নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
জার্নি বাই বাসঃ কলাবাগান টু সাইন্সল্যাব.........
সকাল বেলা টিপটাপ বৃষ্টি পরছে। সাথে ছাতা নেই।
আমার গন্তব্য কলাবাগান থেকে মতিঝিল। কলাবাগান বাস স্টান্ড থেকে মতিঝিলের উদ্দেশ্যে অনেকগুল বাস পাওয়া যায়। সরাসরি কলাবাগান থেকে মেঘলা ট্রান্সপোর্ট নামক একটা বাস ছাড়ে কিছুক্ষণ পরপর। সেই বাসের চেহারা সুরত ভালোনা। এই লাইনে আরো অনেক বাস আছে যেমন- ট্রান্স সিল্ভা, অলকা ট্রান্সপোর্ট, পুবালী পরিবহন, ভি আই পি এবং আরো......। এই বাসগুলোর কোনটার গন্তব্য মতিঝিল, আজিমপুর, কোনটার যাত্রাবাড়ি কিম্বা ভুলতা। এই বাসগুলোতে টিকেট করে উঠতে হয়-তাই বাসগুলোকে বলা হয় কাউন্টার বাস। বাসের কাউন্টারগুলো অদ্ভুত! দুই ফুট বাই এক ফুট টেবিল। সেই টেবিলে ড্রয়ার আছে। পেছনে ছয় ইঞ্চি বাই ছয় ইঞ্চি টুল। সেই টুলের উপড় বসে যুবকেরা টিকিট বিক্রি করে-সেজন্যই এবাসের নাম কাউন্টার বাস।
সকাল পৌনে নয়টায় উঠেপরি ট্রান্স সিলভা নামক বাসে-ঠেলে ঠুলে একদম পিছনে গিয়ে দাড়িয়েছি মাথার উপড়ের রড ধরে। বাসে তিল ধারনের যায়গা নেই। ড্রাইভারের পিছনে তিন জনের বসার সীট ওয়ালা পর পর তিন সারি সীটের উপড় স্টীকার সাটানো-মহিলা/ শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত"। আমি ঐ তিনটার একটাও নই। অনেক তরতাজা পুরুষ বসে আছে সেই নির্ধারিত সীটে কিন্তু ১০/১২ জন অফিস যাত্রী মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। একজন মহিলা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললেন-"আপনারা মহিলাদের সীটগুলো ছেড়ে দিন..."।
কেউ রা করছেনা!
আবারো মহিলা যেইনা রিকোয়েস্ট করলেন-তখনই এক যুবক বললেন(ঘেউ ঘেউ করে)"পাব্লিক বাসে উঠলেই আপনাদের মনে হয়-আপনারা মহিলা... বাসের ভিতর মহিলা-পুরুষ নেই। যে যেখানে পারে বসে যাবে- যদি দাঁড়িয়ে না যেতে পারেন-তাহলে একটা প্রাইভেট কিন্না লন"!
