নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নব্বই দশকের জনপ্রিয় গান আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি, কেউ সুখী নয়, হাসতে দেখো গাইতে দেখো, তুমি আমার প্রথম সকাল সহ অসংখ্য গানের গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলী গান লেখার পাশাপাশি গান গাওয়া, মডেলিং, নাটকের অভিনেতা, নির্মাতা ও কবি হিসেবে দেশব্যাপী খ্যাতি অর্জন করার ধারাবাহিকতায় ঔপন্যাসিক হিসেবেও দারুণ সফলতা অর্জন করেন। দারবিশ, দখল, আসমান, রাখাল, ফ্রন্টলাইন, অন্তিম এর সফলতার ধারাবাহিকতায় ২০২৩ এর গ্রন্থমেলা উপলক্ষে প্রকাশ পেয়েছে নূর।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি জনাব শিবলীর জনপ্রিয় গানগুলো শৈশব থেকে শুনলেও ঔপন্যাসিক শিবলীর লেখার মাধ্যমেই লেখক সম্পর্কে সবিস্তারে জানা। লেখকের সম্পর্কে যতই জেনেছি, মুগ্ধ হয়েছি। বিশেষ করে একজন পুরোদস্তুর মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, যে পেশার মানুষদের নিয়ে কানাঘুষা হয় বেশি সমাজে, যাদের ধর্মকর্ম নিয়েও মানুষ সমালোচনা করে, সেরকম একজন মানুষ তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাসকে এতো সুন্দর ভাবে তোলে ধরছে যা যথেষ্ট প্রশংসার দাবী রাখে। লেখকের মেধা ও জানাশোনার পরিধিও ব্যাপক।
নূর সম্পর্কে আলোচনাঃ
লেখকের আগের বইগুলোর পাঠকদের থেকে পাঠপ্রতিক্রিয়া দেখে লেখকের লেখার প্রতি আগ্রহ হওয়া। তারপর নূরের বিষয়বস্তু জানার পর এই আগ্রহটা আরো তীব্র রুপ ধারণ করলো। চট্টগ্রামের বইমেলায় লেখক সম্ভবত ২দিন থাকলেও ব্যস্ততায় তখন মেলায় যাওয়া সম্ভব হয়নি। অবশেষে ২১শে ফেব্রুয়ারী বিকেলে স্বপরিবারে মেলায় গিয়ে নালন্দার স্টল থেকে বইটি সংগ্রহ করেছি।
বইটি আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকায় রাত থেকেই পড়া শুরু করলাম। আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করার পর লেখায় মুগ্ধতায় পরে মনে হচ্ছিল এক বসায় গল্পটা শেষ করবো, কিন্তু ব্যস্ততার কারনে সেটা সম্ভব না হলেও দুইবার বসে নূর পড়া শেষ করেছি। শব্দ চয়ন, বাক্যের গঠন এবং ঘটনাবলীকে এতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে যে, লেখকের মুন্সিয়ানা দারুণ ভাবে ফুটে উঠেছে।
মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়ের পর ইংরেজদের হাতে সুবে বাংলার শাসন ক্ষমতা চলে যাওয়ার ইতিহাস আমরা জানলেও তারপর ফকির মজনু শাহের নেতৃত্বে মুসলিমরা এবং নির্যাতিত হিন্দুরা কোম্পানির বিরুদ্ধে চালানো লড়াইয়ের সময়ে মজনু শাহের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সেনাপতি সোবহান শাহের নেতৃত্ব পরগনার জালিম শাসক অশোক গুপ্ত ও তার সাম্রাজ্য ধ্বংসের কথা আমাদের অজানা ছিলো। লেখক সেই ঘটনাই গল্পে গল্পে অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তোলেছেন।
বইয়ের নামকরণ যে মেয়ে, সেই অন্ধ মেয়েটি সেনাপতি সোবহান শাহের মেয়ে নূর। যার দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও অন্তর দৃষ্টি দিয়ে সবকিছু বুঝতে পারেন। একজন দৃষ্টিসম্পন্ন সাধারণ মানুষের চেয়েও নূরের দূরদর্শিতা এবং মানু্ষকে তাঁর কথা চেহারা দিয়ে নয়, কথা ও আচরণ দ্বারা বিচার বিশ্লেষণ করার প্রখর ক্ষমতাসম্পন্ন। অত্যাচারী জমিদার অশোক গুপ্তের পুত্র মুখপুড়ে দানবে পরিণত হওয়া সমুদ্র গুপ্তের মনুষ্যত্বকে বের করে আনা নূরের অসামান্য গুণ প্রকাশ করে। দানব সমুদ্র গুপ্তের উদ্দেশ্যে বলা, আমি কোন মানুষকে ঘৃণা করি না কিংবা আপনাকে আমি ভয় পাইনি। এই কথাই সমুদ্রগুপ্তের ভাবনার জগত নাড়িয়ে দেয়। দেও মহলের বিলাসপূর্ণ জীবন থেকে সাধারণ মানুষের সাথে মিশে জীবনের আসল মানে খোঁজে পায় সমুদ্রগুপ্ত।
সমুদ্র গুপ্ত বাবা অশোক গুপ্তের চোখে চোখ রেখে সত্য বলতে দ্বিধা করে না। সোবহান শাহকে আটক করার পর সমুদ্র গুপ্ত তাকে মুক্ত করার মাধ্যমেও তাঁর মনুষ্যত্ব ফোটে উঠে।
