নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
Kumbalangi Nights
নামের একটা মালায়লাম সিনেমা দেখলাম। বিশাল ক্যানভাসের সিনেমা। পটভূমিকা কেরলের কোচি শহর। ছবির মত সুন্দর এই শহরটিতে রয়েছে ইকো ট্যুরিজম যার টানে অনেক পর্যটক আসেন। স্থানীয় এবং টুরিস্টদের নিয়েই ছবির কাহিনী। মালায়লাম ভাষায় নির্মিত হলেও ইংরেজি ও হিন্দি সাবটাইটেল আছে। তবুও অনেক চরিত্রের সমাবেশে সহজ বোধগম্য নয়।
গল্পটি চার ভাইয়ের হলেও আরও অনেক গুলো চরিত্রটির সমাবেশ ঘটেছে সংগত কারণেই। ঘটনাঃ অত্যন্ত নিম্নবিত্ত ছন্নছাড়া পরিবারের চার ছেলে। সাজি, ববি, বনি আর ফ্র্যাংকি। এরা জেলে পরিবার। বড়ো ভাইটি মধ্য তিরিশ। সব চাইতে ছোটোটি স্কুলে পড়ে। সে স্কলারশিপ পেয়ে একটি বোর্ডিং স্কুলে পড়ে। বড় ভাই সাজি এবং মেজ ভাই ববির কোনো স্থায়ী রোজগার নেই। যখন যেমন হয়, সেই ভাবে চলে তারা। সেজ ভাই বনি, মুক বধির, সে এক নাচ গানের দলের সাথে ঘোরে, ট্যুরিস্টদের টুকটাক মনোরঞ্জন করে দিন গুজরান হয়। ওদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ, দারিদ্রতা ছাড়া ওদের আর কোনো সামাজিক পরিচয় নেই।
সিনেমার শুরুতেই দেখা যায়- ছোট ভাই ফ্র্যাংকি স্কুল ছুটির খবরে খুব বিমর্ষ। স্কুল হোস্টেলে ফ্রি খাবার খাওয়ার সুযোগ ছেড়ে হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরতে তার অনীহা। তবুও নিয়মানুযায়ী বাড়ি ফিরতে হয়। দিন শেষে ভাইরা একে একে বাড়ি ফেরে। ওদের মা নেই, তবে ছবিতে মায়ের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আছে। সেদিন তাদের বাবার মৃত্যুদিন। কিন্তু ছোট ভাইটি ছাড়া কারুরই তা মনে নেই। ভাইদের মধ্যে ববি দেখতে সুদর্শন। কিছুটা ধনী পরিবারের মেয়ে বেবী মোলের সাথে পরিচয় হয় ববির। বেবী মোল আর ববি ঘনিষ্ঠ হতে থাকে।
বেবী মোল, তার দিদি, দিদির স্বামী শামি এবং মা, তাদের বাড়িতে hom-stay চালায়। যেখানে টুরিস্টরা এসে থাকে। ববি বেবী মোল এর ভালোবাসায় নিজের জীবনের মোড় ঘোরাতে চেষ্টা করে ববি। একদিন ববি প্রেমিকা বেবী মোলকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যায়। সিনেমা হলে প্রেমিকার বুকে হাত দিয়ে তার হাতে চড় খায়। তাতে তারও ম্যাস্কুলিনিটি টাল খায়, কিন্তু সে নিজের ভুল বুঝতে পারে। ববির নিজের উপার্জন না থাকা সত্বেও ভালোবাসার টানে তার চেয়ে বেশি শিক্ষিত এবং রোজগেরে মেয়ে বেবী মোলকে বিয়ে করতে তার ম্যাস্কুলিনিটি খাটো হয় না।
বেবী মোল, একটি আফ্রো আমেরিকান তরুণী ট্যুরিস্টকে নিজের বাড়ি আনে। তার দিকে কুনজর পরে নিজের বোন জামাই শামির... এই তরুণীটির সাথে মুক বধির বনির নিটোল বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শামির কামুক দৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে বনি এই তরুণীটিকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসে।
ভাঙাচোরা একটি বাড়ি যাতে একটা দরজা অবধি নেই, সেই খানে চার ভাইয়ের এতদিনের হল্লা, মারপিট, গালাগালির জীবনে একটা নতুন দিক উন্মোচিত হতে থাকে। চার ভাইয়ের দুইজন মা। প্রথম মা নিখোঁজ বা মৃত। দ্বিতীয় মায়ের প্রথম সন্তান ববি। জটিল সম্পর্ক। সামাজিক মর্যাদা, যেটার এতদিন কোনো প্রয়োজন ছিল না, হঠাৎ সেটার দরকার পড়ে। দ্বিতীয় মা, যে সংসার ছেড়ে চার্চে থাকে। তাকে তিন ভাই বাড়ি ফিরতে অনুরোধ করে। কিন্তু মা ফেরেন না। বাড়িতে দুটি মহিলা এবং একটি শিশুর উপস্থিতি আনন্দের পরিবেশ সৃষ্টি করে। এতদিন যারা শুধু কোনমতে দিন কাটাতে অভ্যস্ত ছিল, তাদের জীবনে আসতে থাকে মধুর পরিবর্তনের হাওয়া। শুধু ববি আর বেবী মোল এর বিয়ে আটকে থাকে ওই জটিল মনের ভগ্নীপতি শামীর জন্য।
শামির মোটেই পছন্দ ছিল না যে তার শ্যালিকা বেবী মোল চালচুলোহীন ববিকে বিয়ে করুক। কিন্তু বেবী মোল নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। তারা পালিয়ে যাবার প্ল্যান টের পেয়ে শামির জটিল মানসিক দিক প্রকাশ পায়। সে দুই বোন আর শাশুড়ির ওপর শারীরিক অত্যাচার করে একটা রুমে বেঁধে রাখে। অনেক বার ফোন করা সত্বেও যখন বেবী মোল ফোন ধরে না, তখন চার ভাই ওদের বাড়ি যায় এবং একটা বন্ধ রুমে আবিষ্কার করে। রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির মধ্যে চার ভাই শামিকে কবজা করে এবং বেবী মোল, তার মা ও দিদি বেঁচে যায়।