পাঁজি বেটার কথা শুনে আমি পিছন থেকে বললাম-"ভাই মহিলাদের সীটগুলো ছেড়ে দিননা, দেখতেই পাচ্ছেন-কি অবস্থায় ওনারা কস্ট করছেন"! অমনি এক সাথে ৪/৫ জন বলে উঠলেন-"ইশ! নিজে বসতে পারেননি বলেই-অন্যদের উঠে যেতে বলছেন"! অসহায় আমি চুপ করে গেলাম।
বাসে আছি-কিন্তু বাস নড়ছেনা। বাম্পার টু বাম্পার জ্যাম। গাড়ি এগুচ্ছে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে। বৃষ্টির জন্য সব জানালা বন্ধ। বাসের ভিতরে অক্সিজেনের অভাব এবং প্রচন্ড গড়মে যাত্রীরা হাসপাস করছে। বাসের পিছনে যদিও দাড়ানোর জন্য অনেক যায়গা আছে তবুও সব ভীড় সামনের দিকে-যেখানে মহিলারা ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে আছেন! কেউ পিছনে যাবেননা। বাস চলার সময় যদিও কিছুটা বাতাস লাগে কিন্তু থেমে থাকা বাসে বাতাস নেই। কলাবাগান থেকে ধান্মন্ডি ৫ নম্বর রোড পর্যন্ত আসতেই ৩০ মিনিট লেগে গেলো। যাত্রীরা চিল্লাচিল্লি করছে- অফিস টাইম বলে। কেউ কেউ বর্তমান সরকারের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে, কেউবা আগের সরকারের।
এক যাত্রী শুদ্ধ ভাষায় বলছেন-"ছোট্ট একটুকরা বাংলাদেশ, রিকশা চলাচলের যেখানে যায়গা নেই- সেখানে শুধু প্রাইভেট আর প্রাইভেট(গাড়ি)"! অন্য জন বলছেনঃ-"আরে ভাই, বাঙ্গালী আর বাংলাদেশের উন্নতি জিন্দেগীতেও হবেনা, বিদেশে দেখি কত্ত বড় বড় রোড, যেনো ফুটবল খেলার মাঠ"!
একজন টিপ্পনী কেটে জানতে চায়ঃ-"ভাইজান আপনি পৃথিবীর কোন কোন দেশ ঘুরছেন"? উত্তরঃ-"ইন্ডিয়া"। "ইন্ডিয়ার কোথায়"? উত্তরঃ-"কলকাতা"! অন্য একজনঃ-"কোলকাতাও আবার বিদেশ হইল"!
বাস ৬ নম্বর রোডের কাছে আসতেই কয়েকজন যাত্রী চিতকার করে বলছেন-"এই ড্রাইভার, বাম দিকে ঢূইক্কা পরো, গ্রীণ রোড দিয়া বাইরাইয়া যাও"। অন্য একদল বলছে-"এই ড্রাইভার, ঝামেলা করবানা, যেমন যাইতাছো তেমন সোজা যাও"। কেউ একজন বলছেন-"মেইন রোডের জ্যাম ছাড়ানোর জন্য ট্রাফিক আছে, ঘুপচি-গলির মধ্যে আটকা পরলে আর বাইরাইতে পারবানা"। কয়েকজন গলার সব জোড় খাটিয়ে ড্রাইভারকে অর্ডার করলো-"ঐ ব্যাটা তরে কইছি গ্রীণ রোড হইয়া যা"।
ড্রাইভার বলছে-"গ্রীণ রোডে গেলে ছারজেন কেচ কইররা দিবে- তহনতো আপনারা ঠেকাইবেননা"! একজন যাত্রীঃ-"আমরা লীগের লোক, আমরা দেখমু- কোন সার্জেন্ট তোমারে আটকায়- তুমি গ্রীণ রোড হইয়া যাও"।
এত্ত সব নির্দেশনার মাঝে ড্রাইভার বাম দিকে টার্ণ নিয়ে গ্রীণ রোড হয়ে চলছে সাইন্স ল্যাবোরেটরীর দিকে। কয়েকজন যাত্রী চিতকার করে বলছে-"ঐ বেডা ড্রাইভারের বাচ্চা, তোরেনা কইলাম-সোজা যা, যদি টাইমমত অফিসে না যাইতে পারি-তাইলে তরে আইজ পিডাইয়া তক্তা বানাইয়া ফালামু"!
একজন বললেনঃ-"ড্রাইভার শালারা মানুষনা"।
অন্য একজনঃ-"এইজন্যইতো তোমরা মাঝে মধ্যে পাব্লিকের কিল খাও"!
উত্তেজিত ড্রাইভার বললোঃ-"গালাগালি করবেননা, গাড়ি হালাইয়া নাইম্মা যামু- হেরপর হাইট্টা হাইট্টা অফিসে যাইয়েন"!
সমস্বরে কয়েকজনঃ-"এই ব্যাটা ফাইজলামী পাইছোস-গাড়ি থুইয়া নাইম্মা যাবি? কেন পয়শা দিয়া গাড়িতে উঠিনাই"?