সোবহান শাহ যে উদেশ্যে অশোকের রাজ্যে এসেছে, তা বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে দলমত ভারি করে এগুচ্ছে। আল্লাহর প্রতি তাদের ভরসা মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। বিশেষ করে ফাতেমা ও নূরের কথোপকথনগুলো এমন ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে, মনে হয়েছে এই ঘটনাগুলো মাত্রই ঘটছে।
ঘটনাবলীর মাঝে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং কোরআন হাদিসের বানী এমন ভাবে সন্নিবেশিত করা হয়েছে যে, লেখাটিকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তোলেছে।
হিন্দু মুসলিম ঐকবদ্ধ হয়ে বৃটিশ শাসক ও তাদের এদেশীয় দোসর অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে সম্প্রীতির কথা প্রকাশ পেয়েছে। মজলুম সকলেই এক ও অভিন্ন, তা ফুটে উঠেছে গল্পে।
শেষের দিকে অশোক গুপ্তের পতন আনন্দদায়ক হলেও তার নিরপরাধ এবং সাধারণ মানুষের জন্য সুন্দর একটি রাজ্য গড়ার স্বপ্ন দেখা সমুদ্র গুপ্তের মৃত্যু পাঠকের চোখ ভারি করেছে।
অত্যাচারী শাসকের প্রধাণ অস্ত্র ভয়। লেখক এটিকে বেশ জোড়ালো ভালো তোলে ধরেছেন।
ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে গল্পটি সাজানো হলেও নূরের অলৌকিক শক্তির মতো তীক্ষ্ণতা ও সমুদ্র গুপ্তের মানুষ হয়ে উঠার ঘটনাবলীর সত্যতা বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। লেখক যেহেতু কোন সূত্র উল্লেখ করেননি, তাই সত্যতার প্রশ্ন অমিমাংশিতই রয়ে গেছে।
একজন বিশ্বাসী মুসলিম হিসেবে নিজের বিশ্বাস লেখার মাঝে তোলে ধরা দারুণ কাজ। আমাদের লেখকরা এটা করেন না খুব বেশি। সকলেই ধর্মকে পাশে রেখে লেখা সাজান। এ বিবেচনায় জনাব শিবলী বেশ প্রশংসাযোগ্য কাজ করছেন। আশা করি এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
গল্পের মাঝে, দানব দেখতে চোখ লাগে মানুষ দেখতে লাগে অন্তর, সহ অসংখ্য ডায়লগ মন কেড়েছে। যেগুলো ভবিষ্যতে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়বে নিঃসন্দেহে।
আমি একজন ক্ষুদ্র লেখক হিসেবে লেখক স্বত্তাকে একপাশে রেখে পাঠক হিসেবে জনাব শিবলীর লেখায় মুগ্ধ হয়েছি। এতোটা আগ্রহ ও আনন্দ নিয়ে খুব কম বই পড়েছি। লেখকের অন্যান্য বই এবং সামনে যেসব বই আসবে সেসব বই পড়ার আগ্রহও তৈরী হয়েছে।
জুবায়ের আহমেদ
আমি বৃদ্ধ হতে চাই না বইয়ের লেখক
ও প্রাবন্ধিক৷
২৫/০২/২০২৩
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩২
যুবায়ের আহমেদ বলেছেন: হ্যা, উপন্যাসও ভালোই লেখছে এখন।
২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৭
শাওন আহমাদ বলেছেন: আমি তাকে চিনতাম ই না। কিছুদিন আগে তার আসমান বই সম্পর্কে জানতে গিয়ে দেখি তার প্রায় সকল গান ই আমার পছন্দের লিস্টে ছিলো।
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩২
যুবায়ের আহমেদ বলেছেন: আমারও সেইম অবস্থা।
৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৩
সোনাগাজী বলেছেন:
ভালো লাগলে আরো কয়েকবার পড়েন।
৪| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২২
আমি তুমি আমরা বলেছেন: সুন্দর রিভিউ।বইটি পড়ার ইচ্ছা আছে।
৫| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৫১
রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।
৬| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:২৫
প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন বলেছেন:
নূরটা কেনা হয়েছে, এখনো পগা হয়নি। তবে উনার লেখা, 'দখল' এবং 'আসমান' পড়েছি, ভালো লেগেছে
৭| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:৫৪
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
লতিফুর রহমান শিবলী এর 'নিয়ম ভাঙ্গার নিয়ম' একটা একক অ্যালবাম আছে।
উনার লেখা ভালো লাগে। নূর কিনবো আশাকরি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৩
বাকপ্রবাস বলেছেন: গানগুলো বেশ প্রিয় ছিল।