নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আরেকটু ভাল থাকার চিন্তায় আমাদের আর ভাল থাকাটাই হয়ে উঠে না
বাঙালি খারাপ, বাঙালি হয়েও একথা বলেনি এমন কেউ কি আছে? আসলেই নেই।
করোনা ভাইরাসের এই দুঃসময়ে অনেক মানুষজন আছে যারা শুধু বাঙালির দোষ দেখে। আর এই মানুষজন আসলে এলিট শ্রেনীর মানুষ বলা চলে। যাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে তেমন সীমাবদ্ধতা নেই, বিলাসিতায় হয়তো পরিস্থিতি ভেদে সীমাবদ্ধতা থাকে।
১.
বিদেশ ফেরত যে মানুষ গুলো আসলো তাদেরকে সেফ এবং শিউর কোয়ারান্টাইন না করে করা হলো হোম কোয়ারান্টাইন। আর এই মানুষগুলো সেটা মানলো না।
- আর কিউট এলিট শ্রেনী মনে করে এখানে সরকারের কি দোষ! ওই মানুষগুলো কেন নিজেদের জন্য এবং অন্যের সেফটির জন্য কোয়ারান্টাইনে থাকলো না! শালা অশিক্ষিত, মূর্খ বাঙ্গাল।
তাদের কথাতেই সমাধান আছে কিন্তু সেই সমাধান যেহেতু সরকারের করা লাগবে তাই তারা সেটা মানতে চায় না। এলিটরা বলছে ওই বিদেশ ফেরত মানুষ গুলো অশিক্ষিত, মূর্খ আর এই মূর্খদের কাছেই আশা করছে কিউট হোম কোয়ারান্টাইন? আর এরা যদি আসলেই এতো এলিট চিন্তা করতো তাহলে কি দেশে ফিরতো? ফিরলেও কি এভাবে ঘুরে বেড়াতো? এদের অনেকেই আতংকিত হয়ে এসেছে।
অথচ বিদেশ ফেরত মানুষকে কোয়ারান্টাইন করার কথা শুরু থেকেই বলা হচ্ছিলো। বলা হচ্ছিলো করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে। ফ্লাইট সীমিত করতে, পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ করতে। অথচ লাখ লাখ মানুষ আসলো যে যার মত ছড়িয়ে পড়লো। একমাত্র নিষেধাজ্ঞা ছিলো চায়নার ফ্লাইটে। ভাবটা এমন ছিলো চায়না ছাড়া বাকীসব নরমাল!
এখন বাইরে থাকা এসব মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার দ্বায়িত্ব কার? বাঙালি কেমন জেনেও তাদের উপর দ্বায়িত্ব চাপাতে চায় মানুষ?
লাখ লাখ বিদেশফেরত মানুষ যখন ছড়ালো তখন আবার তাদের খোঁজা শুরু হলো। যারা পাসপোর্টের ঠিকানায় তাদেরও হারিকেন দিয়ে খোঁজা শুরু হলো। ব্যাপারটা এমনই হালকা জ্বরে প্যারাসিটামল না খেলে পরে পাদদেশ দিগে স্যাটেলাইট দেয়া লাগে। তো ঠিকই বিদেশ ফেরতদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হলো কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
২.
পর্যাপ্ত প্রস্তুতির মধ্যে শুধু ঘর থেকে বের হওয়া বুঝায় না। চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রস্তুতি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা, পর্যাপ্ত খাদ্য ঘরে ঘরে পৌঁছানোর সামর্থ্য রাখা যদি লকডাউন হয়। কিন্তু সেগুলোর কিছুই কি ছিলো?
