নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতিটি শিশুই তাদের লেখাপড়া শুরু করার আগে মা-বাবার মাধ্যমেই বাংলা বর্ণ ও শব্দের সাথে পরিচয় হয়। তারপর যখন বাচ্চাটির বয়স ৫/৬ বয়সে পা রাখে তখনই তাদেরকে বিদ্যালয়ে পাঠানো হয় (অবশ্য এখন কেজি স্কুলের প্রভাবে শিশুদের ৪ বৎসর বয়সেই পড়ালেখা এবং একাধিক বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়)। নার্সারী কিংবা প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির পর শিশুটিকে পড়ালেখা করানোর দায়িত্ব অর্পিত হয় শিকের উপর। বাসায় মা-বাবা ও বিদ্যালয়ে শিক্ষক, এই দুই শ্রেণীর অভিভাবকের মাধ্যমেই শিশুটি লেখাপড়া করা এবং এর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে। এভাবে ধীরে ধীরে একটি শিশু যখন প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে তখনই উচ্চ মাধ্যমিকে পা রাখে শিশুটি এবং নিজে নিজেই পড়ালেখার গুরুত্ব বুঝতে পারে এবং প্রাথমিক শিক্ষার যতটা গুরুত্ব ছিল তার কাছে, উচ্চ মাধ্যমিকে আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে শেখে শিশুটি। কিন্তু পড়ালেখার পাশাপাশি শিশুটি সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারনে খেলাধূলা, বন্ধবান্ধবে জড়িয়ে পড়ায়, শিশু পড়ালেখার গুরুত্ব বুঝলেও পূর্বের মতো ততটা মনযোগী হয় না।
উচ্চ মাধ্যমিকে শিশুটি দায়িত্বশীল কিংবা পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী হওয়ার বিপরীতে পিতা মাতা কর্তৃক যেভাবে প্রাথমিক শিক্ষার সময় খেয়াল রাখা হতো, উচ্চ মাধ্যমিকে তা কমে যায় অনেকাংশে। শহরে পিতা মাতা কর্তৃক সন্তানের উচ্চ মাধ্যমিকের লেখাপড়ায় যথেষ্ট নজর থাকলেও গ্রাম অঞ্চলে তা উদ্বেগজনক ভাবে কমে যায়। সন্তানের লেখাপড়ায় নজর রাখা হয় কম। ফলে প্রাথমিকে ভালো ফলাফলের পরিবর্তে উচ্চ মাধ্যমিকে অনেক সময় শিশুটি সাধারণ মানের ফলাফল করে, কখনো কখনো পরের শ্রেণীতে উত্তীর্ণ না হতে পাবার মতো ঘটনাও ঘটে। প্রাথমিকের ছাত্রটির সাথে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রটির আকাশ পাতাল তফাৎ দেখা যায়।
এছাড়াও প্রাথমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক দুটো প্রতিষ্ঠানেই ছাত্রদেরকে ভালো ছাত্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ছাত্রের অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরী বলেই আমি মনে করি। অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারনে ছাত্র লেখাপড়ায় মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এর ছাত্ররা যতই মেধাবী হউক না কেনো, পড়া ফাঁকি দেওয়ার মানসিকতা সবার মধ্যেই থাকে, কিন্তু একটু আন্তরিক হয়ে তাদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনতে হয় শিক্ষক ও অভিভাবকদের আন্তরিকতা ও সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে।
আমার নিজ গ্রামের প্রাথমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয় সহ সারা দেশের বিদ্যালয়গুলোতেই প্রায় সময় মারাত্মক ফলাফল বিপর্যয় দেখা দেয়। এ নিয়ে অভিভাবকরা শিক্ষকদের এবং শিক্ষকরা ছাত্র/অভিভাবকদের দোষারূপ করলেও অভিযোগটা সবার উপরেই সমান ভাবে বর্তায়। মা বাবা ঠিক ভাবে সন্তানের পড়ালেখার খোঁজ খবর রাখা এবং বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসা যাওয়ার মাধ্যমে শিক্ষকদের সাথে সন্তানের পড়ালেখার বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা করার কোন বিকল্প নেই। তেমনি ভাবে শিক্ষক কর্তৃক মারধরের মতো শাসন ব্যতীত মৃদ শাসন এবং আন্তরিক হওয়া, সাথে অভিভাবকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে ছাত্রটির লেখাপড়া এবং চলাফেরা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার কোন বিকল্প নেই। কেননা পড়ালেখা ছাত্রটি করলেও প্রাথমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিকের সময়টাতে ছাত্ররা লেখাপড়ার প্রতি উদাসিনই থাকে বেশি। কাজেই কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তুলতে প্রাথমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্নের আগে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক, এই তিনের সুন্দর সমন্বয়সাধন করা জরুরী। এতে করেই একটি ছাত্রের সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার ভীত তৈরী হয়।
©somewhere in net ltd.