নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসিফা-আরফানের আব্বু

যুবায়ের আহমেদ

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি তাই স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে চলছি আগামীর পথে

যুবায়ের আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রিকেট নিয়ে হতাশা এবং প্রাকিস্তানপ্রীতির নির্লজ্জ দৃষ্টতা!

২৫ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:০৪




খেলা বিনোদনের অনেকগুলোর মাধ্যমের মধ্যে একটি এবং ক্রিকেট অন্য আট দশটি খেলার মতো একটি খেলা হলেও ভারতীয় উপমহাদেশে ক্রিকেট জাতীয়তবাদে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশে ক্রিকেট এখন ক্রিকেটার কিংবা সাধারণ নাগরিকদের জন্য দেশপ্রেম জাহির করা কিংবা দেশদ্রোহিতার তকমা পাওয়ার উপলক্ষ্যও। খেলাটি আর খেলাতে নেই, বাঙ্গালীর রক্ত কণিকার সাথে মিশে গেছে। দৈনন্দিন আলাপ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে ক্রিকেট। আবেগী সমর্থকদের কেউ কেউ বলে থাকেন “ক্রিকেটে খাই, ক্রিকেটে ঘুমাই”। অথচ বাস্তবতা হলো ভিন্ন থেকে ভিন্নতর। ক্রিকেট নিয়ে উম্মাদনার মাঝেই কত নিরীহ মানুষ ক্ষুধার সাথে লড়াই করে হেরে যায়। কত পিতা-মাতা শিশু সন্তানের মৌলিখ অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে না পারার হতাশায় স্ব পরিবারে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। দুর্নীতি, সুদ, ঘুষ, অর্থপাচার সহ নানামুখী রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সমস্যা আড়ালে পরে থাকে ক্রিকেট নিয়ে বেঘোর উম্মাদনার কারনে।

নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত বাঙ্গালী জাতিকে এক সময় আনন্দে ভাসাতো ফুটবল। ফুটবল এর ব্যর্থতায় জনপ্রিয়তার রেস থেকে ফুটবলকে পেছনে ফেলে এখন জায়গা করে নিয়েছে ক্রিকেট। বিশ্ব মঞ্চে ক্রিকেটে ছোট ছোট সফলতার সুবাদে মানুষ ক্রিকেট নিয়ে ভাবছে, সফলতার আনন্দে আন্দোলিত হচ্ছে, ব্যর্থতার হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। আশরাফুল-মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিক-মুস্তাফিজদের হাত ধরে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ কিংবা বড় মঞ্চে পাওয়া সফলতাগুলোর সুবাদে সমর্থকদের স্বপ্নের রং ডানা মেলে আকাশে উড়ছে। কিন্তু সাকিব-তামিম-মুশফিক-রিয়াদরা সমর্থকদের প্রত্যাশা কিংবা দলের অবস্থান অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারছে না। আধুনিক ক্রিকেটের জমানায় বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট শুরু করলেও অদ্যাবধি দুই দশক পেরিয়েও সমীহ জাগানিয়া শক্তি হতে পারেনি টেস্ট ক্রিকেটে। হালের জনপ্রিয় টি২০ ফরম্যাটে বাংলাদেশ দল অন্যান্য দলগুলোর মতো একই সময়ে শুরু করলেও অদ্যাবধি শিশু দলই হয়ে আছে। ক্রিকেটপ্রেমী জাতিকে শুধু যে, ক্রিকেটাররাই হতাশ করছেন তা নয়, হতাশ করছেন কর্তা ব্যক্তিরাও। দল গঠন ও পরিচালনার ব্যর্থতাও এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। তারা টাকা কামাইয়ের রেসে সফল হচ্ছেন, মিডিয়ার সামনে স্বগৌরবে হাসছেন। কিন্তু দলের পারফরম্যান্স হাসির বদলে কান্নায় রূপ নিচ্ছে।

