নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
মুভি রিভিউঃ "ইরেজারহেড"......
‘ইরেজারহেড’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯ মার্চ, ১৯৭৭। কেটে গেছে দীর্ঘ তেতাল্লিশ বছর, তবু ইরেজারহেড সিনেমাপ্রেমীদের কাছে এক বিস্ময় হয়ে রয়ে গেছে। ডেভিড লিঞ্চ নিজে বলেছেন, তিনি যা ভেবে ইরেজারহেড বানিয়েছিলেন, ছবিটি নিয়ে দর্শকদের বা সমালোচকদের কোনো ব্যাখ্যাই তাঁর সেই ভাবনার কাছে পৌঁছোতে পারেনি। লিঞ্চের মতে, ছবিটি "A dream of dark and troubling things." তাঁর মতো করেই যদি ভেবে দেখা যায়, তাহলেও ছবিটির একাধিক ব্যাখ্যা বেরিয়ে আসতে পারে।
এ ছবির পটভূমি একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েস্টল্যান্ড। এই পটভূমিকে চমৎকার ব্যবহার করেছেন লিঞ্চ এবং তাঁর দুই সিনেমাটোগ্রাফার ফ্রেডরিক এমস ও হার্বার্ট কার্ডওয়েল। লোকেশনকে মাথায় রাখলে ছবিটার একটা অন্য ইন্টারপ্রিটেশন তৈরি হয়, এমনই অসামান্য লোকেশনের ব্যবহার। ছবিটা শুরু হওয়ার খানিকক্ষণ বাদে অর্থাৎ বহুচর্চিত “আ ম্যান ইন দ্য স্পেস” দৃশ্যের খানিক পরে আমরা যখন হেনরি স্পেন্সারকে বাস্তবে প্রথমবার দেখি, সে দাঁড়িয়ে আছে বন্ধ কারখানার পাশে যেখানে বর্জ্য ফেলা হয়- সেখানে। লিঞ্চ, এমস আর কার্ডওয়েল পর্দায় তৈরি করেন অজস্র প্যাটার্ন।
শিল্পাঞ্চল মানেই কারখানা, কারখানা মানেই যন্ত্র, যন্ত্র মানেই তার মধ্যে প্রচুর জটিল নকশা, বিভিন্ন জটিল ক্রিয়াপদ্ধতি। সেই শিল্পাঞ্চলের একটা ডেপিকশন গড়ে ওঠে পর্দায় ব্যবহৃত প্যাটার্নে। এবং সেই প্যাটার্নের প্রতিফলন ঘটে ছবির কম্পোজিশনেও। কখনো পর পর থাকা জানালার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে হেনরি, কখনো পানির পাইপ নিজেরাই জড়িয়ে মড়িয়ে ওপরে উঠে একটা নকশা তৈরি করে ফেলে, কখনো বর্জ্যের ঢিপিকে স্ক্রিনের নিচের দিকে রেখে ওপরে নেগেটিভ স্পেস রেখে দেন নির্মাতারা। নেগেটিভ স্পেসের চমৎকার পজিটিভ ব্যবহার। অজস্র প্যাটার্ন এবং প্যাটার্নের বাইরের অঞ্চলকে কার্যত শূন্য রেখে গোটা শিল্পাঞ্চলটিকেই একটা বড়সড় যন্ত্র হিসেবে প্রোজেক্ট করেন লিঞ্চ। সেই বিশালাকার যন্ত্রের একটা চলমান যন্ত্রাংশ হল হেনরি স্পেনসার এবং গল্পের সমস্ত চরিত্ররা এমনকী সমস্ত প্রপস। এখানেই আসল মজা শুরু।
আমার কাছে অন্তত ইরেজারহেড দুঃস্বপ্ন বা পিতৃত্বের ভয়ের ছবির থেকেও অনেক বেশি একটা মানুষের যন্ত্র হয়ে যাওয়ার ভয়ের ছবি। কেন বলছি এ কথা? তার জন্য পুনরায় ফিরে যেতে হবে “আ ম্যান ইন দ্য স্পেস” দৃশ্যে। যেখানে হেনরির মুখ থেকে কৃমিজাতীয় একটি প্রাণীকে একজন অসুস্থ বৃদ্ধ লিভার টেনে বার করে আনছেন। মনে রাখতে হবে, হেনরি স্পেনসার প্রিন্টিংয়ের চাকরি করত, ছেড়ে দেয়। সেই হেনরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে কৃমিজাতীয় পদার্থ, প্রিন্টারকে যেভাবে নির্দেশ দেওয়া হলে সে ছাপানো কাগজ বার করে দেয়। হেনরি কেন প্রিন্টিংয়ের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল তার কোনো সূত্র লিঞ্চ দেননি, কিন্তু এ দৃশ্য থেকে আমরা এই উপসংহারে আসতেই পারি যে হেনরির কাছে প্রিন্টিংয়ের চাকরি ছিল দুঃসহ এক অভিজ্ঞতা। অতএব, তার ভয় যত না বেশি পিতৃত্বের বা অন্য কিছুর, তার থেকে অনেক বেশি যন্ত্র হয়ে যাওয়ার, অন্তত আমার মতে। হেনরির সন্তান কোনো মনুষ্যসন্তান নয়, বরঞ্চ টিকটিকির মতো দেখতে একটা প্রাণী, যে সারাদিন তারস্বরে চিৎকার করতেই থাকে। তার চিৎকারে অতিষ্ঠ হয়ে হেনরির স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে যায়, শুধু শান্তিতে ঘুমোনোর জন্য। যাঁরা কারখানা বা তার আশেপাশে থাকেন, তাঁরা জানেন সারারাত যদি যন্ত্র চলে তাহলে ঘুমোনো কী দুষ্কর কাজ! সেখানে শিল্পাঞ্চলের মানুষের যে এই বিরক্তি