নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিভৃতচারী, ঘুরে বেড়াই পথে-প্রান্তরে।।

জমীরউদ্দীন মোল্লা

ওরে ও তরুণ ঈশান! বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ। ধ্বংস-নিশান উঠুক প্রাচী-র প্রাচীর ভেদি’॥

জমীরউদ্দীন মোল্লা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রইসউদ্দিন আরিফের ‘আত্মবিস্মৃত বাঙালী’— ঘটি বুদ্ধিজীবীদের গালে চটকনা (পর্ব-৩)

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:১২



মধ্যযুগে মুসলিম সুলতানদের দ্বারা মূল বাঙালা ভাষার স্বাভাবিক বিকশিত রূপ আরবি-ফারসি শব্দ মিশ্রিত বাঙালা ভাষা উদ্ভবের মধ্য দিয়ে বাঙালা ভাষার নবজন্ম হয়েছিল (যে কারণে দীনেশচন্দ্র সেন বলেছেন বাঙালা-ভাষা মুসলমানদেরই সৃষ্টি) এবং আরবি-ফারসি শব্দমিশ্রিত সেই বাঙালা ভাষা এ ভূখণ্ডে (তৎকালীন অখণ্ড বাঙলায়) মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন নির্বিশেষে সকল জনকওমের প্রাণের ভাষা হয়ে উঠেছিল।

এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত সাহিত্য ও ইতিহাস- গবেষক সজনীকান্ত দাস বলেছেন- আরবী-ফারসী শব্দমিশ্রিত বাঙালা ভাষা (ফারসী-বাঙালা) এদেশের মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ নির্বিশেষে সকল জনকওমের আদর-কদরের ভাষা হয়ে উঠেছিল এবং তা যে ইংরেজ আমলের শুরুতেও অব্যাহত ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় স্যার উইলিয়াম কেরীর বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্যে। উইলিয়াম কেরী একসময় কিছুকালের জন্য যখন দিনাজপুরে ছিলেন তখন স্থানীয় লোকদের ভাষা শুনে লক্ষ্য করেন যে, ব্রাহ্মণরা যে বাঙালা ভাষা ব্যবহার করেন তা সংস্কৃত শব্দবহুল বাঙালা, আর মুসলমান ও সাধারণ হিন্দু-বৌদ্ধরা যে ভাষা ব্যবহার করেন সেটি হলো ফারসী-বাঙালা।

ভারতবর্ষ ও বাঙলায় মোগল-সুলতানি-নবাবি শাসনের অবসানের পর- উপমহাদেশের সাধারণ জনকওম, বিশেষ করে মুসলমান ও নিম্নবর্ণের হিন্দু-বৌদ্ধ জনকওমের ভাষা, লিপি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতি মিছমার করে দিয়ে গোটা সমাজে বৃটিশ ও ব্রাহ্মণ্যবাদীদের একচ্ছত্র প্রভুত্ব-প্রতিপত্তি এবং নির্মম বর্ণ-নিপীড়ন ও ধর্মীয় নিপীড়ন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে তৎকালীন পূর্ববাঙলাসহ গোটা ভারতবর্ষ দুশ' বছর জুড়ে, কবির ভাষায় নয়, আক্ষরিক ইতিহাসের ভাষায়, চরম অরাজক দেশে পরিণত হয়।

অতঃপর বৃটিশরা এদেশ থেকে চলে যাবার পর- স্বাধীন ভারতের সর্বত্র এবং '৭১-পূর্ব স্বাধীন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে (পূর্ববাঙলায়) ভারতীয় ব্রাহ্মণ্যবাদী চেতনার প্রভাব অব্যাহতভাবে চলতে থাকে। সেই চেতনাগত প্রভাব অব্যাহত থাকার ফলে বাংলাদেশের বাঙালী মুসলিম জনগণের এক অংশের মধ্যে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী-বিরোধী 'জাতীয় মুক্তি'র চেতনা একপর্যায়ে ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতিবিরোধী চেতনায় রূপান্তরিত হয়। এর ফলে প্রকৃত শ্রেণি ও জাতীয় দ্বন্দ্ব দুর্বল হয়ে একদিকে 'প্রগতি' ও 'ধর্মনিরপেক্ষতার' পোশাকে ব্রাহ্মণ্য ভাবধারা এবং অন্যদিকে মুসলিম ভাবধারা- এ দুয়ের মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রাধান্য লাভ করে।

