![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যন্ত্রের জন্যে পদ্য, মানুষের জন্যে গদ্য - এই নিয়ে ভাবাভাবির সারাবেলা
হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাটি ছিল খুবই বিচিত্র। সবে হাইয়ার সেকেন্ডারি পার হয়েছি। হাতে অনেক সময়। রাত দিন দশ রকম বই পড়ি, লেখালেখির চেষ্টা করছি। পত্রিকার ফিচার লিখে, যা কিছু পাই তা দিয়ে পথে পথে ঘুরি। রাত বিরেতে ঘুরতে ঘুরতে মাঝে মাঝে নিজেকে হিমু মনে হয়। দুই একজনকে বিভ্রান্ত করতে গিয়ে গিঠঠু লাগিয়ে ফেলেছি! একদিন সিধান্ত নিলাম, হুমায়ূন আহমেদের সাথে দেখা করবো। অনেক মাথা ঘামিয়ে দেখা করার কোনো বুদ্ধি বের করতে পারলাম না। যেহেতু পত্রিকায় লিখতাম, চেষ্টা চরিত্র করে তার বাসার ফোন নাম্বার জোগাড় করা কঠিন হলো না!
দিলাম ফোন একদিন তাঁর বাসায়। ধরলেন একজন মহিলা, কথায় গ্রামের টান। হুমায়ূন আহমেদকে চাইতেই বললেন উনি বাসায় নাই! একজন বিখ্যাত লেখকের বাসায় মামুলি পাঠক ফোন করে তাকে পাবে এটা অসম্ভব কল্পনা। অন্য রাস্তা ধরতে হবে। কি করা যায় কি করা যায় ভাবতে ভাবতে ঝট করে বললাম – “ওনার সাথেতো জরুরী দেখা করা দরকার। আমি কলকাতা থেকে এসেছি, পত্রিকার কাজে, কালকেই চলে যাব। কিছু করা যায় কিনা।” সুদূর বিদেশ থেকে এসে জনৈক ভদ্রলোক হুমায়ূন আহমেদকে “জরুরী কাজে” খুঁজছেন, সুতরাং কিছুটা গুরুত্ব পাওয়া যেতে পারে – এই ছিল আশা! মহিলা একটু অপেক্ষা করতে বললেন, একটু পরে এসে বললেন, আপনি ওনার অফিসে ফোন দিলে পাবেন, ভদ্রমহিলার অসীম দয়াপরবশহেতু হুমায়ূন আহমেদের নুহাশ চলচ্চিত্র অফিসের নাম্বার পাওয়া গেল।
হুমায়ূন আহমেদকে পাওয়া গেল ফোনে। ফোনের ওপারে তিনি “হ্যালো” বলতেই আমার গলা শুকিয়ে এল। হাত পা কাঁপতে থাকল। যতদূর সম্ভব স্বাভাবিক থেকে বললাম, “দাদা কেমন আছেন? আমি নিরেন ভট্টাচার্য, কলকাতার অমুক পত্রিকার সম্পাদক। চিনতে পেরেছেন? বছর তিনেক আগে ঢাকা বই বেলায় দেখা হয়েছিল?”
“মনে পড়ছে না। কিন্তু সমস্যা নাই। কি ব্যাপার?”
“দাদা আমরা সামনে একটা সায়েন্স ফিকশন সংখ্যা বের করছি। আপনার লেখা চাই-ই চাই।”
“ঠিক আছে। দেখি দেয়া যায় কিনা। পুরনো গল্প দিলে হবে?”
“নতুন হলে ভাল হয় অনেক!”
“দেখি।”
তখন সাহিত্য নিয়ে নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট করছি। ভাবলাম এটা নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। “দাদা সাহিত্য নিয়ে কিছু কথা বলতে চাচ্ছিলাম, যদি অনুমতি দেন।”
“বলেন।”
“আচ্ছা, সাহিত্যের বেপারটাকে ফিজিক্সের থিওরি দিয়ে দেখলে কেমন হয়? বস্তুর যেমন তিনটা মাত্রা থাকে, সাহিত্যকে সেভাবে মাত্রা যোগে সৃষ্টি করা সম্ভব কি?”
“ভেবে দেখা যেতে পারে। আমি যখন আমেরিকা ছিলাম, তখন লেখালেখি নিয়ে একটা ওয়ার্কশপ করেছিলাম। সেখানে লেখালেখি নিয়ে নানারকম এক্সপেরিমেন্ট করা হতো। আমার কাছে এটা ভালই লেগেছে। বাংলা ভাষায় এরকম কিছু করা গেলে খারাপ হবে না।”
“ঠিক বলেছেন। সেযাক আজ আর সময় নষ্ট করব না আপনার। অনেক ভাল লাগল আপনার সাথে কথা বলে। এবার সামনা সামনি দেখা হল না, আশা রাখি কোনোও একদিন আবার দেখা হবে।”
ফোনটা রেখে আমি কতক্ষন হতভম্ব হয়ে বসে থাকলাম। প্রিয় লেখকের সাথে কেন এমন করলাম, কেন মিথ্যা বললাম? বেশ কিছুদিন একটা অপরাধবোধ তাড়া করে ফিরত। একটা সময় অদ্ভুত একটা কথা মাথায় এল। লেখার মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদকে যতটুকু চিনেছি, তাতে মনে হয়েছে সত্যকথাটা বলে দিলে তিনি হয়ত অবাক হতেন প্রথমে, কিন্তু মজাই পেতেন শেষে। হুমায়ূন আহমেদ অভিনব বিষয়গুলো পছন্দ করেন বেশ।
দীর্ঘদিন ধরে আমার খুব ইচ্ছা ছিল হুমায়ূন আহমেদকে সামনা সামনি পেলে সেই ঘটনাটার কথা বলবো। তারপর খুব কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে থাকব। মানুষের জীবনের বেশিরভাগ ইচ্ছাই অপূর্ণ থেকে যায়। তবু মানুষ স্বপ্ন দেখে তার ইচ্ছাটা কোনোও একদিন পূরণ হবে! আফসোস! হুমায়ূন আহমেদ না ফেরার দেশে চলে গেলেন। আমার এই ইচ্ছাটা কোনোও দিনো পূরণ হবে না, কোনোও দিনও না!
সাহিত্যের কোনো চরিত্র নয়, কমিক্সের কোনো চরিত্র নয়, আমার কৈশরের সুপার হিরো ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ, মধ্য যৌবনের সুপার হিরোও তিনিই, বোধ করি বাকি জীবনেও তাই।
ভাল থেকো বন্ধু! যেখানেই থাকো, যেভাবেই থাকো।
১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৪৭
জয় পাঠক বলেছেন: নব্বুই দশকের শেষের দিকে।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৪
েবনিটগ বলেছেন: জটিল, কলকাতার লোকদের সাথে ত আমাদের উচ্চারণের বেশ অমিল, আপনার কথা শুনে উনি সন্দেহ করার কথা ছিল, বেশ ভাল অভিনেতা ছিলেন বোধ হয়, তখন থেকেই। এটা কত সালের ঘটনা?