নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসিফা-আরফানের আব্বু

যুবায়ের আহমেদ

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি তাই স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে চলছি আগামীর পথে

যুবায়ের আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিশোধ

০৯ ই জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৮

জুবায়ের আহমেদ:

আমি রবিন আহমেদ। একজন ব্যবসায়ী। আজ রাতে ঘুমের মধ্যে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখলাম। সালমা আত্মহত্যা করেনি, তাকে খুন কে করেছে, সালমা সেটা স্বপ্নে বলছে আমাকে। যার নাম বললো সে, আমি সেটা শুনেই আৎকে উঠলাম। এ আমি কি শুনলাম, তিনি কিভাবে সালমাকে খুন করতে পারে। এটা তো কল্পনায়ও ছিলো না আমার।

আগে সালমার পরিচয় দেই, সালমা আমার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী ছিলো। মাত্র ১ মাস সংসার করেছি তার সাথে। আমাদের দাম্পত্য জীবন ভালোই চলছিল। কোন ঝামেলা ছিলো আমাদের মাঝে, এমনকি দুই পরিবারের মাঝে। তবুও সালমা ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে বাবার বাড়ীতে। সালমার মা বাবাও বুঝতে পারেনি কেন এই কাজ করলো সালমা।

সালমার বাবার অনুরোধে তাদের পারিবারিক কবরস্থানেই দাফন সম্পন্ন করার পর যখন আমি নিজ বাড়ীতে ফিরলাম৷ তখন কিছুতেই আমার মন ঠিক করতে পারছিলাম না। এই এক মাসের মধ্যে এমন একটা মুহুর্ত ছিলো না, যে সময়ে আমার কোন কথা বা কাজে সালমা কষ্ট পেয়েছে বা সালমার কোন কথা কাজে আমি কষ্ট পেয়েছি। তবুও কেন সে এই কাজ করলো এটা ভাবতে ভাবতেই আমি আরো বেশি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছিলাম।

সালমার স্বপ্নের কথা এবার খুলেই বলি। আমি মধ্যরাতে ঘুমানোর পরই সালমা এসে যেন আমাকে বলছে, সে আত্মহত্যা করেনি, তাঁকে খুন করেছে তারই বড় বোন জামাই রাশেদ। রাশেদই তাকে বাধ্য করেছে ছাদ থেকে লাফ দিতে।

আমি এখন কিভাবে এই রহস্যের জট খুলবো কিছুতেই বুঝতে পারছি না। শুধুমাত্র স্বপে দেখার ভিত্তিতে একজন মানুষকে কিভাবে দোষারোপ করবো আমি ঠিক বুঝতে উঠতে পারছি না। কোন প্রমাণ ছাড়া কি কাউকে দোষী সাব্যস্থ করা যায়, তাও আমার খুনের অভিযোগ। সে রাতে আমার আর ঘুম হয়নি।

সকালে ফ্রেস হয়ে আমি সালমাদের বাড়ীতে গেলাম, সেখানে বড় আপা ও রাশেদ ভাইকে দেখলাম। আমি কুশলাদি বিনিময় করলেও রাশেদ ভাইয়ের দিকে আড় চোখে তাকালাম, আমার চাহনিতে তিনি কেমন ভয় পেয়ে গেছেন মনে হচ্ছে।

আমি রাশেদ ভাইকে কিছু বুঝতে না দিয়ে আমার শ্বাশুড়ির রুমে গিয়ে ওনাকে সালাম দিয়ে কুশলাদি সেরে কথা বলতে শুরু করলাম,
আচ্ছা মা, আপনার কি মনে হয় সালমা সত্যিই আত্মহত্যা করেছে? আমার কিন্তু মনে হচ্ছে আত্মহত্যা নয়, এখানে আরো কোন ঘটনা জড়িত আছে।

কি বলছো বাবা, আমরা তো কাউকে সন্দেহ করছি না, আমাদের আত্মীয়স্বজনের মধ্যে অনেকেই বলছিল, তোমার সাথে কোন ঝামেলা থেকে এমন কাজ করেছে কিনা, কিন্তু আমরা তো জানি তোমরা কতটা সুখি ছিলে। আমার মেয়েও তোমার অনেক গুণগান করতো। এ ছাড়া আমাদের বাড়ীতেও কারো সাথে সালমার সমস্যা ছিলো না।

