নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জয় পাঠক

সহজ আলোয় দেখা...

জয় পাঠক

যন্ত্রের জন্যে পদ্য, মানুষের জন্যে গদ্য - এই নিয়ে ভাবাভাবির সারাবেলা

জয় পাঠক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বর্ষা দিনের গল্প

১১ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৪৫

“কবে হারাইছে?”



“গত সপ্তাহ।”



“টাকা কত ছিল?”



“বেশি না।”



“তাইলে খুঁজেন ক্যারে?”



সরু গলিটায় চলতে চলতে বাঁক নেয় লোকটা। সাহেদ অনুসরণ করে তাকে। জায়গাটা একেবারেই পছন্দ হচ্ছে না তার। অপরিস্কার, ঘিঞ্জি। সাহেদ লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। দরকার না থাকলে কোনও দিনও এরকম একটা জায়গায় আসতো না সে।



অল্প কিছুদূর গিয়ে একটা চায়ের দোকানের সামনে থামে লোকটা। “আসেন চা খাই। হানিফ আশেপাশেই আছে। চইলা আইব। বহেন।”



সাহেদ আরাম করে বসল। হাঁটতে হাঁটতে ঘেমে গিয়েছে একেবারে।



চায়ে চুমুক দিয়ে তাকালো লোকটার দিকে।



“তাইলে খুঁজেন ক্যারে মানিব্যাগটা?” ভুরু কুঁচকে আবার জিজ্ঞেস করল লোকটা সাহেদকে।



একবার ভাবল জবাব দেবে না। এত কথার দরকার কি ব্যাটার। শেষে শুকনো গলায় জবাব দিলো, “একটা চিঠি আছে মানিব্যাগটায়।”



“কার চিঠি?”



সাহেদ চুপ করে থাকলো।



লোকটা সুন্দর করে একটা হাসি দিলো। তার হাসিটায় একধরণের সারল্য আছে। লোকটাকে এখন আর সেরকম খারাপ মনে হচ্ছে না সাহেদের।



“চিঠির মালিক আছে না গেছেগা?”



সাহেদ লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। চিঠিটা রুবার।



একটা সময় রুবাকে নিয়মিত চিঠি লিখত সাহেদ। সারা সপ্তাহ সাহেদের চিঠির অপেক্ষায় থাকতো রুবা। দেখা হবার পর চিঠিটা হাতে দিলে সাহেদের সামনেই পড়তে শুরু করে দিত। চিঠি পড়তে পড়তে রুবার অনুভূতিগুলো ফুটে উঠতো ওর মুখে, সাহেদ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতো। পরের চিঠিটা পাওয়ার আগ পর্যন্ত একেকটা চিঠি রুবা কতোবার পড়ত সেটা সে নিজেও জানতো না।



সমস্যা একটাই, রুবা নিজে চিঠি লিখতে পারতো না। একদিন কি মনে করে রুবা একটা চিঠি লিখলো। সাহেদকে লেখা তার প্রথম এবং শেষ চিঠি। এক পৃষ্ঠায় বড় বড় অক্ষরে কয়েক লাইন ভালোবাসার কথা। কোনও নাটকীয় সাহিত্য নয়, শব্দের বিচিত্র কারুখচিত নয়। অথচ এই চিঠিটা কত সহস্রবার পড়েছে সাহেদ, সেটা বের করতে প্রোবাবিলিটির যেকোনো বিশেষজ্ঞেরও কাল ঘাম ছুটে যেত। প্রতিটা অক্ষর, প্রতিটা লাইন যখনি পড়েছে তখনি প্রচন্ড ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়ে যেত সাহেদ, এমনকি রুবা চলে যাবার পরও। পথে হাঁটতে হাঁটতে, কখনো পার্কে গাছের ছায়ায় বসে, বাসের ভীড়ে, চুল কাটতে কাটতে, খাবার আগে – যখনই তার ইচ্ছা করতো, চিঠিটা পড়তে শুরু করে দিলে মন ভালো হয়ে যেত। চিঠিটা পড়ে প্রচন্ড মন খারাপ যে একেবারে হয়নি, তা নয়, কিন্তু সেটাও তার কাছে একধরনের মোহময় আচ্ছন্নতা।



চিঠিটা হারিয়ে যাবার পর হাহাকার লাগছে তার। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মনটা ভার ভার হয়ে যায়। সেই সাত-সকালে বেরিয়ে পড়ে চিঠিটার খোঁজে।



গত সপ্তাহে মানিব্যাগ পকেটমার হয়েছে সাহেদের, তার সাথে সাথে চিঠিটাও। কেন যেন, এতো প্রিয় চিঠিটার কোনও কপি করতে ইচ্ছা হয়নি কোনোদিন। সুতরাং এই জীবনে চিঠিটা সে আবার ফেরত পাবে সে আশা করেনি সে।



তবে তার ভাগ্য পুরোপুরি খারাপ তা বলা যাবে না। সাহেদের এক বন্ধু আছে, দুর্দান্ত সাংবাদিক। তাকে বলতেই মাঠে নেমে পড়ে। তিনদিনের ভেতর সত্যি সত্যি একটা সূত্র বের করে ফেলল সে। চায়ের দোকানে সাহেদের পাশের লোকটি সেই সূত্রে গাঁথা।



“যেই মানুষ গেছে গা, তার চিঠি দিয়া কিয়ারবেন? মানুষও গেছে গা, চিঠি গেছে গা, ভালো হইছে।”



“ভাই চিঠিটা আমার খুব দরকার।” গলায় অনুনয় ঝরে পড়ে সাহেদের। “যেভাবে পারেন জোগাড় করে দেন। টাকা পয়সা লাগলে বলেন।”



“টাকা-পয়সা লাগবো না। থাকলে পাইবেন।” উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে লোকটা।



“গত কয়রাত ঘুমাতে পারিনা ভাইজান। ঘুমের আগে প্রতিদিন চিঠিটা পড়তাম। চিঠিটা না থাকায় বিরাট সমস্যায় পড়েছি।”



লোকটার অসম্ভব মন খারাপ হয়ে গেল। আহারে! কি কষ্ট ভাইটার! একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে এতো ভালোবাসে, সে কিভাবে মানুষটাকে ছেড়ে যেতে পারলো। মানুষ এতো নিষ্ঠুর হয় কিভাবে। লোকটার চোখে পানি চলে আসলো।



অনেকক্ষণ পর্যন্ত হানিফ নামের কারো কোনো খবর পাওয়া গেলো না। চায়ের দোকানে দু’জনেই বসে আছে চুপচাপ।



“আজকে যান গা। সেইরকম কিছু পাইলে জানামুনে।”



কিছুনা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পা বাড়ায় সাহেদ।



পেছনের দিকে তাকালে সাহেদ দেখতে পেত চায়ের দোকানে বসে থাকা মানুষটি কী প্রবল মমতায় তাকিয়ে আছে তার দিকে। তবে এটা বোঝার কোনো উপায় নেই, হানিফ নামের এই মানুষটি চায় না হারানো চিঠি ফিরে পাবার মাধ্যমে তার ক্ষণিকের এই বন্ধুটির কষ্টগুলি বেঁচে থাকুক।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৫৯

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.