নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ওরে ও তরুণ ঈশান! বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ। ধ্বংস-নিশান উঠুক প্রাচী-র প্রাচীর ভেদি’॥
জনৈক ব্রিটিশ অফিসার তাদের এলাহাবাদের সাফল্য সম্বন্ধে উৎসাহিত হয়ে যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা থেকে কিছুটা অংশ তুলে দেওয়া হল—"....আমাদের এবারকার যাত্রা অদ্ভুত রকম উপভোগ্য হয়েছে। আমরা নদীপথে স্টিমারে চলেছি, আর শিখ ও ফুসিলিয়ার বাহিনীর সৈন্যরা হেঁটে শহরের দিকে চলেছে। আমাদের সাথে একটা কামান রয়েছে। ডানে বায়ে দুদিকে কামান দাগাতে দাগাতে আমরা এগিয়ে চলেছি। কিছুদূর যাওয়ার পর স্টিমার আর চললো না। আমরা নেমে হেঁটে চললাম। আমার সাথে ছিল আমার পুরান দোনালা বন্দুকটা। তাই দিয়ে বেশ কয়েকটা নিগারকে ধরাশায়ী করলাম। প্রতিহিংসায় আমি তখন একেবারে উন্মত্ত হয়ে উঠেছি।
আমরা যে পথ দিয়ে যাই দুদিকে আগুন লাগিয়ে যাই। অগ্নিশিখা আকাশ স্পর্শ করে আর বাতাসের বেগে হু হু করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতদিনে বিশ্বাস ঘাতক শয়তানগুলোর প্রতিশোধ নেবার দিন এসেছে। আমরা প্রতিদিন এ অভিযানে বের হই, বিক্ষুব্ধ গ্রামগুলিকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেই। আমরা আমাদের প্রতিহিংসা পূরণ করে চলেছি। নেটিভদের বিচারের জন্য যে কমিশন বসানো হয়েছে, আমাকে তার নেতা হিসাবে মনোনীত করেছে। এদের সবার আয়ু আমাদের হাতেই ঝুলছে। একথা তুমি স্থিরভাবে জেনে নিও, আমরা কাউকে রেহাই দিই না। পথের দুধারে গ্রাম গুলিকে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে, কোথাও জন প্রাণীর চিহ্নমাত্র নেই। যে গ্রামগুলির মধ্য দিয়ে চলেছি, তার চেয়ে শুন্যতার ছবি আর কল্পনা করা যায় না।
.
ঝাঁসি দখলের পর ইংরেজ সৈন্যরা এক সপ্তাহ কাল ব্যাপী এই ক্ষুদ্র রাজ্যটি লুণ্ঠন করে বেড়ায়। মাত্র ৭৫ জন ইংরেজ প্রাণহানীর প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য তারা ঝাঁসীর পাঁচ হাজার লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরিব্রাজক বিষ্ণু ভট্ট গোডসে এ সময় ঝাঁসীতে অবস্থান করছিলেন। তিনি লিখেছেন-'... সমস্ত শহর প্রেতভূমি ও মহাশ্মশান বলে বোধ হল। জ্বলন্ত বাড়িগুলি থেকে লেলিহান অগ্নিশিখা উর্ধে উঠে রাত্রির আকাশকে ভয়াল করে তুলল। আগুন ও বাতাসের শব্দ ছাপিয়ে আর্ত নরনারীর ক্রন্দনের রোল উঠল। প্রিয়জনের মৃতদেহের পাশে বসে রমণী কাঁদছেন আর তার সামনে বেয়নেট ঠুকে গোরা সিপাই অলংকার খুলে দিতে বলছে। ধনী দরিদ্র সবার শিশু সন্তানই এক সাথে এক মুষ্ঠি অন্ন চেয়ে কাতর কণ্ঠে কেঁদে ফিরছে।
হিউরোজ নিজেই লিখেছেন—“... প্রাসাদ অধিকৃত হবার পর থেকে বিদ্রোহীরা শহর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করল। নগর অবরোধের সাফল্য এই একটি কথাতেই বোঝা যায় যে, একজনকেও জীবিত অবস্থায় বেরিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। নগরীর আশে পাশের বন, বাগান, রাস্তা বিদ্রোহীদের শবদেহে পরিপূর্ণ হল। বিদ্রোহী সৈন্যরা সাধারণত: জাতিতে পাঠান ও আফগান।“
মহাশ্বেতা ভট্টাচার্য লিখেছেন-'... ঝাঁসী শহরের রাণীর সমস্ত সৈন্য এবং বহুলাংশে নাগরিকরা নিহত হল। সমস্ত নগরীর পথে কর্দমাক্ত রক্ত জমে রইল। শকুনী উড়তে লাগল সমৃদ্ধ নগরীর আকাশে। হিউরোজের কঠিন নিষেধ ছিল ভারতীয়েরা যেন কোনমতেই যেন তাদের শবদেহের সৎকার করতে না পারে। সাতই এপ্রিলের পর সমস্ত নগরী যখন পুঁতিগন্ধে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল, গলিত শবদেহের লোভে শৃগাল ও শকুনী বিচরণ করতে লাগল তখন হিউরোজ আদেশ দিলেন, এবার শবদেহের সৎকার করা যেতে পারে।'
