![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নাদিয়া বিছানায় আসার আগেই আমি তাড়াতাড়ি মুখ ঢেকে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছি ।
কিছুক্ষণ পর লক্ষ করলাম কে জানি আমার পা ধরে টানাটানি করছে, নিশ্চয় এটা নাদিয়ার কাজ, যতই টানাটানি করুক না কেন একদম নড়াচড়া করা যাবেনা।
টানতে টানতে খাটের শেষ সীমানায় এনে ফেলছে, তারপরও পা ছাড়ছে না, আর একটা টান দিলেই ফ্লোরে পড়ে আমার হাত - পা নিশ্চিত ভেঙে যাবে, নাদিয়াকে এসব ব্যাপারে একদম বিশ্বাস নেই, আর কিছুক্ষণ ভঙ্গি ধরে থাকা মারাত্মক রিস্ক আছে ।
-টানাটানিতে আমার ঘুম ভেঙে গেছে এমন একটা ভাব নিয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে বললাম: 'এই জল্লাদ মহিলা কি হইছে ? পা ধরে টানাটানি করছো কেন ? দেখছো না ঘুমোচ্ছি।'
-'একশোবার টানাটানি করবো হাজারবার টানাটানি করবো, তোমাকে কতদিন না বলছি তোমার ছোটবেলার গল্প , মেসের গল্প, চুরির গল্প, লুকিয়ে সিগারেট টানার গল্প, মেয়েদের সাথে লাইন মারার গল্প এসব না শুনলে আমার ঘুম আসেনা। তারপরও তুমি আমার আগে ঘুমাবার চেষ্টা করো কেন, আর কথায় কথায় আমাকে একদম জল্লাদ মহিলা ডাকবেনা বলে দিচ্ছি।'
-'মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জল্লাদ মহিলা ডাকব , তুমি প্রতিদিন আমাকে রাত জাগিয়ে গল্প বলাও, তারপর গল্প থেকে বিভিন্ন টপিক টেনে আমার সাথে সারাক্ষণ ঝগড়া করো।'
-'তুমি আবার আমাকে জল্লাদ মহিলা ডাকতে পারলে হাবিব, আমি বুঝি তোমার সাথে সারাক্ষণ শুধু ঝগড়া করি, তারমানে আমি ঝগড়াটে, ঠিক আছে আর গল্প শুনাতে হবেনা, আমিও আর তোমার সাথে কথা বলছিনা।'
-আহা কতো আরাম, নাদিয়া রাগ করে ঘুমিয়ে গেছে, আজ আমি শান্তিতে ঘুমোতে পারবো, কম্বল গায়ে দিয়ে গুটিশুটি খেয়ে শুয়ে পড়লাম।
-কিছুক্ষণ পর আমার পিঠে দফায় দফায় কিল, ঘুষি আর লাথি পড়তে লাগলো, আমি চিৎকার করে 'ও বউ গো ও বউ গো বলে উঠলাম।'
-'একদম বউ বলে চিৎকার করবি না হারামি, ওমা বলে চিৎকার কর, আমি রাগ করে বসে আছি তুই রাগ না ভাঙিয়ে শান্তিতে ঘুমাচ্ছিলি, আজ তোর রেহাই নেই।'
-কি বেয়াদব মেয়েরে বাবা! স্বামীকে তুই - তুকারী করে, আসলেই জল্লাদ মহিলা।
-নাদিয়া কাদো কাদো গলায় বলল, 'হাবিব তুমি বারবার আমাকে জল্লাদ মহিলা বলছো ?'
আমি নাদিয়ার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম, ওর চোখ টলোমলো করছে, কখন কান্না শুরু করবে ঠিক নেই।
-'নাদিয়া তুমি গল্প শুনবে ?'