শেষ দৃশ্যে চার ভাইয়ের দরজা বিহীন বাড়ি সেজে ওঠে আলোকসজ্জায়। নৌকো করে আসা নিমন্ত্রিত অতিথিরা ববি আর বেবি মোলেত বিয়ের উৎসবে মেতে ওঠে।
প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে এত সুন্দর কবিতার মত সিনেমা বানানো সহজ নয়। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, সামাজিক বৈষম্য সবই এসেছে কিন্তু উচ্চকিত ভাবে নয়। এতে এই স্তরের মানুষকে মানুষই দেখানো হয়েছে, তার দোষ গুণ সমেত। তারা এক অসহনীয় পরিস্থিতিতে ঝগড়া করে, কিন্তু এক উন্নত জীবনের দিকে এগিয়ে যায়। তিনজন মহিলা, সমাজের বিভিন্ন স্তরের, তাদের সান্নিধ্য তাদের ভিতরের ভালো মানুষটিকে বাইরে আনে।
সিনেমাটি আলাদা করে কোনো সামাজিক পরিবর্তনের মেসেজ যেমন দেয় না, তেমনই সামাজিক সমস্যা গুলোকে উপেক্ষাও করে না। প্রতিটি চরিত্র নির্দেশকের যথাযথ মনোযোগ পায়। কোনো চরিত্র আলাদা করে অসাধারণ হয়ে ওঠে না। পরিচালকের সংবেদনশীল নির্দেশনা কোচির সৌন্দর্যের ব্যাকড্রপে অতি সাধারণ মানুষজনের হাসি কান্না, প্রেম ঘৃণা, মানসিক জটিলতা, পারস্পরিক নির্ভরতার এক অপূর্ব কোলাজ তৈরি করে।।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩৮
জুল ভার্ন বলেছেন: আপনার বক্তব্যের সাথে একমত। ছোট্ট একটা ঘটনা নিয়ে ভিন্ন স্বাদের এক অসাধারন সুন্দর ছবি।
ধন্যবাদ।
২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:১৬
আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: আসলে আজকাল সিনেমাট দেখা হয় না পরিবেশ টা কেমন জানি হয়েছে দাদা তারপরও মন চায় সিনেমা দেখি
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:২৫
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি স্রেফ সময় পার করার জন্য করছি!
৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: মুভি টা কয়েকদিন আগে দেখেছি।
খুঁজে বের করেছি হিন্দি ডাব। ভালো মুভি। সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি গুলো দুর্দান্ত হয়। বিশেষ করে মালায়লাম মুভি গুলো। ওদের কাহিনী সম্পূর্ন আলাদা।
কোচি শহর টা অনেক সুন্দর। অনেক। আপনি কি ''কারওয়ান'' মুভিটা দেখেছেন? সেখানে কোচি শহর বেশ ভালো দেখানো হয়েছে।
১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৩৭
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি কারওয়ান ছবিটি দেখিনি। মুভিটা সম্পর্কে আরও একটু তথ্য(পরিচালক কে) দিলে নেটফ্লিক্সে দেখতে চেষ্টা করবো।
৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৫৬
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ছবিটি দেখিনি। আপনার লেখা চমৎকার হয়েছে।
১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৩৭
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৫| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১৪
আমি তুমি আমরা বলেছেন: রিভিউ ভাল হয়েছে।
১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:২০
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৬| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১৬
রংবাজপোলা বলেছেন: জব্বর লেখছেন। দারুন। এক নিঃশ্বাসে পড়লাম। বইটা দেহার ইচ্ছে রইলো।
সামনের্আরো লিয়েক্ষেন
কদমবুসি লইয়েন।
১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৫৮
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩০
কল্পলোকের রাজপুত্র বলেছেন: অসাধারণ একটি সিনেমা । মন্ত্রমুগ্ধের মত কখন যে সময় শেষ হয়ে মুভিটা শেষ হয়ে গেল একদমই বুঝতে পারিনি । বিশেষ করে প্রকৃতি এবং জীবন যেন এক সূরে বেধে ছিল । ফাহাদ ফাঁসিলের সাইকো চরিত্রের চিত্রায়ন ছিল চোখে লেগে থাকার মত ।