এখন এই প্রস্তুতিও কি জনগণ নেবে? হ্যাঁ জনগণের একটা অংশ নিচ্ছিলো। কিন্তু সেটাতেও মানুষের সমস্যা। মানুষ কেন প্রয়োজনের বেশি কিনছে ব্লা ব্লা। এসব মুহুর্তে মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কিনবে, বাজার অস্থিতিশীল হবে সেটাতো জানা কথা। কিন্তু না সাপ্লাই চেইন নির্বিঘ্ন রাখার কোন প্রস্তুতি ছিলো না বাজার নিয়ন্ত্রণের কোন প্রস্তুতি ছিলো যাতে কেউ খুব বেশি কিনতে না পারে। আর মানুষ এমন করতো না যদি তারা বাজারে সাপ্লাই চেইন কন্টিনিউ রাখার উদ্যোগ দেখতো। পরেও কেনা যাবে এই নিশ্চয়তা বা সম্ভাবনা ছিলো না। কোন নিশ্চয়তা ছিলো না বাসায় খাবার পাওয়ার যদি পরে কেনা নাও যায়।
এরপর হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে কিনে উধাও করে ফেললো মানুষ। সব দোষ পড়লো পাবলিকের। পাবলিক কেন বেশি কেনে? অথচ প্রস্তুতি হিসেবে এই স্যানিটাইজার এর সাপ্লাই চেইন তো আগেই ঠিক রাখা দরকার ছিলো। একটা পরিবারের যতজন বাইরে যায় সবাই স্যানিটাইজার ব্যবহারের জন্য কিনতে পারে তাদের সরাসরি দোষ দিয়েওতো লাভ নেই। তাছাড়া জাতি হিসেবে এই করোনা পরিস্থিতির আগে কতজন মানুষ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতো? ফার্মেসি গুলোতে খুবই সীমিত ভাবে থাকতো স্যানিটাইজার যেটা প্রথমা ধাক্কাতেই নাই হয়ে যায়।
৩.
টেস্টের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আগে থেকেই বলা হচ্ছিলো। কিন্তু সেটা করা হয়নি। উলটো বলা হয়েছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক, উন্নত দেশ থেকেও ভালো প্রস্তুতি, করোনার চেয়ে শ্লশক্তিশালী ব্লা ব্লা। অথচ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কিছুই চোখে পড়ে নি। সব কিছু বাদ চিকিৎসা সেবাই চোখে পড়লো না। টেস্টিং কিট নেই, সুরক্ষা সামগ্রী নেই, মানুষের টেস্ট করা হচ্ছিলো না, সেবার জন্য ফোন দিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছে সেবা পায় নি। আবার অনেকে মৃত্যু বরণও করেছে এবং যেহেতু সেগুলোর টেস্ট হয় নি তাই চলে আসলো নো টেস্ট নো করোনা সিস্টেম।
বাংলাদেশ অনেক সময় পেয়েছিলো। কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থার কি কোন প্রস্তুতি ছিলো এই বিশাল জনসংখ্যার জন্য? এটা যেহেতু মহামারি তাই ঢাকা কেন্দ্রিক চিকিৎসাওতো রিস্কি। একমাত্র IEDCR এর স্বল্প জনবল দিয়ে চললো। যারা সেবা প্রদানের চেয়ে বেশি প্রেস কনফারেন্সে লামছাম বলা যাবে সেটা নিয়েই ব্যস্ত ছিলো শুরুর দিকে।
আকিজ বা বসুন্ধরার মত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আগে এগিয়ে এসেছে করোনা রোগীর জন্য হাসপাতাল নির্মাণের জন্য। অথচ সরকারের তো আগেই এরকম প্রস্তুতি থাকার দরকার ছিলো। নতুন না হোক অন্য প্রতিষ্ঠান গুলোকেতো প্রস্তুত রাখা যেতো। হ্যাঁ এখন IEDCR বাদে অন্য কয়েক জায়াগায়ও করোনার টেস্ট বা চিকিৎসা হচ্ছে। কিন্তু প্রস্তুতি থাকলে আরো আগেইতো এটা করা যেতো।
নাকি এখানেও পাবলিকের দোষ তারা কেন বের হয়ে করোনা আক্রান্ত হলো! সরকার কি একা সেবা দিতে পারে?
৪.
বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় লক ডাউনের জন্য আরো আগে থেকেই আহবান করা হচ্ছিলো। অবশেষে লকডাউন না আসলেও আসলো ছুটি! গণপরিবহন বন্ধ না এমন ছুটি ঘোষণা করলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।
এলিট শ্রেনী দোষ দিলো সরকার বন্ধ করলো সব অথচ এরা ছড়িয়ে যাচ্ছে সারাদেশে। অথচ এদের ছড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে সেটা বলতে এলিটদের চেতনায় লাগে। একদিনে মানুষ ঢাকার বাইরে যায় নি। ৩-৪ দিন ধরে গিয়েছে। কোন নিয়ন্ত্রণ ছিলো না। শেষে গণ পরিবহণ বন্ধ না করলে আরো মানুষ আসতো যেতো।
সরকার ইচ্ছে করেই গণপরিবহন বন্ধ না করে লকাডাউনের জায়গায় ছুটি ঘোষণা করেছে। কারণ এতে মানুষ ছড়িয়ে পড়লে রাজধানীতে চাপ কমবে। কিসের চাপ কমবে? প্রস্তুতি না থাকার দরুন মৌলিক চাহিদা নিয়ে যে একটা চাপ সৃষ্টি হবে সেটা রাজধানীতে কিছুটা হলেও কম থাকবে এবং সেই সংকটকে কেন্দ্র করে কোন অনাকংখিত জনগণের ক্ষোভের সামনেও পড়বে না রাজধানী।
যারা গেলো তারা কেন গেলো? এদের বেশিরভাগেরই বিচার বুদ্ধি ছিলো না। আর তাই অপরিকল্পিত ভাবে ঘোষণা করা ছুটি এরাও পরিকল্পনা করে কাটানোর জন্য ছড়িয়ে পড়লো।
আবার এদের অনেকেই মৌলিক নিরাপত্তার অভাবে চলে গিয়েছে। বিশেষ করে যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এবং ব্যাচেলর। এরাই বেশি ঢাকার বাইরে গিয়েছে। যদি মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করে এখনকার মত প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ করা হতো তাহলে এরাও থাকতো।
কিন্তু এলিট শ্রেনীর কথা এই লোকগুল কেন নিজেদের জন্য হলেও থাকলো না। নিম্নবিত্ত কাউকে বলে দেখবেন পারলে ঘরের বাইরে না যেতে। তার প্রথম প্রশ্ন হবে "খাবো কি?" এই উত্তর নিশ্চিত না করতে পারলে এদের আটকে রাখা যাবে না। আর এই দ্বায়িত্ব প্রথমেই সরকারের। বসুন্ধরা বা বেক্সিমকোর মালিকের না। তারাও ট্যাক্স দেয়। তাই যেখানে ট্যাক্স দেয়া হয় সেখানে জবাবদিহি চাওয়াটাই যৌক্তিক। শিরদাঁড়াহীন ভাবে সব দোষ জনগণের উপর চাপানো যায় না।
৪.
মাঝখানে গার্মেন্টস শোষকশ্রেণী শ্রমিকদের এই এক ভয়ানক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে ঢাকায় আনা নেয়া করালো। অথচ সরাকারের সাথে বোঝাপড়া ছাড়া অন্তত এটা করার সাহস পেতো গার্মেন্টস মালিকরা।
কিন্তু এলিট শ্রেনী এখানেও দোষ দেখে এরা শ্রমিকরা কেন আগে বাঁচার চিন্তা না করে এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে ঢাকায় আসলো! কিন্তু তারা এটা বুঝে না এই শ্রমিকরা সবচেয়ে বড় চিন্তায় ভোগে ক্ষুধার। ক্ষুধা নিয়ে কেউ মরতে চায় না তাই এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তারা বের হতে বাধ্য হিয়েছিলো।
৫.
সবারই ইনকাম সোর্স বন্ধ। তাই খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার মত সামর্থ্যবানও খাদ্য সংকটে ভুগবে এবং ভুগছে। আর এমনটা হবে সেটাতো জানা বিষয়। কোন প্রস্তুতি আছে কি?
সরকারি ভাবে মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে না পারলে ঘরে ঘরে নীরব দুর্ভিক্ষের মত অবস্থা সৃষ্টি হবে। বিদ্যানন্দ বা অন্যান্য মানবসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই অ্যাক্টিভ। কিন্তু চাইলেও তাদের দ্বারা প্রত্যেকের ঘরে পোঁছে দেয়া সম্ভব না।
অলরেডি দেখলাম মানুষ মজা নিচ্ছে করোনা আক্রান্তের চেয়ে চাল চোরের সংখ্যা বেশি। বিশেষ ব্যবস্থা না নিলে অনেক বাজে অবস্থার তৈরী হবে।
৬.
