নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কর্মব্যস্ততার মধ্যে একটু সময় পেলে কিছু একটা লিখি।

কবির সরদার

কবির সরদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেঘনায় ডুবে যাওয়া অতৃপ্ত আত্মা

২৮ শে জুন, ২০২১ দুপুর ১২:৪০

ছোট বেলা থেকেই আমার ভূত দেখার খুব সখ। কিন্তু আমার সৌভাগ্য না দূর্ভাগ্য জানিনা। ভূতের দেখা এখন পর্যন্ত পেলাম না। কেউ ভূতের কথা বললে আগ্রহভরে শুনতাম। একবার আমার এক জুনিয়র বন্ধু মিন্টু, মানে আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট, সে আমাকে তাদের বাড়ি ভোলার চরফ্যশনে যাওয়ার জন্য দাওয়াত করল এবং বললো তাদের এলাকায় নাকি প্রায়ই ভূত দেখা যায়। তখন তাকে নানান প্রশ্ন করা ধরলাম। ভূত দেখতে কেমন, ওরা কখন আসে কী রূপে আসে ইত্যাদি। ও বললো আমি দেখি নাই তবে উপস্থিতি টের পেয়েছি। সেটা কিভাবে জানতে চাইলে বললো আপনি আমাদের গ্রামের বাড়ি গেলেই দেখতে পাবেন। এর পূর্বে কিন্তু ও আমাকে অনেকবার ওদের বাড়ি দাওয়াত করেও নিতে পারে নি। আজ আমি ওর এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম।

এক শুক্রবার বিকেলে সদরঘাটে ভোলার লঞ্চে দুজন উঠে বসলাম। সন্ধ্যার দিকে লঞ্চ ছাড়ল। সারা রাত গল্প করে আর ঘুমিয়ে পরের দিন সকাল প্রায় ১১ টার দিকে চরফ্যাশন গিয়ে পৌঁছালাম। তখন লঞ্চ ঘাট থেকে গাড়ির কোন ব্যবস্থা ছিল না। ৩ মাইলের মত হাঁটতে হবে। হাঁটতে হাাঁটতে দুপুর সারে ১২ টার দিকে ওদরে বাড়ি আসলাম। ওর বাবার চাকুরি অবস্থায় সবাই ঢাকা থাকত। তখন ওদের ঢাকার বাসায় অনেক গিয়েছি। তাই ওদের ফ্যামিলির সবাই আমার পরিচিত। তারপরও গ্রামের বাড়ি যাওয়ায় আমাকে অতিরিক্ত আপ্যায়ন করল। গোছল সেরে দুপুরের খাবার খেতে বসলাম। অনেক আয়োজন। ওর মা বললো কিছুই তৈরী করতে পারি নাই। ছেলেটা আমার আগে খবর দেয় নি। মিন্টু বললো মা, মিথ্যা মিথ্যা ভূত দেখানোর কথা বলে নিয়ে এসেছি। এবার বুঝতে পারলাম মিন্টুর প্রতারণা। এখানে বেড়ানো মানে সময় নষ্ট করা। তা যাই হোক, এসে যখন পরেছি ঘুরে ঘুরে গ্রাম দেখা যাবে।

দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিলাম। বিকেলে দুজন বের হলাম। এ বাড়ি ও বাড়ি হয়ে এক ছোট্ট গ্রাম্য বাজারে বসলাম। চায়ের দোকানে বসে ওর গ্রামের বন্ধুদের সাথে আলাপ পরিচয় হল। আমি দু একটা কবিতা টবিতা লিখি শুনে আমার কাছে কিছু শুনতে চাইল। আমি হেসে উড়িয়ে দিলাম। বললাম এটা মিন্টুর বানানো কথা। আসলে আমি ভোলা-বরিশাল জীবনে আসিনিতো, তাই এখানকার সমাজ সম্পর্কে একটু ধারণা নিতে এসেছি। ওরা বললো তাহলেতো আপনি আমাদের সমাজ নিয়ে কবিতা লিখবেন, তাই না। আমি আলোচনা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলাম।

সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফেরার পালা। জোছনা রাত। আমার তো আবার ভূত দেখার সখ। তাই সোজা পথে না গিয়ে অন্য কোন পথ আছে কিনা জানতে চাইলাম। নদীর পাড় হয়ে একটা পথ আছে জানাল। তবে সে পথটা অনেক ঘুরানো। আমি সে পথেই যাওয়ার জন্য ওকে তাগাদা দিলাম। অগত্যা ও আমাকে নিয়ে সে পথেই হাঁটা দিল। একটু হাাঁটার পরই বিশাল নদী। মেঘনার মোহনা। কোন কূল কিনারা দেখা যায় না। বালুচর, মাঝে মাঝে কাশবন। আকাশ মেঘশুন্য। ভরা জোছনা। ধুলোবালি শুন্য পরিবেশ। তাই পরিস্কার সব দেখা যায়। নদীর ঢেউগুলো যেন চাঁদের আলোতে চিকচিক করে উঠছে। হাাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে এলাম। আর একটু সামনে এগিয়ে হাতের বায়ে ১ কিঃমিঃ গেলেই ওদের বাড়ি। নদীর পাড়ে আশেপাশে কোন ঘড়বাড়ি নেই।

হঠাৎ নদীর ভিতরে ঝপ্ ঝপ্ শব্দ শুনে তাকালাম। মনে হলো দূরে নৌকার মত কিছু একটা ডুবে যাচ্ছে। আমরা দাঁড়িয়ে পরলাম। শরীরটা কেমন যেন ভারি হয়ে আসছে। নদীতে টর্চের আলো ফেললাম। জোছনা রাতে টর্চের আলো বেশী দূর যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর চাঁদের আলোতেই ষ্পষ্ট দেখতে পেলাম কিছু একটা ভাসতে ভাসতে আমাদের দিকে আসছে। বন্ধু মিন্টু আবার পরের উপকারে ঝাঁপিয়ে পরে। তাই ও মানুষের মত কিছু একটা দেখে নদীতে নেমে পরল। কোমড় সমান পানিতে নেমে একটি শিশুর লাশ তুলে আনল। আমরা দুজন ধরাধরি করে উপরে উঠালাম। মনে হল এখনো জীবিত আছে। পেটে চাপ দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুই বের হল না। অসম্ভব সুন্দর চেহারার শিশুটি মারা গেছে! আমাদের ভাবতে কষ্ট হল। দূরে নদীতে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। দেখি, কোন জীবিত মানুষের সন্ধান পাই কিনা। নাহ, তেমন কিছু দেখলাম না। শিশুটির নিঃশ্বাস প্রশ্বাস পরীক্ষা করলাম, হৃদস্পন্দন দেখলাম। না, জীবনের কোনই আভাস নেই। আরও নিশ্চিত হওয়র জন্য চোখটা খুলে যেই দেখলাম অমনি ভয়ে শিহরে উঠলাম। অসম্ভব লাল দুটো চোখ। জ্বলজ্বল করছে। এটা কোন মানুষের চোখ নয়। প্রচন্ড রকম ভয় পেয়ে দ্রুত বাড়ির পথ ধরলাম। মিন্টুতো ভয়ে কাঁপছে। ফসলের ক্ষেত ধরে ১ কিঃমিঃ এর মত পথ। কোন বাড়িঘর নেই। এতটুকু রাস্তা যেন শেষ হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এই পূর্ণিমার রাতেও যেন অমাবস্যার অন্ধকার। এক মূহুর্তের জন্যও টর্চ লাইট বন্ধ করিনি। মিন্টুকে বার বার বলছি আমরা ঠিক রাস্তায় হাঁটছি তো? কারণ ভয়ে মিন্টুর দিকভ্রম ঘটতে পারে। মিন্টু তেমন কোন কথাই বললো না। আমিও ভয় পেয়ে গেলাম। ভূত আবার মিন্টুর উপর ভর করল কিনা। তাহলে তো আমার আর গতি থাকবে না। কারণ জীবনে প্রথম এই এলাকায় এসেছি। যা হোক আমরা ঠিকই বাড়িতে পৌঁছলাম। মিন্টু ওর মায়ের কাছে কিছু বলতে নিষেধ করল। তাহলে তারা নকি ফকির ওঝা ডেকে হুলুস্থুল কান্ড বেঁধে ফেলবে।

