নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার জীবনে অন্তত একজন, কষ্ট বলার ও কষ্ট বুঝার মানুষ থাকুক

জান্নাতুন ফাতেমা রাত্রি

উচ্চাভিলাষী তবে বাস্তববাদী, স্বৈরাচারী কিন্তু আবেগী, স্ব- সিদ্ধান্তে অনড় কিন্তু যুক্তিতে পরিবর্তনশীল :)

জান্নাতুন ফাতেমা রাত্রি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোল্ডফিস, শুধুমাত্র একটি প্রাণীই ছিল না

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:২৪

'গোল্ডফিস' আমার খুব পছন্দের জিনিস! হাতে ছুঁইতে ভয় পাই। তবে দেখতে ভীষণ ভালোবাসি... ^_^

আর তাই হয়ত পরপর ৮ জন মরে যাওয়ার পরও এখনও দুজন আমার ঘরে আছে। আম্মু বিরক্ত হয়ে কতবার যে বলেছে! 'উফ আর কিনবি নাতো এগুলা, মরেই তো যায়, কিনে কি লাভ'! আমি তবুও কিনেছি..
তবে শেষবার খুব মন খারাপ করে মনে মনে বলেছিলাম 'যাহ এবারই শেষ! এবার মরে গেলে আর জীবনেও কিনবো না'..

কিজানি! মাছগুলা আমার কথা শুনতে পেয়েছিলো কিনা, হি হি..
সেই আগস্ট মাসে শেষবার কিনেছিলাম, ঐ দুইটাই এখনও বেঁচে আছে। আমার ভাইই অবশ্য বাঁচিয়ে রেখেছে ওদের!
-
কিন্তু শীতকাল আসার পর থেকেই ওরা কেমন যেনো হয়ে গেছে! ঠিক করে খেতো না। মন খারাপ হতো খুব.. মনে হতো ওদের বুঝি খুব কষ্ট হচ্ছে ঠান্ডা পানিতে থাকতে, তাই খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে!
সেজন্য আমি রাগ করে সবসময় বলতাম, 'উফ মরে না কেন এগুলা!? মরে যাক তো, কষ্ট কমুক!'

ছোট ভাই ব্যস্ত ছিলো জন্য গত ৮দিন পানি টা বদলানো হয়নি, আজ হঠাৎ বিকেলে খেয়াল করলাম মাছগুলা উল্টে পাল্টে যাচ্ছে.. 'মরে যাচ্ছে নাকিই'! ছোট বাবু দৌড়ে পানি বদলাতে গেলো, আমি ওদিকে গরম পানি করা শুরু করলাম.. ভাবলাম এতো ঠান্ডা পানিতে থেকেই বুঝি মাছগুলা মরে যাচ্ছে একটু গরম পানি পেলে হয়তো বেঁচে যাবে..
ইয়ে আমি জানি মাছ শীতল প্রাণী। তাও আর কি ঠান্ডা তো লাগেই না! তাই গরম আর ঠান্ডা পানি মিশিয়ে হালকা গরম পানিতে মাছ গুলা ছেড়ে দিলাম, কিন্তু সেকি! বোলের মধ্যে ছাড়ার সাথে সাথেই তো মাছগুলা ছটফট করতে শুরু করলো।
ভয় পেয়েই বুঝি ভুলে গেছিলাম ওগুলা মাছ। তাড়াতাড়ি করে বোল থেকে তুলে একটা মগের মধ্যে ঠান্ডা পানিতে রাখলাম ওদের.. কিন্তু তারপর দেখলাম, মাছগুলি আর সোজা হতে পারছে না, কেমন তড়পাচ্ছে! সোজা হয়ে উঠার চেষ্টা করেও পারছে না। আমি আর আমার ছোট ভাই ধরেই নিলাম মাছগুলি মরে যাবে।

কিছু তো করার নেই, তাই ভেবেই ফিসিং বোলে ঠান্ডা পানি ভরে মাছগুলি ছেড়ে দিলাম! তারপর সেই সন্ধ্যা থেকে অনেকবার দেখেছি, একটা মাছ সুস্থ আরেকটা মাছ মরে যাচ্ছে.. উঠতে পারছে না! কিন্তু বেঁচে থাকা মাছটি অসুস্থ মাছটির পাশে পাশেই আছে, মরে যাবে ভেবেই ফেলে রেখেছিলাম ওদের.. ছোটভাইকে বলেছিও 'এ্যাই মাছ মরে গেছে যাহ ফেলে দিয়ে আয়'! -_-

এইতো একটু আগে আবার দেখলাম, বেঁচে থাকা মাছটি অসুস্থ মাছ টিকে নিজের মুখ দিয়ে সোজা করে তুলে ধরেছে আর নিজের শরীর দিয়ে আগলে রেখেছে। অনেকক্ষণ এভাবে থাকার পর দেখলাম, ভালো মাছটি একটু সরে আসলো আর অসুস্থ মাছটি খুব চেষ্টা করে নিজেকে সোজা রাখার চেষ্টা করতে লাগলো! একটু একটু করে মাছটি সোজা হতে লাগলো আর অন্য মাছটি এই মাছটিকে শরীর দিয়ে আগলে রাখলো! হুঁ আমার মাছ দুটো বেঁচে আছে।
হ্যাঁ যদিও আমি অনেকবার ওদের মৃত্যুকামনা করেছি, তার জন্য আমি অনুতপ্ত। কিন্তু ওরা বেঁচে যাওয়াতে কি ভীষণ খুশী লাগছে আমি ঠিক বুঝাতে পারবো না! ^_^
-
তবে আমি খুব অবাক হয়েছি আজ, দুইটা মাছই তো মরে যাচ্ছিলো প্রায়! হঠাৎ একজন একটু সুস্থ হতেই আরেকজন মরে যাচ্ছে দেখে তাকে বাঁচাতে সে ঝাপিয়ে পড়লো! কি ঠ্যাকা ছিলো তার নিজে অসুস্থ হয়ে আরেকজনকে সুস্থ করতে !!
এইতো মাত্র ৫ মাস ওরা একসাথে আছে, তাতেই ওদের একজনের অপরজনের প্রতি এতো টান?!! আমরা মানুষরা তো দিনের পর দির, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর একসাথে থেকেও কেউ কাউকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে পারিনা।
তাহলে ওরা! ওরা তো মাছ, বন্ধনের কি বোঝে! আমরা মানুষ হয়ে যা পারিনা ওরা মাছ হয়েই তা করে ফেললো!
অথচ এই আমরা মানুষরা নাকি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব, আবার আমরা মানুষেই সবচেয়ে নিকৃষ্ট। কি আজব দুনিয়া, কতো আজব দুনিয়ার মানুষ!
-
আমি জানি আমি অনেকবার এই গোল্ডফিস দুটোর মৃত্যুকামনা করেছি, কিন্তু এখন আমি মনে প্রাণে প্রার্থনা করছি ওরা বেঁচে থাক.. ^_^
দুজন একসাথেই বেঁচে থাক, অনেকদিন বেঁচে থাক

এই কথাগুলো গতবছরের ঠিক এমন সময়ের কথা ছিল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.