এমন দুর্দিনে এসে খুব মজায় মজায় ডাক্তার আর জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়ারো একটা পায়তারা হচ্ছে।
অথচ সময়মত প্রস্তুতি আর সিদ্ধান্ত নিয়ে ডাক্তারদের নিয়ে এই সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আগে থেকেই প্রস্তুতি থাকলে, আপদকালীন সময়ে চিকিৎসা প্রদান নিয়ে পরিকল্পনা থাকলে এই বাজে অবস্থার মুখোমুখি হওয়া লাগতো না।
৭.
যেহেতু বাঙালি খারাপ তাই এখনো অনেক মানুষই সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই বের হচ্ছে প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে। আর সেটা জেনেও এদের সচেতনতার অপেক্ষা করা স্রেফ বোকামি এবং কিছুক্ষেত্রে আত্মঘাতী। প্রত্যেকটা এলাকাতেই এই অবস্থা। অবাক করার বিষয় এখনো এলাকার ছিঁচকে ছেলেপেলেরা এখনো গলিতে গলিতে জড়ো হয়ে আড্ডা দেয়। প্রয়োজনে সমন্বয় রেখে আরো আইন শৃংখলা বাহিনী নামানো হোক কঠোরভাবে। মূল রাস্তা গুলো ফাঁকা থাকলে বিভিন্ন এলাকার অলিগলি ফাঁকা থাকছে না।
৮.
অনেকেই সরকারের মত উদাহরণ দিবেন উন্নত দেশেও বাজে অবস্থা। এসব অজুহাত অবান্তর। কারণ বাংলাদেশ যথেষ্ট সময় পেয়েছে যথেষ্ট। তখনও অনেক দেশ আক্রান্ত হয় নি। প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই সেই সুযোগে প্রস্তুতি হিসেবে স্টক করা যেতো। হোক সেটা খ্যাদ্য বা চিকিৎসা সামগ্রী। কিন্তু এখন এই বাজে অবস্থা বৈশ্বিক সমস্যা। তাই চাইলেই হুট করে সাহায্য এনে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না।
৯.
সকল দন্ধ বিরোধ বাদ দিয়ে দল মত নির্বিশেষে সরাকারি উদ্যোগে কাজ না করলে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।
মানুষ খাবার না পেলে ঘরে বসে থাকবে না। রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। অলরেডি জনসমাগম করে বিক্ষোভের খবর দেখা গেছে, খাবারের জন্য আত্মহত্যার খবর দেখা গেছে।
এসবের জন্যতো অন্তত জনগণকে দোষ দেয়া যায় না। হ্যাঁ জনগোনের দোষ, একটা দেশ সিঙ্গাপুরের মত উন্নত হয়ে যাওয়া দেশে এরা কেন ভুখা জনগণ! খাবার নিশ্চিত করতে না খালি পেটেই করোনা ছড়াবে। ব্যবস্থা নেয়ার আগেই সব শেষ হয়ে যাবে।
......
বাঙালি খারাপ বলে সরকারের করণীয় এড়ানোর সুযোগ নেই। বাঙালি বা রাষ্ট্রের দোষ বলে আজকাল সরকারকে সাইড করার একটা প্রোপাগান্ডা চলে। অনেকেই না বুঝেই এই প্রোপাগান্ডায় শামিল হয়ে যায়। এই দুর্যোগে অন্তত বায়াজড না হয়ে সরকারের দ্বায়িত্ব কি সেটা বোঝা উচিৎ।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের শুরুর দিকে এরা চুপচাপ ছিলো। কারণ এরা তখন বলার কিছুই পায় নি যেটা কোনভাবে সরকারের সমর্থনে যাবে। যেই না পরিস্থিতি খারাপের দিকে মোড় নিলো সরকার নিজের ভুল আর ভাঁড়ামি ছেড়ে অপরিকল্পিত ভাবে হলেও কিছু উদ্যোগ নেয়া শুরু করলো তখনই এদের আবির্ভাব।
বাঙালি খারাপ, বাঙালি হয়েও একথা বলেনি এমন কেউ কি আছে? আসলেই নেই।
করোনা ভাইরাসের এই দুঃসময়ে অনেক মানুষজন আছে যারা শুধু বাঙালির দোষ দেখে। আর এই মানুষজন আসলে এলিট শ্রেনীর মানুষ বলা চলে। যাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে তেমন সীমাবদ্ধতা নেই, বিলাসিতায় হয়তো পরিস্থিতি ভেদে সীমাবদ্ধতা থাকে।
১.
