![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার দেখা নিষেধ, আমার কিছু করা নিষেধ, আমার কিছু বলাও নিষেধ! তবে আমি নাকি শুধু শুনতে পারবো! এটা কি শান্তি? নাকি শাস্তি?
শৈশবের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে কিছু জ্ঞান আমাকে হতাশ করেছিলো। চোখের সামনে থেকে সরে যাচ্ছিলো যবনিকা, আকুল চেষ্টা করেও পর্দার এই অবশ্যম্ভাবী উন্মোচন আমি ঠেকাতে পারিনি।
সোনার কাঠি, রুপোর কাঠি বদল করে দৈত্যের প্রস্তরপ্রাসাদে বন্দিনী রাজকন্যার ঘুম ভাঙানো যায় না; আদতে এমন কোনো রাজকন্যাই নেই, - এটা জানতে পারাটা ছিলো পৃথিবী ধ্বসে পড়ার মতোই। প্রাসাদসংলগ্ন তালপুকুরে ডুব দিয়ে কৌটো তুলে এনেছিলো যে ডালিমকুমার, তার জায়গায় নিজেকে দেখতে কি সাধ যায়নি? ইচ্ছে কি করেনি কৌটো থেকে কালো ভ্রমরকে হাতে নিয়ে একটি একটি করে তার হাত-পা ছিঁড়ি আর প্রাণসংশয় হোক দৈত্যের ? কালো ভ্রমরের উপমা ছিলো আরেকটি জায়গায়।
রাজকন্যার চোখ যেন কালো ভ্রমর, চুল তার শাওনের মেঘ, আপেলের মতো লালচে তার গাল। এমন উপমাদেবী কি কেবল কল্পনার হতে পারে?
চাঁদের বুড়ি নিয়ে স্থির নিশ্চিত ছিলাম। ওখানে সে কেবল চরকা কাটে আর রাশি রাশি তুলো জমায়। এ তুলো দিয়ে কি করে সে? তখন মনে পড়ে সেই সুয়োরাজকন্যা আর দুয়োরাজকন্যার গল্প, যাদের উঠোনে বিছিয়ে দেয়া তুলো ঝড়কে পাঠিয়ে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলো চাঁদের বুড়ি। তারপর?
দুয়োরাজকন্যা গেল চাঁদে, চাঁদের বুড়ির ঘরকন্না করে দিলো পরিপাটি করে, রেঁধে দিলো পঞ্চব্যঞ্জন, ধুয়ে দিলো বুড়ির শাড়ি; তবেই না রাজকন্যা তুলোর বদলে বুড়ির কাছ থেকে হীরা-মাণিকের গয়নার বাক্স পেলো অনেক অনেক, আর শেষ বাক্সটি খুলে পেলো কান্তিমান রাজপুত্রকে। চাঁদ আছে, কিন্তু চাঁদের বুড়ি নেই, চরকা নেই, চাঁদে কেবল খাঁখা পাথুরে শূন্যতা- এইসব জেনে শোকগ্রস্ত হয়েছিলাম- এটা মনে পড়ে।
আর কিছুদিন পর ফেলুদাই আমাকে আচ্ছন্ন করেছিলো। ভাবতাম বাস্তবের একটি চরিত্র। জটায়ু ওরফে লালমোহন গাঙ্গুলী রোববার সকাল হতেই আচার্য রজনী সেনের বাড়ির দুয়ারে তাঁর এম্বাসেডর নিয়ে হাজির হয়ে যান, আর চা-ডালমুট সহযোগে চলতে থাকে থ্রি মাস্কেটিয়ার্সের জম্পেশ আড্ডা- এ নিয়ে নিশ্চিত ছিলাম।
বছর চারেক আগে সিমলা যখন যাই, ফিসফিসিয়ে বলে উঠেছিলাম- 'বাক্স রহস্য!' কলকাতার রাস্তায় হেঁটে মনে হয়েছিলো- এই রাস্তা দিয়েই হয়তো ফেলুদা ধাওয়া করেছিলো শেয়াল-দেবতা আনুবিসের মূর্তি-চোরকে। যাইনি এখনও, তবে যদি কোনদিন অজন্তা-ইলোরার গুহা দেখতে যাই, চোখ খুঁজবে যক্ষীর মাথা-চোরকে কিংবা সানগ্লাস-পরা ঢ্যাঙা কোনো ইউরোপীয় ট্যুরিস্টকে দেখে মনে হবে- ছদ্মবেশে প্রদোষ সি. মিটার ওরফে ফেলুদা নয়তো?
কাশীতে পা দিলে আমি জানি- গায়ে ছাইভস্মমাখা সাধুবাবাকে দেখলেই মছলিবাবাকে মনে পড়াবে, আর কাশীর গলিতে দেয়ালে বরকন্দাজের ছবি আঁকা মগনলাল মেঘরাজের বাড়ি খুঁজে বেড়াবেই আমার চোখ।রূপকথাই আসল কথা, ওতে মিথ্যে নেই।
মগজে আর হৃদয়ে যা আছে, তার চেয়ে দৃশ্যমান, প্রচলিত অর্থে বাস্তব কিছু অধিক বাস্তব হয় কি করে? সব কিছু জেনেও এমন ভাবতে সুখ পাই।
©somewhere in net ltd.