নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
ফুলের নাম রডোডেনড্রন।
রডোডেনড্রনের রয়েছে শতাধিক প্রজাতি। প্রচণ্ড রোদে রডোডেনড্রনে রংধনুর রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। সে এক অসাধারণ সুন্দর দৃশ্য!
প্রকৃতির মাঝে দোলায়িত শত-সহস্র ফুলের মধ্যে খুব কম ফুলের ভাগ্যে কালজয়ী সাহিত্যে স্থান পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। রডোডেনড্রনের রয়েছে তেমনই সৌভাগ্য।
বাংলা সাহিত্য ছাড়িয়ে এই ফুল জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বসাহিত্যের আসরেও। সাহিত্যের বিশ্বসভায় সমাদরের দিক থেকে তুলনা করলে একমাত্র গোলাপকেই পাওয়া যায় রডোডেনড্রনের প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বি হিসাবে। অনেক পেছনে থাকে চেরি, লিলি এবং আমাদের জবা, জুঁই, মালতী, বকুল, পলাশ, শিমূল, রজনীগন্ধা।
প্রসঙ্গত বলা ভালো, গোলাপের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক নিবিড় সাহিত্যিক বিষণ্নতা। জার্মান কবি মারিয়া রিলকে প্রেমিকার কাছ থেকে পাওয়া উপহার স্বরূপ গোলাপ স্তবক গ্রহণ করতে গিয়ে আবেগ ও উত্তেজনার আতিশয্যে কাঁটায় বিদ্ধ হন। যে আঘাতের ক্ষতটিই তার মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। ‘রিলকের গোলাপ’ তাই বিশ্বসাহিত্যে এক ট্র্যাজিক ব্যাঞ্জনা পেয়েছে।
রডোডেনড্রনের প্রসঙ্গ শুরু করা যেতে পারে রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে। তাঁর ‘শেষের কবিতা’র মতো বিখ্যাত লেখা সম্পর্কে কে না জানে! রবীন্দ্রনাথ ‘শেষের কবিতা’য় বাংলাভাষী পাঠকের মনে রডডেনড্রনকে অমরত্ব দিয়েছেন! একটি অতি রোমান্টিক ও নাটকীয় আবহে প্রেমের ফুল হয়ে এসেছে রডোডেনড্রন।
‘শেষের কবিতা’-এর কাহিনীতে আছে: শিলং পাহাড়ে সন্ধাবেলায় গাড়ি নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছে অমিত রায়, পাহাড়ি পথে আচমকা তার গাড়ি ধাক্কা দিল আর একটি গাড়িকে। গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল একটি মেয়ে। সে দিন লাবণ্যকে তার বাড়ি নামিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরে কবিতার খাতা খুলতেই বেরিয়ে এসেছিল নিবারণ চক্রবর্তী তথা অমিত রায়ের উচ্ছ্বাস, ‘...অরুণ মেঘেরে তুচ্ছ,/ উদ্ধত যত শাখার শিখরে/ রডোডেনড্রনগুচ্ছ।’ প্রেমকে নতুন প্রেমিক পেয়েছিলেন রডোডেনড্রনের আবহে।
রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগের ধীমান লেখক বুদ্ধদেব বসুও পরে এই ‘রডোডেনড্রনগুচ্ছ’ নামেই লিখেছিলেন এক আস্ত উপন্যাস। শুধু বাংলা নয়, কালজয়ী ইংরেজি সাহিত্যেও প্রেমের এক অমোঘ দৃশ্যে রডোডেনড্রনের উপস্থিতি উজ্জ্বলতর হয়ে রয়েছে। জেমস জয়েস-এর ‘ইউলিসিস’-এ ডাবলিন উপসাগরের ধারে এক এলাকায় ঝরে-পড়া রডোডেনড্রনের মাঝে লিওপোল্ড ব্লুম বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে নায়িকা মলি ব্লুমকে। প্রণয় নিবেদনের চমৎকার প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছিল রডোডেনড্রনের সান্নিধ্যে। সংলাপেও সে কথা উল্লেখ করতে ভোলেননি ঔপন্যাসিক, যা পরবর্তী কালে স্মৃতি হাতড়েছে নায়িকা মলি: '...the day we were lying among the rhododendrons on howth head in the grey tweed suit and his straw hat I got him to propose to me'.
