নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসিফা-আরফানের আব্বু

যুবায়ের আহমেদ

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি তাই স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে চলছি আগামীর পথে

যুবায়ের আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কন্যা সন্তান বোঝা-অভিশাপ নয়, আল্লাহর নেয়ামত

০৮ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:০৪

কন্যা সন্তান নিয়ে আমাদের সমাজের কিছু মানুষের নাক সিটকানোর অভ্যাস বেশ পুরনো। বর্তমান সময়ে কন্যা সন্তানদের নিয়ে ধ্যান-ধারণার কিছুটা পরিবর্তন হলেও এখনো কিছু মানুষ নামের পশু রয়ে গেছে, যারা সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ হিসেবে নারীকে মূল্যায়ণ না করে দেখে পুরুষের অধীনস্থ নিরীহ কিংবা সংসারের বোঝা হিসেবে।

এক ব্যক্তি কন্যা সন্তান জন্মদানে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে। এরকম ঘটনা অহরহই ঘটছে বাংলাদেশে। একাধিক কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করায় স্ত্রীকে মারধর, সন্তানদের অযত্মে অবহেলায় ফেলে রাখা, সংসারের হাল ধরতে পারবে না মনে করা এবং পরিবারের সব সন্তান কন্যা হলে ভবিষ্যত বংশধর থাকলো না মনে করার মতো হীন মানসিকতার মানুষের অভাব নেই এখনো।
শুধু পিতা কর্তৃক অসন্তোষই শেষ নয়। কন্যা সন্তান জন্ম দিলে শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর বিমুখতার শিকারও হন গৃহবধূরা। কখনো কখনো এমনও হয় যে, সন্তানের পিতা-মাতার সমস্যা নেই কন্যা সন্তানে, কিন্তু শ্বশুর-শ্বাশুড়ী হতাশায় মরেন। কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার কারনে পুত্রবধূকে কটুক্তি করা সহ নানা প্রকার অবহেলায় রাখেন।

নারী-কন্যা সন্তান শুধুমাত্র সৃষ্টির সেরা জীবই নয়। নারী-পুরুষের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা বেশি মর্যাদাবান করেছেন নারীকে। সন্তানের জন্য পিতা-মাতার মধ্যে মর্যাদার মাপকাঠিতে রাসুল (সাঃ) এক, দুই, তিন তথা একে একে তিনবার মায়ের স্থান রাখার পর ৪র্থ স্থানে বাবার কথা বলেছেন। এ থেকেই স্পষ্ট যে, নারী-কন্যার অবস্থান কত উপরে।

আমাদের সমাজের অনেক অশিক্ষিত পরিবার যেমন তেমন, অনেক শিক্ষিত-ধার্মিক পরিবারও কন্যা সন্তানের প্রতি অনিহা দেখান। বিশেষ করে আমাদের সমাজে এটি প্রতিষ্ঠিত যে, কন্যা সন্তান হলে বিয়ে দিলে পরের ঘরে চলে যাবেন, এতেও অনেক খরচ আর খরচ। কিন্তু পুত্র সন্তান হলে বড় হয়ে সংসারের হাল ধরবে, পিতা-মাতার কষ্ট লাগব করবে, পুত্র সন্তানই বংশের প্রদীপ, হেনতেন। অথচ অসংখ্য পরিবার আছে, যেখানে একাধিক সন্তান থাকার পরও পিতা-মাতা সীমাহীন দুঃখ কষ্টে জীবন যাপন করেন।

ব্যক্তিগত ভাবে আমি এ কথা বিশ্বাস করি যে, নিজের জীবনে পরিশ্রমের মাধ্যমে কিছু করতে পারলে সন্তানের আয়ের উপর নির্ভর করতে হয় না। তবে যেহেতু আমাদের সমাজ বাস্তবতায় আমাদের অধিকাংশই সাধারণ পরিবারের সদস্য, সেহেতু সকলেই জীবনে অর্থনৈতিক সফলতা পায় না। ফলে নিজের সময়ে না হলেও সন্তানের সময়ে দিন ফিরে অনেক পরিবারের। তবে তা যে শুধুমাত্র পুত্র সন্তানের মাধ্যমেই এমন নয়, কন্যা সন্তানও পরিবারের হাল ধরতে পারে এবং বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ পরিবার আছে, যারা স্ত্রী-কন্যা সন্তানের উপার্জনের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টর সহ বহু মাধ্যমে নারীরা কাজ করছে। শিক্ষিত হয়ে চাকুরী করছে, ডাক্তার, এডভোকেট, পুলিশ সহ সরকারী চাকুরীতে ক্যারিয়ার গড়ছে। ব্যবসা বানিজ্যেও পিছিয়ে নেই নারীরা।