আসবে এতে আর আশ্চর্য কী! বাচ্চাটি, অর্থাৎ হেনরির সন্তান এখানে নতুন যন্ত্রের প্রতিভূ? হেনরি স্বপ্নে পড়শি যুবতীর সাথে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে দেখে, তার মাথা কেটে গিয়ে গজিয়ে উঠছে সেই টিকটিকিরূপী প্রাণীটির মাথা। অর্থাৎ হেনরির সন্তান হেনরিকে গ্রাস করে নিচ্ছে। আমরা যদি ধরে নিতে পারি, হেনরির সন্তান যন্ত্রের প্রতীক, তাহলে হেনরির এই স্বপ্নদৃশ্য পুনরায় প্রমাণ করে হেনরির ভয় আসলে অন্য কিছু নয়, কারখানার এক যন্ত্র হয়ে ওঠার ভয়। শেষে যখন একটা মানুষের মাথা থেকে তৈরি হচ্ছে পেনসিল এবং ইরেজার, তখন ঘুম ভেঙে যায় হেনরি-র। দুঃস্বপ্নের জেরে বাকি রাত আর ঘুম আসে না। আবারও লিঞ্চ একটা সূত্র রেখে যান। মেরি অর্থাৎ হেনরির স্ত্রী-র বাবা, মা, দাদী (?)-র চলন, কথা বলা খুব যান্ত্রিক। দাদী তো নড়াচড়াও করতে পারেন না, তাঁর হাতে স্যালাডের গামলা ধরিয়ে হাত দুটোকে নাড়িয়ে নাড়িয়ে কাজ করাতে হয়। ফের লিঞ্চ মানুষকে যন্ত্র হিসেবে প্রোজেক্ট করে দিচ্ছেন। বাবা বলছেন, হাতটা কাজ করে না বলে কেটে ফেলে দেবেন। যেভাবে যন্ত্র-র কোনো অংশ খারাপ হলে তা ফেলে দিতে বা বদলাতে হয়।
ইরেজারহেড আসলে লিঞ্চের ফিলাডেলফিয়া শহরের ভয় থেকে সৃষ্ট। একটি জায়গাকে পরিচালক যখন এত সুচারুভাবে ব্যবহার করছেন, তখন তার পেছনে নিহিত কোনো উদ্দেশ্য থাকেই। আমি অন্য কোনো দৃষ্টিভঙ্গিকে ছোট করতে চাই না, কিন্তু কেবলমাত্র পিতৃত্বের ভয় বা দুঃস্বপ্নের ছবি বললে ইরেজারহেড খুব বেশি এক্সপ্লোর করা যায় না। লিঞ্চিয়ান স্টাইল যেভাবে শুরু হয়েছিল, একটা বৃহৎ জিনিসের ভেতরে ঢুকে একদম ক্লোজ আপে সেই জিনিসের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়কে ক্যামেরায় ধরা বা অজস্র মেটাফোরিক দৃশ্যের জাক্সট্যাপোজিশন; সেইটি যে শুধুমাত্র চরিত্রকেই ফোকাস করে, আমি এই ভাবনার বিরোধী। আমার মনে হয় আমরা যা ভাবি তার একদম উল্টো, অর্থাৎ কোনো চরিত্রকে ফোকাস করতে লিঞ্চ চূড়ান্ত ক্লোজ আপে যান না, পারিপার্শ্বিককে চরিত্রের সাথে একাত্ম করার জন্যই ক্লোজ আপে যান। হেনরির সন্তানের পেট গুলিয়ে উঠে আসা সাদা পদার্থের ক্লোজআপ কেবল হেনরির গা ঘিনঘিনকে ফোকাস করার জন্য নয়, বরং শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য, যন্ত্র হয়ে ওঠার ভয়, একটি মৃতপ্রায় শিল্পাঞ্চলের শেষযাত্রা এবং প্রায় ভেঙে যেতে বসা একটি সম্পর্ককে ফোকাস করা, ওই সাদা পদার্থে পুরোটা তুলে ধরা।
কাজেই লিঞ্চ যদি ডার্ক, ট্রাবলিং থিং বলতে আমাদের পারিপার্শ্বিক থেকে সৃষ্ট ভয় এবং দৈনন্দিন জীবনে ঘটতে থাকা ক্রমাগত আনসেটলিং জিনিসপত্র থেকে সৃষ্ট অরুচি, ঘৃণাকে বুঝিয়ে থাকেন, আমি অন্তত আশ্চর্য হব না। আমার কাছে তাই ইরেজারহেড মানুষ থেকে যন্ত্র হয়ে ওঠার ভয়ের ছবিই থেকে যাবে।
২৮ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:১৪
জুল ভার্ন বলেছেন: সেটাই, কতটা এডভান্স চিন্তা ভাবনা করে মুভিটা তৈরী করেছিলো যা আজও নতুন।
২| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২০
প্রামানিক বলেছেন: পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ
২৮ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২৬
জুল ভার্ন বলেছেন: পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
৩| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: মুভিটা দেখা হয় নি।
তবে দেখব। নামটা টুকে রাখলাম।
২৯ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:১০
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৪৯
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: এত আগে এরকম একটা মুভি তৈরি হয়েছে আশ্চর্য। পরিচালক যেটা বুঝাতে চেয়েছেন আজকের যুগে তো শিল্প আমাদের গিলে খাচ্ছে।