নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ \n\nএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসাধারণ সুন্দর একটা ছবির নাম- "অক্টোবর"

১৫ ই নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৬

অসাধারণ সুন্দর একটা ছবির নাম- "অক্টোবর"!

'কুইন' ব্যান্ডের গান The Miracle এর কয়েকটা লাইন দিয়ে শুরু করা যাক -
“It's a miracle we need - the miracle, the miracle we're all waiting for today,
If every leaf on every tree, could tell a story that would be a miracle,
If every…”
*********************

সুজিত সরকারের 'অক্টোবর', প্রেমের ছবি- "সম্পূর্ণ প্রেমের ছবি অক্টোবর"।
ড্যান (বরুণ ধাওয়ান) হোটেল ম্যানেজমেন্টের ছাত্র। একটি বিরাট হোটেলে ইন্টার্নশিপ করছে। সেখানে ছবির নায়িকা শিউলিও ছাত্রী। বরুণ একটু অন্যরকম ছেলে। মানে খুব ভালো ছেলে নয়, আবার খুব খারাপ ছেলেও নয়। বিরাট দায়িত্ব নেয় তাও নয় আবার দায়িত্ব থেকে পালায় এমনটাও নয়। ড্যান ঠিক নিজেকে বোঝে না। 'ক্যালাচ' আর 'স্মার্ট' এই দুইর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক বোকা প্রেমিক। সে হোটেলের চাদরে নিজের জুতো মোছার মতন দুষ্টুমি করছে, যদিও সে জানে সিসি টিভির চোখ সবসময় খোলা। তাঁকে বার বার অপছন্দের জায়গায় ডিউটি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। বসের কাছে বকুনি জুটছে রোজ। বোকা হলেও ওর মাঝে এক অদ্ভুত সততা আছে। ওঁর বন্ধুরা জানে ড্যান বদ নয়। ওঁকে সবাই ভালবাসে। তাই, ওঁর দুষ্টুমিগুলো সবাই আড়াল করার চেষ্টা করে।
ড্যান সত্যি জানে না জীবনে ঠিক কি করবে। ড্যান এবং শিউলি একসঙ্গে কাজ করে, পাশাপাশি বসে টুকটাক কথা বলে- এইটুকুই। হোটেলে পার্টি চলার সময় শিউলি উপর থেকে মাটিতে পড়ে যায়। ঠিক তার আগেই সে জিজ্ঞাসা করেছিল - “ড্যান কোথায়?”

সেদিন ড্যান ডিউটিতে ছিল না। ড্যান আর শিউলি খানিকটা সময় স্ক্রিন শেয়ার করেছে এই অবধি। সেখানে কারো প্রতি আকর্ষণ, বিশেষ বন্ধুত্ব এমন কিছুর আভাস নেই। কিন্তু, যখন ড্যান জানতে পারে দুর্ঘটনার আগে শিউলি জিজ্ঞাসা করেছিল - “ড্যান কোথায়?”-ও কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়! ঠিক বুঝে উঠতে পারে না কেন! ওই বয়সের একটা ছেলে যেটা ভাবতে পারে, তাহলে শিউলির মনে কিছু ছিল - নাহলে কেন খোঁজ নেবে! খোঁজ নেওয়াটা একটা সাধারণ ফরম্যালিটি হতে পারে, এটা ড্যানের মাথায় আসেনি। যদিও ওদের পেশায় এমন ফরম্যালিটিতে ওরা অভ্যস্ত। হয়তো সারাক্ষণ বসের বকুনি খাওয়া, জীবনকে পিছুটিভরা চোখে দেখতে অভ্যস্ত ছেলেটা এমন একটা প্রশ্নের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যার উত্তর খোঁজাটাই তাঁর জীবনের সবকিছু হয়ে যায়।

শিউলির আঘাত গুরুতর। সে সারা শরীরে নল জড়ানো একটা পুতুলের মতন হসপিটালের বেডে। ওঁর মা প্রফেসর, ভাই বোন আছে, বাবা নেই।

পেসেন্স থেকে এসেছে পেশেনট কথাটা। অপেক্ষা, ডাক্তারের আশার কথার। না, এই সিনেমায় এমন আশার কথা নেই। কারণ, শিউলি একটা মরা মাছের মতন শুয়ে আছে। কোমাই বলা যায়। বেঁচে আছে, এইটুকুই আশা। কেউ দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকলে, প্রথমদিকে অনেক লোক দেখতে আসে। কিন্তু, শেষের দিকে থেকে যায় শুধু কাছের কটা মানুষ - মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তান। শিউলির ক্ষেত্রেও ওঁর মা, ভাই-বোনদেরই পড়ে থাকার কথা। ওঁদের কাকা চান না এই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে। পানির মতন টাকা বেড়িয়ে যাচ্ছে। কি লাভ! একটা মেয়ে বেঁচে থাকবে মরে যাওয়া মাছের মতন।

একটা ছেলে প্রতিবাদ করে। সে এই হতাশার দেয়াল ভাঙতে চায়। শিউলির মা, ভাই বোন, কাকা ছাড়াও এই ছেলেটা রোজ আসে হাসপাতালে। সেই ছেলেটা ড্যান। তাঁর জীবনের সবটুকুই এখন এই নার্সিং হোম। ওঁকে চিনে গেছে নার্সরা। ওষুধের খোঁজে দৌড়ে বেরিয়েছে, টাকা ধার করেছে ওষুধ কিনতে। রাতে হাসপাতালের নিয়ম ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখে এসেছে শিউলি কেমন আছে। ওঁর মনে একটা প্রশ্ন তাড়া করে বেড়াচ্ছে , শিউলি কেন ওঁর খোঁজ করেছিল!

