নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
মীর্জা আহমদ ইস্পাহানী ........
১৯৭২ সালের কথা। তখন সদ্য স্বাধীন দেশ 'ষোড়শ ডিভিশন' এর দুর্বৃত্তদের সৃষ্ট বিভাজনের খেলায় নাস্তানাবুদ হচ্ছে দেশ, দেশের মানুষ। এদের তাণ্ডব নৃত্যের ছোঁয়াচ লাগলো অভিজাত ব্যবসায়ী পরিবার ইস্পাহানী খানদানের গায়ে। ইরানী বংশোদ্ভূত ইস্পাহানীদের বিহারী ও উর্দুভাষীদের কাতারে ফেলে ইস্পাহানী গ্রুপকে কব্জায় নেয়ার ধান্দাবাজি শুরু করলো সেই 'চাটার দল'। অভিযোগ এলো এই পরিবার রাজাকার।
ইস্পাহানী গ্রুপের চেয়ারম্যান মীর্জা মেহেদী ইস্পাহানী ঠিক করলেন, এদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাবেন পাকিস্তানে। ইস্পাহানী গ্রুপের জন্ম ভারতে হলেও ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর ইস্পাহানী গ্রুপের কলকাতাস্থ বিষয়আশয় ভারত সরকার বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছিলো।
বাংলাদেশ থেকে যেন তুলনামূলক সহজে ও সম্মানজনকভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারেন, সেজন্য সাহায্য চাইতে মীর্জা মেহেদী গেলেন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের দরবারে। সেখানে গিয়ে দেখেন উল্টা অবস্থা! বঙ্গবন্ধু তাঁর হাত ধরে বললেন, "সাদরি (এম এম ইস্পাহানীর ডাকনাম) সাহেব, আল্লাহর ওয়াস্তে আপনি এই দেশ ছাড়বেন না। আপনি চলে গেলে আমিতো মাঠে মারা পড়বো! আমি দেশ চালাবো কাদের নিয়ে! আপনার ব্যবসা নিয়ে ভাববেন না। আপনি নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যান। আপনাকে কে তাড়াতে চায়, সেটা আমি দেখছি!"
মীর্জা মেহেদী জবাবে বলেছিলেন, "শেখ সাহেব, যদি এটাই আপনার শেষ কথা হয়, তাহলে আমিই কেবল নই, আমার পরের পুরুষেরাও এই দেশেই ব্যবসা করবে, থাকবে এবং মারা যাবে!"
তবে প্রভাবশালীরা ইস্পাহানীর গায়ে পাকিস্তানপন্থী হবার যে তকমা দিয়েছিলেন, তাতে পরোক্ষ সত্যতা ছিল।
মীর্জা মেহেদী ইস্পাহানীর পিতা ইস্পাহানী বংশের তৃতীয় পুরুষ মীর্জা আহমদ ইস্পাহানী ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক। এই সমর্থন কেবল নৈতিক সমর্থনের পর্যায়ে ছিলোনা, আর্থিক সমর্থনের পর্যায়েই ছিল। সত্যি বলতে বিগত শতকের ত্রিশের দশক থেকে শুরু করে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত উপমহাদেশের মুসলিম রাজনীতি যাদের অর্থানুকূল্যে চলতো, তাদের মধ্যে এম এ ইস্পাহানী অগ্রগণ্য। তবে তাঁর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তিনি বিভিন্ন মহৎ কর্মে বিনিয়োগ করেছেন সম্পূর্ণ লিল্লাহর মাধ্যমে। বিভাগপূর্ব ও পাকিস্তানের জন্মের সময়ে মুসলিম সমাজের কোথায় তাঁর ছোঁয়া নেই?
কলকাতার নামযাদা ফুটবল টিম ইস্ট বেঙ্গল, মোহনবাগানে মুসলিম ফুটবলাররা অবহেলিত হচ্ছেন। বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক গিয়ে ধরলেন এম এ ইস্পাহানীকে। গড়ে উঠলো মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব!
