নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ \n\nএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আম্রপালী আমের ইতিকথা ---

১৮ ই মে, ২০২২ সকাল ৯:২৮

আম্রপালী আমের ইতিকথা ---
(ইতিহাসের এক করুন কাহিনী)

স্বাদের দিক থেকে অনেকের কাছেই 'আম্রপালী' আম খুবই প্রিয়। এই আমের নামকরণ কিভাবে হল তা এবার জেনে নেওয়া যাকঃ-

আম্রপালী একটি মেয়ের নাম।
জন্মেছিলেন প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ভারতে। তিনি ছিলেন সে সময়ের শ্রেষ্ঠ অনিন্দ্য সুন্দরী এবং নর্তকী। তার রুপে পাগল ছিল পুরো ভারতবর্ষ। আর এই রুপই তার জন্য কাল হয়। যার কারণে তিনি ছিলেন ইতিহাসের এমন একজন নারী, যাকে রাষ্ট্রীয় আদেশে নগর বধু বানানো হয়েছিল!

আম্রপালী বাস করতেন বৈশালী শহরে। বৈশালী ছিল প্রাচীন ভারতের গণতান্ত্রিক একটি শহর, যেটি বর্তমানে ভারতের বিহার রাজ্যের অর্ন্তগত। মাহানামন নামে এক ব্যক্তি শিশুকালে আম্রপালীকে আম গাছের নিচে খুঁজে পান। তার আসল বাবা-মা কে তা জানা যায়নি। যেহেতু তাকে আম গাছের নিচে পাওয়া যায় তাই তার নাম রাখা হয় আম্রপালী। সংস্কৃতে আম্র মানে আম এবং পল্লব হল পাতা। অর্থাৎ, আমগাছের পাতা।

শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা দিতেই আম্রপালীকে নিয়ে হইচই পড়ে যায়। তার রুপে চারপাশের সব মানুষ পাগলপারা। দেশ-বিদেশের রাজা-রাজপুত্র থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ তার জন্য পাগল। নানা জায়গায় থেকে তাকে নিয়ে দ্বন্দ, ঝগড়া আর বিবাদ শুরু হয়ে যায়। সবাই তাকে একনজর দেখতে চান, বিয়ে করতে চায়। এ নিয়ে আম্রপালীর পালক মা-বাবা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। তারা তখন বৈশালীতে গণমান্য ব্যক্তিদেরকে এর একটি সমাধান করার জন্য বলেন। তখন বৈশালীর সকল ক্ষমতাবান ও ধনবান ব্যক্তি মিলে বৈঠকে বসে নানা আলোচনার পর যে সিদ্ধান্ত নেন তা হল, অনিন্দ্য সুন্দরি আম্রপালীকে কেউ বিয়ে করতে পারবেন না। সে একা কারো হতে পারে না। আম্রপালী হবে সবার। সে হবে একজন নগরবধু, মানে পতিতা।

বৈশালীর তৎকালীন প্রচলিত রীতি অনুসারে সর্বাঙ্গ সুন্দরী রমণী বিবাহ করতে পারতেন না, তিনি হতেন গণভোগ্যা নগরবধূ। আম্র পালির ভাগ্যেও জুটে সেই রীতিরই অভিশাপ। নগরবধূ মানে হলো– নগরের বহু পুরুষের ভোগ্য। ইংরেজিতে Courtesan (a woman, usually with a high social position, who in the past had sexual relationships with rich or important men in exchange for money.)। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম গ্রন্থেও নগরবধূর উল্লেখ রয়েছে। সেখানে নগরবধূ কে জনপদকল্যাণী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই জনপদকল্যাণী বা নগরবধূ কোন সামান্য গণিকা বা পতিতা বা দেহপসারিণী নন। নগরবধূ বা জনপদকল্যানী হবেন অভিজাত আদবকায়দায় রপ্ত এক সুন্দরী, যে নৃত্যগীতে পারদর্শী। শুধুমাত্র সমাজের উচ্চবংশের ধনী পুরুষই পেতে পারবেন তাঁর সঙ্গসুখ। তিনি নিজেই নিজের সঙ্গী নির্বাচনের অধিকার রাখেন। কিন্তু রীতি অনুযায়ী কোন দিন বিয়ের অধিকার তাকে দেয়া হয় না। তাঁকে উৎসর্গ করা হয় সমাজের অভিজাত শ্রেনীর ভোগের পণ্য ও আনন্দের জন্য। সমাজপতিরা রায় দিলেন, ‘আম্রপালি কে নিয়ে কোন প্রকার লড়াইয়ের প্রয়োজন নেই, টাকার বিনিময়ে সে হবে সকলের।