বিদেশ ফেরত যে মানুষ গুলো আসলো তাদেরকে সেফ এবং শিউর কোয়ারান্টাইন না করে করা হলো হোম কোয়ারান্টাইন। আর এই মানুষগুলো সেটা মানলো না।
- আর কিউট এলিট শ্রেনী মনে করে এখানে সরকারের কি দোষ! ওই মানুষগুলো কেন নিজেদের জন্য এবং অন্যের সেফটির জন্য কোয়ারান্টাইনে থাকলো না! শালা অশিক্ষিত, মূর্খ বাঙ্গাল।
তাদের কথাতেই সমাধান আছে কিন্তু সেই সমাধান যেহেতু সরকারের করা লাগবে তাই তারা সেটা মানতে চায় না। এলিটরা বলছে ওই বিদেশ ফেরত মানুষ গুলো অশিক্ষিত, মূর্খ আর এই মূর্খদের কাছেই আশা করছে কিউট হোম কোয়ারান্টাইন? আর এরা যদি আসলেই এতো এলিট চিন্তা করতো তাহলে কি দেশে ফিরতো? ফিরলেও কি এভাবে ঘুরে বেড়াতো? এদের অনেকেই আতংকিত হয়ে এসেছে।
অথচ বিদেশ ফেরত মানুষকে কোয়ারান্টাইন করার কথা শুরু থেকেই বলা হচ্ছিলো। বলা হচ্ছিলো করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে। ফ্লাইট সীমিত করতে, পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ করতে। অথচ লাখ লাখ মানুষ আসলো যে যার মত ছড়িয়ে পড়লো। একমাত্র নিষেধাজ্ঞা ছিলো চায়নার ফ্লাইটে। ভাবটা এমন ছিলো চায়না ছাড়া বাকীসব নরমাল!
এখন বাইরে থাকা এসব মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার দ্বায়িত্ব কার? বাঙালি কেমন জেনেও তাদের উপর দ্বায়িত্ব চাপাতে চায় মানুষ?
লাখ লাখ বিদেশফেরত মানুষ যখন ছড়ালো তখন আবার তাদের খোঁজা শুরু হলো। যারা পাসপোর্টের ঠিকানায় তাদেরও হারিকেন দিয়ে খোঁজা শুরু হলো। ব্যাপারটা এমনই হালকা জ্বরে প্যারাসিটামল না খেলে পরে পাদদেশ দিগে স্যাটেলাইট দেয়া লাগে। তো ঠিকই বিদেশ ফেরতদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হলো কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
২.
পর্যাপ্ত প্রস্তুতির মধ্যে শুধু ঘর থেকে বের হওয়া বুঝায় না। চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রস্তুতি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা, পর্যাপ্ত খাদ্য ঘরে ঘরে পৌঁছানোর সামর্থ্য রাখা যদি লকডাউন হয়। কিন্তু সেগুলোর কিছুই কি ছিলো?