ল্যাব এইডের সামনে এসে আবার চিরন্তন মহা জ্যাম। সিটি কলেজের সামনে গাড়ি আসতেই কন্ডাক্টর বলল-"ওস্তাদ ছারজেন হালায় ছিংগাল দেচে-গাড়ি থামাইতে কয়"।
ড্রাইভারঃ-"যা তুই যাইয়া ছিলিপ দেহাইয়া আয়"।
কন্ডাকটরঃ-"ওস্তাদ এইডা বোউজলা(সার্জেন্ট বজলু) হালায়-ও ছারবেনা। টাহা খায়না"।
সার্জেন্ট গাড়ির কাছে এসে জানতে চাইলো-গাড়ি কেনো অবৈধ ভাবে গ্রীণ রোডে ঢুকাইছস? যাত্রীরা চিতকার করছে-সার্জেন্ট নির্বিকার! সার্জেন্ট ড্রাইভারের কাগজপত্র রেখে টিকিট ধরিয়ে দিল...। এবার ড্রাইভার মা-বোন তুলে গালাগাল করছে-যারা গাড়ী ঘুড়িয়ে গ্রীণ রোড হয়ে যেতে বলছিল...তাদের উদ্দেশ্য করে। কিন্তু এখন সব যাত্রী স্পীক্টি নট!
২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৩
জুল ভার্ন বলেছেন: ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: এগুলি প্রতিদিনকার দৃশ্য। এখন থেকে ১৩ বছর আগেও যা দেখেছি; আজকে ১৩ বছর পরে ঠিক সেই একই কথা ব্লগে পড়তেছি। পুরা একই! :
কি আর করবেন, নিজে অত্যাধুনিক লেখা লিখুন -আমরা পড়ে ধন্য হই।
৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৪৭
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আমি একটা জিনিস বুঝতে পারি না আপনাদের ওখানে ট্রাফিক রুল লোকে কেন ভাঙে? আর সব ঢাকার মতো মহানগরীর সিগন্যালে যদি সিসিটিভি ক্যামেরা বসে তাহলে সামান্য দাগ স্পর্শ করলেই তো অটো কেস হয়ে যাবে।কেন ড্রাইভাররা এতোটা ঝুঁকি নিতে যাবে? আর রাস্তার জ্যামের দায় তো চালকের নয় যে তাকে রুলস ভেঙে গ্রীণ করিডর ব্যবহার করতে হবে।
৪| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২৭
জুল ভার্ন বলেছেন: @পদাতিক চৌধুরি; আমাদের দেশে আইন আছে কিন্তু আইনের প্রয়োগ নাই। যারা আইনের প্রয়োগ করবে তাদের নৈতিকতা নাই। সর্বপরি, ৯০% লোকেরই জনসচেতনতা নাই। করাপশন এ টু জেড।
৫| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৪০
রাজীব নুর বলেছেন: কলাবাগান টু সাইন্সল্যাব এই শিরোনাম বদলে দিন।
শিরোনাম দিন কলাবাগান টু মতিঝিল। কলাবাগান টু সাইন্সল্যাব হেঁটেই যাওয়া যায়। ১০ মিনিটের বেশি সময় লাগার কথা না।
১৫ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:২৫
জুল ভার্ন বলেছেন: আমার জার্নি ডেস্টিনেশন ছিলো মতিঝিল পর্যন্তই। কিন্তু সাইন্সল্যাব যেতেই আক্কেল গুড়ুম! ঐ পর্যন্ত পৌঁছতে বৃষ্টি থেকে যায়, আমি
সময় বাঁচাতে বাস থেকে নেমে পাঠাও মোটরসাইকেলে মতিঝিল পৌঁছি।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৪৪
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: এগুলি প্রতিদিনকার দৃশ্য। এখন থেকে ১৩ বছর আগেও যা দেখেছি; আজকে ১৩ বছর পরে ঠিক সেই একই কথা ব্লগে পড়তেছি। পুরা একই!