নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ \n\nএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আগুন রংয়ের সেই মেয়েটি........

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৩

আগুন রংয়ের সেই মেয়েটি........

এইচএসসি পরিক্ষা শেষে বাড়ি এসেছি- হাতে অফুরন্ত সময়। বরিশাল গিয়েছিলাম ঠিক বেড়াতে নয়, নতুন প্রেমের হাতছানির নামে পুরনো প্রেমের জাবর কাটতে গিয়েছিলাম। সে অনেক কথা- ক্লাস ওয়ানে পড়ার সময় এই বাড়িতে বেড়াতে এসে, ক্লাস ফাইভের মৃদুলা বিশ্বাস নামের এক মেয়ের প্রেমে পড়ে স্থির করেছিলাম, বড়ো হয়ে ওকেই বিয়ে করব। যথারীতি বুবুকে জানিয়েও দিই বীরের মত। ফুফাতো ভাই বোনদেরও জানিয়ে দেই...বড়ো হয়ে আমি মৃদুলাকে বিয়ে করবো। মৃদুলাদের বাড়ি আর আমার বড়ো ফুফুর পাশাপাশি বাড়ি। মৃদুলা কীর্তি স্পোর্টস গার্লস...মিশনারী স্কুলে ছোটদের বিভাগে ইনডোর, আউটডোর ওপেন কম্পিটিশনে অনেকগুলো মেডাল জিতেছে। প্রতিদিন ফুফুদের বাড়িতে ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস খেলতে আসে....

তারপর, এর পরিণতি সংক্ষেপে বলি- দুইদিন পর মৃদুলা ওর বান্ধবীদের সাথে করে আমাকে ওদের বাড়ির ছাদে ডেকে নিয়ে আমার হাপপ্যান্ট এক হ্যাচকা টানে খুলে একটা ব্লেড দেখিয়ে পচা কথা বলেছিল....পুরাই মাস্তান মেয়ে!

বছর দশ এগারো পর ঘটনাচক্রে সেই মৃদুলার ছোটবোন রোদেলা বিশ্বাসের সাথে ঢাকায় পরিচয় এবং হৃদ্যতা...ওরা খৃষ্টধর্মাবলম্বী....বড়ো দিন উপলক্ষে তাদের বাড়িতে যাওয়ার আমন্ত্রণ।

হ্যা গিয়েছিলাম, কিন্তু প্রেম? না, তা আর হল না রোদেলার সাথে। কারণ, আমি গিয়েছিলাম সেই মৃদুলাকে দেখতে -যে আমাকে ব্লেড দেখিয়ে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো....যা আমি কাউকে বলিনি, শুধু বুবুকে বলেছিলাম -'বড়ো হয়ে কোনো দিনও মৃদুলাকে বিয়ে করবো না'।

বরিশাল আমার দাদা বাড়ি।
পাশাপাশি দুই ফুফু আর এক চাচার বাড়িতে আদর আপ্যায়নে কয়েকটা দিন কেটে যায়। ফেরার আগের দিন বড়ো ফুফু এসে বললেন, 'রানুও কাল ঢাকা ফিরে যাবে, সাথে শিখাও যাবে। তোমরা এক সঙ্গে যাবে- শিখাকে লালমাটিয়ায় ওর মামার বাসায় পৌঁছে দিও(রানু আপা আমাদের বৃহত্তর পরিবারের সব চাইতে বড়ো আপা- তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে ফাইনালের ছাত্রী, শিখাদের পরিবার বড়ো ফুফুদের বাড়িতে ভাড়া থাকে)।

বিকেলে যখন শিখাকে দেখি, আমার চোখের পলক আর পড়ে না! হিন্দি সিনেমার নায়িকাদের চেয়েও সুন্দরী, ষোড়শী, তন্বী। শিখাকে দেখে পুরাই ভচকে যাই! শিখা নাম না হয়ে অগ্নিশিখা হলেই সঠিক হতো! সেই অগ্নিশিখায় আমি জ্বলে পুড়ে যাচ্ছি....
শিখা, ....একে নিয়ে যেখানে খুশি পালানো যায়! মনে মনে বললাম, 'হিমু, এই মেয়েই তোমার ভবিষ্যত। একে নিয়ে পালাও...জনাঅরণ্য থেকে গোবি মরুভূমি পার হয়ে সাহারা মরুভূমি, আমাজনের গভীর অরণ্যে কিম্বা এন্টার্কটিকা গ্রীন ল্যান্ড কিম্বা সোনালী ডানার চিল হয়ে নীল আকাশে -যেখানে খুশী চলে যাও....'!