সম্প্রতি টি২০ বিশ্বকাপের পূর্বে ঘরের মাঠে পরপর দুই সিরিজে মাইটি অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ও ক্রিকেটে ভদ্র এবং ধারাবাহিক পারফর্মার নিউজিল্যান্ডকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। চার ছক্কার টি২০ ক্রিকেটের উইকেট ব্যাটিং কিংবা স্পোর্টিং প্রত্যাশিত হলেও সফলতা পেতে মরিয়া বাংলাদেশ টার্নিং উইকেট তৈরী করে বোলারদের হাত ধরে পাওয়া সফলতার ধারাবাহিকতা বিশ্বকাপে বজায় রাখতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকার মাঝেই বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে সেখানে প্রথম রাউন্ডে পিছিয়ে থাকা স্কটল্যান্ডের সাথে পরাজয়বরণ করতে হয়েছে। মূল পর্বের ৫ ম্যাচের ২টিতে ভালো লড়াই করতে পারলেও শেষ দুই ম্যাচে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ক্রিকেটারদের বডিল্যাঙ্গুয়েজ ঠিক ছিলো না শেষের দিকে। স্কটল্যান্ডের সাথে পরাজয়ের পর কর্তাদের সমালোচা এবং ক্রিকেটারদের পাল্টা তর্ক মিলিয়ে বিশ্বকাপে সফলতা পাওয়ার চেষ্টার বিপরীতে কথার লড়াই জমে উঠেছিল। টার্নিং উইকেট তৈরী করে সফলতার খোঁজে থাকা কর্তারা বুঝতেই পারেনি টি২০ আসলে রানের খেলা। শুধুমাত্র বোলারদের হাত ধরে জয়ের চেষ্টা হিতে বিপরীত হতে পারে, এই ভাবনা তারা ভাবলেও আমলে নেননি। বিশ্বকাপে চ‚ড়ান্ত ব্যর্থতার পর আবারো ঘরের মাঠে সফলতা পেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টার্নিং উইকেটেই খেলেছে। কিন্তু এবার সফলতা আসেনি, ঘরের মাঠে জিততে পারি, এই গৌরবটা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি, “আমের সাথে সাথে ছালাও হারিয়েছে বাংলাদেশ”।

বিশ্বকাপে চরম ব্যর্থতায় হতাশায় নিমজ্জিত জাতি পাকিস্তান সিরিজে টাইগারদের সফলতা দেখতে মরিয়া হয়ে থাকলেও টি২০ মানের দল গঠন করতে না পারা এবং প্রথম ম্যাচে জয়ের ক্ষেত্র তৈরী করেও পরাজয়বরণ করেছে বাংলাদেশ। এরই মাঝে ঘটলো আরেক কান্ড, ৭১ এর পরাজিত শক্তি, ৩০ লাখ শহীদের ঘাতক পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেছে কিছু পাকিস্তানের এদেশীয় দোসরদের উত্তরসূরী। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার মিডিয়ার সামনেও গর্ব করে বলছে তারা পাকিস্তান ক্রিকেটের সমর্থক, পাকিস্তানকে তাদের ভালো লাগে, তারা মুসলিম তাই। এই তরুণরা বলতে চাইছে ক্রিকেটের সাথে রাজনীতি মিশাবেন না কিন্তু এই গর্দভগুলো বুঝে না, পাকিস্তান ইস্যু রাজনীতি না, এরা ১৯৭১ এর তান্ডব সম্পর্কে শুনেনি। লক্ষ লক্ষ নির্যাতিত মা বোনের আকাশ ভারি করা কান্নার যন্ত্রনা তারা উপলব্ধি করতে পারে না। এই গর্দভগুলো এটা বুঝেনি যে, যখন নিজ দেশ অন্য কোন দেশের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে, তখন নিজ দেশ মানেই আমি, ওরা ১১ জন আমাদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছে, আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকদের কারো ভাই কিংবা বন্ধুও হয় রিয়াদ-ফিজরা। আমরা কি করে নিজ দেশের খেলাতেও বিপক্ষ দলের পতাকা নিয়ে মাঠে ঢুকি। আবার যেই দেশটি থেকে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশকে স্বাধীন করতে হয়েছে, লাল-সবুজের পতাকার সৃষ্টি হয়েছে, সেই দেশের পতাকা নিয়ে মাঠে যাওয়া মানে নিজকেই নিজে অস্বীকার করা। শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী করার সামিল। আরো দুঃখজনক বিষয়, তারা তাদের ভুল কাজকে জায়েজের জন্য নানাপ্রকার যুক্তি দেখাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, কেউ বা আবার বলছে বিসিবি কর্তাদের ভুল কাজের প্রতিবাদ স্বরূপ পাকিস্তানকে সমর্থন করা হচ্ছে। কি অযৌক্তিক ও নির্লজ্জ মন্তব্য এসব। নিজের ভাই কিংবা বন্ধু ভুল কাজ করলেই কি আমরা তাদের বাদ দিয়ে অন্য কাউকে সমর্থন করতে পারি, কখনোই না।