আম্রপালী সে সভায় পাঁচটি শর্ত রাখেন-
(১) নগরের সবচেয়ে সুন্দর জায়গায় তার ঘর হবে।

(২) তার মুল্য হবে প্রতি রাত্রির জন্য পাঁচশত স্বর্ণমুদ্রা।

(৩) একবারে মাত্র একজন তার গৃহে প্রবেশ করতে পারবেন।

(৪ ) শক্র বা কোন অপরাধীর সন্ধানে প্রয়োজনে সপ্তাহে সর্বোচ্চ একবার তার গৃহে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা প্রবেশ করতে পারবে।

(৫) তার গৃহে কোন খদ্দের এলেন আর কে গেলেন- এ নিয়ে কোন অনুসন্ধান করা যাবে না।
সবাই তার এসব শর্ত মেনে নেন। প্রতি রাতের জন্য পাঁচশত স্বর্ণমুদ্রা পেয়ে দিনে দিনে আম্রপালী বিপুল ধন-সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন। সেইসাথে তার রুপের কথা দেশ থেকে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ে।


প্রাচীন ভারতের মগধ রাজ্যের রাজা ছিলেন বিম্বিসার। তার স্ত্রীর সংখ্যা ছিলো ৫০০ জন! নর্তকীদের নাচের এক অনুষ্ঠানে তিনি এক নর্তকীর নাচ দেখে বলেছিলেন, এ নর্তকী বিশ্বসেরা। তখন তার একজন সভাসদ বলেন- 'মহারাজ, এই নর্তকী আম্রপালীর নখের যোগ্য নয়'!
বিম্বিসারের এই কথা নজর এড়ায়নি। তিনি তার সেই সভাসদের থেকে আম্রপালী সম্পর্কে বিস্তারিত শুনে তাকে পাবার বাসনা করেন।
কিন্তু তার সভাসদ বলেন, সেটা সম্ভব নয়। কারণ, তাহলে আমাদের যুদ্ধ করে বৈশালী রাজ্য জয় করতে হবে, আর আম্রপালীর দেখা পাওয়াও এত সহজ নয়। দেশ-বিদেশের বহু রাজা- রাজপুত্ররা আম্রপালীর প্রাসাদের সামনে তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। কিন্তু মন না চাইলে তিনি কাউকে সংগ দেন না।

এত কথা শুনে বিম্বিসারের আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ছদ্মবেশে বৈশালী রাজ্যে গিয়ে আম্রপালীকে দেখে আসবেন। কি এমন আছে সেই নারীর মাঝে, যার জন্য পুরো পৃথিবী পাগল হয়ে আছে!

বহু চড়াই উৎরাই শেষে তার আম্রপালীর সাথে দেখা করার সুযোগ আসে। আম্রপালীর প্রাসাদ আম্রকুঞ্জে। আম্রপালীকে দেখে রাজা চমকে উঠেন, এত কোন নারী নয়; যেন সাক্ষাৎ পরী! এ কোনভাবেই মানুষ হতে পারেন না। এত রুপ মানুষের কিভাবে হতে পারে!
কিন্তু অবাক রাজার জন্য আরও অবাক কিছু অপেক্ষা করছিল। কারণ, আম্রপালী প্রথম দেখাতেই তাকে মগধ রাজ্যের রাজা বলে চিনে ফেলেন এবং জানান- তিনি তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন বহু আগে থেকেই।
এই কথা শুনে রাজার বিস্ময়ের সীমা থাকে না!

