নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইকনোমিকস আমার প্রফেশন আর সাহিত্য আমার প্যাশন।

জহিরুল ইসলাম কক্স

:)

জহিরুল ইসলাম কক্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্ক্রিপ্ট এর জন্য রেখেছি।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৪

জামিল সাহেব চোরের মতো চুপিচুপি পিছনের দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকলেন। পা টিপে টিপে নিজের ঘরে এসে নিঃশব্দে খাটের উপর বসে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন! তিনি নিশ্চিত বাড়িতে ঢোকার সময় তাঁকে কেউ দেখেনি। খাটে শান্তভাবে বসার পরপরই তিনি বুঝতে পারলেন যে তাঁর গলা শুকিয়ে গেছে। যেই না খাটের পাশের ডেক্স থেকে পানির গ্লাস নেয়ার জন্য হাত বাড়ালেন, অমনি তিনি দরজায় ছায়ামূর্তিটা টের পেলেন। বেচারা এতটাই চমকে উঠলেন যে হাত থেকে গ্লাস আর একটু হলে পড়েই যেত। চমকে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে যথেষ্ট উঁচু গলায় অনেকটা চিৎকার করেই তিনি বললেন, কে?

নিশি জানে আবছা অন্ধকার হলেও বাবা ওকে দেখেছে। আর উনি বলতে চেয়েছেন, কী রে, মা?
কিন্তু মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে 'কে'। সুতরাং প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নির্লিপ্ত গলায় নিশি বলল, ঠান্ডা পানি দিয়ে লেবুর শরবত এনেছি, আব্বু।

জামিল সাহেব এমনভাবে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন যেন নিশি চাইনিজ ভাষায় কথা বলেছে; উনি কিছুই বুঝতে পারেননি। তারপর হঠাৎ সব বুঝে ফেলেছেন এমন ভাবে মাথা নেড়ে আগের মতই উঁচু স্বরে বললেন, লেবুতে অ্যাসিডিটি হয়। এই সন্ধ্যবেলা লেবুর শরবত খেয়ে কি আমি মরব? হ্যাঁ, মরব?

নিশির কোন ভাবান্তর হয়েছে বলে মনে মনে হলো না। ও শরবতের গ্লাস হাতে তখনো দরজায় দাঁড়িয়ে। জামিল সাহেব আবারও গলা বাড়ালেন, আর এই বৃষ্টিবাদলের দিনে ঠান্ডা পানি কেন, হু? এই ঠান্ডার দিনে ঠান্ডা খাইয়ে আমার গলার বারোটা বাজানোর ধান্ধা? বলি আমার গলার বারোটা বাজানোর ধান্ধা?

বাবা যখন কোন কারণে নার্ভাস হয়ে যায় তখন একই কথা দুবার বলে। এই মুহূর্তে উনি নিশিকে দেখে নার্ভাস। ওর একবার ইচ্ছে হলো বলে, আব্বু, আমি কানে কম শুনতে পাই না। আপনি আস্তে কথা বলুন। আর এক কথা দুবার বলারও দরকার নেই। আপনার গলার ওপর দিয়ে এমনিতেই যথেষ্ট ধকল যাচ্ছে।
কিন্তু ও কিছুই বলল না। চোর যেমন পুলিশ দেখলে পাশ কেটে যায়, তেমনি জামিল সাহেবও এই মুহূর্তে নিশিকে পাশ কেটে যেতে চাইছে। নিশিও সেক্ষেত্রে বাবাকে সাহায্য করল। লম্বা-লম্বা পা ফেলে খাটের পাশের ডেক্সে শরবতের গ্লাসটা রেখে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।

নিশি বের হবার দশ সেকেন্ডের মধ্যে জামিল সাহেব এক নিঃশ্বাসে ঢকঢক করে শরবতের গ্লাসটা খালি করে ফেললেন। আর তার দশ সেকেন্ড পরে কাজের মেয়ে রুবিনা এসে বলল, খালু, নিশি আপা জিগাইছে শরবত আর লাগব কি না?

উত্তরে জামিল সাহেব বললেন, থাপড়াই দাঁত ফেলে দিব। যা এখান থেকে!