...৫১ নং বেঙ্গল ইনফ্যান্ট্রি থেকে বারজন সিপাই দলত্যাগ করে পালিয়েছিল। তাদের ধরে এনে প্যারেডের ময়দানে সবার সামনে ফাঁসি দেওয়া হয়। ৫৫ নং বেঙ্গল রেজিমেন্টের যে এক 'শ পঞ্চাশজন নিকলসন বন্দি করে নিয়ে আসেন তাদের মধ্যে ৪০ জনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। ১০ই জুন তাদেরকে কামানের সামনে বেঁধে রেখে ফায়ার করা হয়।
পলাতক চার 'শ জন সিপাই সোয়াতে কিছুদিন অবস্থান করার পর কাশ্মীরের দিকে যাত্রা করে। কাশ্মীরের রাজা গোলাপ সিং ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্র করে বিদ্রোহীদেরকে ধরিয়ে দেয়। সবাই ক্রমে ক্রমে ইংরেজদের হাতে ধরা পড়তে লাগল। মিলিটারী আদালতের বিচারে তারা সবাই মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হল। মেজর বেচার উল্লসিত হয়ে লিখেছেন-'... এভাবে ৫৫ নং রেজিমেন্টের শেষ লোকটি পর্যন্ত বন্য পশুর মত আমাদের জালে ধরা পড়ল। এরই মধ্যে দিয়ে আমরা বিদ্রোহী রেজিমেন্টেগুলোর কাছে হিতকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছি। তাদের কাছে প্রমাণ করে দেখিয়ে দিতে পেরেছি কি সুদূর প্রসারী আমাদের শক্তি। সীমান্তের ওপারে গিয়েও অব্যাহতি নেই, সেখানে গেলেও আশ্রয় মিলবে না।'
সিপাইরা প্রাণভয়ে ইরাবতী নদীর দিকে ছুটে চলেছে। পেছনে তাড়া করছেন অমৃতসরের ডেপুটি কমিশনার ফ্রেডারিক কুপার। তার সাথে সত্তর আশি জন সওয়ার। বিদ্রোহী সিপাইরা নদী তীরে এসেই বড়ই মুসকিলে পড়ল। নদীতে নৌকা নেই। ইতিমধ্যে খবর পেয়ে উজনালা থেকে তহশিলদার সশস্ত্র পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে বিদ্রোহীদের উপর আক্রমণ করল। এই আক্রমণে কমপক্ষে দেড়শ সিপাই শহীদ হলো। অসহায় সিপাইদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠল ইরাবতীর তীর। সংগে সংগে কুপারও নদী তীরে এসে উপস্থিত হলেন।
এর পরের ঘটনা ফ্রেডারিক কুপার তার লিখিত 'ক্রাইসিস ইন দি পাঞ্জাব' পুস্তকে যা লিখেছেন তা হলো:
... সিপাইদের মধ্যে অনেকেই নদীতে ডুবে যায়। নদীর মাঝামাঝি ছোটো একটা দ্বীপ ছিল। অনেকে কাঠের টুকরোর উপর ভর করে ভেসে সেই দ্বীপের দিকে যেতে থাকে। এরা সবাই অনাহারে অবসন্ন এবং পথশ্রমে ক্লান্ত। তার উপর হঠাৎ আমরা যখন আক্রমণ করলাম তখন সবাই প্রাণের আশা ছেড়ে দিল। বুনো পাখীগুলি যেমন নদীর মধ্যে সাঁতার কেটে প্রাণ বাঁচাবার জন্য চেষ্টা করে, এরাও সে রকম চেষ্টা করতে লাগল। ওদের ধরে আনবার জন্য দুখানা নৌকা পাঠালাম। বিশ মিনিটের মধ্যে নৌকা দুখানা সে দ্বীপে গিয়ে ভিড়ল ভয়ে আর নিরাশায় কোন পথ খুঁজে না পেয়ে চল্লিশ পঞ্চাশ জন সিপাই আবার নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লো। তাদের ধরবার জন্য যে সব সৈন্য গিয়েছিল তারা ওদের মাথার দিকে তাক করে গুলি করতে উদাত হলো। আমি যখন তাদের গুলি করতে নিষেধ করলাম, তখন পলাতক সিপাইরা ভাবল ডেপুটি কমিশনার বোধ করি তাদের সাথে ভালো ব্যবহারই করবেন। এ কথা মনে করে তারা সৈন্যদের কাছে আত্মসমর্পণ করল। হাত বাঁধার সময় তারা বাধা দিল না। তারা মনে করেছিল সামরিক আদালতে তাদের যথারীতি বিচার হবে এবং বিচারের আগে অন্তত একবার তাদের পেট ভরে খেতে দেওয়া হবে।