একদিন কিছু ফুল শিউলির বেডের কাছে রেখে আসে ড্যান। ফুলের গন্ধে সে সামান্য React করে। চোখ ঘোরায়, মাকে দেখে। কিন্তু ড্যানকে চিনতে পারে না সে। হতাশ হয় ড্যান। সে শিউলিকে নানান ক্লু দেবার চেষ্টা করে...। প্রতি মুহূর্তে দর্শক হয়তো ভাববে এবার একটা মিরাকেল হবেই। এবার কিছু একটা হবে। কারণ, মিরাকেল ছাড়া শিউলির ওষুধ নেই। শিউলি একটু ভালো হয়। ড্যান ভিক্ষুকের মতন আশার অচল আধুলি কুড়িয়ে বেড়ায়। শিউলির বেডের নীচে ইউরিন ব্যাগেও সে খুঁজে ফেরে একটু আশা, মিরাকেলের দিকে একটা নতুন পদক্ষেপ - "আজ ইউরিন আউটপুট বেশী"; তারমানে শিউলি ভালো হচ্ছে। ড্যান বদলে যায়নি। তাঁর বোকামিতে নার্সিং হোমের স্টাফরাও বিরক্ত। দিন এগিয়ে যায়। একদিন ড্যানের মা শিউলিকে দেখতে আসে। বোকা ড্যান যেন এক অসম্ভব তপস্যায় ব্রতী সাধকে পরিণত হয়েছে। ড্যান তাঁর আঁজলা খুলে রোজ নতুন কিছু আশার কুঁড়ি দেখতে পায়- নিশ্চয়ই শিউলি সুস্থ হয়ে যাবে।
ড্যানের হাত একদম খালি। একটি হোটেলে কাজ নিয়ে চলে আসে দিল্লি থেকে। তারপর শিউলি হঠাৎ React করে। ড্যান শিউলির অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। ড্যানের অনুপস্থিতি শিউলির স্নায়ুগুলিকে উত্তেজিত করে। ড্যান ফিরে আসে। ড্যান আর সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজে না, কেন শিউলি জানতে চেয়েছিল ড্যান কোথায়। ড্যান জানতেও চায় না, শিউলির মনে কি ছিল। সে এক ব্যাকরণহীন ভালবাসায় আবদ্ধ হয়ে পড়েছে শিউলির সঙ্গে। তাইতো শিউলির বাড়িতে হুইল চেয়ার ওঠার সুবিধার জন্য ড্রাইভওয়ে বানাবার কথা বলে। খুব ছোটো জিনিসগুলি চোখ এড়ায় না তাঁর। শিউলি এবার বাড়ি ফিরবে। আর একটু ভালো হয়েছে সে। খুব সামান্য অভিব্যক্তি তাঁর বেঁচে থাকার সম্বল- সেটুকু নিয়েই খুশী ড্যান।

সুজিত সরকার বাঙালি ডিরেক্টর। তাই বাংলার ছোঁয়া রেখেছেন এক অনবদ্য ভঙ্গিমায়। শিউলির পুরো নাম শিউলি আইয়ার , সাউথ ইনডিয়ান। শিউলি বাংলা শব্দ। শব্দটা ভারী মিষ্টি । তাই দক্ষিণ ভারতীয় পরিবারের এই মেয়ের বাঙালি নাম। সে ছোটো থেকেই শিউলি ফুল কুড়োতে খুব ভালবাসত। শিউলি অক্টোবরের অপেক্ষায় থাকতো। শিউলি ফুল ফোটার সময় এই মাস। কিন্তু শিউলি ফুলের আয়ু বড় কম। বড় তাড়াতাড়ি ঝরে যায় সে। হোটেলের সেই দুর্ঘটনার দিন থেকে শিউলির মা, বোন, ভাই আর ড্যান হয়তো কোনো এক অক্টোবরের অপেক্ষা করছিল, যখন শিউলি আবার ফুটে উঠবে।

