নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের কিছু ক্রিকেটার আছে, যাদের নাম মুখে নিলেই আমার অন্যরকম একটা ভালো লাগা, ভালোবাসা কিংবা আফসোস চলে আসে। আফতাব আহমেদ তেমনি একজন। প্রথমে ভালো লাগা, তারপর ভালোবাসা, সবশেষে আফসোস ও হতাশা দিয়েই ক্রিকেটার আফতাব পর্ব শেষ হয়েছে।
অনেক সম্ভাবনা নিয়ে একজন টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান ও পার্টটাইম মিডিয়াম পেসার হিসেবে ২০০৪ সালে নিউজিল্যান্ডের সাথে টেস্ট অভিষেক। অভিষেক ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ৩৯ বলে ৩ চারে ২০ রান করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪২ বলে ৫ চারে ২৮ রান করেন। দ্বিতীয় ইনিংসেই তাপশ বৈশ্য ১০ নাম্বার পজিশনে ব্যাট হাতে মাত্র ৪৭ বলে ৬৬ রানের দূর্দান্ত ইনিংস খেলেন।
মাঝখানে আইসিএল ঝড় শেষে পুনরায় দলে ফিরে ২০১০ সালে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজ শহর চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের ১ম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১ রান করেন। ২য় ইনিংসে করেন ২৬ রান। তৎপর আর জাতীর দলের হয়ে ডাক পরেনি তার।
২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ক্যারিয়ারে ১৬টি টেস্ট খেলে অপরাজিত ৮২ রান বেস্টে ৫৮২ রান করেন তিনি। বল হাতে ২ উইকেট বেস্টে ৫ উইকেট শিকার করেন।
২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্যারিয়ারে একমাত্র ফিফটি ও অপরাজিত ৮২ রান করেন। ৮২ বলে ১ ছয় ও ১৩ চারে এ রান সংগ্রহ করেন তিনি।
২০০৪ সালে টেস্ট অভিষেকের আগে আফ্রিকার সাথে ওয়ানডে অভিষেক। ম্যাচে ১৩ বল খেলে শুণ্য রানে আউট হন তিনি। ক্যারিয়ারের ৪র্থ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের সাথে প্রথমবারের মতো বল হাতে নিয়েই চমক দেখান তিনি। বাংলাদেশের করা ১৪৬ রানের জবাবে নিউজিল্যান্ড ব্যাট করতে নামার পর আফতাব আহমদের বোলিং তোপে পড়ে ১৪৭ রান সংগ্রহ করতে ৭ উইকেটের পতন ঘটে নিউজিল্যান্ড এর। বাংলাদেশ না জিতলেও ম্যাচ সেরার পুরস্কারে ভূষিত হন আফতাব আহমেদ। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ উইকেটের রেকর্ড।
আইসিএল ঝড় শেষে পুনরায় দলে ফিরে ২০১০ সালে ক্যারিয়ারের ইংল্যান্ডের সাথে ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে তথা সিরিজের ৩য় ওয়ানডেতে ৪৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
ক্যারিয়ারে ২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৮৫টি ম্যাচ খেলে ৯২ বেস্টে ১৪টি ফিফটিতে ১৯৫৪ রান করেন তিনি। বল হাতে ৪ উইকেট বেস্টে ১২ উইকেট শিকার করেন।
২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের সাথে টি২০ অভিষেক। ম্যাচে ১৯ বলে ২৮ রান করেন তিনি।
তৎপর ২০১০ সালে অষ্ট্রোলিয়ার সাথে ক্যারিয়ারের শেষ টি২০ ম্যাচ খেলেন তিনি। ম্যাচে মাত্র ১ রান করেন।
২০০৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১১টি ম্যাচ খেলে অপরাজিত ৬২ বেস্টে ২২৮ রান সংগ্রহ করেন।
ক্যারিয়ারের ৫ম ফিফটি ৫৯ রান করেন মাত্র ৩১ বলে। ৬ষ্ঠ ফিফটি ৫৩ রান করেন মাত্র ৩৯ বলে। ২০০৬ সালের চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ক্যারিয়ারের ৭ম ফিফটি ৫৯ রান করেন ৫৫ বলে। ১৪তম ফিফটি ৬১ রান করেন ৫৭ বলে।
২০০৭ সালের টি২০ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে মাত্র ৪৯ বলে সর্বোচ্চ ৬২ রান করেন। যদিও মাত্র ২৭ বলে ৬১ রান করে ম্যাচ সেরা হন মোহাম্মদ আশরাফুল।
২০০৫ সালে অজি বধের ম্যাচেও ছয় মেরে দলকে জয়ী করেন আফতাব আহমেদ। ২০০৭ সালে আফ্রিকা বধের ম্যাচে ৩৫ রান করে আশরাফুলকে যোগ্য সহায়তা করেন। ২০০৬ সালে প্রথম শ্রীলংকা বধের ম্যাচে আশরাফুল সর্বোচ্চ ৫১ রান করলেও মাত্র ২১ বলে ৩২ রান ও বল হাতে ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন আফতাব।
ক্যারিয়ারের প্রতিটি ম্যাচেই তিনি মারকুটে ব্যাটিং করতেন। তখনকার সময়ে দুর্বল বাংলাদেশের যখন এক প্রান্তে নিয়মিত উইকেট এর পতন ঘটতো তখন কাউন্টার এটাক করে চার ছয় মেরে রানের চাকাকে সচল রাখার চেষ্টা করতেন।
২০০৮ সালে আইসিএল ঝড়ে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। ২০১০ সালে ক্রিকেটে ফিরলেও আগের মতো তেমন দাপট দেখাতে পারেননি তিনি। ২০১০ সালে ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে ম্যাচে ইংল্যান্ডের সাথে ৪৬ রানের ইনিংস খেললেও পরবর্তীতে আর ওয়ানডেতে ডাক পাননি তিনি। নিজের হেয়ালিপূর্ণ মনমানসিকা ও বোর্ডের অনিচ্ছার কারনেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যেতে হয়েছে তাকে।
তারপরও বিপিএলএ দাপট দেখাবেন এমন আশা থাকলেও এখানেও ব্যর্থ তিনি। অবশ্য তেমন একটা সুযোগও পাননি বিপিএলএ।
ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে অবসর নিয়ে এখন তিনি কোচ। নিজ শহর চট্টগ্রামে আফতাব আহমেদ ক্রিকেট একাডেমীর কোচ হিসেবে ভবিষ্যত ক্রিকেটারদের তুলে আনার কাজ করছেন।
আফতাব আহমেদ জাতীয় দলে নেই, এটা এখনকার সময়ে স্বাভাবিক বিষয় হলেও অভিষেকের পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আফতাব বিহীন জাতীয় দল ভাবাই যেত না। আফতাব এর চার ছক্কা দেখার জন্য হলেও মানুষ খেলামুখী হতো।
ক্রিকেটারের মতো কোচ হিসেবেও সফল হন এবং আশা করবো ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করার সুযোগ পেয়ে জাতীয় দলকে শক্তিশালী করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন। এই কামনা........
©somewhere in net ltd.