| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
অসাধারণ বই “অগ্নিঝরা বর্ষা- দেশে বিদেশে” পড়ে আমি যেন আবার ফিরে গেলাম জুলাইয়ের উত্তাল দিনগুলোতে।
BRAIN পরিচালক Rahman ভাইয়ের আমন্ত্রণে ২৮ অক্টোবর বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম- দেশের এবং প্রবাসের বহু গুণীজন, চিন্তক, লেখক ও সংগ্রামী মানুষের পেছনে।
এই সংকলন শুধুমাত্র একটি বই নয়, এটি জুলাই অভ্যুত্থানের জীবন্ত দলিল।
২৪৮ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে বাংলা এবং ইংরেজিতে লেখা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা ২৬ জন মেধাবী লেখকের চোখে দেখা বাস্তবতা, বিশ্লেষণ, আর আবেগ মিলে গড়ে উঠেছে এক অনন্য দলিল- যেখানে উঠে এসেছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ১৬ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের সারসংক্ষেপ।
আমাদের অনেকেই ভুলে যাই- জুলাই ২০২৪ কোনো হঠাৎ বিস্ফোরণ ছিল না। এর বীজ রোপিত হয়েছিল ১/১১-র সময় থেকে; রাজপথে, কারাগারে, নির্বাসনে, কিংবা প্রার্থনায় থেকেও যারা লড়েছেন- তাদের ঘাম, অশ্রু, রক্ত আর বিশ্বাসের ফসলই ছিল জুলাইয়ের অভ্যুত্থান।
তাই বিজয়ের কৃতিত্ব শুধু ৩৬ দিনের নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে নিঃশব্দে সংগ্রামরত হাজারো অচেনা মুখের।
Credit goes to all- যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মানুষের মর্যাদা রক্ষায় লড়ে গেছেন।
ফিরে আসি অগ্নিঝরা বর্ষায়।
২৪৮ পৃষ্ঠার বইয়ে দেশ-বিদেশে বরেণ্য নিজনিজ পেশায় প্রতিষ্ঠিত প্রথিতযশা মেধাবী ২৬ জন গুণীজনদের লেখায় ফুটে উঠেছে দেশপ্রেম। ক্ষুদ্র পরিশরে সবার লেখা সম্পর্কে আলোচনা সম্ভব নয়, তাই কয়েকজন লেখকের লেখার উপর দুই পর্বে যৎসামান্য আলোকপাত করবোঃ
★ রুশাদ ফরিদীর লেখা 'জুলাই অভ্যুত্থানের অন্তিমে' নিবন্ধে তখনকার ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন- যা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি রাজপথে থেকে। নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা তখন স্মার্টফোন ব্যবহার করতাম না (যদিও আমাদের মধ্যে অনেকেই ২০১৮ সাল থেকেই স্মার্টফোন ছেড়ে ৭/৮ শত টাকা দামের বাটনফোন ব্যবহার করতাম)!
★ দেশপ্রেমিক প্রবাসী বন্ধুরা কিভাবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে সচেতন করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করতে নিরলসভাবে কাজ করেছেন তা তুলে ধরেছেন Shamaruh Mirza (ডাঃ শামারুহ মির্জা) তার লেখা "ডিয়াস্পোরা আওয়াজঃ মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের পথে ২০২৩-২৪" নিবন্ধে।
★ একই ভাবনার প্রতিফলন "ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে লবিং এবং লন্ডন প্রবাসীদের তৎপরতা" প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন ব্যারিস্টার জাকির হাসান শিশির ও এ কে এম জাকির হোসেন।
★ শেখ হাসিনাকে কারা ফ্যাসিস্ট হাসিনা বানিয়েছে- সেটা চমৎকার বিশ্লেষণ করে লিখেছেন অনুজ প্রতিম Shafayat Ahmad (মেজর অবঃ শাফায়াত আহমদ) তার 'জুলাই অভ্যুত্থান ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীঃ কিছু প্রশ্ন, কিছু না বলা কথা' প্রবন্ধে।
