নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
'দিল্লি হনুজ দূর অস্ত'......
সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজি দিল্লির একপ্রান্তে একটা মসজিদ তৈরি করলেন। রাজা বাদশাহদের এরকম অনেকরকম খেয়াল থাকে। মনে হল তাই একটা মসজিদ বানিয়ে ফেললেন। মসজিদ তো হল, কিন্তু সেখানে মুসুল্লি সেরকম খুব একটা যাওয়া আসা করল না। আলাউদ্দিন খিলজি মারা যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন সে মসজিদ ফাঁকাই পড়ে রইল।
কিছুকাল পরে একদিন কোথা থেকে এক ফকির এসে আস্তানা গেড়েছেন সেই মসজিদে। তখন দিল্লির তখতে খিলজি বংশ চলে গিয়ে এসেছে তুঘলক বংশ যার প্রতিষ্টাতা সুলতান গিয়াসুদ্দিন তুঘলক।
সুলতানের মেজাজ প্রচন্ড রকম কড়া। এক চুল অনুশাসনের শিথিলতা তিনি বরদাস্ত করেন না।
তো যাই হোক, সেই ফকিরের কথায় আসা যাক। ফকির আস্তানা বাধার পর কিছু কিছু মানুষ তার কাছে আসতে শুরু করল তার সরলতা দেখে। কিছু কিছু মানুষ আস্তে আস্তে তার গুণমুগ্ধ হতে শুরু করল তার সততা দেখে। এ ফকির তো সত্যি সত্যিই এক ফকির। কোনো দাবী দাওয়া নেই, কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই, যে আসছে তার জন্যই আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করছেন! ধীরে ধীরে মানুষের মনে শ্রদ্ধার জায়গা তৈরি হল ফকির সম্পর্কে।
একবার দিল্লিতে প্রচন্ড খড়ায় খাবার পানির অভাব দেখা দিল। লোকজন ফকিরকে গিয়ে ধরল তাদের অসুবিধার কথা জানিয়ে। ফকির বলল, বেশ তো, তাহলে একটা দীঘি খনন করানো যাক। সবাই মিলে স্বেছায় শ্রম দিয়ে দীঘি খনন করবে...
এদিকে তখন সুলতান শত্রু আক্রমণ রোধ করার জন্য পত্তন করতে চাইছেন এক নতুন নগরী যার নাম হবে তুঘলকাবাদ। সেই নগরীর মাঝখানে থাকবে বিশাল এক পুকুর যাতে পাহাড় বরফগলা পানি এসে জমা হবে আর নগরী বেষ্টন করে তৈরি হবে প্রাচীর। এর জন্য প্রচুর শ্রমিক দরকার।
এতদিন সুলতান আর ফকিরের কোনো সঙ্ঘর্ষ ছিল না। সুলতান জানতেন এক ফকির থাকে তার রাজত্বের প্রান্তদেশে, নিজের মতো থাকে, তাই তাকে নিয়ে সুলতানের কোনো মাথাব্যথা ছিল না।
যেই সুলতান নগর তৈরি করার জন্য লোক লাগাতে চাইলেন, দেখা গেল লোকজন বেশিরভাগই ওই ফকিরের পুকুর কাটায় ব্যস্ত হয়ে রয়েছে। সুলতানের নগর তৈরিতে লোকজনের উৎসাহ সেরকম নেই। ব্যস, সুলতানের হলেন গোস্যা। আদেশ জারি করলেন, বন্ধ করো পুকুর কাটা। আগে আমার নগর তৈরি হবে তারপর হবে ফকিরের পুকুর।
কিন্তু তা বললে লোকে শুনবে কেন! পুকুর হচ্ছে সাধারণ মানুষের জন্য। তারা নিজেরা মন থেকে সেই কাজ করছে। আর নগর তো তৈরি হচ্ছে সুলতান আর রাজপুরুষদের জন্য। সেই কাজে লোকজনের মনের সাড়া নেই।
ঠিক এমন সময়ে বিদ্রোহ দেখা দিল বাংলায়। সুলতানকে ছুটতে হল বিদ্রোহ দমন করার জন্য। দিল্লির সিংহাসনে বসিয়ে গেলেন তার জ্যোষ্ঠ পুত্র মহম্মদকে আর হুমকি দিয়ে গেলেন, তিনি ফিরে এসে দেখে নেবেন ফকিরকে। কোথা থেকে এত সাহস হয় ফকিরের! শুনে ফকির মুচকি হেসেছিল একটু।
বাংলার বিদ্রোহ দমন করে সুলতান এবার ফিরে আসছেন দিল্লির দিকে। জ্যোষ্ঠ পুত্র যাকে তখত এ বসিয়ে গেছিলেন সে আবার ফকিরের গুণমুগ্ধ। মহম্মদ নিজে গিয়ে দাঁড়ালেন ফকিরের সামনে। বললেন, হুজুর আপনি এক্ষুনি চলে যান এখান থেকে। তা নাহলে আব্বাহুজুর এসে আপনার গর্দান নেবে।
এই কথা শুনে ফকির আবার সেই একটা মুচকি হাসি দিল। লোকজন যারা যারা ফকিরকে ভালোবাসত সবাই ফকিরকে অনুরোধ করল-'পালিয়ে যান এখান থেকে, সুলতান আর কদিনের মধ্যেই এসে পড়বে, আর এসেই আপনার গর্দান নেবে।'