কার্যত এর কিছুই হয়নি।
দায়িত্ব যখন কাঁধে চাপে, তখন অন্য কোনোদিকে তাকাবার বা ভাববার সময় থাকে না। এখানেও তাই হল। বাসে করে সকাল সাতটায় রওনা দিলাম আমরা। জানালার পাশে শিখা, মাঝে রানু আপা তারপর আমি.... বাস চলছে উল্কা গতিতে....বাসের খোলা জানালার দিয়ে হুহু করে বাতাস আসছে। বাতাসে শিখার কপালের উপর ঝুলে থাকা চুলগুলো ওর মুখে উপর পরছে...আমার ইচ্ছে করে -শিখার চুলগুলো আমি ঠিক করে দেই...জানালা গলিয়ে শিখার মুখের উপর রোদ চুমু খাচ্ছে...রোদের উপর আমার রাগ হত...ইচ্ছে করে আমার শার্ট খুলে জানালার কাচ ঢেকে দেই-যেনো শিখার মুখে রোদ না লাগে....আমার কিছুই করা হয়না, মনের ইচ্ছাগুলো মনেই গুমরে মরে!

তবুও আমার ভালো লাগে- শিখার সাথে আমি পথ চলছি....মনেমনে বলি-'বাস, তুই নষ্ট হয়ে যা, চাকা পাংচার হয়ে যাক....নাইবা হলো পাশাপাশি তবুও শিখা আমার কাছাকাছি আরও বেশী সময় থাকুক....'।

আমি যা চাই তা কখনও হয়না বরং উল্টোই হয়! মনে হলো, আজ স্বাভাবিক গতির চেয়ে অনেক দ্রুত গতিতে বাস শিকারপুর-দোয়ারিকা ফেরী পার হয়ে বরিশালের সীমানা পেরিয়ে টেকেরহাট ফেরী পার হয়ে মাদারীপুর - ফরিদপুর- রাজবাড়ী - দৌলতদিয়া ফেরীঘাটে পৌঁছেছে! ফেরীতেই শিখার সাথে টুকটাক কথা বলার সুযোগ হয়...রানু আপা চিনাবাদাম কিনে আমার হাতে দেন...আমি বাদামের খোসা ছাড়িয়ে রানু আপার চোখ এড়িয়ে শিখার হাতে দেই...ছোট্ট মুরগির বাচ্চার মতো শিখা বাদাম খাচ্ছে....আর হেসে হেসে কথা বলে.... শিখা এসএসসি পাস করে ঢাকা লালমাটিয়া কলেজে ভর্তির অপেক্ষায়...

গাবতলী থেকে আমাকে নেওয়ার জন্য বাসা থেকে গাড়ি এসেছিলো। বাস স্টান্ড থেকে রানু আপাকে তাদের পল্লবীর বাসায় নামিয়ে আমি শিখাকে নিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ লালমাটিয়া যাচ্ছি...এতক্ষণ আপা আর শিখা পেছনের সীটে, আমি সামনে সেকেন্ড সীটে বসেছিলাম.... আপা নেমে যাওয়ার পরেও আমি সামনের সীট ছেড়ে পিছনে শিখার পাশে বসার ইচ্ছাকে কাজে লাগাতে পারছিনা.... শিখা দুই বার বলেছে-"হিমু ভাই পেছনে আসুন...."। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল আমি সামনের সীট থেকে উঠতে পারছিনা... শতবর্ষী বটবৃক্ষের শিকড় আমাকে আটকে রেখেছে!