খুব ভালো লেগেছে তিনি তার লেখায় ১/১১ সেনাতত্বাবধায়ক সরকারের সেনাবাহিনীর ভুমিকা, পিলখানা বিডিআর ম্যাচাকারের পরবর্তীতে ন্যায়নিষ্ঠ পেশাদার দেশপ্রেমিক তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের সাহসী ভুমিকা এবং তার পরিনতির কথা উল্লেখ করেছেন। মিলিটারী একাডেমি থেকে কমিশন প্রাপ্ত 'জেন-জি' তরুণ অফিসারদের শৃঙ্খলা এবং নৈতিক শিক্ষার মনস্তাত্ত্বিক দিকটা ফুটে উঠেছে! যেখানে গোর্গেট প্যাচ, ওয়ান-টু-থ্রি-ফোর স্টার অফিসারগণ আর্মির রেশন আর নানাবিধ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে হাড্ডি-চুল পাকিয়ে ভুঁড়ি বাগিয়ে "চর্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয়" রোবটে পরিনত হয়েছে সেখানে জেন-জি' তরুণ অফিসারগনই আমজনতার ভাষা বুঝে জেন-জি দের সাথে একাত্মবোধ করে তাদের ভাইদের বুকে গুলি চালাতে অস্বীকার করে তাদের প্রশিক্ষণ, তাদের শপথের মর্যাদা রক্ষা করে মাতৃভূমির প্রতি দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তাদের দৃঢ়তায় সেনাপ্রধান বলতে বাধ্য হয়েছেন- "নো মোর ফায়ারিং"।
স্যালুট আমাদের সেনাসন্তানদের।
★ "প্রবাসী প্রতিরোধঃ স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে ৫ আগস্টের গণভবন অভিযানের আগে ডিজিটাল যুদ্ধ"- শিরোনামে আমাদের দীর্ঘদিনে সাথী ব্লগার বিশ্ববিখ্যাত আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ Mostofa Kamal Palashমোস্তফা কামাল পলাশ) ছাড়াও এহতেশামুল হক, সুবাইল বিন আলম লিখেছেন ভিন্ন ভিন্ন আংগীকে। এদের মধ্যে মোস্তফা কামাল পলাশের সেই ঐতিহাসিক পোস্ট যেখানে লিখেছিলেন- ম্যাক্সারের প্রযুক্তি কি ভাবে গুলিতে গতিপথ, তাপমাত্রা, মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারে... যা সেনাবাহিনীর মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছিলো!
(প্রসঙ্গত স্মরণ করছি- ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর আমি যখন হাসিনার গেষ্টাপো বাহিনীর হাতে গুম হই তখন মোস্তফা কামাল পলাশ ব্লগ এবং ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বর্বরোচিত কর্মযজ্ঞ। একই লেখায় আরও দুইজন প্রখ্যাত ব্লগার Shovan Rezwanul Haque (ক্যাপ্টেন নিমো), আরজান ইভান এর গুমের বিষয়ও উল্লেখ করে ছিলেন)।
★ এহতেশামুল হক এককভাবে লিখেছেন " বিজয়ের পরের দিনের পরিকল্পনা"- শিরোনামে চমৎকার একটি তাত্বিক প্রবন্ধ।
★ "লাল জুলাইয়ে গণতান্ত্রিক, সাংস্কৃতিক জাগরণ ও পেশাজীবীদের ভুমিকা" নিয়ে লিখেছেন প্রকৌশলী, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সালাউদ্দিন আহমেদ রায়হান।
★ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ডঃ মির্জা তাসলিমা সুলতানা লিখেছেন "জুলাই আন্দোলনে শিক্ষক নেটওয়ার্ক" নিবন্ধ। চমৎকার!
★ ৪-৫ আগস্ট ২০২৪ এর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন "কি দেখেছিলাম ৪-৫ ই আগস্ট"।
★ দীর্ঘদিনের ফেসবুক বন্ধু Mahmudul Khan Apel "জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে এন আর বি দের ভুমিকা এবং একটি জুম মিটিং" আয়োজনের নেপথ্যের ঘটনা এবং অনেক বিখ্যাত এক্টিভিস্টদে অংশ গ্রহণে অসাধারণ এক সাইবার অভিযানের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা। জেনে অবাক হয়েছি- হাসিনার পাদলেহনকারী কুখ্যাত সাংবাদিক শ্যামল দত্ত এবং লেডি হিটলার শেখ হাসিনা বলেছিল- "শ্যামল তোমরা কোনো চিন্তা করো না। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে, আমাদের যদি সেখানে ৬০ লাখ মানুষকেও মারতে হয়- মারবো, তারপরও ক্ষমতা ছাড়বো না!"