এর কিছুক্ষণ পর রুবিনা আরেক গ্লাস শরবত এনে রেখে গেল। আর জামিল সাহেব সেটাও ঢকঢক করে গিলে নিলেন।

তারপর হাত পা এলিয়ে বিছানায় শোয়া মাত্রই তার মনোযোগ গেল বাইরে বাজতে থাকা গানে। গানের ভলিউম বাড়ছে। একটার পর একটা হিন্দি গান বাজছে। আর কিছুক্ষণ পরপর দুই তিন জনের হাসির শব্দ ভেসে আসছে একসাথে। জামিল সাহেব প্রথমে ভাবলেন কিছু বলবেন না এবং শেষ পর্যন্তও তিনি তাঁর কথায় অটল থাকলেন; কিছুই বললেন না। শুধু চুপচাপ গিয়ে সবার মাঝখান থেকে সাউন্ড বক্সটা নিয়ে মাথার ওপর থেকে একটা আছাড় মেরে ভেঙে চলে আসলেন। পোষা কুকুর টমি হঠাৎ বাজতে থাকা গান বন্ধ হয়ে সাউন্ড বক্স ভাঙার ধড়াম শব্দে কৌতূহলী হয়ে ঘেউ ঘেউ করে ওঠায় আসার আগে কেবল ওকেই একটা ধমক দিলেন, থাপড়াই দাঁত ফেলে দিব! যা এখান থেকে!

থাপ্পড় খেয়ে দাঁত পড়ে যাওয়ার ভয়ে হোক বা অন্য যে কোন কারণে হোক টমিও দু-পা পিছিয়ে চুপ করে গেল।

গত এক সপ্তাহ ধরে জামিল সাহেব এমন অদ্ভুত আচরণ করছেন। সকালবেলা চোরের মতো বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। আর সন্ধ্যাবেলায় চুপিচুপি পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢোকে। ঠিক মতো খাওয়া নেই, গোসল নেই, ঘুম নেই। উনি কারো সামনে পড়তে চান না, কেউ উনার সামনে পড়ুক সেটাও উনি চান না। কেউ কিছু বললে এমনকি না বললেও যাকে তাকে যখন তখন 'থাপড়াই' দাঁত ফেলে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন।
গত এক সপ্তাহে উনি কারো মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেননি। উনি কথা বলেন সিলিংয়ের মাকড়শার জাল আর ফ্লোরের কার্পেটের বাহার দেখে-দেখে।

গত এক সপ্তাহের মতো আজও রাতের খাবারের সময় উনি টেবিলে এলেন না। রাত যখন গভীর তখন পা টিপে টিপে উঠে গেলেন খাট থেকে। ডান পাশের করিডোর ধরে হেঁটে দুই রুম পরে একটা দরজার সামনে এসে থামলেন। দরজা খোলা। উনি ভিতরে উঁকি দিলেন। তারপর আবার নিজের রুমে ফিরে এলেন। স্ত্রীকে ডেকে বললেন, এখনো সময় আছে। মানা করে দেই?

: প্রত্যেকদিন রাতে এক কথা বলবেন না তো!

- না, আমি সত্যি বলছি। না দিলে হয় না?

: ঘুমান।

জামিল সাহেব শান্তি পেলেন না। আর প্রায় আট-নয় ঘণ্টা বাকি। উনি আবার উঠলেন। পা টিপে টিপে ডানপাশের করিডোর ধরে হাঁটতে শুরু করলেন। প্রথমে ডাইনিং রুম, তারপর উনার ছেলে নকিবের রুম, তারপর মেয়ে নিশি। উনি খোলা দরজা দিয়ে নিশির বিছানার পাশে গিয়ে বসলেন খুব সাবধানে।

মেয়েটা ঘুমাচ্ছে। এই মেয়েটা জামিল সাহেবের। সেই ছোট্ট মেয়েটা। ও বড় কেন হলো? কী এমন হতো ছোট্টটি থেকে গেলে! জামিল সাহেব গলায় প্রচণ্ড চাপ অনুভব করলেন। নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছে। বুকের ভিতর কী যেন নেই হয়ে যাচ্ছে। উনি কিছুতেই মানতে পারছেন না আর কয়েক দিন পর এই মেয়েটা আর এই বিছানায় ঘুমাবে না। উনি ঘরে ফিরে আর ওকে দেখবে না। ও অন্য কারো ঘরে চলে যাবে। এই ঘরে নিশি আর থাকবে না! কেন? মেয়ে বিয়ে না দিলে হয় না?
জামিল সাহেবের ইচ্ছে করছে চিৎকার করে বলে, এই মেয়েটা আমার। আমি কিছুতেই ওকে নিয়ে যেতে দিব না। ও ঘরে না থাকলে আমার ঘর শূন্য হয়ে যাবে। ও ঘরে না থাকলে আমার ঘর আর ঘরই থাকবে না। আমার মেয়েটা আমার কাছেই থাক।

