নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
সুন্দর-অসুন্দর- প্রথম পর্ব
একটা ভালো বই পড়ার আনন্দ পূর্ণতা পায় তখনই যখন সেই ভালো লাগার আনন্দটা নিজের মতো লিখে বা বলে শেয়ার করা যায়। কারোর ভালো লাগুক বা মন্দ লাগুক বললে সেটার স্থায়িত্ব কম, লিখতে পারলে তার স্থায়িত্ব বেশী, অন্তত পাঠক ও লেখকের কাছে। তেমন ভালো লাগা একটি বইয়ের নাম- The Analysis of Beauty, Writer: William Hogarth.
প্রচলিত অর্থে এটি অনুবাদ নয়, বলা যায়- ভাবানুবাদ। বইটি কয়েক বছর যাবত পড়ে সুন্দর অসুন্দর এর উপর নিজেই একটা তত্ব দাঁড় করিয়ে প্রায় ৬০ পৃষ্ঠার একটা নিবন্ধন লিখে ছিলাম। সেই সাথে যোগ করেছি বুদ্ধদেব বসু, কালিদাস এবং প্লেটোর ‘অনুকরণ-তত্ত্ব’।
আরও কিছু রেফারেন্স এবং ছবি যুক্ত করে ১২০ পৃষ্ঠার একটা বই প্রকাশের জন্য আমার প্রতিবেশী বাঙ্গালা গবেষণা প্রকাশনীর কর্ণধার শ্রদ্ধেয় আফজালুল বাসার ভাইকে পাণ্ডুলিপি দিয়েছিলাম। তিনি জানান, বিদেশী বইয়ের লেখকের বইয়ের অনুবাদ বই প্রকাশে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা আছে। অনুমতি এবং রয়ালিটির বিষয় আছে....
তারপর বই প্রকাশের ভাবনা বাদ দিয়ে এক বন্ধুর অনলাইন পত্রিকায় চার পর্ব প্রকাশিত হবার পর অনলাইন পত্রিকাটিই বন্ধ হয়ে যায়। যেহেতু লেখাটার পেছনে আমি অনেক সময় ও শ্রম দিয়েছিলাম তাই ওটার প্রতি আমার একটা দুর্বলতা রয়ে গিয়েছে। গত সপ্তাহ খানিক লেখাটা কিছুটা মেরামত করে ব্লগে শেয়ার করছি- মূলত সংগ্রহ করার জন্যই। তারপরও যদি কেউ পড়েন এবং মন্তব্য করেন- সেটা হবে বাড়তি পাওনা।
আমি ‘সুন্দর’ যা কিছু, তাকে আরও সুন্দর করে তুলতে চাই। পাহাড়, নদী কিংবা পাতা-পতনের সিম্ফনি আমার কাছে সুন্দর; ‘অসহ্য’ সুন্দর। বুদ্ধদেব বসু খুব তীব্রভাবে বহুকিছু সুন্দর করে তোলেন। বিস্ময়কর তার কালিদাস-বিবরণী- বিশেষত ‘মেঘদূত’। যা হোক, প্লেটোর ‘অনুকরণ-তত্ত্ব’ খুব মজার ও উপভোগ্য বলেই শিরোধার্য। নির্বাসিত কবিদের গালাগালি দিয়েও সর্বোচ্চ সুন্দরের তত্ত্ব তিনিই দিতে পেরেছিলেন। ওতে অনেকরকম করে সুন্দরের নিহিতার্থ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বলতে ভয় নেই, ‘শিল্পের ন্যায়’ ধারণাটি দিয়ে তিনি সর্বোচ্চ শিল্পের প্রণোদনাটি সাহিত্যে অত্যুচ্চ করে তুলেছিলেন। কীভাবে? একালে এসেও যখন ‘রিপাবলিক’ পড়ি, সেটি ন্যায়, সাম্য, সত্যের সাবলিমিটি বা ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ সবটাই সাহিত্যিক সম্বন্ধে নিপুণ- তারই দার্শনিক ধারণার উপলক্ষ, যেখানে সৌন্দর্যে ব্যক্তিনিরপেক্ষতা চরমভাবে মূর্তমান। বেঞ্জামিন জয়েট ইংরেজি অনুবাদ করেছেন (কারণ আমার গ্রিক জানা নেই) তাতেই যদি ঠিকরে থাকি, বিস্তর এক সমাপতনের ভাবনা প্রতিশ্রুত হয়। সে ভাবনায় জগৎ-জীবন-দর্শন