★ অনলাইন এক্টিভিস্ট, সুলেখক Imtiaz Mirza (ইমতিয়াজ মির্জা) "জুলাই গণঅভ্যুত্থানঃ বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি মোড়" শিরোনাম প্রবন্ধে ফ্যাসিবাদ বিরোধী অনলাইন এক্টিভিস্টদের পূর্বাপর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে তুলে ধরেছেন। তবে তিনি "বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃত্বের জন্য অপেক্ষা করেনি।" তিনি আরও লিখেছেন- "সাধারণ নাগরিকরা, তথ্য এবং সংকল্প নিয়ে সজ্জিত, এমনকি সবচেয়ে প্রোথিত শাসনকেও ভেংগে ফেলতে পারে"... এখানে লেখককে মনে করিয়ে দিতে চাই- " সাধারণ নাগরিক"দের উজ্জীবিত হতে সহায়ক ছিলো রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা, যোগসূত্র এবং আপনার মতো গুণী লেখক এক্টিভিস্টগণ।
★ "ভয়াল জুলাইয়ের কয়েকটি দিন" এর ভয়াবহ স্মৃতিচারণ করেছেন অনুজ প্রতিম ডঃ আদনান আরিফ সালিম, যা ইতিহাসের অংশ হয়ে গিয়েছে।
★ "প্রবাসী শ্রমিকরা যখন নাড়িয়ে দিয়েছিলেন ফ্যাসিবাদের ভিত"- লিখেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাদিক মাহবুব ইসলাম। "অসির চাইতে মসি বড়ো" সেই প্রবাদ যুগযুগ ধরে প্রমাণিত। কিন্তু শেখ হাসিনার পলায়নপর কালে প্রবাসীরা দেখিয়ে দিলেন, মসির চাইতেও রেমিট্যান্স বড়ো!
যাদের ঘামে দেশের রিজার্ভ স্ফীত হয়েছিল, তারাই রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে শেখ হাসিনার ফরেন রিজার্ভ ডাউন করে দিয়ে তার বিদায় তরান্বিত করতে সহায়ক হয়েছিলেন। প্রমাণিত হয়েছে- এই দেশ টিকে আছে অসি-মসি নয়, রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ঘামে!
★ "১ দফার রূপায়ণঃ আবু সাঈদের ডানায় চড়ে আটলান্টিকের এপারে" নিবন্ধে নাছরুল ইসলাম সোহান বিভিন্ন তথ্যসূত্র উল্লেখ করে লিখেছেন জুলাই আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়।
★ ইংরেজিতে যারা আর্টিকেল লিখেছেন তারা হচ্ছেন- Rumi Ahmed (Rumi Ahead Khan) যিনি চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত থেকেও দীর্ঘদিন যাবত লেখালেখির জন্যও সোশ্যাল মিডিয়ায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, একজন ব্লগার। সামহোয়্যারইন ব্লগ থেকেই তার লেখার ভক্ত আমি। তিনি জুলাই আন্দোলনের আদ্যোপান্ত লিখেছেন "From Exile to Awakening" প্রবন্ধে।
বিশ্ববিখ্যাত ফটোগ্রাফার এবং মানবাধিকার কর্মী, মজলুম Shahidul Alam স্যার লেখা "Memories of the July Uprising" হচ্ছে ৩৬ জুলাই উইকিপিডিয়া, July 36th Calendar.
"August 3rd: The Gulshan Protest A sit-in of professionals transforms to a spontaneous mass protest"- Md. Rubaiyat Sarwar, " A Partial History of the Monsoon'- Jyoti Rahman, "Voices of the Voiceless"- Barrister Manzur Al Matin, " July and I"- Raihana Shams Islam, "Echoes Abroad: Bangladesh diaspora activism during the July uprising'- Shamarukh Mohiuddin, " The Real Colour Revolution in the July Uprising"- Shafiqur Rahman, "36 Days in July: That Made Us Believe Again"- Shayan S. Khan, " United Force of the July Uprising"- Hasibuddin Hussain.
Everyone mentioned has highlighted the significance of the July Revolution in extraordinarily beautiful writing. Thank you all.
'অগ্নিঝরা বর্ষা' নামকরণ এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন আমাদের দীর্ঘদিনের অনলাইন এক্টিভিস্ট সহযোদ্ধা লেখক ইমতিয়াজ মির্জা।
প্রসংগত বলছি- মুক্তিযুদ্ধ খুব কাছে থেকে দেখেছি....। রক্ষীবাহিনী নির্মমতা দেখেছি। পচাত্তরের ১৫ আগস্ট, ৭ নভেম্বরের সিপাহী বিপ্লব প্রত্যক্ষ করেছি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং ১/১১'র সেই সেনাতত্বাবধায়ক সরকার থেকে শুরু করে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সংগ্রামে নিজের যৎকিঞ্চিত অংশগ্রহণ, জুলাই আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথ এবং অনলাইনে অংশীজন হিসাবে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি, চোখের সামনে সহযোদ্ধার মৃত্যু দেখেছি, কিন্তু জুলাইয়ের আন্দোলনের মতো রক্তাক্ত আন্দোলন দেখিনি। তাই আমার চোখে জুলাই আন্দোলন শুধু অগ্নিঝরা বর্ষা, রক্তের বর্ষা ছিলো না, বরং ছিলো রক্তের বন্যা।
এই বই শুধু ইতিহাস নয়, এটি এক যুগের সাক্ষী, এক প্রজন্মের জাগরণ। যারা জুলাই আন্দোলনকে হৃদয়ে ধারণ করেন, তাদের সবার বইটি পড়া উচিত।
©somewhere in net ltd.