পাকিস্তানের জন্মের পর দেশটিতে চরম আর্থিক সংকট দেখা দেয়। ভারত সরকার অন্যায়ভাবে রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা পাকিস্তানী অর্থ ছাড় করছিলো না। এমতাবস্থায় দুই মাস খোদ সরকারী কর্মচারীদের বেতন সামলেছেন মীর্জা আহমদ ইস্পাহানী, আদমজী হাজী দাউদ- গুজরাটি বংশোদ্ভূত এক ধনকুবের।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাট উৎপাদক পূর্ববঙ্গ। কিন্তু কোন পাটকল নেই। কাঁচা পাট রফতানি করতে গিয়ে প্রচুর রাজস্ব হারাচ্ছিল দেশ। তখন এগিয়ে এলেন আদমজী, ইস্পাহানী। নারায়ণগঞ্জে নির্মিত হলো বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিলস।
একই সাথে মীর্জা আহমদ ইস্পাহানী চট্টগ্রামে গড়লেন আরেকটি পাটকল- চিটাগং জুট ম্যানুফ্যাকচারিং মিল।
বাণিজ্যিক ব্যাংক স্থাপনের মতো সামর্থ্য সরকারের ছিলোনা। এখানেও এগিয়ে আসেন ইস্পাহানী। আদমজীর সাথে মিলে গড়ে তুললেন মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক, যা আজকের রূপালী ব্যাংক, ১৯৪৭ সালে। স্বাধীনতার পর ব্যাংকটি রাস্ট্রীয় মালিকানায় দিয়ে দেয়া হলো।
আর্থিকভাবে ফকিরা দেশ পাকিস্তান। তখনকার বাস্তবতায় রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স স্থাপন সরকারের ভাবনার অতীত। ইস্পাহানী গ্রুপ ১৯৪৬ সালে কলকাতায় ওরিয়েন্ট এয়ারওয়েজ নামে একটি এয়ারলাইন্স চালু করেছিলো। তেরোটি উড়োজাহাজ ছিল এই কোম্পানির মালিকানায়। ১৯৪৭ সালে সেটাই পাকিস্তান সরকারের হাতে তুলে দেয়া হল। সংস্থাটিকে খাড়া করতে মীর্জা আহমদ ইস্পাহানী পুত্র মীর্জা মেহেদীকে বসিয়ে সরে গেলেন ইস্পাহানী গ্রুপ থেকে। হলেন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ওরিয়েন্ট এয়ারওয়েজের অবৈতনিক চেয়ারম্যান। ১৯৫৫ সাল নাগাদ ওরিয়েন্ট এয়ারওয়েজ পরিণত হল পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স বা পিআইএ তে।
চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় ইস্পাহানী পরিবারের প্রতিষ্ঠিত মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি উচ্চ বিদ্যালয়, ইস্পাহানী পাবলিক কলেজ দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
আমাদের দেশের সর্ববৃহত বেসরকারী মানসম্মত চক্ষু হাসপাতাল ঢাকার ফার্মগেটের ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, যা ইস্পাহানী পরিবারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত। জনস্বার্থে এরকম অনেক নাম ও বেনামী অবদান আছে ইস্পাহানীদের- পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ উভয় আমলে। এতো কিছুর পরও ইস্পাহানী পরিবার রাজনীতিতে যুক্ত হয়নি। এটা একটা মহৎ ব্যাপার, যার স্বীকৃতি ইস্পাহানী পরিবার বাংলাদেশ থেকে তো পায়নিই, পাকিস্তান থেকেও পায়নি।
স্বীকৃতি একটাই- সেই ১৯৭২ সালে মীর্জা মেহেদীর হাত ধরে বংগবন্ধু শেখ মুজিবের বলা সেই আন্তরিক কথাগুলো।
ব্যবসায়িক ঐতিহ্যের দিক থেকে ইস্পাহানীরা ভারতের টাটা, বিড়লা বা গোদরেজ পরিবারগুলোর সমতুল্য। কিন্তু তারা শেষমেশ নিজেদের সেভাবে বর্ধিত করতে পারেনি।
উইকিপিডিয়ায় ইস্পাহানী পরিবারকে একটি ইরানী-বাঙ্গালী ব্যবসায়িক খানদান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটা দেখে মৃদু ধাক্কা অনুভব করলাম! কারণ আমরাই তো এই পরিবারকে রাজাকারির দায়ে দেশ থেকে উৎখাতে ব্রতী হয়েছিলাম...!
তথ্যসূত্রঃ ইস্পাহানী উইকিপিডিয়া।(২০১৬ সনে ফেসবুকে লেখা পোস্ট থেকে সংকলিত)
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:১৫
জুল ভার্ন বলেছেন: চেষ্টা করি লেখা সুখপাঠ্য করার।
ধন্যবাদ।
২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:২০
আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: বেশ ইতিহাস জানালাম দাদা ভাল থাকবেন------
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৫৩
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।
৩| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:২৭
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম।
ইস্পাহানি চা দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড।
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৫৪
জুল ভার্ন বলেছেন: অবশ্যই ইস্পাহানি দেশ সেরা চা।
৪| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১:১৫
জটিল ভাই বলেছেন:
ইস্পাহানি আরিফ জাহান সম্পর্কে জানার আগ্রহ রয়েছে।
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৫৬
জুল ভার্ন বলেছেন: ওটা ভেজাল মাল! কাক হয়ে ময়ুর পুচ্চধারন করা একটা কাউয়া!
৫| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৪৫
সোনাগাজী বলেছেন:
পাকী আমলে, বাংলার মানুষের সম্পদ ও সুযোগ দখল করে রেখেছিলো অবাংগালী ২২ পরিবার; ইস্পাহানী সেই ২২'এর অংশ।
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৫৭
জুল ভার্ন বলেছেন: ইস্পাহানি কার কোন সম্পদ দখল করেছিলো বর্ণনা দিলে জানতে পারতাম।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:০৬
সোবুজ বলেছেন: আপনার লেখার মুল উদ্যেশ্য পরিস্কার।এবং এমন করে লেখেন যেন ঘটনার সময় আপনি উপস্থিত ছিলেন ঘটনাকে বিশ্বাস যোগ্য করার জন্য।এটা আপনার লেখার ভাল একটা দিক।