নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ওরে ও তরুণ ঈশান! বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ। ধ্বংস-নিশান উঠুক প্রাচী-র প্রাচীর ভেদি’॥
বাঙলা, বাঙালী জাতি, বাঙালা ভাষা-লিপি ও বাঙালী সংস্কৃতি নিয়ে গত দুশ' বছর ধরে এত মিথ্যাচার হয়েছে যে, আজকের নতুন প্রজন্মের কাছে রীতিমতো অবিশ্বাস্যই মনে হবে- বাংলাদেশ ও তার প্রতিবেশী ভারতীয় বাঙলা (পশ্চিমবঙ্গ) ১৩ শতক থেকে ১৮ শতকতক, অর্থাৎ মুসলিম সুলতানি-নবাবি আমলের আগে কখনো এক ছিল না। ভূখণ্ড, জাতি, ভাষা, সংস্কৃতি কোনো দিক দিয়েই এক ছিল না। দুই ভূখণ্ডের নাম ছিল ভিন্ন। জাতির নাম ছিল ভিন্ন। দুই ভূখণ্ডের ভাষা ও সংস্কৃতিও ছিল ভিন্ন।
এখনকার বাংলাদেশ-ভূখণ্ডের অতীত নাম ছিল 'ভাটি', তারপর 'বঙ্গাল' বা 'বাঙ্গালা। পরে পূর্ববাঙলা। অন্যদিকে আজকের পশ্চিমবঙ্গের নাম ছিল প্রথমে 'বঙ্গ', 'রাঢ় বঙ্গ' ও পরে 'গৌড়-বঙ্গ'। অতীত বঙ্গালের (আজকের বাংলাদেশ-ভূখণ্ডের) জনগোষ্ঠীর মূলভাষা ছিল 'আদি-বাঙালাভাষা'। অন্যদিকে গৌড়-বঙ্গে'র (আজকের পশ্চিমবঙ্গের) ভাষার নাম ছিল গৌড়ীয় ভাষা (তাও আবার নানা অঞ্চলে নানা নামে বিভক্ত)। বঙ্গালের অধিবাসীরা জাতি হিসেবে ছিল 'বাঙ্গালী' (আদি বাঙালী)। অন্যদিকে গৌড়বঙ্গের অধিবাসীরা জাতি হিসেবে ছিল 'গৌড়ীয়' বা 'গৌড়ীয়া'।
গৌড়ের অধিবাসীরা বাঙ্গাল দেশকে বলতো পাণ্ডববর্জিত দেশ, হরিনামহীন দেশ, স্লেচ্ছ- যবনের দেশ। তারা বঙ্গালের অধিবাসীদের তুচ্ছ অর্থে বলতো 'বাঙ্গাল'। অন্যদিকে বঙ্গালের অধিবাসীরা (আদি বাঙালীরা) গৌড়ীয়দের বলতো 'ঘটি' (গৌড়ীয়ের সংক্ষিপ্ত রূপ)। দুই ভূখণ্ডের অধিবাসীদের ধর্ম ও সংস্কৃতিও ছিল বহুলাংশে ভিন্ন।
পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম লীলাভূমি এবং মুসলিম সুলতানি আমল ও তারও আগের ইসলামি সভ্যতা-সংস্কৃতির আলোতে আলোকপ্রাপ্ত বঙ্গাল ভূখণ্ডকে তৎকালীন গৌড়বঙ্গ ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের ব্রাহ্মণ্যবাদীরা হীন- উদ্দেশ্যে- পরিত্যক্ত, পাণ্ডববর্জিত, অসভ্য, বর্বর দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং এই দেশে কেউ আগমন করলে তীর্থযাত্রা করে পাপমোচনের বিধান জারি করেছেন- যা লিপিবদ্ধ হয়েছে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের ধর্মীয় শ্লোকে, নানা কাব্যে ও সাহিত্যে।
বঙ্গাল ও গৌড়বঙ্গ নামে ভিন্ন দুই ভূখণ্ড, বাঙালী ও গৌড়ীয় নামে ভিন্ন দুই জাতি এবং বাঙালা-ভাষা ও গৌড়ীয়-ভাষা নামে দুই ভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী একমাত্র সুলতানি আমলেই এক দেশ- বাঙ্গালাদেশ, এক জাতি- বাঙালী জাতি এবং এক ভাষা- নতুন বাঙালা-ভাষার জন্য হয়।