অনেকেই স্কুল জীবন পেরিয়ে কলেজের চৌকাঠে এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ বইটি পড়েন। হয়ত বয়সের চপল-চঞ্চল স্বভাবের কারণে সে বয়সে সেভাবে বুঝতে পারেন না উপন্যাসটির মূলভাব। তবে অনেককেই জানি, ‘শেষের কবিতা’ পড়ার পর ভীষণ আচ্ছন্ন হয়ে যান। এমনও হয়েছে যে, মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছেন অমিত রায় নামের চরিত্রটিকে। তার কথা বলার ঢং, কাব্য গাঁথুনি, কবিতা পাঠ, তার প্রগলভতা সবকিছুই ছিল বিশ্বায়নের প্রযুক্তি-পূর্ববর্তী পটভূমিতে ৬০ কিংবা ৭০ অথবা ৮০ দশকের একজন বাঙালি মেয়েকে প্রেমে আকৃষ্ট করার জন্য পরিশীলিত পন্থা।
রডোডেনড্রনের উল্লেখ আর আধুনিক উপস্থাপনার কথাও তরুণ-যুবকেরা শিখেছে ‘শেষের কবিতা’ থেকেই: “পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি/আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থী।”
আবার এমন অনেককেই নিজের অভিজ্ঞতায় চিনি বা জানি, অমিত-লাবণ্যের প্রেমময় অমর কবিতাখানি তাদেরকে এতটাই মুগ্ধ করে ফেলেছিল যে, বইটি পড়ার পাশাপাশি কবিতাটি পুরো মুখস্থ করেছিলেন। আমিও মুখস্থ করেছিলাম এবং সুযোগ পেলেই ক্যাম্পাস জীবনে বন্ধুমহলে আবৃত্তি করে চমকে দিতাম সবাইকে:
“পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি,
আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থী।
রঙিন নিমেষ ধুলার দুলাল
পরানে ছড়ায় আবীর গুলাল,
ওড়না ওড়ায় বর্ষার মেঘে
দিগঙ্গনার নৃত্য,
হঠাৎ-আলোর ঝলকানি লেগে
ঝলমল করে চিত্ত।
নাই আমাদের কনকচাঁপার কুঞ্জ,
বনবীথিকায় কীর্ণ বকুলপুঞ্জ।
হঠাৎ কখন সন্ধ্যাবেলায়
নামহারা ফুল গন্ধ এলায়,
প্রভাতবেলায় হেলাভরে করে
অরুণকিরণে তুচ্ছ
উদ্ধত যত শাখার শিখরে
রডোডেনড্রন গুচ্ছ।”
আর কি চাই?
একটি ফুলের জন্য রবীন্দ্রনাথের অপূর্ব কবিতাটির মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রেমময়-সম্মাননার স্পষ্টতর স্বাক্ষরই যথেষ্ট।
রডোডেনড্রন ‘শেষের কবিতা’র পরশে কেবল ফুলই থাকে না, হয়ে যায় প্রেমের প্রতীতি। ডাক দেয় দূর পাহাড়ের। হাতছানিতে যেতে বলে শিলং পাহাড়ে। যেখানে প্রেমের প্রত্যয় নিয়ে আছে অমিত কিংবা লাবণ্য।
রডোডেনড্রন পাহাড়ী এলাকায় বেশী জন্মে, তবে সমতল ভূমিতেও অনেক দেখা যায়। ঢাকা শহরে রডোডেনড্রন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক যায়গায়। বোটানিক্যাল গার্ডেনে রডোডেনড্রন এর একটা আলাদা জোন আছে। সংসদ ভবনের পূর্ব পাশে, পশ্চিম-দক্ষিণ প্রান্তে যেখানে সবুর খানের কবর, জিয়া উদ্যানে অনেকগুলো রডোডেনড্রন আছে। ঢাকা সেনানিবাস গলফ কোর্স, বনানী গোরস্তানের গেইটে, এবং আরও একটু দক্ষিণ দিকে এগিয়ে বনানী পীরের মাজার সংলগ্নও কয়েকটি রডোডেনড্রন আছে।
২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:০২
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৫৪
আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: বেশ কিছু জানলাম দাদা ভাল থাকবেন
২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:০২
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।
৩| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৫৮
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
সুন্দর তবে ছবি আরও বেশি হল ভাল হতো। সৌন্দর্য উপভোগ করা যেত।
২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:০৩
জুল ভার্ন বলেছেন: আমার লেখা মূলত তথ্য ভিত্তিক।
৪| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৫২
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: চমৎকার উপস্থাপনা।
আমি আজো রডোডেনড্রনের দেখা পাইনি।
২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:২২
জুল ভার্ন বলেছেন: রডোডেনড্রনের শতাধিক প্রজাতি আছে। আমাদের আশেপাশেই অসংখ্যা রডোডেনড্রন আছে- যা আমরা চিনিনা।
৫| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৫৮
আজোয় আহোন বলেছেন: আমি আপনার লেখা পড়লাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত ভালো বাংলাতে লিখার জন্য । খুব সুন্দর ও তথ্যপূর্ণ আর্টিকেল লেখার সাথে ভালো করে বুজাছেন, আমি ইটা শেয়ার না করে থাকতে পারলামনা। click here - Best News Bangla
২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:২৩
জুল ভার্ন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৬| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:০৭
শায়মা বলেছেন: রডোডেনড্রন এর কোনো বাংলা নেই?