এখন এই প্রস্তুতিও কি জনগণ নেবে? হ্যাঁ জনগণের একটা অংশ নিচ্ছিলো। কিন্তু সেটাতেও মানুষের সমস্যা। মানুষ কেন প্রয়োজনের বেশি কিনছে ব্লা ব্লা। এসব মুহুর্তে মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কিনবে, বাজার অস্থিতিশীল হবে সেটাতো জানা কথা। কিন্তু না সাপ্লাই চেইন নির্বিঘ্ন রাখার কোন প্রস্তুতি ছিলো না বাজার নিয়ন্ত্রণের কোন প্রস্তুতি ছিলো যাতে কেউ খুব বেশি কিনতে না পারে। আর মানুষ এমন করতো না যদি তারা বাজারে সাপ্লাই চেইন কন্টিনিউ রাখার উদ্যোগ দেখতো। পরেও কেনা যাবে এই নিশ্চয়তা বা সম্ভাবনা ছিলো না। কোন নিশ্চয়তা ছিলো না বাসায় খাবার পাওয়ার যদি পরে কেনা নাও যায়।
এরপর হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে কিনে উধাও করে ফেললো মানুষ। সব দোষ পড়লো পাবলিকের। পাবলিক কেন বেশি কেনে? অথচ প্রস্তুতি হিসেবে এই স্যানিটাইজার এর সাপ্লাই চেইন তো আগেই ঠিক রাখা দরকার ছিলো। একটা পরিবারের যতজন বাইরে যায় সবাই স্যানিটাইজার ব্যবহারের জন্য কিনতে পারে তাদের সরাসরি দোষ দিয়েওতো লাভ নেই। তাছাড়া জাতি হিসেবে এই করোনা পরিস্থিতির আগে কতজন মানুষ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতো? ফার্মেসি গুলোতে খুবই সীমিত ভাবে থাকতো স্যানিটাইজার যেটা প্রথমা ধাক্কাতেই নাই হয়ে যায়।
৩.
টেস্টের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আগে থেকেই বলা হচ্ছিলো। কিন্তু সেটা করা হয়নি। উলটো বলা হয়েছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক, উন্নত দেশ থেকেও ভালো প্রস্তুতি, করোনার চেয়ে শ্লশক্তিশালী ব্লা ব্লা। অথচ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কিছুই চোখে পড়ে নি। সব কিছু বাদ চিকিৎসা সেবাই চোখে পড়লো না। টেস্টিং কিট নেই, সুরক্ষা সামগ্রী নেই, মানুষের টেস্ট করা হচ্ছিলো না, সেবার জন্য ফোন দিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছে সেবা পায় নি। আবার অনেকে মৃত্যু বরণও করেছে এবং যেহেতু সেগুলোর টেস্ট হয় নি তাই চলে আসলো নো টেস্ট নো করোনা সিস্টেম।
বাংলাদেশ অনেক সময় পেয়েছিলো। কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থার কি কোন প্রস্তুতি ছিলো এই বিশাল জনসংখ্যার জন্য? এটা যেহেতু মহামারি তাই ঢাকা কেন্দ্রিক চিকিৎসাওতো রিস্কি। একমাত্র IEDCR এর স্বল্প জনবল দিয়ে চললো। যারা সেবা প্রদানের চেয়ে বেশি প্রেস কনফারেন্সে লামছাম বলা যাবে সেটা নিয়েই ব্যস্ত ছিলো শুরুর দিকে।
আকিজ বা বসুন্ধরার মত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আগে এগিয়ে এসেছে করোনা রোগীর জন্য হাসপাতাল নির্মাণের জন্য। অথচ সরকারের তো আগেই এরকম প্রস্তুতি থাকার দরকার ছিলো। নতুন না হোক অন্য প্রতিষ্ঠান গুলোকেতো প্রস্তুত রাখা যেতো। হ্যাঁ এখন IEDCR বাদে অন্য কয়েক জায়াগায়ও করোনার টেস্ট বা চিকিৎসা হচ্ছে। কিন্তু প্রস্তুতি থাকলে আরো আগেইতো এটা করা যেতো।
নাকি এখানেও পাবলিকের দোষ তারা কেন বের হয়ে করোনা আক্রান্ত হলো! সরকার কি একা সেবা দিতে পারে?
৪.
বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় লক ডাউনের জন্য আরো আগে থেকেই আহবান করা হচ্ছিলো। অবশেষে লকডাউন না আসলেও আসলো ছুটি! গণপরিবহন বন্ধ না এমন ছুটি ঘোষণা করলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।
এলিট শ্রেনী দোষ দিলো সরকার বন্ধ করলো সব অথচ এরা ছড়িয়ে যাচ্ছে সারাদেশে। অথচ এদের ছড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে সেটা বলতে এলিটদের চেতনায় লাগে। একদিনে মানুষ ঢাকার বাইরে যায় নি। ৩-৪ দিন ধরে গিয়েছে। কোন নিয়ন্ত্রণ ছিলো না। শেষে গণ পরিবহণ বন্ধ না করলে আরো মানুষ আসতো যেতো।
সরকার ইচ্ছে করেই গণপরিবহন বন্ধ না করে লকাডাউনের জায়গায় ছুটি ঘোষণা করেছে। কারণ এতে মানুষ ছড়িয়ে পড়লে রাজধানীতে চাপ কমবে। কিসের চাপ কমবে? প্রস্তুতি না থাকার দরুন মৌলিক চাহিদা নিয়ে যে একটা চাপ সৃষ্টি হবে সেটা রাজধানীতে কিছুটা হলেও কম থাকবে এবং সেই সংকটকে কেন্দ্র করে কোন অনাকংখিত জনগণের ক্ষোভের সামনেও পড়বে না রাজধানী।
যারা গেলো তারা কেন গেলো? এদের বেশিরভাগেরই বিচার বুদ্ধি ছিলো না। আর তাই অপরিকল্পিত ভাবে ঘোষণা করা ছুটি এরাও পরিকল্পনা করে কাটানোর জন্য ছড়িয়ে পড়লো।
আবার এদের অনেকেই মৌলিক নিরাপত্তার অভাবে চলে গিয়েছে। বিশেষ করে যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এবং ব্যাচেলর। এরাই বেশি ঢাকার বাইরে গিয়েছে। যদি মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করে এখনকার মত প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ করা হতো তাহলে এরাও থাকতো।
কিন্তু এলিট শ্রেনীর কথা এই লোকগুল কেন নিজেদের জন্য হলেও থাকলো না। নিম্নবিত্ত কাউকে বলে দেখবেন পারলে ঘরের বাইরে না যেতে। তার প্রথম প্রশ্ন হবে "খাবো কি?" এই উত্তর নিশ্চিত না করতে পারলে এদের আটকে রাখা যাবে না। আর এই দ্বায়িত্ব প্রথমেই সরকারের। বসুন্ধরা বা বেক্সিমকোর মালিকের না। তারাও ট্যাক্স দেয়। তাই যেখানে ট্যাক্স দেয়া হয় সেখানে জবাবদিহি চাওয়াটাই যৌক্তিক। শিরদাঁড়াহীন ভাবে সব দোষ জনগণের উপর চাপানো যায় না।
৪.
মাঝখানে গার্মেন্টস শোষকশ্রেণী শ্রমিকদের এই এক ভয়ানক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে ঢাকায় আনা নেয়া করালো। অথচ সরাকারের সাথে বোঝাপড়া ছাড়া অন্তত এটা করার সাহস পেতো গার্মেন্টস মালিকরা।
কিন্তু এলিট শ্রেনী এখানেও দোষ দেখে এরা শ্রমিকরা কেন আগে বাঁচার চিন্তা না করে এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে ঢাকায় আসলো! কিন্তু তারা এটা বুঝে না এই শ্রমিকরা সবচেয়ে বড় চিন্তায় ভোগে ক্ষুধার। ক্ষুধা নিয়ে কেউ মরতে চায় না তাই এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তারা বের হতে বাধ্য হিয়েছিলো।
৫.
সবারই ইনকাম সোর্স বন্ধ। তাই খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার মত সামর্থ্যবানও খাদ্য সংকটে ভুগবে এবং ভুগছে। আর এমনটা হবে সেটাতো জানা বিষয়। কোন প্রস্তুতি আছে কি?
সরকারি ভাবে মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে না পারলে ঘরে ঘরে নীরব দুর্ভিক্ষের মত অবস্থা সৃষ্টি হবে। বিদ্যানন্দ বা অন্যান্য মানবসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই অ্যাক্টিভ। কিন্তু চাইলেও তাদের দ্বারা প্রত্যেকের ঘরে পোঁছে দেয়া সম্ভব না।
অলরেডি দেখলাম মানুষ মজা নিচ্ছে করোনা আক্রান্তের চেয়ে চাল চোরের সংখ্যা বেশি। বিশেষ ব্যবস্থা না নিলে অনেক বাজে অবস্থার তৈরী হবে।
৬.