সবটাই মোড়ানো থাকে সৌন্দর্যের বিদ্যুৎপ্রভায়। যেটি পরবর্তীতে সেঁধিয়ে রয়, অ্যারিস্টটলের ট্র্যাজেডি তত্ত্বের ভেতরে। জীবনের ক্লাইমেক্স তখন ততধিক উপভোগ্য- যা সবটাকে প্রবল উল্লাসে পৃথিবীর যা শ্রেষ্ঠ তার মুখোমুখি করায়। এভাবে গোড়ার দিকে নন্দনতত্ত্ব বা সমালোচনার একটি পর্যায়-ধারণার বৃত্ত গড়ে ওঠে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নান্দনিক ধারণাসমূহ পাল্টায়।
সুন্দর শব্দের রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ হলো সু-উন্দ্ (আর্দ্র হওয়া) +অর্। সুন্দর শব্দের ব্যাখ্যা এই বিশ্লেষণের ভিতরেই পাওয়া যায়। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যে অনুভূতি মনকে দ্রবীভূত বা আর্দ্র করে এবং একই সাথে আনন্দ দান করে তাই সুন্দর। মূলত স্বস্তি-অস্বস্তি'র সূত্রে মানুষের মনের দশার পরিবর্তন ঘটে। এর ভিতরে স্বস্তির ক্রমবর্ধমান উন্নতির ভিতর দিয়ে জন্ম নেয় সুখবোধ। সুখানুভূতি চলমান একটি প্রক্রিয়া। যতখন এটি ক্রিয়াশীল থাকে ততক্ষণ মানুষের মন এর দ্বারা আবেশিত দশায় থাকে এবং মনের ভিতর তা ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে পড়া সুখবোধই হলো আনন্দ। আর বহুবিধ আনন্দের সুসমন্বিত বোধই হলো সৌন্দর্য। বলাই বাহুল্য, একটি কার্যক্রম যখন এককভাবে কোনো আনন্দ তৈরি করে, তখন তা সৌন্দর্য সৃষ্টি করে না। সমন্বিত বহুবিধ আনন্দের ভিতর দিয়ে মানুষের মনে যে আনন্দময় প্রবাহের সৃষ্টি হয়, তার সমন্বিত আনন্দময় অনুভূতিকে বলা হয় সুন্দর। তাই একথাও বলা যায়, যে সকল আনন্দ মনকে দ্রবীভূত বা আর্দ্র করে তা থেকে উদ্ভুত মিশ্র আনন্দই সুন্দর।
যে কোনো সত্তার প্রকাশিত বা বাহ্যিক রূপ দিয়ে সুন্দরের বিচার করা হয়। বিষয়টি মূর্ত বা বিমূর্ত সকল সত্তার জন্যই প্রযোজ্য। একটি ফুলকে সুন্দর বলা হয় এর বাহ্যিকগুণকে বিচার করে। আবার যখন বলা হয় একটি 'সুন্দর মন'। তখন ওই মনের যে অংশটুকু প্রকাশ পায়, তার বিচারে সুন্দর বলা হয়। যে শত্রু আপনার জীবনকে অসুন্দর করে ফেলতে পারে, তার কপট আচরণে আপনি মুগ্ধ হয়ে 'সুন্দর মনের মানুষ' বলতেই পারেন। যে মুহুর্তে তার কুটিল রূপটি আপনার কাছে প্রকাশ পাবে, তখন তাকে আর আপনি 'সুন্দর মনের মানুষ' বলবেন না। 'চক্ চক্ করলেই সোনা হয় না' এই বিচার করা হয় সোনার সার্বিক গুণমানের বিচারে। নকল সোনার সৌন্দর্য আর আসল সোনার সৌন্দর্য যদি একই হয়, তাহলে বাহ্যিক রূপের বিচারে উভয় সুন্দর। ধাতবগুণের বিচারে তা এক না হলেও বাহ্যিক গুণের উভয়ই সুন্দর।
কিন্তু কেন সুন্দর? সবাই সুন্দর বলে বলেই কি সুন্দর? নাকি আমি সুন্দর বলি বলে সুন্দর? মূলত সুন্দর-অসুন্দর নির্ধারণের মালিক 'আমি'। 'আমি' যাকে সুন্দর বলবো, তাই সুন্দর। জগৎ সংসারে যত 'আমি' আছে বা ছিল বা থাকবে, তাদের সবাই যাকে সুন্দর বলবে, সেটা হবে পরম সুন্দর। এর বাইরে কোনো 'আমি' বা কিছু 'আমি' যাকে সুন্দর বলে তা খণ্ডিত সুন্দর।