রাজা সাথে সাথে তাকে তার রাজ্যের রাজরাণী বানানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু আম্রপালী জানান, তার রাজ্যের মানুষ এটা কখনোই মেনে নেবেন না। উল্টো বহু মানুষের জীবন যাবে। রক্তপাত হবে। তাই রাজাকে দ্রুত এখান থেকে চলে যেতে বলেন।
কিন্তু বিম্বিসার বৈশালী আক্রমন করে হলেও আম্রপালীকে পেতে চান। ওদিকে আম্রপালী তার নিজের রাজ্যের কোন ক্ষতি চান না। তাই তিনি রাজাকে তার নিজ রাজ্যে ফেরত পাঠান এবং বৈশালীতে কোন আক্রমণ হলে তিনি তা মেনে নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
এদিকে বিম্বিসারের সন্তান অজাতশত্রুও আম্রপালীর প্রেমে মগ্ন ছিলেন। তিনি বিম্বিসারকে আটক করে নিজে সিংহাসন দখল করেন এবং আম্রপালীকে পাওয়ার জন্য বৈশালী রাজ্য আক্রমণ করেন। কিন্তু দখল করতে সক্ষম হননি বরং যুদ্ধে খুব বাজেভাবে আহত হন। পরবর্তীতে আম্রপালীর সেবায় সুস্থ হয়ে গোপনে তার নিজের রাজ্যে ফেরত যান। সেদিনও আম্রপালী অজাতশত্রুর বিয়ের প্রস্তাব সবিনয়ে ফিরিয়ে দেন।

এত নাটকীয়তার পর শেষের দিকে এসে কি হল?
গৌতম বুদ্ধর সময়কাল তখন।
গৌতম বুদ্ধ তার কয়েকশ সঙ্গী নিয়ে বৈশালী রাজ্যে এলেন। একদিন নিজ বাসভবনের রাবান্দা থেকে এক বৌদ্ধ তরুণ সন্ন্যাসীকে দেখে আম্রপালীর মনে ধরে গেল। তিনি ভাবলেন, দেশ-বিদেশের রাজারা আমার পায়ের কাছে এসে বসে থাকেন আর এত সামান্য একজন মানুষ। তিনি সেই সন্ন্যাসীকে চার মাস তার কাছে রাখার জন্য গৌতম বুদ্ধকে অনুরোধ করলেন। সবাই ভাবলেন, বুদ্ধ কখনই রাজি হবেন না। কারণ, একজন সন্ন্যাসী এমন একজন পতিতার কাছে থাকবেন; এটা হতেই পারে না। কিন্তু গৌতম বুদ্ধ তাকে রাখতে রাজি হলেন এবং এটাও বললেন, আমি শ্রমণের (তরুণ সন্ন্যাসীর নাম শ্রমণ) চোখে কোন কামনা-বাসনা দেখছি না। সে চার মাস থাকলেও নিষ্পাপ হয়েই ফিরে আসবে- এটা আমি নিশ্চিত!
চার মাস শেষ হল।

গৌতম বুদ্ধ তার সঙ্গীদের নিয়ে চলে যাবেন। তরুণ শ্রমণের কোন খবর নেই। তবে কি আম্রপালীর রুপের কাছেই হেরে গেলেন শ্রমণ? কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে তরুণ শ্রমণ ফিরে আসেন। তার পিছনে পিছনে আসেন একজন নারী। সেই নারীই ছিলেন আম্রপালী। আম্রপালী তখন বুদ্ধকে বলেন, তরুণ শ্রমণকে প্রলুব্ধ করতে কোনও চেষ্টা বাকি রাখেননি তিনি। কিন্তু এই প্রথম কোন পুরুষকে বশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বৈশালীর নগরবধূ আম্রপালী। তাই আজ সর্বস্ব ত্যাগ করে বুদ্ধের চরণে আশ্রয় চান তিনি।

