নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
শীত পড়লে পরিযায়ী পাখিদের মতো তখন কাশ্মীরি শালওয়ালারা আসত। পিঠে বড় গাঁঠরি। তাতে থাকত অপূর্ব নকশা করা অনেকগুলো শাল। নানা দামের। নানা রংয়ের।
তখন সব শালওয়ালারই কিছু বাধা খরিদ্দার থাকত। প্রতি বছর ঢাকা কিংবা তার আশপাশে এসে সেই মানুষজনেরা প্রথম ঢুঁ মারত সেই সব বাড়িতে। আমরাও অপেক্ষা করতাম। কখন শীত আসবে। আসবেন সেই শালওয়ালা ভদ্রলোক। লম্বা। ছিপছিপে চেহারা। ফরসা। নাক-চোখ কাটা-কাটা। কাঁচাপাকা গোঁফ। উর্দু বাংলা মিশিয়ে কথা বলেন। আমাদের বাড়িতে যে ভদ্রলোক আসতেন তাঁর চেহারা ছিল অমনই।
আমাদের বৃহত্তর যৌথ পরিবারের তখন অনেক শালই কেনা হত তাঁর কাছ থেকে। কখনও দামি, কখনও অল্প দামি। আবার কিছু কেনা হোক বা না-হোক মানুষটা আসতেনই। বছরের পর-বছর আসার ফলে কীভাবে যেন এক আত্মীয়তা তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
ভদ্রলোক এলে বাড়িতে হালকা হইচই শুরু হত। গাঁঠরি রেখে তিনি বসতেন আমাদের বারান্দায়। পানি খেতে দিতেন। চা, ডিমের ওমলেট দিতেন। ভদ্রলোকও খোঁজখবর নিতেন আমাদের। আমরা নিতাম তাঁর পরিবারের খোঁজ। চাষবাস কেমন হয়েছে, কিভাবে উল সংগ্রহ করে সুতা তৈরি করে, শাল কার্পেট বানায়। আগের বার বলেছিলেন মায়ের শরীর ভাল নেই। মা এখন কেমন আছেন- ইত্যাদি!
প্রতি বছরই গল্পের ফাঁকে সেই ভদ্রলোক নিজের জোব্বার পকেট থেকে আমার জন্য বের করতে আনতেন এক মুঠো আখরোট। খোবানি। পেস্তা। তখন তো ওগুলো এত সহজে পাওয়া যেত না। দামও ছিল প্রচুর।
কুশল বিনিময়ের পর ভদ্রলোক গাঁঠরি খুলে বসতেন। দেখাতেন নতুন-নতুন শাল। সব চাইতে দামী শালের নাম ছিলো কাশ্মীরি তুষ। কখনও কার্পেট। শোনাতেন নানা গল্প। আমরা দেখতাম। কখনো কখনো কেনা হত না। বছর-বছর কি আর শাল লাগে? তবু তিনি আসতেন। দেখাতেন। গল্পগুজব করতেন।
তারপর শীত চলে গেলে পরিযায়ী পাখিদের মতো তিনিও ফিরে যেতেন কাশ্মীর। পরিবারের কাছে।
সেই আসা-যাওয়ার পিছনে বাণিজ্য কি ছিল না? নিশ্চয়ই ছিল। বহুবার এমনও হয়েছে, শাল কেনা শেষ। তবু মানুষটা খোসগল্প করে চলেছেন চাচা চাচীর সঙ্গে। বলছেন নিজের মেয়ের কথা। গ্রামের কথা।
এর পর এক সময় সেই শালওয়ালার আসা বন্ধ হল। কেন জানা হয়নি কারওই। হঠাৎ এক বছর থেকে তিনি আর আসতেন না। তখন তো অত ঠিকানা নেওয়ার চল ছিল না। ফোন-টোনেরও ব্যাপার ছিল না। আর আমরা যেন ধরেই নিয়েছিলাম মানুষটা বছরের পর-বছর আসবেনই। কিন্তু তা হল না। এক বছর শীতের কুয়াশায় তিনি যে সেই মিলিয়ে গেলেন, তারপর আর কখনও তাঁকে আমরা দেখিনি।
এখন শীত এলে ছোটবেলার খেজুর রসের মতো মনে পড়ে সেই মানুষটাকে। মুখে হাসি। আমাকে দেখলে জড়িয়ে ধরতেন। তারপর পকেট থেকে এক মুঠো আখরোট বের করে হাতে ধরিয়ে দিতেন। উর্দুতে বলতেন, "তুমি খুব লম্বা হইয়ে গিয়েছ।"
বয়স বাড়ার পর এখন আরও বেশি করে বুঝতে পারি, ভালবাসার চেয়ে বড় আর কিছু হয় না। মানুষের সঙ্গে মানুষের যে সম্পর্ক তার মূলে তো ওই ভালবাসাই। তাই পড়ে পাওয়া চোদ্দা আনার মতো এই সব ভালবাসা জুড়ে-জুড়ে এগিয়ে চলে আমাদের জীবন। যে জীবন দোয়েলের। ফড়িংয়ের। মনে হয় জীবনে এর চেয়ে বেশি আর কিছু পাওয়ার নেই। পাওয়ার থাকে না।
০২ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:২৬
জুল ভার্ন বলেছেন: হ্যা ইরানীরাও আসতো বিভিন্ন মশলাপাতি আর সুগন্ধি বিক্রি করতে।