ফকির আবার মুচকি হাসলেন। এবার কথাও বললেন। বললেন, 'দিল্লি দুর অস্ত'।,অর্থাৎ দিল্লি দূর আছে।
কিছুদিন বাদে আবার সবাই এলো ফকিরের কাছে। এবার জোরাজুরি, 'আপনি চলে যান এখান থেকে, সুলতান এসে গেলে আর কিছু করার থাকবে না।'
ফকির মুচকি হেসে বললেন, 'দিল্লি হনুজ দূর অস্ত'। অর্থাৎ দিল্লি এখনো দূর আছে। পাশে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন সুলতানের বড় ছেলে মহম্মদ।
সুলতান পৌঁছে গেছেন দিল্লির কাছে। মহম্মদ দিল্লি প্রবেশের মুখে সুলতানের অভ্যর্থনার জন্য বানালেন এক বিশাল তোরণ আর তার সাথে এক বিশাল অস্থায়ী মঞ্চ। সেই মঞ্চে বসালেন সুলতানকে। সুলতান গিয়াসুদ্দিন বসলেন সেই মঞ্চে সাথে নিয়ে তার প্রিয় পুত্রকে। নাহ, মহম্মদ নয়। সুলতানের প্রিয় পুত্র তাঁর কনিষ্ঠ সন্তান যাকে নিয়ে বিদ্রোহ দমন করতে গেছিলেন। গিয়াসুদ্দিনের থেকে অনুমতি নিয়ে পুত্র মহম্মদ শুরু করলেন হাতির কুচকাওয়াজ। তিনি নিজে নিয়ন্ত্রণ করলেন হাতির পালকে। এভাবেই বিজয়ী পিতাকে অভ্যর্থনা জানাতে চাইলেন পুত্র.....
হঠাৎ বিশাল কড়কড় আওয়াজ। কী হল? কী হল?? বলতে বলতেই সবাই দেখল হাতির মাথা ঘোরানোর সাথে সাথে ভেঙে পড়ছে বিশাল সিংহাসন। চাপা পড়লেন সুলতান গিয়াসুদ্দিন তুঘলক তার প্রিয় পুত্রের সাথে। দিল্লি রয়ে গেল সুলতানের থেকে দুর অস্ত। আর কোনোদিনই দিল্লি পৌঁছন হল না সুলতানের। সিংহাসনে বসলেন মহম্মদ বিন তুঘলক আর সেই ফকির রয়ে গেলেন সবার চোখের মণি হয়ে, নিজামুদ্দিন আউলিয়া যার নাম। আর সেই মসজিদ পরিচিত হল নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ নামে। আজও নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সেই অমর উক্তি যেকোন অসাধ্যের বিষয় 'দিল্লি দুর অস্ত' উদ্ধৃতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৫
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:২৭
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: মানুষ কেউ তার ভাগ্য (ভবিষ্যত) সম্পর্কে জানেনা ।যদি জানত তাহলে এমন অনেক কাজই করত না যাকে সে ধ্যান-জ্ঞান লাগিয়ে জান কোরবান করে করতে চায়।
১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৪০
জুল ভার্ন বলেছেন: আমার ধারনা ভিন্ন, আসলে আমরা সবাই কাজ করি কোনোনা কোনো একটা উদ্দেশ্যে। তবে কাজের ফলাফল আমাদের উপর বেশীরভাগ ক্কেত্রে নির্ভর করেনা।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: বাবা পুত্র দুজনই চাপা পড়ে মারা গেলেন!!!!!!!!!!!
১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৪০
জুল ভার্ন বলেছেন: একদম তাই।
৪| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৪৪
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: বাহ! বেশ লিখেছেন দাদা।
৫| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:২১
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ @মরুভূমির জলদস্যু।
৬| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১৪
প্রত্যাবর্তন@ বলেছেন: অনেক কিছু জানা হল ।
১৫ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:২৫
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:১৮
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: খুব ভালো লাগলো পড়ে।