নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Criticism is our fundamental right. The revolution will come only from our pen #save constitution

Titanic

এক সময় আমরা সবাই মানুষ ছিলাম।হঠাৎ করে তখন এক ভণ্ডু খোদার আবিষ্কার হল।শুরু হয়ে গেলে ধর্মের/খোদার দলের দালালী(মানুষের মধ্যে মারামারি হানাহানি)ভণ্ডু খোদার এক বিশেষ দালাল হল ইসলামধর্মের নবী মুহাম্মদ।ধর্মিয় বই নাকি আসমান থেকে এসেছ,আরে বোকার দল তাহলে তদের মালিককে বল আমাকে একটি আইটির বিশেষ বই দিতে।আমি আইটির ব্যবহার ও উন্নত মান দিয়ে তোদের খোদা হওয়ার দাবী করব।তোমরা বল কোরান,বাইবেল, গীতা আরও কত্তকিছু উপর হতে এসেছে।তোমরা কি দেখনা এখন মানুষ উপর(চন্দ্র,মংগল ইত্যাদিতে ভ্রমণ করছে)চোখ খুল মানুষ, চোখ খুল।

Titanic › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনাক্সাগোরাসের উপর ধর্মবাদীদের খড়গহস্তের ইতিহাস

২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:৫৬

আনাক্সাগোরাসের নাম যখন শুনি তখন অনলাইন ঘেঁটে তেমন কোন লেখা পেলাম না। ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকে এই মানুষটির সাথে দেখা হলেও তাঁর উপর ঘটে যাওয়া নির্যাতিত হওয়ার ইতিহাস সেভাবে জানা ছিল না। প্রমিথিউসের পথে বইটিতে তরুণ বসুর অ্যানাক্সাগোরাসের উপর একটা প্রবন্ধ আছে। সেখানে দেখা যায় আনাক্সাগোরাসের উপর ধর্মবাদীদের খড়গহস্তের ইতিহাস। সেই প্রবন্ধটি এখানে তুলে দিলাম।

মাঝে মাঝে দু-একজন মানুষ পৃথিবীতে জন্মান যাঁরা গতানুগতিক কায়েমি গোষ্ঠীর সাথে নিজেদেরকে না মিলিয়ে সত্যানুসন্ধানের চেষ্টায় জীবন উৎসর্গ করেন। তাঁদের সুস্পষ্ট বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা ও সৃজনশীল মতবাদের জন্যে জীর্ণ পুরাতন স্বার্থান্বেষী কায়েমি গোষ্ঠীর গোঁড়া মতের শিকার হতে হয়-গ্রিক দেবতা টাইটানের ছেলে মানবদরদী প্রমিথিউসের মতো। আনাক্সাগোরাস (খ্রি. পূঃ ৫০০-৪২৮) হলেন সেই রকমই একজন-বিদ্রোহী মানবদরদী প্রমিথিউসের পথগামী।

আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে অর্থাৎ খ্রিঃ পূঃ ৫০০-তে আনাক্সাগোরাস জন্মেছিলেন এশিয়ার মাইনরের স্মার্ণার কাছাকাছি ক্লাজমেনে। তার শৈশব বা কৈশোর সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা যায় না। খ্রিঃ পূর্ব ৪৬২-তে গ্রিক দেশের শাসনকর্তা ছিলেন পেরিক্লস। পেরিক্লিস আনাস্কাগোরাসকে এথেন্স নিয়ে আসেন। এর কিছুকাল আগেই এথেন্স যুক্তিবাদী চিন্তা এবং বিজ্ঞান তথা পার্থিব জিনিস সম্পর্কে ভাবনার শুরু হয়। পেরিক্লিস ছিলেন প্রকৃতই জ্ঞানপিপাসু এবং আনাক্সাগোরাসের যোগ্য শিষ্য। এই সময় গ্রিসের এথেন্স নগরী ছিল বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। নানাদেশের মনীষীরা বিভিন্ন সময়ে এই এথেন্সেই এসেছিলেন শিক্ষার জন্যে।

এথেন্সে এসে আনাক্সাগোরাস কাজ শুরু করেন অধ্যাপনা দিয়ে এবং প্রায় ৩০ বৎসর (খ্রিঃপূঃ ৪৬২-৪৩৩) তিনি এখানে অধ্যাপনা করেন। জ্যোতির্বিদ্যা ও অঙ্ক-শাস্ত্রে আনাক্সাগোরাসের ছিল গভীর জ্ঞান এবং অধ্যাপনার সাথে তিনি গাণিতিক জ্যোতিষ সম্পর্কেও গবেষণাও শুরু করেন।