ক্রিকেট নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। রাজনৈতিক, ধর্মীয় কিংবা সামাজিক ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে লাল সবুজের প্রতিনিধিত্বকারীদের হয়ে গলা ফাটাই। এই ক্রিকেটাররাই আমাদের হাসায়, কাঁদায়। কর্তাদের সঠিক সিদ্ধান্তে আমরা সাধুবাদ জানাই, ভুল সিদ্ধান্তে তীব্রপ্রতিবাদে ফেটে পরি। খেলাধূলা যেহেতু একটি চলমান প্রক্রিয়া, সেহেতু সফলতার পরে ব্যর্থতা কিংবা ব্যর্থতার পরে সফলতা আসবেই। আমরা সাময়িক হতাশায় নিমজ্জিত হলেও আমাদের চ‚ড়ান্ত হতাশ হওয়ার কারন নেই। আমরা হতাশ হলেও ভুল কাজ করা শোভা পায় না। নিজ দেশ যতই খারাপ খেলুক, আমরা কখনোই নিজ দেশের সাথে খেলা অন্য দলের সমর্থন করতে পারি না, তাদের পতাকা হাতে নিয়ে মাঠে যেতে পারেনি, তাদের পতাকা মেলে ধরতে পারিনা। আর দলটি যখন পাকিস্তান, তখন তো তা ঘোরতর অপরাধ। যে পতাকা আমাদের তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানের মাটিতে উড়িয়ে পাক বাহিনী আমাদের শাসন করতো, শোষন করতো, সবসময় আমাদের দাবিয়ে রাখার সব আয়োজনই করতো, সেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯৭১ এ লড়াই করে দেশ স্বাধীন করার পর পুনরায় এ দেশের মাটিতে এ দেশে জন্ম নেয়া, বাঙ্গালী পরিচয় দেয়া কারো হাতে পাকিস্তানী পতাকা বড্ড বেমানান, ঘোরতর দেশদ্রোহিতা সামিল, লাখো শহিদের রক্তের সাথে বেঈমানির সামিল। তা যত দ্রæত পাকিস্তানের এ দেশীয় বর্তমান দোসরারা বুঝতে পারবে, ভুল স্বীকার করে শুদ্ধতার সাথে বসবাস করবে, ততই মঙ্গল।


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৩৯

রানার ব্লগ বলেছেন: যার আপাকিস্থানী পতাকা নিয়ে উল্লাস করেছে এদের আপনি কোন ভাবেই দোষ দিতে পারবেন না, আপনি এদের কে আপনার নিজের ইতিহাস জানিয়েছেন ? তাদের কে কখনো বলেছেন এই দেশে পাকিস্থান নামের এক দানব ছিলো যে দানব আমাদের নিশ্চিহ্ন করে দাবার জন্য হত্যাযোজ্ঞ চালিয়েছিলো। ৩০ লক্ষ শহিদ কে এরা দাঁত বের করে তিন লাখ বা তিন হাজার বলে এর জন্য আমি আপনি দায়ী এদের কে আমরাই জানাই নাই , আমরা ব্যাস্ত কেবল দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতিতে। মনে রাখবেন রাজাকার আলবদর মরে নাই এরা শুকর ছানার মতো বাড়ছে।

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: হারামজাদাদের চাবকানো দরকার।

৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৯

রিফাত হোসেন বলেছেন: সাহেব, ভুলে যাচ্ছেন কেন? দেশে বিহারি আছে। তাদের মিশ্র বংশধর বা বিহারী বা পাঠানরা বাংলাদেশ নাও চেতে পারে। আমাদের এলাকাতেও পাঠান ছিল, ভাল বাংলা বলতে পারত। তবে তারা ভিতরে ভিতরে পাক ধারণা পোষণ করত কিনা জানি না। অনেক আগের কথা। সবাই খারাপ না। তবে রাজাকার ভাবের মানুষ আছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.