নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক্রিকেট কি সারা জীবন ঘরের খেলা হয়েই থাকবে, এই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। স্বাগতিকরা ইচ্ছেমত উইকেট বানাবে, সফরকারীরা গো হারা হেরে যাবে, এটাই কি নিয়তি? যদি এভাবেই চলে তাহলে সামর্থ্যরে প্রমাণ কিভাবে মেলবে?
ঘরের মাঠে ভারত কতটা শক্তিশালী তা ভারতের ঘোরতর বিরোধীরাও জানে ও মানে। সাথে অষ্ট্রোলিয়া, আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকা এবং হালের বাংলাদেশও ঘরের মাঠে ইদানিং ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। এর কারণ একটাই নিজেদের ইচ্ছেমত উইকেট তৈরী করা।
টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে জিম্বাবুয়ে অধিক দুর্বল হলেও ঘরের মাঠে টেস্টে কিছুদিন আগেও হারিয়েছে পাকিস্তানকে, টি২০ ম্যাচে হারিয়েছে ভারতকে এবং বাংলাদেশও জিম্বাবুয়ে সফর করতে গেলে ধরাশায়ী হয়ে আসে।
সফরকারী দল হিসেবে আফ্রিকাই দাপট দেখায় বিশ্বের যেকোন দেশে। ইদানিং বিদেশে ব্যর্থ হলেও পূর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অষ্ট্রোলিয়া যেকোন দেশে নিজেদের সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়েছে। এছাড়া প্রতিটি দলই বিদেশের মাটিতে অসহায়।
দেশের মাটিতে বাঘ আর বিদেশে বিড়াল, প্রতিটি দেশের জন্যই এখন এ কথাটি ব্যবহার হয়।
অনেকেই প্রশ্ন করেন স্বাগতিকরা নিজেদের সামর্থ্যরে জায়গা তথা ব্যাটিং কিংবা বোলিং উইকেট বানালেও সফরকারী দলও তো সেখানে নিজেদের কোনটি সামর্থ্য প্রমাণ করতে পারে, কিন্তু ওরা ব্যর্থ হয় কেন?
ক্রিকেট পুরোটাই ইতিবাচক মানসিকতার খেলা। মানিয়ে নেওয়ার খেলা। সামর্থ্য থাকলেই নিজেদের সেরাটা সব সময় দেওয়া যায় না। প্রতিটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারই ভালো খেলে দলে আসে কিন্তু যাদের মনমানসিকতা যত বেশি ইতিবাচক, এরাই সফল হয় বেশি। সে হিসেবে বিদেশে সফর করতে গেলে প্রতিকূল আবহাওয়া, অচেনা পরিবেশ এবং উইকেট ফ্যাক্টের কারনে ধরাশায়ী হয় সফরকারী দলগুলো। হাতে ধরে নিশ্চয়ই এর প্রমাণ দিতে হবে না। পুরনো ইতিহাসও ঘাটতে হবে না, সাম্প্রতিক ভারত, শ্রীলংকা, দুবাই এর মাটিতে পাকিস্তানের সাফল্য, ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের সাফল্যগুলোর দিকে তাকালেই চলবে। তবুও ওয়ানডে ক্রিকেটের বিশ্বকাপজয়ী দলগুলো কোথায় বিশ্বকাপ জয় করেছে তার হিসাবটা তুলে ধরতে চাই।
১৯৭৫ সালের প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল ইংল্যান্ডের লর্ডসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফাইনালে অষ্ট্রোলিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল ইংল্যান্ডের লর্ডসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল ইংল্যান্ডের লর্ডসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত।
১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ এশিয়া মহাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের কলকাতায় ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় অষ্ট্রোলিয়া।
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ অষ্ট্রোলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান।
১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ এশিয়াতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফাইনালে অষ্ট্রোলিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলংকা।
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল ইংল্যান্ডের লর্ডসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাকিস্তানকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় অষ্ট্রোলিয়া।
২০০৩ সালের বিশ্বকাপ আফ্রিকা মহাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় অষ্ট্রোলিয়া।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শ্রীলংকাকে হারিয়ে টানা তিনবার ও সর্বমোট ৪র্থ বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় অষ্ট্রোলিয়া।
২০১১ সালের বিশ্বকাপ এশিয়া মহাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শ্রীলংকাকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপ অষ্ট্রোলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ৫ম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় অষ্ট্রোলিয়া।
