রিকা পড়ার পর হেডফোন কানে লাগিয়ে কোন দৃশ্য দেখা ছাড়া আর বিনোদন খুঁজে পাই না।
আমার সহযাত্রীদের বিবরণ আরও সকরুণ হয়ে উঠে দেশ থেকে ফিরে আসার বেলায়। পাশের যাত্রী অনবরত কাঁদছেন। নারীজাতির সব মমতা প্রকাশ পাচ্ছে তার চোখের অশ্র“জলে। এ নিয়ে বিরক্তির কিছু নেই সত্য, কিন্তু ভ্র“ কুঁচকে আসে যখন তিনি একের পর এক ফোন করে গ্রামের সবার সাথে কথা বলছেন। একই কথা তিনি জনে জনে বলছেন। গ্রামের চায়ের দোকানদারও বাদ যাচ্ছে না। আর এ আলাপ চলতে থাকে আকাশে উড়ার পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত। কেবিন ক্রুর বারবার অনুরোধ কিংবা সব ইশারা ঐ যাত্রীর চোখের পানির কাছে হার মেনে যায়। এমনই এক মহিলাযাত্রী এবার আমার পেছনের সীটে বসেছিলেন। আসনে বসার পর থেকে তার কান্না শুরু। তিনি বলে চলেছেন, তো যাই, দুআ কইরেন। ঘরের দিকে খেয়াল রাইখেন। আমি টাকার কথা রহিমরে বইলা আইছি। এই তো পেলেন এখন ছাড়বো। এহন বেল্ট মারমু। বিমান দৌড়ানি শুরু করছে। আপনের পাশে কে? সোহেলের মা, দেন, হেরে দেন।
আমার পাশের জন। মধ্যবয়স্ক যাত্রী। প্রচন্ড ক্লান্ত। হয়তো রাত থেকে বিমানবন্দরে বসে বসে অপেক্ষা করেছেন। বিদঘুটে ব্যাপারটি হলো, তিনি অনবরত নাকের পশম ছিড়ছেন। আর সিটকভারে তা মুছছেন। পুরো সিটকভারটাই যেন তার হাতের রুমাল। নাকে আঙুল দিচ্ছেন, ঢুকিয়ে ঘুরাচ্ছেন, আবার জোর করে টান দিচ্ছেন। আবার মোছা এবং তারপর আবার নাকের আরেক ছিদ্রে। আমি বেশ কয়েকবার চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকলাম, ভেবেছিলাম আমার তাকিয়ে থাকায় তিনি লজ্জায় তা আপাতত বিরতি দিবেন। কিসের লজ্জা, তিনি আমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে তার কাজ সারছেন। কমতির লক্ষণ নেই। কেবিন ক্রুরা বারবার যখন মোবাইল ফোন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন, তখনও ভেসে আসছে রিংটোন- ‘কি যাদু করেছো...।
এসব দৃশ্য আমার কাছে সহনীয়। বছরে তিনবার আমি বাংলাদেশে যাই। কাজেই এসব আর নতুন কিছু নয়। এবার আমাকে সবচেয়ে বেশি আহত করেছে এমিরেটস এয়ার লাইন্স। আমি আসনে বসে অবাক। এ কি? সামনের মনিটর কাঁপছে কেন? ছোটবেলায় গ্রামের চায়ের দোকানে সাদাকালো টিভির পর্দায় যেভাবে অনবরত ঢেউ খেলে যেত- সেরকম ভয়াবহ অবস্থা। ভেতরের শব্দযন্ত্র পুরনো মাইকের মতো ক্যা ক্যা করছে।
এমিরেটসে এটাই আমার প্রথম যাত্রা নয়। আরও কয়েকবার চড়েছি। তাদের সেবার মান দেখে আমি আনন্দিত। সেজন্যই এবারও কাতার এয়ারওয়েজ ছেড়ে এমিরেটস এর টিকেট নিয়েছিলাম। আমি মাথা উঁচিয়ে চারপাশে তাকালাম। কেমন জীর্ণদশা এর। আমার টিকেট বের করে প্লেনটির মডেল দেখতে চাইলাম। এবার নিজেকে সত্যিই অনেক বেশি বোকা ও অসহায় মনে হল। এটি বোয়িং-৭৭৭ নয়, অতি পুরনো আমলের এয়ারবাস। খাইছে আমারে!
তাইতো! এজন্যই তো কেবিনক্রুদের পোষাকও ভিন্ন। চেয়ারগুলোও শক্ত শক্ত। আসনের পেছনে লাগানো স্ক্রীন তখনও কাঁপছে। তাতে মাত্র সাতটি সিনেমা লোড করা আছে। এর চেয়ে বেশি কিছু নেই। কাজেই ভেতরের পরিবেশ এবং যাত্রা ও সেবার মান নিয়ে লেখার মতো অত আহামরিও কিছু নেই।
অসমাপ্ত..
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫৩
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: ভাললাগা +