-'না আমি কখনো আর তোমার গল্প শুনবো না।'
-'আচ্ছা সরি, এই কান ধরছি, আর জল্লাদ মহিলা ডাকবো না, আমি ডায়েরি হাতে নিয়ে বললাম, ' আমার জীবনের একটা বাস্তব গল্প বলবো, যে গল্প তোমার জানা নেই, যে গল্পগুলো বউকে জানাতেও নেই।'
-নাদিয়া খুব আগ্রহ নিয়ে বলল, 'তাই নাকি হাবিব ! প্লিজ তাড়াতাড়ি শুরু করো।'
-অতীত সৃতির পাতা উল্টাতে উল্টাতে আমি বলতে শুরু করলাম; 'রাত তখন প্রায় দু'টা, আমি মেস থেকে বেরিয়ে পড়লাম, শীতকালে রাত দু'টায় রাস্তাঘাটে মানুষ অযথা ঘোরাফেরা করেনা, আমি সিগারেট টানতে টানতে সিলেট শহরের অলিগলিতে একা একা হাটছি, হাটতে হাটতে আম্বরখানা পয়েন্টে চলে আসলাম, ব্যস্ত আম্বরখানা পয়েন্টে একটা মাত্র পানের দোকান খোলা, সেখানে গাড়ির ড্রাইভাররা চা- খাচ্ছে, যেখানে - সেখানে পাতলা কম্বল গায়ে দিয়ে শীত - মশা অপেক্ষা করে কিছু মানুষ ঘুমোচ্ছে, হিজরারা মেকাপ করে পান খেতে খেতে ঘোরাফেরা করছে, কুকুর দু'চারটা এদিক - সেদিক ডাকাডাকি করে দৌড়াচ্ছে, পুলিশরা ট্রাকের ড্রাইভার সিএনজির ড্রাইভারদের কাগজ পত্র দেখছে, বাসার দারোয়ানরা চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছে, আমি আম্বরখানা থেকে হাটতে হাটতে শাহজালাল মাজারে চলে আসলাম, সেখানে কেউ আল্লাহ - বিল্লাহ করছে, যাদের ঘর - বাড়ি নেই, তারা এদিক - সেদিকে কম্বল প্যাচিয়ে ঘুমোচ্ছে, হটাৎ লক্ষ করলাম একটা ছেলের সামনে বড় লাকিজ, আর পাশে বসা একটা নেকাব পরিহিত মেয়ে, আমি তাদের পাশে গিয়ে বসলাম, তারা খানিক ভয় পাচ্ছে, রাত তখন প্রায় সাড়ে তিনটা, আমি শীতল চোখে তাকিয়ে মুখে যথা সম্ভব ফ্রেন্ডলি ভাব রেখে বললাম, 'আপনারা দু'জন রাতে পালিয়ে আসছেন নাকি ? আমার কথা শুনে তারা বিব্রতবোধ করলো; আমি তাদেরকে স্বাভাবিক করার জন্য বললাম, 'সমস্যা নেই, ভয় পাবেননা, আমার নাম্বার রাখেন, বিয়েতে সাক্ষী লাগলে কল দিবেন।'
আমি খেয়াল করে দেখলাম আমাকে তারা উটকো ঝামেলা মনে করছে, তাই এখান থেকে কেটে পড়লাম, হটাৎ দেখলাম, এক বাসার দারোয়ান বসে বসে সিগারেট টানছে, তার দিকেই যাচ্ছি দেখে একটু নড়েচড়ে বসলো, আমি আড্ডা জমানোর আশায় পাশে গিয়ে বসলাম, দারোয়ান খুব পরিচিত মানুষের মতো আমাকে অর্ধেক সিগারেট দিয়ে জিজ্ঞেস করল, 'কইত্তে আইছেন ভাইজান ?'