১৯৭৫ থেকে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত কোন স্বাগতিক দলই নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। ১৯৯৬ সালে শ্রীলংকাতে বিশ্বকাপের কিছু ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলেও ফাইনাল পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিশ্বকাপের হিসেবে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এবং সবধরণের ক্রিকেট মিলিয়ে ২০০০ সালের আগেই ক্রিকেট উম্মুক্ত ছিলো অর্থাৎ নিজেদের সামর্থ্য প্রতিটি দলই যেকোন জায়গায় সাফল্য অর্জন করতো। কিন্তু ২০০০ সাল পরবর্তীতে ঘরের মাঠে বাঘের রূপ ধারণ করেছে দলগুলো।
ভারত কিংবা ইংল্যান্ডের মতো দল যখন ঘরের মাঠে ৫-০ তে সিরিজ জেতার পর একই দলের বিরুদ্ধে তাদের দেশে এসে উল্টো ৫-০তে হেরে যাওয়া দেখেই বুঝা যায় বিদেশে কত অসহায় সফরকারীরা। সামর্থ্য দিয়েও কিছু করা যাচ্ছে না।
অন্যান্য দলের মতো সম্প্রতি বাংলাদেশ দলও দেশের মাটিতে নিজেদের শক্তির জায়গা থেকে উইকেট তৈরী করে সাফল্য পাচ্ছে। কিন্তু বিদেশ সফরেই অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
নিউজিল্যান্ডকে দেশের মাটিতে ২ বার হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। এর আগে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়েও বারবার হোয়াইটওয়াশ হয়ে আসে বাংলাদেশ।
এই যখন অবস্থা, তখন সামর্থ্যরে মূল্যায়ন কোথায়? ২০০০ সাল এর পূর্ববর্তী সময়েও এমনটা বেশি ছিল না। তখন দলগুলোর মধ্যে ভারসাম্য থাকতো পারফরম্যান্সে। যা এখন একেবারেই নেই। এতে করে দেশের মাটিতে বেশি বেশি ম্যাচ খেলে র্যাংকিংয়ে সুবিধাজনক জায়গায় থাকছে মোড়ল দেশগুলো।
আইসিসি ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা। তবে তাদের নিজস্ব কোন শক্তি নেই, এটা আজ সবাই জানে। যেহেতু আইসিসির প্রতিনিধি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো থেকেই নির্বাচন হয়, বিশেষ করে ভারত, অষ্ট্রোলিয়া ও ইংল্যান্ডেরই প্রাধান্য থাকে সেখানে এবং যেহেতু ভারত, অষ্ট্রোলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডও একে অপরের খেলায় বিদেশের মাটিতে জঘন্য ভাবে ধরাশায়ী হয়, সেহেতু স্পোটিং উইকেট তৈরীর বাধ্যতামূলক নিয়ম করা কঠিন কোন কাজ নয়। শুধুমাত্র ক্রিকেটের বিশ্বায়ন ও দর্শকদের কথা বিবেচনা করলেই হবে।
বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে, ক্রিকেট আর অনিশ্চয়তার খেলায় থাকবে না, ঘরের মাঠে সাফল্য নিশ্চিত এর খেলায় পরিণত হতে ক্রিকেট। উত্তেজনা কিংবা আকর্ষণ কোনটাই থাকবে না ভবিষ্যতে।
এফটিপিতেও আইসিসির শক্ত অবস্থান নেই। বড়দলগুলো নিজেদের সুবিধা মতো ম্যাচ রাখছে বা বাদ করে দিচ্ছে। নিজেদের মাটিতে প্রচুর ম্যাচ রেখে সুবিধামতো উইকেট তৈরী করে পূর্ব পরিকল্পনা করে সাফল্য পাচ্ছে অহরহ।
কিছুদিন আগে শেষ হওয়া ভারত বনাম ইংল্যান্ড এর মধ্যকার টেস্ট সিরিজে সবাই বলেদিয়েছিল ইংল্যান্ড হোয়াইটওয়াশ হবে, হলোও তাই। বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড এর মধ্যকার চলমান সিরিজে বাংলাদেশ সবকটি ম্যাচ হারবে, এটাই বাস্তবতা হতে পারে (একজন বাংলাদেশী হিসেবে এটা কখনোই কামনা করি না) এবং চলমান পাকিস্তান বনাম অষ্ট্রোলিয়া সিরিজে পাকিস্তান সবকটি ম্যাচ হারবে এবং চলমান আফ্রিকা বনাম শ্রীলংকা সিরিজে শ্রীলংকা সবকটি ম্যাচ হারবে, এটাই বাস্তবতা হয়ে দাঁড়াতে পারে, এই সম্ভাবনাই বেশি, এটা শুধুমাত্র ধারণাই নয়, চরম বাস্তবতাও।
আইসিসির নিজস্ব শক্তি ব্যবহার করতে হবে। ক্রিকেটকে আরো আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় করে তুলতে হলে এবং অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট, এই গৌরবময় সৌন্দর্য্য সবসময় বজায় রাখতে হলে প্রতিটি দেশেই স্পোটিং উইকেট তৈরীর বাধ্যতামূলক আইন করার কোন বিকল্প নেই, না হয় ঘরের মাঠে বাঘ, বিদেশে বেড়াল, এটাই হবে ক্রিকেটের পরবর্তী স্লোগান। আইসিসির বোধদয় হউক।
জুবায়ের আহমেদ
ক্রীড়া লেখক
২| ২৬ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:৫০
যুবায়ের আহমেদ বলেছেন: ব্যাটে বলে সমান সুযোগ থাকে যে উইকেটে অর্থাৎ পিচ থেকে আলাদা কোন সুবিধা যেন না পায়, সেটাই তো স্পোর্টিং উইকেট, ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:১৪
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: স্পোর্টিং উইকেট বলতে আপনি ঠিক কী বুঝাচ্ছেন বলবেন কী?