নার্সিংহোমে কোনো মিরাকেল হয়নি। শিউলি চিকিৎসায় সাড়া দিয়েছে মাত্র। বাড়িতে আসার পর শিউলি মারা যায়। যেদিন হোটেলে সে উপর থেকে নীচে পড়ে যায় সেদিনই সে ঝরে পড়েছিল। ফুল ঝরে পড়লেও তাঁর নির্যাস থাকে আরও কিছুটা সময়। সেই নির্যাসটুকু আঁকড়ে ধরেছিল ওঁর মা, ভাই, বোন। ড্যান কোথাও ছিল না। “ড্যান কোথায়", শিউলির বলা শেষ কয়েকটা শব্দ, যা ড্যানের জন্য জীবনের নতুন নির্যাস হয়ে ওঠে। সে ওই নির্যাসকে আঁকড়ে ধীরে ধীরে ভালবেসে ফেলে শিউলিকে। ওই বয়সের একটা ছেলে, সবরকম ছ্যাবলামো, নাচ গান, ফুর্তি ভুলে শিউলির ইউরিন ব্যাগে জমে ওঠে কয়েক ফোঁটা অতিরিক্ত তরল, কিমবা ডাক্তারের মুখের লেগে থাকা সামান্য হাসির মধ্যে জীবনের সবটা খুঁজে পায়। এরকম প্রেম খুব কম সিনেমা দেখাতে পেরেছে। সিনেমায় গান নেই। প্রতি মুহূর্তে একটা অপেক্ষা আছে। এই বোধহয় মিরাকেল হল!
****************

শিউলির জীবনের মতন আমার এই রিভিউও শেষ হোক। 'অক্টোবর' এই হতাশার সময়ে অদ্ভুত এক প্রেমের ছবি আমার দুচোখ বারবার ঝাপসা করেছে.... বিটিলসের গান মনে আসে -
"It's only love and that is all
Why should I feel the way I do?
It's only love, and that is all
But it's so hard loving you"
ভালবাসা ছাড়া আর কিছুই সত্যি নয়। কিন্তু, এই ভালবাসা বড় কঠিন ... ।

এই সিনেমার রিভিউ এক লাইনে করে দেওয়া যায় -
অনেক ছোটগল্প সিনেমা হয়ে ওঠে, কিন্তু খুব কম সিনেমাই ছোটগল্প হয়ে উঠতে পারে- 'অক্টোবর' এমন একটি ছবি।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:১১

অপু তানভীর বলেছেন: অক্টোবর মুভিটা এতো তীব্র ভাবে অনুভূতিকে আন্দোলিত করেছিলো সেটা বলে বোঝানোর মত । মুভি দেখার পর অনেক দিন মন খারাপ হয়ে ছিল ছবির ড্যান আর শিউলির জন্য !

১৫ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৪৬

জুল ভার্ন বলেছেন: নিকট অতীতে আমার দেখা অন্যতম সুন্দর একটা হিন্দি সিনেমা।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:২৬

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: মানবিকতাই শ্রেষ্ট ভালবাসা।প্রত্যেকে মানবিক হলে ভালবাসায় ভরে উঠবে পৃথীবি।

১৫ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৪৮

জুল ভার্ন বলেছেন: তাহলেই মানবিকতা প্রতিষ্ঠিত হবে বর্তমান অবক্ষয়ের মাঝে।

৩| ১৫ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৫৫

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: রিভিউ খুব সুন্দর হয়েছে ভাইজান।
শুভকামনা আপনাকে।

১৫ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৫১

জুল ভার্ন বলেছেন: সামু ব্লগে বর্তমানে ভালোকে একটু ভালো বলার মতো উদার ব্লগারদের যেখানে খুব অভাব সেখানে আপনি আমার এই লেখাকে সুন্দ বলে অনেক সম্মান দেখিয়েছেন। ধন্যবাদ।

৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৭

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ব্যাকরণহীন ভালোবাসায় আবদ্ধ... কী সুন্দর করে লিখেছেন!

১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩১

জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ১৫ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৫৪

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: দেখা হয় নাই সিনেমাটি।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩৩

জুল ভার্ন বলেছেন: ভালো ছবি, সুযোগ পেলে দেখতে পারেন-ভালো লাগবে।

৬| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: মুভিটা দেখি নাই।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩৪

জুল ভার্ন বলেছেন: ভালো ছবি, সুযোগ পেলে দেখতে পারেন-ভালো লাগবে।

৭| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: আমি দুঃখিত। আমার মন্তব্য টী ভুল হয়েছে। এই মুভি আমি অনেক আগেই দেখেছি। আসলে আমি অনেক মুভি দেখি। কিন্তু মুভির নাম মনে থাকে না। আবার মুভির কাহিনী দুই তিনটা মুভির সাথে মিলিয়ে ফেলি।

যাই হোক, মুভির কাহিনী মনে পড়েছে-
ছেলেটা (নায়ক) একটু পাগলা ধরনের। সে তার কামকাজ বাদ দিয়ে সারাদিন রাত হাসপাতালে পড়ে থাকে। তবে হঠাত নায়িকার মৃত্যু টা আমাকে ভীষন কষ্ট দেয়।
শিউলি ফুল আমার ব্যক্তিগত ভাবে ভীষন পছন্দ।

১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:১৫

জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.