২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:১৮
আখেনাটেন বলেছেন: আমরা ছোটোকালে ভারতীয় নানারকম ব্যবসায়ীর নানা জিনিস ফেরি করা দেখতাম। নানান তৈজসপত্র, শাল-শাড়ি, ফলমূল, খাবার-দাবার ইত্যাদি...সীমান্তবর্তী গ্রাম কিনা। বিশ-পঁচিশ আগেও দেখেছি। এরপর কাঁটাতারের দেয়াল। এখন আসে গোপনে ফেনসিডিলসহ নানান ড্রাগ, গরু আর পাচার হয় কাসা-পিতলসহ মূল্যবান জিনিস..
ভালো লাগল লেখা।
০২ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:৩০
জুল ভার্ন বলেছেন: আমার ছেলে বেলায় দেখতাম- কাশ্মীর থেকে আসতো শালওয়ালা, ইরান-আফগানিস্তান থেকে আসতো কাবুলিওয়ালারা মশলাপাতি আর সুগন্ধি বিক্রি করতে। তবে স্বাধীনতার পর আমাদের দেশীয় এক শ্রেণীর মানুষ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতো।
৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:২৪
জ্যাকেল বলেছেন: সেই দিন আর আসবেনা। আমিও কাবুলিওলাদের মিস করি, অনেক ছোট ছিলাম তবে হালকা/পাতলা মনে পড়েও তাদের কথা। নস্টালজিয়া পোস্ট ভাইসাহেব।
০২ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:৩০
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২০
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: শালওয়ালারা ওপারে না গেলেও আমাদের এখানে এখনও নিয়মিত আসে প্রতি শীতের শুরুতে। সারাবছর বাকিতে শীতবস্ত্র বিক্রি করে ডিসেম্বর জানুয়ারি থেকে টাকা আদায় করতে থাকে। ফেব্রুয়ারীর শেষে অথবা মার্চের শুরুতে ওরা কাশ্মীরে ফিরে যায়।
ওদের জন্য খুব মায়া লাগে। যেভাবে ওরা বছরের মাত্র ক'দিন ব্যবসা করে সারা বছরের খরচ জোগাড় করতে চেষ্টা করে।যাদের পেশা মূলত পর্যটন।আর সেটা নির্ভর করে ভারতের অন্য রাজ্যের অধিবাসীদের সে রাজ্যে ঘুরতে যাবার উপর।অথচ ওরা নিজেদেরকে পৃথক দেশ গড়তে চাইলে ওদের জীবন জীবিকা নির্বাহের পথ যে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা বলাবাহুল্য।
অন্যদিকে ওরা যে ভাবে বছরের পর বছর নির্যাতিত তা যে কোনো বর্বরতাকে হার মানায়। গোটা কাশ্মীর উপত্যকায় টিন এজার ছেলেদের উপর অলিখিত নির্মমতা মাঝে মাঝে কিছু এক্সক্লুসিভ নিউজের দ্বারা সেনাবাহিনীর মুখ পুড়িয়েছে। কাশ্মীর উপত্যকায় অশান্তি হলে সমতলে ব্যবসা করতে আসা শাল ওয়ালাদের জীবনেও এক অবজ্ঞা ঘৃণা মাঝে মাঝে শিরোনামে চলে আসে।
সবমিলিয়ে ভুস্বর্গ এখন মোটেও ভালো নেই।
ছোটবেলায় কাবুলিওয়ালাদের দেখেছি।আর দেখেছি পাজ্ঞাবী/ শিখ ড্রাইভারদের। ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর সেই যে শিখ ড্রাইভাররা আত্মগোপন করেছিল তারপর আর ওদের দেখতে পাওয়া যায় না। ঠিক একইভাবে কাবুলিওয়ালাদেরো এখন মফস্বলে দেখা যায় না। তবে ধর্মতলায় এখন ওদের দেখতে পাওয়া যায়। সুদূর আফগানিস্তান থেকে সুদের কারবার করতে আসা আফগানদের বর্তমানে পররাষ্ট্র বিষয়ক বিধিনিষেধের ফলেই বোধহয় তাদের আগমন বর্তমানে লুপ্ত হয়ে গেছে।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৫১
জুল ভার্ন বলেছেন: আপনার মন্তব্যে কাশ্মীরের বর্তমান নির্মম নিষ্ঠুর বর্বর দুঃশাসনের খণ্ডচিত্র তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ। সেইসংগে কাশ্মীরিদের পেশাগত ব্যাপারে কিছু তথ্য শেয়ার করায় ভালো লেগেছে। "ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর সেই যে শিখ ড্রাইভাররা আত্মগোপন করেছিল"- সেইভাবে আমাদের দেশে বিএনপি জামাত সমর্থক অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কষ্টেসিষ্টে বেঁচে আছে। আপনার জন্য শুভ কামনা।