এভাবেই ব্রাহ্মণ্যবাদী চেতনার দ্বারা প্রভাবিত এদেশীয় বুদ্ধিজীবীদের এক প্রভাবশালী অংশ কলকাতামুখী 'বাঙালী জাতীয়তা' এবং কথিত 'ধর্মনিরপেক্ষতার' নামে ইসলাম ও মুসলিম চেতনার বিরুদ্ধে শক্তিশালীভাবে সংগঠিত হয়। পুরো পাকিস্তান পর্বেই এটা চলে। এসময়ে পাকিস্তানী অবাঙালী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কলকাতামুখী ও সংকীর্ণ 'বাঙালী জাতীয়তাবাদী' আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠলে- তার সাথে কথিত ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে ইসলামবিরোধী এক নব্য- মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান ঘটে। ইতিমধ্যে এই অঞ্চলের কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গ্রামাঞ্চলের ধনী ও মাঝারি কৃষক পরিবার থেকে আগত শিক্ষার্থীরা বৃটিশ ও ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতদের তৈরি- মিথ্যা, বিকৃত ইতিহাস গলাধঃকরণ করে যে নব্য-শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণিতে রূপান্তরিত হন, তাদের নিয়েই গড়ে ওঠে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণি।

ইউরোপীয় বিদ্বানদের দিয়ে কথিত আর্য-সভ্যতার গৌরবময়-মহিমাময় ইতিহাসের 'বেলুন' তৈরির পর- বাঙ্গাল মুলুকে বৃটিশ ও ব্রাহ্মণ্যবাদীরা মিলে প্রথমেই খড়গ চালায়- সুলতানি আমলে তৈরি, ভূখণ্ডের জনকওমের কাব্য, কবিতা, পুথি-কেতাব রচনার ভাষা- মূল বাঙালা-ভাষার (ফারসি-বাঙালার) ওপর- যে ভাষা দীর্ঘ প্রায় পাঁচশ' বছরে মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-জৈন নির্বিশেষে সাধারণ জনকওমের মিলিত চর্চার মাধ্যমে কালক্রমে এক সমৃদ্ধশালী ভাষায় বিকশিত হয়েছিল। সেই ভাষা স্বাভাবিকভাবে (ন্যাচারেলী) শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ আরবি-ফারসি শব্দের স্বার্থক সংযোজন ও বিন্যাসের মাধ্যমে এক সুখপাঠ্য, সহজ ও শ্রুতিমধুর বাঙালাভাষায় উন্নীত হয়েছিল। এর আগেও আমরা উল্লেখ করেছি যে- বিশ্বখ্যাত বৃটিশ ভাষাবিদ জর্জ গ্রিয়ার্সনের মতে- ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের বাঙলা বিভাগের বৃটিশ ও ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরা সেই মূল বাঙালা-ভাষার ৯০ ভাগ আরবি-ফারসি শব্দ রাতারাতি কেটে ফেলে দিয়ে তার জায়গায় সমপরিমাণ সংস্কৃত শব্দ ঢুকিয়ে মূল বাঙালাভাষাকে ধ্বংস করেন। তৈরি করেন জটিল ও দুর্বোধ্য সংস্কৃত-বাঙালা। মুছে ফেলা হয়, মুসলিম সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাঙালা-ভাষার সৃষ্টি ও বিকাশের ইতিহাস। অনেক গবেষকরাই মনে করেন যে- মূল বাঙালা-ভাষা ধ্বংসের জন্যই ১৮০১ সালে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের বাঙলা বিভাগ খোলা হয়েছিল। উইলিয়াম ক্যারী ছিলেন তার প্রধান, আর একদল ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতরা ছিলেন তাঁর সহযোগী।

চলবে...।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:৪১

কামাল১৮ বলেছেন: পৃথিবীর সব ভাষাতেই বিদেশি শব্দ আছে।এটা ভাষার সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.