আমাদের কথোপকথনের মাঝে খেয়াল করলাম বড় আপা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনছে। আমি তাকে দেখেছি বুঝতে পেরে তিনি দ্রুত চলে গেছেন।

আমার মন আরো সন্দেহপ্রবণ হয়ে উঠলো, কিন্তু কাউকে বুঝতে দিলাম না। বিকেলে রাশেদ ভাই তাঁর এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেল। এই সুযোগে আমি বড় আপার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম।

আচ্ছা আপা, আপনি কি রাশেদ ভাইয়ের সাথে দাম্পত্য জীবনে সুখী?
আমার প্রশ্ন শুনে কেমন যে অসহায় হয়ে গেলেন আপা।

কেন বলো তো, এমন প্রশ্ন করেছ কেন তুমি? দুই সন্তান নিয়ে আমি তো ভালোই আছি।
আপা মুখে এক উত্তর দিলেও ওনার মনে ঝড় উঠেছে আমার প্রশ্নে, আমি এটা বুঝতে পারছি।

আমিও বুঝতে পারছিলাম না, কি করবো। কিভাবে আগাব। আমার পদক্ষেপ উল্টো নির্দোষ মানুষদের হয়রানি করা হবে না তো। এসব ভেবেও আপনার নড়বড়ে উত্তরে সিদ্ধান্ত নিলাম আপাকে স্বপ্নের কথা বলবো, শত হলেও ওনার বোন সালমা, ওনি কিছু জানলে অবশ্যই বলে দেবে, এমন ধারণা থেকেই সালমার দেখানো স্বপ্নের কথা উনাকে খুলে বললাম।

আপা ভীত হবার পরিবর্তে সাহসী হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে। তিনি বলতে শুরু করেছে, রাশেদের চরিত্রে সমস্যা আছে। তাঁর সাথে আমার ১০ বছরের সংসার হলেও সে আমাকে রেখে আরো বহু মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেছে। আমি বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে সব চুপচাপ সহ্য করে চলছি। এমনকি সে আমাকে না জানিয়ে আরেকটি বিয়েও করেছে। আমি জানার পর প্রতিবাদ করলে আমাকে তালাক দেয়ার হুমকি দিয়েছে।

আমি কিছু একটা বলতে চাইলে আমার বলার আগেই ওনি বলছে,
তোমাদের বিয়ের আগে সালমার সাথেও দেখতাম সে গা ঘেঁষে কথা বলতে চাইতো, সালমা পাত্তা না দিলে পরিস্থিতি বুঝে হাসাহাসি করে চলে আসতো রাশেদ। আমাদের এতো ছোট বোন, রাশেদের প্রতি সন্দেহ থাকলেও সে সালমার প্রতিও কু নজর দেবে ভাবিনি কখনো।
আপার কথায় রাশেদ ভাইয়ের প্রতি সন্দেহ আমার আরো বেড়ে গেল। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম রাশেদ ভাইকে আজ রাতেই পরীক্ষা করবো আমি। আপা আমার সাথে থাকবে কিনা জানতে চাইলাম, আপা রাজী হলো।

আপাকে আজ নির্ভার লাগছে, তিনিও যেন মুক্ত হওয়ার পথ খুঁজছেন। বাসার আর কাউকে কিছু না জানিয়ে আমরাই পরিকল্পনা সাজালাম। আমি থানায় লিখিত ভাবে বিস্তারিত জানিয়ে রাখলাম।

সন্ধ্যায় রাশেদ ভাই বাসায় আসার পরই আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেমে পড়লাম।

রাশেদ ভাই চলেন, ছাদে বসে আড্ডা দেই, চলো যাই।
আমরা এমন ভাবে ছাদে গেলাম, রাশেদ ভাই যেন বুঝতে না পারে আমাদের ছাদে যাওয়ার বিষয়টি বাসায় অন্য কেউ জানে।
ছাদে যাওয়ার পর সালমা যে জায়গা থেকে লাফ দিয়েছে বলে আমরা ধারণা করেছি, আমি রাশেদ ভাইকে সেখানে বসতে বলে আমি পাশে বসলাম। রাশেদ ভাইয়ের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে, তিনি ঘামছেন মনে হচ্ছে।

আমি বলতে শুরু করলাম, রাশেদ ভাই, আমার এবং সালমার দাম্পত্য জীবন তো ভালোই চলছিল, তবুও কেন সে আত্মহত্যা করলো, আপনারও কি মনে হয় সালমা আত্মহত্যা করেছে? নাকি আপনি যেখানে বসে আছেন সেখান বসে থাকা অবস্থায় পিছলে পড়ে গেছে? আপনার কি মনে হয়?