৫| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:২৫
সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: ভালোবাসার চেয়ে বড় কিছু হয় না। শেষ প্যারায় সব বলে ফেললেন। কি গভীর উপলব্ধি। পোস্টে প্লাস।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৫২
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য।
৬| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:০৭
জটিল ভাই বলেছেন:
সুন্দর স্মৃতিচারণা যেনো রবীন্দ্রনাথের কাবুলিওয়ালা
০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৫২
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার।
৭| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: শাল গায়ে দিতে আমার ভালো লাগে না। একটু পর পর খুলে যায়। আবার গায়ে চাপাতে হয়।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৫৫
জুল ভার্ন বলেছেন: আমিও শাল ব্যবহার করিনা। আর বর্তমান প্রজন্মের কাউকে শাল ব্যবহার করতে দেখা যায়না। সবাই সোয়েটার, জ্যাকেট ব্লেজারে অভ্যস্থ।
৮| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৪৫
মনিরা সুলতানা বলেছেন: বয়স বাড়ার পর এখন আরও বেশি করে বুঝতে পারি, ভালবাসার চেয়ে বড় আর কিছু হয় না। মানুষের সঙ্গে মানুষের যে সম্পর্ক তার মূলে তো ওই ভালবাসাই। তাই পড়ে পাওয়া চোদ্দা আনার মতো এই সব ভালবাসা জুড়ে-জুড়ে এগিয়ে চলে আমাদের জীবন। যে জীবন দোয়েলের। ফড়িংয়ের। মনে হয় জীবনে এর চেয়ে বেশি আর কিছু পাওয়ার নেই। পাওয়ার থাকে না।
কী চমৎকার স্মৃতি ভাইয়া !
০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:১১
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ বোন।
৯| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:০২
রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: আমিও শাল ব্যবহার করিনা। আর বর্তমান প্রজন্মের কাউকে শাল ব্যবহার করতে দেখা যায়না। সবাই সোয়েটার, জ্যাকেট ব্লেজারে অভ্যস্থ।
বাংলা সিনেমায় দেখা যায় জমিদার টাইপের লোকজন শাল ব্যবহার করে। তাদের হাতে থাকে লাঠি।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:১২
জুল ভার্ন বলেছেন: "সিনামার হাতী আকাশে উড়ে"
১০| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:২৪
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
শাল, মানুষ, সম্পর্কের এক সুন্দর স্মৃতির বুনন।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৭
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
১১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১৮
ঢুকিচেপা বলেছেন: আপনার সাথে শালওয়ালার সম্পর্ক মনে করে দিল পাঠ্য বইয়ে পড়া কাবুলিওয়ালারা গল্প। সেসময় ঐ গল্প পড়ে যেমন আবেগী হয়েছিলাম আপনারটা পড়েও তাই।
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:১২
জুল ভার্ন বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:০৯
সোবুজ বলেছেন: বাংলাদেশ হবার পর আর দেখি নাই কাবলেিরা এমনকি ইরানিদের আসতে দেদেছি। তারা আসতো পরিবার সহ।