অনুভব ও চেতনা, সত্য, রুচি ইত্যাদি নিয়ে সৌন্দর্যের জগৎ তৈরি হয়, তার ভিতরেই আমাদের বাস। সে জগতে কখনো 'আমি' স্রষ্টা, কখনো ভোক্তা। এরই ভিতরে রয়েছে 'আমি'র সৌন্দর্যবোধ। বহুবিধ আনন্দের সংমিশ্রণে যে সৌন্দর্যের সৃষ্টি, তা গ্রহণ করার চেতনাগত বোধই হলো সৌন্দর্যবোধ। অন্যভাবে বলা যায় সুন্দর করে জীবনকে উপভোগ করার বোধই হলো সৌন্দর্যবোধ। প্রকৃতির কোনো উপাদানই সুন্দর নয়। সুন্দর বলে 'আমি' যাকে গ্রহণ করে তাই সুন্দর। প্রতিটি মানুষের ভিতরে আনন্দ পাওয়ার যে সহজাত ক্ষমতা আছে, তার ভিতরেই রয়েছে সৌন্দর্যবোধের প্রাণভোমরা। তাই আনন্দের এবং আনন্দসমূহের সংমিশ্রণে সৃষ্ট সৌন্দর্যের সবকিছুই সৌন্দর্যবোধের ভিত্তি গড়ে দেয়। এর কিছু সহজাত, বাকিটা অর্জিত বা চর্চিত।
সৌন্দর্যের উৎসঃ
সৌন্দর্যের উপলব্ধি মানুষের মনের ভিতরে। কিন্তু এর লক্ষ্য ও উৎস বাইরে। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সৌন্দর্য তো বটেই, অতীন্দ্রীয় সৌন্দর্যও বাইরের। অতীন্দ্রয় সৌন্দর্য কল্পলোকের। কিন্তু তার লক্ষ্য থাকে বাইরে জগতে। কল্পলোকে যে রাজপ্রাসাদ গড়ে, তা মনের ভিতরে তৈরি হয় কিন্তু ক্ষেত্রটি থাকে বস্তুজগতের কোনো একটি স্থানে। বাইরের জগৎ উৎস বলেই শিল্পীকে মনোজগৎ ছেড়ে বাইরে আসতে হয়। বাইরে আসতে না পারলে, শিল্পের সার্থকতা নেই। প্রকৃতির লীলা বাইরে, মনের ভিতরে তার যে ছায়া পড়ে, তারই আলোকে মনের ভিতরে সৌন্দর্যের জন্ম হয় এবং অবশেষে তাকে স্থান করে নিতে হয় বাইরে। রবীন্দ্রনাথের গানে আছে 'আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া, বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া'। 'বিশ্বলোকে সাড়া' পাওয়ার জন্য যে 'আমি' আকুল, তার উৎসও বিশ্বলোক। 'আমি' এবং আমার বিশ্বলোক একাকার না হলে সৌন্দর্যের জন্ম হয় না। বিশ্বলোকের ভিতরে 'আমি' এবং 'আমি'র ভিতরে বিশ্বলোকের উপলব্ধি, উভয়ই সৌন্দর্যের উৎস। মানুষ তার সৃজনশীল কর্মের ভিতর দিয়ে যে সৌন্দর্যের অনুশীলন করে, তার উৎস হিসেবে সাধারণভাবে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। ভাগ দুটো হলো− প্রাকৃতিক উৎস এবং কৃত্রিম উৎস।
(পরবর্তী পর্ব- অন্যকোন দিন)
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:২২
জুল ভার্ন বলেছেন: একমত। তবে চিরন্তন সৌন্দর্য বলে একটা বিষয় আছে- যা অস্বীকার করার সুযোগ নাই। সেই বিষয় নিয়ে সামর কোনো পোস্টে লেখার ইচ্চে আছে। অবশ্য লেখাই আছে, তা প্রকাশ করবো।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:১৬
ঢাবিয়ান বলেছেন: সৌন্দর্য বিষয়টা আমার কাছে মনে হয় আপেক্ষিক। যা আমার কাছে সুন্দর , তা আরেকজনের কাছে নাও হতে পারে।