রাত দুপুরের সময় দুশো বিরাশিজন বন্দি সিপাইকে উঞ্জনালাতে থানায় নিয়ে আসা হলো। পরদিন অন্ত অল্প বৃষ্টি হচ্ছিল বলে এদের মেরে ফেলার কাজটা স্থগিত রাখতে হয়। ১লা আগস্ট দিন ধার্য হলো। আমি সিপাইদের বাঁধার জন্য বেশি করে দড়ি সংগ্রহ করে আনতে বলে দিয়েছিলাম। শিখ সৈন্যরা দড়ি নিয়ে এল। প্রতিবারে দশ জনকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে গুলি করে মারাই স্থির হলো। প্রতিবারে দশ জন করে দড়ি দিয়ে বাঁধা সিপাইকে বধ্যভূমিতে নিয়ে আসা হতে লাগল। শিখ সৈন্যরা গুলি করার জন্য তৈরী হয়েই ছিল। ম্যাজিস্ট্রেট থানায় বসে সবকিছু তদারক করছিলেন। দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত সিপাইরা এদের নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় ম্যাজিস্ট্রেট ও শিখ সৈন্যদের গালি দিতে লাগল। প্রতিবারে দশজন করে সিপাই প্রাণ দিতে লাগল।
দুশো সাইত্রিশ জন সিপাইকে এভাবে মারা হলে একজন কর্মচারী ম্যাজিস্ট্রেটকে এসে জানাল যে, অবশিষ্ট সিপাইরা প্রাচীরের ভিতরকার ছোট্ট ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে না। সংবাদ পেয়ে আমি নিজেই সেখানে গেলাম। ঘরের দুয়ার যখন খোলা হলো তখন দেখা গেল ভয়ে, শ্রান্তিতে, অবসন্নতায়, অতিরিক্ত গরমে এবং আংশিকভাবে শ্বাসরোধের ফলে ঐ ঘরের পয়তাল্লিশ জন সিপাই প্রাণ ত্যাগ করেছে। স্থানীয় মুদাফরাসদের নিয়ে লাশ গুলি বের করা হল। থানার কাছে একটা গভীর কুয়া ছিল। নিহত সিপাইদের লাশগুলি উক্ত কুয়ায় ফেলে দেওয়া হল।'’ চীফ কমিশনার কুপারের কাজের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান। স্বয়ং গভর্ণর জেনারেল তাকে প্রশংসা জানালেন। প্রধান বিচারপতি রবার্ট মন্টোগোমারী সাহেব প্রশংসায় উচ্ছসিত হয়ে উঠেছিলেন। অপর পক্ষে মার্টিন সাহেব প্রশ্ন তুলেছিলেন, 'এদের ধ্বংস সাধন করা হল কোন্ আইনে?'
ঢাকার লালবাগের খন্ডযুদ্ধে যে সব সিপাই বন্দি হয়েছিল, সে সব পলাতক ক্রমে ক্রমে ধরা পড়তে লাগল। বন্দিদের সবাইকে আন্টাঘরের ময়দানে (বর্তমানে বাহাদুর শাহ পার্ক) গাছের ডালে ডালে ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। দিনের পর দিন মৃত দেহগুলি ঝুলতে লাগল। পচে গলে পড়তে লাগল। শকুনেরা মহোৎসবে মেতে গেল।
২১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৩৮
জমীরউদ্দীন মোল্লা বলেছেন: আপনি হয়তো জুতা মেরে গরুদান পছন্দ করেন। কিংবা আপনার চৌদ্দ গুষ্টিকে মিষ্টি খাওয়াবে তার বিনিময়ে এই রাস্তাঘাট আপনার জন্য যথেষ্ট হইতে পারে আমার জন্য না। ভারতের লোক অবলা ছিলো না। ইউরোপীয়রা ছিল বর্বর দস্যু। এদের দস্যুতার সাথে পৃথিবীর কোন জাতিই পারে নাই।
২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৪৩
কামাল১৮ বলেছেন: টিক এই কাজটিই পাকিরা করেছিলো ১৯৭১ সালে।গ্রামে অকারনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো।অকারনে লোককে গুলি করে মেরেছে।
২১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৪৭
জমীরউদ্দীন মোল্লা বলেছেন: ব্রিটিশ দস্যুদের কাছে পাকিস্তানিরা দুধভাত ও না। যারা ব্রিটিশদের বর্বরতার সাথে পাকিদের এটা মিলাইতে পারে তাঁদের ইতিহাস জ্ঞান হইলো ষাড় ইকবালের ইতিহাসের মত।
৩| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:১১
কামাল১৮ বলেছেন: আমরা বৃটিশদের দেখিনি,পাকিদের দেখেছি।
২১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:১৪
জমীরউদ্দীন মোল্লা বলেছেন: চোখ রাম-বাম চশমা পরে থাকলে না দেখাই স্বাভাবিক
৪| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:৪৭
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: চমৎকার লেখা । অনেক ধন্যবাদ ।
২২ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৭:১৩
জমীরউদ্দীন মোল্লা বলেছেন: স্বাগতম।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: বিটিশদের ভালো কোনো দিক নেই?
তারা অফিস আদালত কম করেছে? রাস্তাঘাট কম করেছে। তাদের অনেক অবদান আছে। ১৪০ বছর তারা রাজত্ব করেছে। ভারতের লোক ছিলো অবলা। এই সুযোগ তারা নিয়েছে।