কোন পরিবারে একটিও পুত্র সন্তান না থাকা, একের অধিক সন্তান সহ থাকা সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ নয়, আশিবার্দও বটে। আল্লাহ তায়ালা ৩ কন্যা সন্তানকে বিয়ে দেওয়া পিতা-মাতাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। আর কোন পরিবারে যদি ৩/৪ কন্যা সন্তান থাকে এবং পরিবারটি খুবই দরিদ্র হয়, তখন এই কন্যা সন্তানরা তাদের মেধা-যোগ্যতানুসারে কর্মের মাধ্যমে পরিবারের হাল ধরতে পারে।
পুত্র সন্তানের মাধ্যমে বংশের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে মর্মে যে ধারণা আমাদের সমাজের মানুষেও, আমার দৃষ্টিতে তাও সত্যি নয়। মানুষ বাঁচে তার কর্মে, ওয়ারিশের মাধ্যমে নয়। আপনি যদি আপনার নিজের জীবন ভালো কাজে এবং সফলতায় রাঙ্গাতে পারেন, তাহলে আপনি যুগের পর যুগ ধরে মানুষের মনে থাকবেন। আর যদি সন্তানের মাধ্যমে আপনি বেঁচে থাকতে চান মানুষের মাঝে সব সময়, তাহলেও তা শুধুমাত্র পুত্র সন্তান দিয়ে নয়, কন্যা সন্তানও আপনার মুখ উজ্জ্বল করতে পারে তার কর্মের মাধ্যমে।

অনেকেই বৈবাহিক জীবনের প্রথম সন্তান যেনো পুত্র হয়, আশা করে। অথচ প্রথম কন্যা সন্তানই আশিবার্দ হয় পিতা-মাতার জন্য। প্রথম পুত্র সন্তান হলে সে সন্তান দ্রুত বড় হয়ে সংসারের হাল ধরবে, সে প্রত্যাশা করে অনেক পরিবার। অথচ সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় থেকেও হিসেব করলে, সে সন্তান ১৮/২০ বছর বয়সী হওয়া পর্যন্ত এই ১৮ বছর যদি পিতা-মাতা কিংবা পিতা যদি নিরলস পরিশ্রম করে অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হতে পারেন, তাহলে নিজের আয়ের অর্থ দিয়েই নিজের পুরো জীবন অনাসায়ে পার করে দিতে পারবেন এবং সন্তানকেও চাপ মুক্ত রেখে শিক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন সহ বড় কিছু হতে সহযোগিতা করতে পারবেন। আর যদি কেউ নাও পারেন, সেখানে শুধুমাত্র পুত্র সন্তানের উপর নির্ভর হতে হবে এমন কথা নয়, কন্যা সন্তানও হতে পারে পিতার ভরসাস্থল।

আরো একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, আমাদের সমাজের অনেক পরিবার কন্যা সন্তান পছন্দ না করার পাশাপাশি কন্যা সন্তানকে উচ্চ শিক্ষিত করতে আগ্রহী নয়। কিন্তু নিজের স্ত্রী কিংবা পুত্রবধূর কোন চিকিৎসার প্রয়োজনে নারী ডাক্তার খোঁজেন এবং কোন ডাক্তারী পরীক্ষা করাতে হলে নারী টেকনোলোজিস্ট খোঁজেন। অথচ নিজের পরিবারের কেউ ডাক্তার হবে, টেকনোলোজিস্ট হবে, তা চান না।

নারীকে মানুষ হিসেবে গন্য করতে হবে এবং পরিবারের সকল সন্তান যদিও কন্যা সন্তান হয়, তবুও হতাশ হওয়া যাবে না, সৃষ্টিকর্তার নেয়ামত-আশির্বাদ হিসেব করে তাদেরকে সাধ্যমত সকল সুযোগ সুবিধা বড় করতে হবে। সন্তানকে শিক্ষিত ও ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলতে পারলে পিতা-মাতার কোন আশাই অপূর্ণ থাকে না।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৪

সোনাগাজী বলেছেন:




আপনি বিবাহিত?

০৮ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৫

যুবায়ের আহমেদ বলেছেন: আমি ২ সন্তানের বাবা। বড়টর বয়স ৮।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১০

ফুয়াদের বাপ বলেছেন: পুরো লেখার সাথেই একমত।
অবাগ লাগে দেখে যে কন্যা সন্তান হওয়াতে যারা অখুশি হয় তাদের মধ্যে নারীরাও আছে।

০৮ ই মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২২

যুবায়ের আহমেদ বলেছেন: নারীদের মানসিকতাও পুরুষের মতো হয়ে গেছে।

৩| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১৯

শেরজা তপন বলেছেন: আমি শুরু থেকেই কন্যা সন্তান চেয়েছি।
শুধু আমি নই আমার পরিবারের মানুষ কন্যা সন্তানের এক্সপেক্ট করে।

৪| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২০

নতুন বলেছেন: কন্যা সন্তানেরা বাবার সারা জীবন দেখাশুনা করে। নিজের সংসার করলেও বাবা/মায়ের জন্য তাদের মনে একটা জায়গা সব সময়ই থাকে।

সমাজ শিক্ষিত না হলে এই সমস্যা যাবেনা।

৫| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৯

সোনাগাজী বলেছেন:



আপনার বাসায় চাকরাণী কিংবা বুয়া কাজ করে?

০৮ ই মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৫

যুবায়ের আহমেদ বলেছেন: না

৬| ০৯ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১০:০৬

বিটপি বলেছেন: যে ব্যাক্তি কন্যা সন্তান জন্মদানের অপরাধে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে, তার নামে কি কোন মামলা হয়েছে? না হলে হওয়া উচিৎ নয়? আপনি সেই খবরটা এখানে শেয়ার করুন। আমি সত্যতা জেনে ব্যবস্থা নেব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.