বুঝতে পারলাম এতো রাতে একজন মানুষকে গল্প করার জন্য পাশে পেয়ে দারোয়ান খুব খুশি, আমি বললাম, 'এইতো মাজার থেকে আসছি ভাই।'
এরপর আলাপ শুরু হলো দারোয়ানের দেশের বাড়ির, বউ - বাচ্চার, রাতে ডিউটির বিভিন্ন মজার মজার ঘটনা, সবার সাথে এভাবে তাদের মতো করে গল্পগুজব করে দিব্যি সময় কাটাতে লাগলাম, রাত চার'টা হয়ে গেছে, তারপরও মেসে ফিরছি না , মেসের সবাই ঘুমোচ্ছে, এখন সেখানে ফিরলে আমি একা হয়ে যাবো, আর একা হলেই আমি ইরার হয়ে যাই, ইরার সৃতি তখন আমাকে বড্ড পীড়া দেয়, বুকটা তখন কেমন জানি খালি খালি লাগে, তাকে আমার ভুলতে হবে, কারণ ক'দিন পড়েই ইরার বিয়ে হতে যাচ্ছে ইংল্যান্ডি বরের সাথে, সে মোটেও আমার কথা তার পরিবারকে জানাতে চাচ্ছে না, ভুলেই গেছে হাবিব নামে একটা বেকার ভাঙাচোরা ছেলের সাথে তার শারীরিক - মানসিক সব ধরনের সম্পর্ক ছিলো, এখন আমি বিনা নোটিশে বিনা দোষে ইরার ফেইসবুক ওয়াটসাপ, কল, মেসেজ সবকিছুতে ব্লক, আমি এখন তার কাছে একটা বিরক্তিকর অধ্যায়, আমাকে ডায়েরির পাতার ন্যায় ছিড়ে ফেলতে পারলে বোধহয় সে মুক্তি পেয়ে যেতো, দিনের পর দিন আমি না খেয়ে না ঘুমিয়ে দিন কাটতে থাকি, তারপর নিজেকে গুছানোর জন্য, বেচে থাকার কারণ খুজে পাওয়ার জন্য, বুকটা খালি খালি লাগলে কাউকে শক্ত করে জরিয়ে ধরার জন্য তোমাকে বিয়ে করলাম।'
কিন্তু বিয়ের পর ইরাকে ভুলে বিভিন্ন এঙ্গেলে আমি তোমার প্রেমে পড়ে যাই, গল্প বলা শেষ করার আগেই নাদিয়া ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদতে শুরু করলো, আমি তার গালে হাত নিয়ে বাচ্চাদের মতো আদর করে বললাম, 'কাদছো কেন বউ ?'
নাদিয়া আচমকা জল্লাদ মহিলার মতো আমার চুল টেনে বলল, 'এতো বোকা কেন তুই ? একটা লোভী, বেইমান, ফালতু মেয়ের সাথে প্রেম করে কষ্ট পাইলি কেন ? জগতে কি তখন প্রেম করার জন্য আমার মতো কোনো ভালো মেয়ে ছিলো না ?
নাদিয়ার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম, বিয়ের আগে আমার সম্পর্ক জেনে সে রাগ করার কথা ছিলো, কিন্তু না! সে উল্টো রেগে আছে আমি ফালতু মেয়ের সাথে সম্পর্ক করছি সে জন্য, আমি নাদিয়াকে বললাম, 'আমি তো আর আগে থেকে জানতাম না ইরা লোভী, বেইমান আর ফালতু একটা মেয়ে, যেমন বিয়ের আগে জানতাম না তুমি একটা জল্লাদ মহিলা।'
কাদতে কাদতে দফায় দফায় বালিশ দিয়ে মারতে শুরু করলো নাদিয়া, আমি নাদিয়ার হাত থেকে বালিশ নিয়ে তাকে বুকে জরিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে মুচকি হেসে বললাম, 'আমি তো বিয়ের আগে এটাও জানতাম না, 'জল্লাদ মহিলা ডাকার পর তোমার রেগে যাওয়া চেহারা কতো মায়াবী লাগে, আমি সেই মায়াবী চেহারা দেখার জন্য সারাটা জীবন জল্লাদ মহিলা বলে তোমার বালিশের মাইর খেতে আমি রাজি।'
তাছাড়া ইরা লোভী মেয়ে ছিলো বলেই তো তোমার মতো মিষ্টি মেয়েকে আমি পেলাম, যদি ওর সাথে বিয়ে হয়ে যেতো, তাহলে তুমি কি আর আমার মতো স্মার্ট, সুদর্শন, ভদ্র বর পেতে, জগতে যে হাবিব মাত্র এক পিস দিছেন আল্লাহ, সেটা কি তুমি কোনো এঙ্গেলে টের পাওনা বউ ?
-নাদিয়া মুচকি হেসে বলল, 'হুম, হাড়েহাড়ে টের পাই, তোমার মতো চাপাবাজ বর জগতে আল্লাহ এক পিস - ই দিছেন।
লেখকঃ jobrul islam habib
©somewhere in net ltd.