সারাটা পথ রানু আপার ভয়ে কিম্বা লজ্জায় শিখার সাথে তেমন কথা বলতে না পারলেও কথা বলেছি মনেমনে... চোখে চোখেও...শিখার চোখে আমি প্রশ্রয়ের আশ্রয় দেখেছিলাম....কিন্তু এখন শিখাকে একা পেয়েও ওর পাশে বসতে পারছিনা, কথা বলার সুযোগ পেয়েও কিছু বলতে পারছিনা! যেটুকু কথা তা শিখাই বলছে...'হিমু ভাই, আপনার রেজাল্ট কবে বেরুবে, আপনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন? সেনা অফিসার আমার খুব পছন্দ ...আপনার কোনো মেয়ে বন্ধু আছে?- ইত্যাদি। আমি শুধু জিজ্ঞেস করি, "তোমাদের বাসায় ফোন আছে?"
'ফোন নাই'- শুনে আমার ভাবনায় প্রথম বিচ্ছেদ অনুভব করি! আমার হতাশা শিখা বুঝতে পেরে বলে, "আপনি বাসায় চলে আসবেন, মামার সাথে পরিচয় হবে, মামীও খুব ভালো... "। ওর দিকে আমি সরাসরি তাকাতে পারছিনা...গাড়ির রেয়ার মিররে আড়চোখে দেখছি...শিখা নামের এক অগ্নিশিখাকে!

'ডানে, বামে, সামনের গলি, ওই যে পানির ট্যাংকের কাছে, ঐ যে মাঠের দক্ষিণে হলুদ রংয়ের তিনতলা বাড়িটার দোতলায় আমরা থাকি...'- শিখার ডিরেকশন মতো সন্ধ্যার পর ওর মামার বাসায় পৌঁছি। ওর ব্যাগটা তুলতে গিয়ে হয়তো দুজনের ইচ্ছেতেই শিখার আংগুলের স্পর্শ পেয়েছিলাম...

ওদের বাড়িতে চা বিস্কুট খেয়ে দোতলার সিড়ি ভেংগে চলে আসার সময় শিখা বাড়ির নিচ পেরিয়ে গেট পর্যন্ত চলে আসে। তখন শিখা আমার চোখে চোখ রেখে বলল, "এমন কাপুরুষ জন্মে দেখিনি! আপনি না ক্যাডেট কলেজের ছাত্র? আপনি না আর্মি অফিসার হবেন?? সাহস থাকলে বলেন, ভালোবাসি"- বলে, দ্রুত চলে গেল ঘরের ভেতরে।
চীৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, " শিখা তোমাকে আমি ভালোবাসি... "- কিন্তু আমার বলা হয় না কিছুই....!

শিখার সাথে আর কি কি কথা হয়েছিল, ফেরীতে চিনাবাদাম খেতে খেতে কি কথা হয়েছিল সব ভুলে গেছি। কিন্তু ওর চোখের সেই আগুন.... এখনো ভুলিনি।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:০৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: মৃদুলার যত রাগ প্যান্টের চেইনের পিছনে কেন!!!

মেয়েদের মানসিক পরিপক্বতা ছেলেদের চেয়ে আগে হয়। শিখা নামটা মেয়েটার ব্যক্তিত্বের সাথে মিলে গেছে।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:১০

জুল ভার্ন বলেছেন: হ্যা মেয়েদের ম্যাচুরিটি ছেলেদের থেকে অনেক আগেই আসে।

২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:২৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন?

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:১০

জুল ভার্ন বলেছেন: না।

৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:০২

জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: মেয়েটি আপনার কাছে ভালবাসার কথা শুনতে চেয়েছিল।ভাইগ্য... ভাইগ্য...এরে কয় ভাইগ্য।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:১১

জুল ভার্ন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৪| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৫০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ব্যর্থ প্রেম না, আপনার সফল প্রেমের কাহিনী শুনতে চাই।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪০

জুল ভার্ন বলেছেন: সেখানেও আছে-জেল জুলুম......স্বৈরশাসকের অন্যতম সহযোগীর বোন বিয়ে করলে যায় হয়!

৫| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:০৯

তানীম আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: জীবনটা অনেক সুন্দর । এখানে চোখে চোখ রেখে ভালবাসা অনুভব করা যায় ।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪১

জুল ভার্ন বলেছেন: সেটা কদাচিত!

৬| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: ১। রানু আপা চরিত্রটা সুন্দর হয়েছে।
২। বরিশাল আমার শ্বশুর বাড়ি।
৩। বরিশাল শহরটা বেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪২

জুল ভার্ন বলেছেন: বরিশাল আমার স্বপ্নের শহর।
শশুর বাড়ি বরিশাল শহরের কোন এলাকায়?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.