এমন দুর্দিনে এসে খুব মজায় মজায় ডাক্তার আর জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়ারো একটা পায়তারা হচ্ছে।
অথচ সময়মত প্রস্তুতি আর সিদ্ধান্ত নিয়ে ডাক্তারদের নিয়ে এই সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আগে থেকেই প্রস্তুতি থাকলে, আপদকালীন সময়ে চিকিৎসা প্রদান নিয়ে পরিকল্পনা থাকলে এই বাজে অবস্থার মুখোমুখি হওয়া লাগতো না।
৭.
যেহেতু বাঙালি খারাপ তাই এখনো অনেক মানুষই সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই বের হচ্ছে প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে। আর সেটা জেনেও এদের সচেতনতার অপেক্ষা করা স্রেফ বোকামি এবং কিছুক্ষেত্রে আত্মঘাতী। প্রত্যেকটা এলাকাতেই এই অবস্থা। অবাক করার বিষয় এখনো এলাকার ছিঁচকে ছেলেপেলেরা এখনো গলিতে গলিতে জড়ো হয়ে আড্ডা দেয়। প্রয়োজনে সমন্বয় রেখে আরো আইন শৃংখলা বাহিনী নামানো হোক কঠোরভাবে। মূল রাস্তা গুলো ফাঁকা থাকলে বিভিন্ন এলাকার অলিগলি ফাঁকা থাকছে না।
৮.
অনেকেই সরকারের মত উদাহরণ দিবেন উন্নত দেশেও বাজে অবস্থা। এসব অজুহাত অবান্তর। কারণ বাংলাদেশ যথেষ্ট সময় পেয়েছে যথেষ্ট। তখনও অনেক দেশ আক্রান্ত হয় নি। প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই সেই সুযোগে প্রস্তুতি হিসেবে স্টক করা যেতো। হোক সেটা খ্যাদ্য বা চিকিৎসা সামগ্রী। কিন্তু এখন এই বাজে অবস্থা বৈশ্বিক সমস্যা। তাই চাইলেই হুট করে সাহায্য এনে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না।
৯.
সকল দন্ধ বিরোধ বাদ দিয়ে দল মত নির্বিশেষে সরাকারি উদ্যোগে কাজ না করলে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।
মানুষ খাবার না পেলে ঘরে বসে থাকবে না। রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। অলরেডি জনসমাগম করে বিক্ষোভের খবর দেখা গেছে, খাবারের জন্য আত্মহত্যার খবর দেখা গেছে।
এসবের জন্যতো অন্তত জনগণকে দোষ দেয়া যায় না। হ্যাঁ জনগোনের দোষ, একটা দেশ সিঙ্গাপুরের মত উন্নত হয়ে যাওয়া দেশে এরা কেন ভুখা জনগণ! খাবার নিশ্চিত করতে না খালি পেটেই করোনা ছড়াবে। ব্যবস্থা নেয়ার আগেই সব শেষ হয়ে যাবে।
......
বাঙালি খারাপ বলে সরকারের করণীয় এড়ানোর সুযোগ নেই। বাঙালি বা রাষ্ট্রের দোষ বলে আজকাল সরকারকে সাইড করার একটা প্রোপাগান্ডা চলে। অনেকেই না বুঝেই এই প্রোপাগান্ডায় শামিল হয়ে যায়। এই দুর্যোগে অন্তত বায়াজড না হয়ে সরকারের দ্বায়িত্ব কি সেটা বোঝা উচিৎ।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের শুরুর দিকে এরা চুপচাপ ছিলো। কারণ এরা তখন বলার কিছুই পায় নি যেটা কোনভাবে সরকারের সমর্থনে যাবে। যেই না পরিস্থিতি খারাপের দিকে মোড় নিলো সরকার নিজের ভুল আর ভাঁড়ামি ছেড়ে অপরিকল্পিত ভাবে হলেও কিছু উদ্যোগ নেয়া শুরু করলো তখনই এদের আবির্ভাব।
০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৫৩
জাহিদ শাওন বলেছেন: আমিন।
জাযাকাল্লাহ! দোয়া করবেন।
২| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:৪৭
নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি যা বলেছেন ঠিকই বলেছেন।
সবাই যে যার বাসা থেকে আল্লাহ এর নামে শবে বরাত এর নামাজ পরি আর গুনাহ গুলার জন্য ক্ষমা চাই।
আল্লাহ আপনি আমাদের সবাইকে মাফ করে দিন।