মুসলিম সুলতানরা তাঁদের প্রতিষ্ঠিত বাঙ্গালার যে ভৌগোলিক সীমানা ঠিক করে দেন, সেটিই আজকের দুই বাঙলার সীমানা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হলো মুসলিম সুলতানরা বাঙলা ও গৌড় একত্র করে যে এক দেশ গঠন করেন, তার নাম দেন এপারের 'পাণ্ডববর্জিত' বাঙ্গালার নামানুসারে- 'বাঙ্গালাদেশ' এবং যে অভিন্ন ভাষার জন্য দেন তার নাম দেন বঙ্গালের ভাষার নামানুসারে- বাঙালাভাষা।(আদি বাঙালাভাষার সাথে আরবি-ফারসি-উর্দু শব্দের স্বার্থক সংযোজনের মাধ্যমে কালক্রমে জন্ম হয় ফারসি-উর্দু শব্দমিশ্রিত নতুন বাঙালা-ভাষা (ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরা যার নামকরণ করেন 'ফারসি-বাঙালা'
সুলতানরা শুধু নতুন দেশ, নতুন জাতি ও নতুন ভাষা তৈরি করেই ক্ষান্ত হননি। তাঁরা সব ধর্মের, সব বর্ণের লোকদের ঐক্যবদ্ধ করে 'বাঙ্গালাদেশ' নামের নতুন রাষ্ট্রেরও জন্ম দেন। এভাবে মুসলিম সুলতানরা ওই সামন্ত-যুগে, তাঁদের নবগঠিত রাষ্ট্রকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি জাতীয় রাষ্ট্রে রূপ দেন। চৌদ্দ- পনেরো শতকে দক্ষিণ এশিয়ার এ অঞ্চলে একটি 'জাতীয় রাষ্ট্র' বা তার অনুরূপ কোনো রাষ্ট্রের উত্থান ছিল বিস্ময়কর। আর সেই রাষ্ট্র শুধু জাতিরাষ্ট্র রূপেই গড়ে ওঠেনি। সেটি হয়ে উঠেছিল জাতি, উপজাতি, ধর্মীয়-সম্প্রদায় ও গোষ্ঠী (গোত্র) নিরপেক্ষ রাষ্ট্র।
মূলত সেটা হয়ে উঠেছিল মুসলিম-বৌদ্ধ-বৈষ্ণব এবং বিভিন্ন স্থানীয় ধর্মগুলো মিলে বাঙালী নামে এক কওমে (জাতিতে) পরিণত হওয়া রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্রে সরকারি চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ধর্ম ও সংস্কৃতি-চর্চায় সকল ধর্মের লোকদের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় নীতি এতটাই উদার ছিল যে, সে আমলে ভিন্নধর্মাবলম্বী শ্রীচৈতন্যের নেতৃত্বে বৈষ্ণব ধর্মের আন্দোলন (নদীয়ার ভাবান্দোলন) সুলতান হোছেন শাহ'র পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিল। মধ্যযুগে মুসলিম সুলতানরা যখন 'বাঙ্গালা' নামের একটি বহুজাতিক সুসংহত রাষ্ট্র গঠন করেন, তখন ইউরোপে জাতিরাষ্ট্রের ধারণাই জন্ম নেয়নি।
চলবে.....
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৪০
জমীরউদ্দীন মোল্লা বলেছেন: স্বাগতম। ভালো বই পড়তে পারেন।
২| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:১৮
শায়মা বলেছেন: খুবই সুন্দর একটা লেখা।
বইটাকে চেনানোর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
প্রিয়তে রাখলাম।