কাল নিশির অ্যাঙ্গেজমেন্ট। কদিন পর বিয়ে। কপালের ওপর পড়া বাবার ভারী নিঃশ্বাস কিংবা কান্নার ঝাঁকুনিতে নয়, নিশি শুরু থেকেই সজাগ। ও জানে বাবা প্রতি রাতে ওর খাটের কাছে এসে বসে নিঃশব্দে চোখের ফেলে চলে যায়। বিয়ের কথাবার্তা শুরু হবার পর থেকেই বাবা কেবল পালিয়ে বেড়াচ্ছে ওর থেকে। কিছুতেই সামনে আসে না। পাছে ও বাবাকে কাঁদতে দেখে ফেলে! ফোলা-ফোলা চোখে উনি অকারণে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে। কথা বলতে বলতে হঠাৎ নির্বাক হয়ে যায়। অবুঝের মতো এদিক-ওদিক তাকায়। মনে হয় যেন কী হারিয়ে ফেলেছেন! তারপর আনমনে বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে যান ঘর থেকে। নিশির ভেতরটাও যে কেমন জ্বলে সেটা ও কাউকে বোঝাতে পারে না। বোঝাতে চায়ও না। পাছে ওকে দুর্বল দেখে বাবা আরো দুর্বল হয়ে যায়! ও যে বড্ড বাবা ভক্ত! বাবাও যে মেয়ে বলতে অজ্ঞান। গত এক সপ্তাহ ধরে দুজনেই দুজনের কাছ থেকে চোখের জল লুকানোর চেষ্টায় ছিল। প্রত্যক্ষ বা পরক্ষভাবে দুজনেই দুজনকে সাহায্য করেছে। সামনাসামনি কেউ কারো দুর্বলতা প্রকাশ করেনি। কিন্তু আজ আর কেউই পারল না।
নিশির ইচ্ছে করল সেই ছোট্ট বেলার মতো একবার বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলে, আব্বু, আমি ভালো থাকব। বিয়ে হয়ে গেলেও আমি আপনার মেয়েই থাকব। আপনি শান্ত হোন। এমন পালিয়ে বেড়ালে আমার যে আরো কষ্ট হয়! আপনার মুখের দিকে তাকালে আমিও যে আর স্থির থাকতে পারি না! আব্বু, আমিও যে আপনাকে অনেক ভালোবাসি!

কিন্তু নিশি এসবের কিছুই বলতে পারল না। কেবল আলতো ভাবে বাবার হাতটা ধরে কাঁপা গলায় ছোট্ট করে একবার ডাকল, আব্বু!

জামিল সাহেব বরফের মতো জমে গেলেন।

তারপর শুধু বললেন, মা!

দুজনের কেউই আর কোন কথা বলতে পারল না। অথচ কত কথাই না বলার ছিল!

'নিশিকথন'
Khadizatul Kobra Sonya

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:০৯

মৌরি হক দোলা বলেছেন: তাহলে লেখক কি Khadizatul Kobra Sonya?

ভালো লেগেছে। বাবা-মেয়ের চমৎকার এক কাহিনি!

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৫৯

জহিরুল ইসলাম কক্স বলেছেন: ইয়েস।উনার কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে।তাই এইখানে জমা রেখেছি। অনুমতি পেলেই স্ক্রিপ্ট লিখবো।

২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:১৯

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ভিন্ন থিমের গল্প। মনে হচ্ছে, বাস্তব গল্প।

আপনি কি নাটক নির্মাতা?

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:০১

জহিরুল ইসলাম কক্স বলেছেন: না।আমি এক অখ্যাত স্ক্রিপ্ট রাইটার।বেশিরভাগ অন্যের ফরমায়েশ পূরণ করি।খুব কম ক্ষেত্রেই নিজের নাম আসে

৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:২৯

ওমেরা বলেছেন: অনেক ভাললাগার মত একটা গল্প ।

৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:৩১

বাকপ্রবাস বলেছেন: ভাল লাগল।

৫| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: অবশ্যই বাতসব গল্প। মানুষ তার অভিজ্ঞতার বাইরে কিছুই লিখতে পারে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.