![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার দেখা নিষেধ, আমার কিছু করা নিষেধ, আমার কিছু বলাও নিষেধ! তবে আমি নাকি শুধু শুনতে পারবো! এটা কি শান্তি? নাকি শাস্তি?
বাঙালি কোনকিছুতেই মাতেনা, শুধু হুজুগে মাতে
সেই কথা প্রমাণ করতে কষ্ট করে অতীতের স্মৃতি না ঘেঁটে অতি সাপ্রতিক ৩টি ঘটনা মনে করিয়ে দেব, তার আগে একবার ভাবুন তো নিচের দৃশ্য টা,
ধরুন, '৭১ এ শেখ মুজিবকে নিয়ে বা কোন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে একদিন একটি নেতিবাচক খবর প্রকাশ করা হল এবং পরের দিন সেটার প্রতিবাদ জানিয়ে এবং প্রমাণ সহ আরেকটা খবর প্রকাশিত হল, ফলে মিথ্যা প্রমাণিত হল আগেরটা। কিন্তু আজ ৪৫ বছর পর আমরা পরের দিনের পত্রিকাটি পেলাম না, কিন্তু আগের দিনের টি পেলাম, তখন কি অবস্থা হত? সেটাই কি আমরা রেফারেন্স হিসেবে ধরে নিতাম না?
⬜ ঘটনা ১-
মুসা ইব্রাহীম এভারেস্ট জয় করেছেন বলে সমস্ত পত্রপত্রিকায় আর সোশ্যাল সাইটে খবর বেরুলো। গর্বে আমাদের বুকটা ভরে গেল।
কিন্তু কিছুদিন পরেই হঠাত পোস্ট পাল্টে গেল, উদ্ভট সব যুক্তি দাঁড় করালো, উদ্ভট সব প্রমাণ, তাও খুব ভাল মানের পত্রিকা তে।
"সে কি আসলেই এভারেস্ট জয় করেছে?" ছাড়াও, কত জঘন্য সেইসব কথা, বলতেও লজ্জা লাগছে।
এসব শুনে অনেক কথার মাঝে মুসা একটি কথা বলেছিলেন,
‘মানসিক সঙ্কীর্ণতার বাইরে যেতে পারলে বাংলাদেশের অনেক তরুণ ভালো করতে পারবে’
অতঃপর কিছুদিন পর যখন সনদ নিয়ে আসলেন সেখান থেকে, প্রমাণ করে দিলেন সত্যি মিথ্যা, সব স্ট্যাটাস মুছে যেতে লাগল, কেউ কেউ নামেমাত্র 'সরি' বলতে লাগল।
⬜ ঘটনা ২-
বাবুল আক্তারের স্ত্রী খুন হওয়ার পরে তাকে নিয়ে শোকে স্তব্ধ হয় পুরো জাতি।
কিছুদিন পরে "বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে" "স্ত্রী হত্যায় জড়িত আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে" এই জাতীয় খবর দেখামাত্রই তাকে নিয়ে যে কি জঘন্য সব কথা বলল একেক জন, প্রিয়তমা সঙ্গিনী কে হারানো একটা মানুষকে কতবড় খোঁচা যে আমরা দিয়েছি সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
অতঃপর খবর বেরুলো যে তিনি মামলার তদন্তের কাজে ছিলেন,
ব্যাস, সব স্ট্যাটাস ডিলিটের হিড়িক পড়ল আবারও।
⬜ ঘটনা ৩-
গুলশানের ঘটনায় যখন সারা দেশ, সারা পৃথিবী শোকে কাতর, ঠিক তখনই কিছু খবর বেরুলো, "ফারাজ কে ভিডিও তে দেখা গেছে" "জঙ্গির লাশ পাল্টে আরেকজনের লাশ" "শুধু একজনের বাবা মা কে গ্রেফতার করেছে গরীব বলে" আরও কত কি,
এরপর যখন প্রমাণ হতে লাগল একের পর এক, সব স্ট্যাটাস মুছার হিড়িক পরে গেল পুনরায়।
এভাবে বলতে থাকলে অতীতের হাজারও এমন ঘটনা বলা যাবে যখন আমরা এই স্ট্যাটাস দেওয়া আর মুছার হিড়িক তুলি।
⬜ এইসব_কেন?