নিজের সব ধনসম্পত্তি দান করে বাকী জীবন গৌতম বুদ্ধের চরণেই কাটিয়ে দেন ইতিহাস বিখ্যাত সেই রমণী আম্রপালী। আর এই আম্রপালী নামেই ১৯৭৮ সালে ভারতের আম গবেষকরা 'দশোহরি' ও 'নিলাম'- এই দু'টি আমের সংকরায়ণের মাধ্যমে এক নতুন জাতের আম উদ্ভাবন করেন এবং নাম রাখেন 'আম্রপালী'।

আম্রপালীর এই ইতিহাস কিম্বা 'মিথ' বহু বছর যাবত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। 'আম্রপালী নামের ইতিহাস' লিখে গুগল সার্চ দিলেই এই বিষয়ে অসংখ্য লেখা পাবেন। কয়েক বছর আগে আমিও কোনো একটা পত্রিকায় পড়ে নিজের মতো করে ফেসবুকে লিখেছিলাম- সেই লেখাটাই ব্লগ উপযোগী করে আবার লিখলাম। আম্রপালী ও আমের ছবিগুলো নিয়েছি গুগল থেকে।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মে, ২০২২ সকাল ১০:১৭

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: চমৎকার তথ্য জানলাম।

১৮ ই মে, ২০২২ সকাল ১০:৩৮

জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৮ ই মে, ২০২২ সকাল ১০:২২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ব্লগার, ডঃ এম,এ, আলীর এ নিয়ে একটা মহাকাব্য আছে। ++++

১৮ ই মে, ২০২২ সকাল ১০:৩৯

জুল ভার্ন বলেছেন: মহাকাব্য! তাই নাকি?

আসলে আম্রপালীর ইতিহাস নিয়ে অসংখ্যা লেখা আছে।

৩| ১৮ ই মে, ২০২২ দুপুর ১:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: সামুতে আম্রপলি নিয়ে এঁর আগেও অনেক লেখা এসেছে। তবে সবচেয়ে ভালো লিখেছেন ডঃ এম আলী সাহেব।

১৮ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:১২

জুল ভার্ন বলেছেন: ওহ! আমি ডক্টর আলী সাহেবের লেখাটা এখনও পড়ার সুযোগ পাইনি।

ধন্যবাদ।

৪| ১৮ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৩৫

প্রতিদিন বাংলা বলেছেন: এখন আম্রপালী খেতে মনোযোগ নষ্ট হবে!

১৯ শে মে, ২০২২ সকাল ১১:৫৪

জুল ভার্ন বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ

৫| ১৮ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৪১

আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: আম্রপালি নামে পুরানো একটা হিন্দি মুভি আছে এই ঐতিহাসিক কাহিনী নিয়ে। বৈজন্তীমালার নাচ গুলো অসাধারণ।

১৯ শে মে, ২০২২ সকাল ১১:৫৬

জুল ভার্ন বলেছেন: খুঁজে পেলে ছবিটা দেখবো।

৬| ১৮ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৪৫

জুন বলেছেন: আম্রপালির ইতিহাস যতই বৈচিত্র্যময়,
কিন্তু এই নামের আম তত স্বাদের নয়।


নুরু ভাই এর মত কবিতা লিখলাম B-)

১৯ শে মে, ২০২২ সকাল ১১:৫৭

জুল ভার্ন বলেছেন: আসল স্বাধতো আম্রপালী আমের না =p~

৭| ১৮ ই মে, ২০২২ বিকাল ৪:২২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: এই ইতিহাস অনেকটাই পড়েছি

১৯ শে মে, ২০২২ সকাল ১১:৫৮

জুল ভার্ন বলেছেন: এটা খুবই কমন ইতিহাস!

৮| ২৩ শে মে, ২০২২ রাত ১১:০৭

নাজনীন১ বলেছেন: এই ইতিহাসটা আজই প্রথম জানলাম! কিন্তু এটা একজন নারীর সাফল্য নাকি ট্র্যাজেডি?

২৪ শে মে, ২০২২ দুপুর ১২:২৫

জুল ভার্ন বলেছেন: আমিতো ট্রাজেডিই বলবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.