রাশেদ ভাইয়ের শরীর কাঁপছে, তারপরও তিনি বললেন, সালমা আত্মহত্যাই করেছে রবিন। কারো সাথে তো তার কোন ঝামেলা ছিল না, তাঁকে কে মারবে?

আমি বসা থেকে উঠে রাশেদ ভাইয়ের সামনে গেলাম। তাঁর দুহাতে ধরে বলতে লাগলাম,
আমার কেন জানি মনে হয়, এইভাবে ধরে সালমাকে কেউ ফেলে দিয়েছে এবং সেটা আর কেউ নয় আপনিই, বলেই রাশেদ ভাইকে একটু ঝাকুনি দিলাম।

এবার ওনি আমাকে অবাক করে দিয়ে উলটো আমার উপর চড়াও হলেন এবং আমাকে ফেলে দিতে চাইলেন ছাদ থেকে। এমন সময় পুরো ঘটনা ভিডিও করতে থাকা আপা চিৎকার দিলেন এবং পুলিশও সামনে এসে হাজির।
রাশেদ ভাই পুলিশ দেখে পালাতে চাইলেন, পুলিশ ওনাকে আটক করলো। আপা পুলিশের হাতে রাশেদ ভাইয়ের কুকর্মের প্রমাণ স্বরূপ কিছু ছবি দিলেন।

রাশেদ ভাইকে নিয়ে থানায় চলে গেল পুলিশ। আমরা পুরো ঘটনা আব্বা আম্মাকে (সালমার বাবা মা) জানিয়ে থানায় গেলাম। থানায় যাওয়ার পর অফিসার আমাদের রেকর্ড করা বক্তব্য শুনতে দিলো, যেখানে রাশেদ কন্ঠ শুনলাম এবং তিনি সেখানে বলছেন,
সালমাকে আমি পছন্দ করতাম। তাঁকে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ার জন্য একাধিকবার বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে বললেও সে রাজী হয়নি। সালমার বিয়ের পর স্বামীর বাড়ী থেকে পুনরায় বেড়াতে আসার পর আমি সালমাকে দেখে আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠি। সালমার স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাঁকে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্কের জন্য জোর করতে থাকি। সে রাজী হয়নি। সন্ধ্যার পর সালমা ছাদে গেলে আমিও তার পিছু নেই। আবারো তাকে আমি শারীরিক সম্পর্কের কথা বললে সে রাজী না হওয়ায় আমাদের মধ্যে ধ্বস্তাধ্বস্তির এক পর্যায়ে সালমা পা পিছলে ভবনের পেছনের অংশে পড়ে যায়। আমি তখন চুপচাপ বাসায় এসে রুমে শুয়ে থাকি।

আমরা সকলেই এই ঘটনা শোনার পর কান্নাকাটি করতে থাকি। রাশেদকে থানা হাজতে দেখে রাগে ক্ষোভে মন চাইছিল তাকে এখানেই খুন করে ফেলি। থানা থেকে খুনি রাশেদকে কোর্টে নেয়ার সময় বড় আপা পুলিশের সামনেই রাশেদকে কয়েকটি চড় মারে। আপাকে সরিয়ে দিয়ে গাড়ীতে তোলে রাশেদকে কোর্টে নেয়া হয়।

সালমাকে তো চিরতরে হারিয়েই ফেললাম, তবে মনের মধ্যে এই শান্তনা খুঁজে নিলাম যে, সালমা আত্মহত্যা করেনি, সালমাকে খুন করা হয়েছে। খুনি রাশেদকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারায় সালমার আত্মাও শান্তি পাবে, এই ভেবেই থানা থেকে বাড়ী ফিরলাম। কান্না ছাপিয়ে বড় আপার চোখে মুখেও হাসি। এ হাসি মুক্তির আনন্দের হাসি, বোনের খুনি বিচারের মুখোমুখি হওয়ায় তৃপ্তির হাসি।


মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:২২

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার গল্প। জীবনের গল্প। বাস্তব গল্প।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.