খালি চোখে আকাশ পর্যবেক্ষণ করে জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কিত গবেষণায় আনাক্সাগোরাস বেশ কয়েকটি মূল্যবান, বৈপ্লবিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছিলেন। সে-সময়ে এথেন্সের জনসাধারণ ছিল গোঁড়া কুসংস্কারাচ্ছন্ন। পুরনো বিশ্বাসকে তারা আঁকড়ে ধরে থাকতো প্রাণপণে। নতুন যুক্তিবাদী ভাবনাকে সহজে গ্রহণ করা তাদের সম্ভব ছিল না প্রচলিত ধর্মের অলীক ভয়ে। আনাক্সাগোরাস এই সব প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রকৃত জ্ঞান আহরণের জন্যে গভীর পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কিত গবেষণায় তিনি বলেছিলেন, চন্দ্র বা সূর্য কোন স্বর্গীয় বস্তু নয়। চন্দ্রের নিজস্ব কোন আলো নেই। চন্দ্রালোক হলো কেন্দ্রীয় অগ্নির আলোকের প্রতিফলন মাত্র। পৃথিবী বা কখনও কখনও অন্যান্য বস্তু চন্দ্রের নিচে এসে আমাদের দৃষ্টিপথ অবরোধ করে এবং এ-জন্যই চন্দ্রগ্রহণ হয়। তবে এই সব বস্তু অদৃশ্য। নক্ষত্র মণ্ডলের নিচে এদের অবস্থিতি এবং সূর্য এবং চন্দ্রের সাথে একই সঙ্গে তারা আবর্তিত হয়। আরও ব্যাপক নিরীক্ষণের পর বললেন, চন্দ্র সূর্যের পথ অনুসরণ করে এবং সূর্য ও চন্দ্রের মধ্যে পৃথিবী এসে পড়ায় যে ছায়ার সৃষ্টি হয়, সেই ছায়ার মধ্যে পড়ে চন্দ্র প্রতি মাসে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়।

শুধু চন্দ্র সম্পর্কিত সিদ্ধান্তই নয়, আনাক্সাগোরাস ছায়াপথ এবং ব্রহ্মণ্ড সম্পর্কে কতগুলি সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছিলেন। ছায়াপথ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন-রাত্রিকালে সূর্য পৃথিবীর অপরদিকে আত্মগোপন করলে নক্ষত্রখচিত আকাশে পৃথিবীর যে-ছায়া পড়ে তাই-ই ছায়াপথ। পৃথিবী সম্পর্কে তিনি বললেন, এই পৃথিবী কোন স্বর্গীয় দেবতার সৃষ্টি নয়। আদি অবস্থায় পৃথিবী ছিল এক জড় পদার্থ এবং কালক্রমে এই জড়ের ভিতর এক অতিক্ষুদ্র ঘূর্ণি বা আবর্তের সৃষ্টি হয়। এই ঘূর্ণি ক্রমশ স্ফীত এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে এমন প্রবল হয়ে ওঠে যে ব্রহ্মাণ্ডের সমগ্র জড় পদার্থ দুটো বৃহৎ অংশে ভাগ হয়ে যায়। প্রথম অংশটা হলো উত্তপ্ত হালকা শুষ্ক ‘ইথর’; দ্বিতীয়টা বিপরীত গুণসম্পন্ন ‘বায়ু’। তারপর বায়ু অধিকার করল ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রস্থল এবং বায়ুকে আচ্ছাদন করে রইল উষ্ণ ইথর। সৃষ্টির পরের ধাপে বায়ু থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন পর্যায়ে উৎপন্ন হয়েছে মেঘ, জল, মৃত্তিকা ও প্রস্তর-এই সব নিয়েই পৃথিবী তৈরি হয়। শুরু থেকেই পৃথিবী ছিল দ্রুত আবর্তনশীল। এই ভীষণ আবর্তন বেগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত ক্ষুদ্র বৃহৎ অসংখ্য পাথরের খণ্ড পৃথিবী থেকে ছিটকে পড়ল এবং জ্বলন্ত ইথরের সংস্পর্শে এসে ভাস্বর নক্ষত্রে পরিণত হলো। অ্যানাক্সাগোরাসের এই গবেষণা ছিল মূলত অগ্নিকেন্দ্রিক অর্থাৎ মূল অগ্নি এবং তাকে কেন্দ্র করে সূর্য চন্দ্র গ্রহ নক্ষত্রাদি ঘোরে। এই-কালে অ্যানাক্সাগোরাসের এই তত্ত্বের অসম্পূর্ণ ও কিছুটা ভুলও বটে, কিন্তু আড়াই হাজার বছর আগে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ছিল বিশাল বৈপ্লবিক কাজ।