২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৭
জুল ভার্ন বলেছেন: হ্যা বাংলা নাম আছে, "রোদরঞ্জন"!
৭| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৩৫
জুন বলেছেন: লাল রডোড্রেনডন ভরা গাছটির ছবি দেখেই অজান্তে মনের মাঝে খেলে গেল শেষের কবিতার বিখ্যাত কবিতাটি। আপনার পোস্টে আরেকবার আবৃত্তি করলাম তাকে। কিশোর কালে যখন বইটি পড়ি তখন এই ফুল আর খঞ্জন পাখী আমার কৌতূহল সৃষ্টি করেছিল। অফুরন্ত রডোড্রেনড্রনকে দেখলাম ভুটানে আর খঞ্জনার দল দেখতাম থাইল্যান্ডের এআইটিতে, কবিতার মতই পুচ্ছ নাচিয়ে ঘাস থেকে খুটে খুটে খাচ্ছে।
+
@ শায়মা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই যদি তার বাংলা নাম না দিতে পারে তবে আর কে দেবে বলো!
২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫১
জুল ভার্ন বলেছেন: রডোডেনড্রন মূলত পাহাড়ি অঞ্চলের ফুল, তাই ভূটানে রডোডেনড্রন বেশী।
আবার খঞ্জন যেমন বীচ এরিয়ায় বেশী তেমনি যে এলাকায় ওদের খাবার বেশী মেলে সেই এলাকায় অঞ্জনের বিচরণ বেশী।
রবি ঠাকুরের মুখে রডোডেনড্রন উচ্চারিত হবার কারণেই আর কোনো নাম বেমানান।
৮| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:১০
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: প্রথম এই ফুলের নাম শুনেছিলাম ১৯৯০ সালে ইংরেজি প্রথম পত্রে যখন 'এ মাদার ইন ম্যানভিল' গল্পটা পড়েছি। আপনার লেখার শেষের অংশ প'ড়ে মনে হোল এই ফুল মনে হয় গোরস্থানে বেশী লাগানো হয়।
২১ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৩৭
জুল ভার্ন বলেছেন: এ মাদার ইন ম্যানভিল গল্পটা আমাদেরও পাঠ্য ছিলো। অসাধারণ সুন্দর গল্প!
৯| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৪৩
শায়মা বলেছেন: এই ফুল আমাদের বাগানে আছে। ইংলিশ নামটাই বলে মালীরাও।
বাংলাটা কি তাই জানতে চেয়েছিলাম।
তারমানে রবিঠাকুরই এই নাম দিয়েছিলো।
২১ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৩৮
জুল ভার্ন বলেছেন: বাংলা নাম রবি ঠাকুরের দেওয়া কি না জানা নাই।
১০| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২৯
সোবুজ বলেছেন: ফুলের রংটি বেশ সুন্দর।আমাদের বাগান বিলাসের মতো।
শেষের কবিতা পড়েছি অনেক আগে।বার বার পড়ার মতো বই ,তবু একবারের বেশি পড়া হয় নাই।ঠিক মনে নেই তবে এটুকু মনে আছে মিলনাত্মক ছিল না।
২১ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪০
জুল ভার্ন বলেছেন: আসলে রডডোনড্রেন বাগান বিলাশ/ বোগেনভিলিয়ার মতোই। পাতাই ওদের সুদৃশ্য ফুল।
১১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:৪০
জটিল ভাই বলেছেন:
জটিল ফুল নিয়ে জটিল উপস্থাপনা জটিল লাগলো
২১ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪১
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
১২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: রডোডেনড্রন অদ্ভুত নাম। রবীন্দ্রনাথ যদি এই ফুলের একটা বাংলানাম দিতেই তাহলে খুব ভালো হতো।
২২ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:২৪
জুল ভার্ন বলেছেন: 'রোদরঞ্জন' নামটাই সম্ভবত রবি কবির দেওয়া।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৪২
জগতারন বলেছেন:
সুন্দর !
লাইক !!