১। অনেক টেলিভিশন আর পত্রপত্রিকাই চান্সে থাকে
TRP(Television Rating Point),
GRP(Gross Rating Point),
TRP(Target Rating Point),
Reach,
Effective Frequency
এছাড়াও আরও কিছু Audience Measurement Tool বাড়ানোর যেটা কিনা নির্ধারিত হয় কোন প্রোগ্রাম বেশী দেখা হয়েছে, পৌঁছেছে ও আরও কিছু বিষয়ের ভিত্তিতে। আর সেইজন্যই তারা সারাদিন উরাধুরা খবর দেখানোর চান্সে থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক।
২। মানুষ আজকাল ধর্ষণের খবরে পৈশাচিক আনন্দের সিম্বল খুঁজে, মৃত্যুতে চাঞ্চল্যতা খুঁজে, অপকর্মে গৌরব খুঁজে, আর তাইতো মানুষের জন্য একটা কষ্টের কিংবা হতাশার খবরকে রসালো করে তৈরি করা হয়।
৩। মানুষের মনের বিশ্বাস আজ এতই ঠুনকো যে মিনিটে মিনিটে পাল্টে দেওয়া যায়, সেই সুযোগটাই নেয় স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষ।
৪। একটা খবর যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, হেডলাইন দেখেই সেটা নির্ধারণ করে মানুষ, আর তাই হেডলাইন গুলোও মাশাআল্লাহ ধরণের হয়। আর ফলাফল হিসেবে যা হয়, মানুষ পড়ে একটা, বুঝে আরেকটা।
৫। নিরপেক্ষতা বজায়ের নাম করে সুবিধা অনুযায়ী পক্ষ নেয়া হয়। তাই খবরও গ্রহণযোগ্যতা পায় বেশী।
৬। সবার চাইতে একটু ব্যতিক্রম খবর প্রকাশে তৎপর অনেকেই।
৭। এবং সবচাইতে ভয়াবহ, জনপরিচিতি/ জনপ্রিয়তা বাড়াতে বা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে খবর প্রকাশ।
৮। একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে চাপা দিতে অন্য হাজারও রসালো বা চাঞ্চল্যকর ঘটনা ছড়িয়ে দেয়া।
⬜ কিভাবে_ছড়ায়?
১। সোশ্যাল মিডিয়া খুবই সস্তা হয়ে যাওয়াতে মানুষ পড়ার আগেই খবর শেয়ার করে, কয়দিন আগেই রিপোর্ট বের হয়েছে যে ৬০ শতাংশ মানুষই খবর না পড়েই শেয়ার দেন। এমনকি অনেকেই তো zero ফেসবুক থেকেও খবর/ছবি/ভিডিও শেয়ার দেয়।
২। সবার আগে আমিই শেয়ার দিব, বা, আমি যাহা জানি তুমি তাহা জানো না, এইসব মানসিকতা রয়েছে অনেকের, তাই সত্যি মিথ্যা যাচাইয়ের আগেই ছড়িয়ে দেয়।
৩। কেউবা আবার খবর সত্যি নাকি মিথ্যা যাচাইয়ে শেয়ার দেয়। কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে বা সতর্কতা বাড়াতে শেয়ার দেয়।
৪। ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগায় অনেক সময় খবর ছড়াতে।
৫। আর হাতে গোনা মুষ্টিমেয় কিছু আছে যারা ফেসবুকে আসেই শেয়ার করার জন্য, যা পাবে তাই।
⬜ ক্ষতি_কি?
১। একজন জাতীয় বীর মুহূর্তেই কলঙ্কিত হয়, অথচ পরবর্তীতে প্রমাণ হলেও অনেকেরই অজানা থেকে যায় বা সন্দেহ থেকে যায় তার নামে।
২। একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর চাপা পড়ে যায় এইসব খবরের মাঝে। মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরে যায়।
৩। এতসব ভুয়া খবর দেখে দেখে মানুষের মাঝে একটা নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয় ও অবিশ্বাস জন্ম নেয় তাদের মধ্যে।
৪। যারা মধ্যমপন্থি মানুষরা বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়।
৫। যারা ঘাড়ত্যারা, বুঝতেই পারছেন কাদের কথা বলছি, তারা সুযোগ পায় বিভ্রান্তি ছড়ানোর এবং রীতিমত যুদ্ধ বাধিয়ে ফেলে।
৬। এইসব খবরকেই অনেকেই রেফারেন্স হিসেবে ধরে নিয়ে অন্যদের সাথে তর্কে লিপ্ত হয় বা বিপথগামী করে।
৭। তর্কাতর্কি থেকে অনেক সময় মারামারি হাতাহাতি এমনকি প্রাণহানিও ঘটে।
৮। ভুয়া খবরের কারণে আত্মহত্যাও ঘটেছে।
৯। যারা সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের ক্ষমতা রাখেনা বা সুযোগ নেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভুয়া তথ্যের কারণে।
⬜ কিভাবে বন্ধ করবেন?
১। শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কখনই কোন খবর কাউকে প্রকাশ্যে বলবেন না বা শেয়ার করবেন না।
২। কোন খবর গুরুত্বপূর্ণ কিনা সেটা না ভেবেই ছড়িয়ে দিবেন না।
৩। আপনি যেটাকে ধ্রুব সত্য ধরে নিচ্ছেন আসলেই সেটার উৎস সঠিক কিনা যাচাই করুন।
৪। জেনে রাখবেন, যখন কোন খবর প্রকাশিত হবে, সেটা একটা নির্দিষ্ট এঙ্গেল বা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আপনার সামনে তুলে ধরা হয় এবং সেইদিকেই আপনার ফোকাস আবদ্ধ রাখা হয়, তাই অন্যভাবেও চিন্তা করুন বা অন্য কিছুও ভাবুন।
৫। আপনি যদি দেখেন যে কেউ অনবরত এই পন্থায় খবর ছড়াচ্ছে তাহলে আপনার কাছে সেই খবরটি পৌঁছানোর রাস্তা বন্ধ করে দিন, অর্থাৎ ফেসবুক হলে আনফলো করে দিন, পেপার হলে সেই পেপার নেওয়া বন্ধ করুন, ওয়েবসাইট হলে সেই সাইটে ভ্রমণ করবেন না, মনে রাখবেন, যে একটা মিথ্যা ছড়াতে পারে সে হাজারটা মিথ্যা ছড়াতে পারে।
৬। খবরটি এর আগেও কেউ ইতোমধ্যেই ছড়িয়েছে কিনা জেনে নিন।
৭। খবর তো খবরই, সত্যি মিথ্যা কি একদিনেই প্রমাণ হয় নাকি? অপেক্ষা করেন, এমনিতেই সামনে আসবে। কখনই একটা ঘটনা শেষ হওয়ার আগেই সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না যদিনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বা তাৎপর্যপূর্ণ হয়।
৮। মনে রাখবেন, আপনি কি ছড়াচ্ছেন সেটার উপর কিন্তু আপনার ব্যক্তিত্বও নির্ভর করে, বুঝিয়া করিবেন কাজ - করিয়া পস্তাইবেন না।
৯। এই যে দেখেন, এই পোস্টের প্রথম লাইনেই কিন্তু বলে দেওয়া আছে পোস্টের ভিতরে কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এটা কেন জানেন? আপনারা হিডিং দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন কোনটা পড়ব, কোনটা পড়ব না, একটা খবর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ুন, অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর থাকে, কথার মাঝেই কথা লুকিয়ে থাকে।
পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই, আপনি যদি বিবেকবান হন, আপনি যদি বুঝেন যে কোনটা ভাল কোনটা মন্দ তাহলে একটা কথা শোনার সাথে সাথেই আগে চিন্তা করবেন আপনার সেই বিবেকের সাথে, আপনার সেই চেতনার সাথে এই কথাটা সাংঘর্ষিক কিনা। অর্থাৎ খুব সহজেই যেন আপনাকে কেউ ম্যানিপুলেট না করতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
অনেকেই আপনাকে অনেক রকম যুক্তি বা কথার প্যাঁচে ফেলে বিশ্বাস করাতে চাইবে অনেক কিছু, কিন্তু বেসিক জায়গায় অনড় থাকুন যে যাই বলুক, অনৈতিক কিছুই আপনি বিশ্বাস করবেন না এমন একটা জিনিস মাথায় সেট করে নিন আজই।
আমরা যদি এদের সুযোগ না দেই, পদে পদে এদের প্রত্যাখ্যান করি মিথ্যা খবর পাওয়া মাত্রই, এরা এমনিতেই এমন ভুয়া খবর প্রচার করা বন্ধ করে দিবে।
বিঃদ্রঃ পুরো বাঙালি জাতিকে বা পুরো মিডিয়াকে খারাপ বলা হয়েছে টাইপ মন্তব্য নিরুৎসাহিত করছি, কখনই এমনটি করিনি, করতে চাইওনা, ভাল করে পড়ুন বুঝতে পারবেন।
০৮ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৪০
জাতীয় কতৃপক্ষ বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৩
আব্দুল্লাহ্ আল আসিফ বলেছেন: ঠিকই বলেছেন।