Orbital Motion

এইসব সিদ্ধান্তে এবং পরীক্ষালব্ধ মতামতগুলি এথেন্সের তথাকথিত গোঁড়া ধর্মীয় সম্প্রদায়কে তীব্রভাবে ক্ষেপীয়ে তুলেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তিনি চন্দ্র ও সূর্যের বা ব্রহ্মাণ্ডের ব্যাখ্যায় বলেছিলেন, চন্দ্র বা সূর্য কোন স্বর্গীয় বস্তু বা দেবতাদের সৃষ্ট কিছু নয় অর্থাৎ ঈশ্বরের মহিমাকে সরাসরি অস্বীকার করে পৃথিবীর ব্যাখ্যা করা। কুসংস্কারাপন্ন এথেন্সবাসী ও ধর্মীয় সম্প্রদায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছিল যে, অ্যানাক্সাগোরাস ঈশ্বর বিদ্বেষী তথা মানুষের শক্র এবং তাঁর মতবাদ সম্পূর্ণ ভুল। কিন্তু বিজ্ঞানের ইতিহাসে আনাক্সাগোরাসের এই মতবাদ ছিল এক যুগান্তকারী মতবাদ। তাই অ্যানাক্সাগোরাস সম্পর্কে প্লুটার্ক লিখেছিলেন, ”…. আনাক্সাগোরাস, যিনি চাঁদের দ্যুতি ও অন্ধকার সম্পর্কে তাঁর ব্যাখ্যা সাহসিকতার সহিত পরিষ্কারভাবে প্রথম লিখিতভাবে ব্যক্ত করেছিলেন, তা সুদূর অতীতে জ্ঞাত ছিল না; এমনকি তা ছিল না সার্বজনীন সম্পদও। কিছু মানুষের মধ্যে তা গোপনভাবে প্রবাহিত ছিল এবং তাঁরা তা গ্রহণ করে ছিলেন খুব সাবধানে বা শুধু বিশ্বাসের ভিত্তিতে। কারণ সেইসব দিনে প্রকৃতি বিজ্ঞানী এ নক্ষত্রবিদ যাঁদের বলা হয়, তাঁদের লোকে সহ্যই করতে পারতো না, যাঁরা নাকি অজানা কারণে অন্ধশক্তির উপর থেকে ঈশ্বরের মহিমাকে সরিয়ে দেয়। তাই প্রটোগোরাসের নির্বাসন হয়। আনাক্সাগোরাস বন্দী হন। যদিও পেরিক্লিস কষ্টসাধ্য ভাবে তাঁকে রক্ষা করেন।“

জ্ঞানের সীমাকে, মানব-সভ্যতাকে, উন্নত করতে চাওয়ার অপরাধে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তাঁকে বন্দি করা হয়েছিল। চালানো হয়েছিল মানসিক, দৈহিক নির্যাতন। কিন্তু তাঁর মতবাদ থেকে তাঁকে টলানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, কিন্তু সে-আদেশ কার্যকর করতে পারেনি ধর্মীয় কর্তারা পেরিক্লিসের প্রভাবের জন্যে। কিন্তু পরবর্তীকালে পোলানেশীয় যুদ্ধের ফলে পেরিক্লিসের প্রভাব কমে যায় এবং সুযোগে আনাক্সাগোরাসকে নিষ্ঠুরভাবে বিতাড়িত করা হয় এথেন্স থেকে। এই নির্যাতন সহ্য করা তাঁর পক্ষে তখন সম্ভব ছিল না, বাধ্য হয়ে তাঁকে ফিরে যেতে হয়েছিল এশিয়া মাইনরে এবং সেখানকার ল্যাম্নাকাস নামে এক জায়গা তার মৃত্যু হয় খ্রিঃপূঃ ৪২৮-এ।

প্রমিথিউস যদি পুরাণ কথার নায়ক হয় তবে পৃথিবীর লিখিত ইতিহাসে ধর্মবিরুদ্ধ বৈজ্ঞানিক মতবাদ পোষণ এবং প্রচারের অপরাধে নির্যাতিত প্রথম প্রমিথিউসের পথগামী হলেন আনাক্সাগোরাস।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.