আমাদের দেরি দেখে ওর মা অনেক চিন্তিত ছিল। এই রাতে দুজনেই ভাল করে সাবান দিয়ে গোছল করলাম। মিন্টুর ছোট বোন হাসাহাসি করল। রাতে কেন গোছল করি। বলা বারণ তাই আমিও কিছু বললাম না। মিন্টু বললো রাস্তায় যেই বালু । বালিতে পুরো শরীর কচ্কচ্ করছে। এ অবস্থায় রাতে ঘুমানো মুশকিল হয়ে যাবে। তাই গোসল করে নিলাম।

রাতে খাওয়া সেরে ঘুমাতে গেলাম। মূল ঘরের পাশে ছোট একটা ঘরে আমাদের জন্য বিছানা পাতা হয়েছে। মনে হয় বিছানা অনেক দিন ব্যবহার হয় নি। ট্রাং-এ উঠানো চাদর বালিশের কভার সবগুলোতে কেমন একটা মাইটি পোকার গন্ধ গন্ধ ভাব। যদিও যথেষ্ট পরিমাণ ঝেড়েপোঁছে পরিষ্কার করা হয়েছে। তারপরও ধুয়ে পরিষ্কার করার মত হয় নি। তাদেরই কী দোষ। তারাতো জানতই না আমরা আসব। ওর ছোট বোন গল্প করতে আসল। ও ফিরিয়ে দিল। বললো গত রাতে লঞ্চে ভাল ঘুম গয় নি। এখন ঘুমাবো, তুই যা। শুয়ে শুয়ে মিন্টুকে বললাম কী দেখলাম। মিন্টু ভয়ে ভয়ে বললো আজ থাক, আগামী কাল ডিসকাস করব। চোখ বুজে আছি । ঘুম আসছে না। মনের ভিতর শুধু কী দেখলাম কী দেখলাম করছে। ঘন্টা খানেক পরে চোখে ঘুম ঘুম ভাব আসল। হঠাৎ দরজায় জোরে করা নাড়ার শব্দে জেগে উঠলাম। মিন্টু ভাবল মা হয়ত ডাকছে। বিরক্তি ভাব দেখাল। তাই আমিই উঠে দরজা খুলালাম।

খুলে যা দেখলাম তাতে আমি দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থায় নেই। নদীর পারের সেই শিশুর লাশ নিয়ে এক মহিলা হাজির। বলছে তোমরা আমার ছেলের লাশ একা ফেলে আসলে কেন? তোমাদের ভিতর কী কোন মানবতা নেই। পরিচিত কন্ঠ ভেবে মিন্টু উঠে আসল। দেখল পাশের বাড়ির ওদের রাশিদা ভাবি। মিন্টুকে বললো তুমি আমার ছেলে কে চিন না? মিন্টু বললো, ভাবি আমি আসলে ওকে চিনতে পারি নি। আমি দুঃখিত। ওকে দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। চল বলে লাশটা কোলে নিয়ে হাাঁটতে থাকল। মিন্টুও তৈরী হয়ে তার পিছু পিছু হাঁটা আরম্ভ করল। আমার মনের পর্দায় ভৌতিক কাহিনী ভেসে উঠল। মিন্টুকে ডাকলাম ও আমার কথা শুনল না। জলদি করে ওর মাকে ডাকলাম। ওর মা বেরিয়ে আসল। সংক্ষেপে ওর মাকে বললাম, “খালাম্মা পাশের বাড়ির কোন এক রাশিদা ভাবি ওকে ডেকে নিয়ে গেল তার শিশু ছেলে নাকি মারা গেছে, তাকে দাফন করতে হবে”। ওর মা হৈচৈ আরম্ভ করে দিল। রশিদা ভাবি গত বর্ষায় লঞ্চ ডুবিতে শিশু সন্তান সহ মারা গেছে। ওর মায়ের হৈচৈ এ আশেপাশের লোক বেরিয়ে এল। দ্রুত মিন্টুর খোঁজে বেরিয়ে গেলাম । রাত প্রায় ১ টা । গ্রামে গভীর রাত। গ্রামে ডাকাত পরার মত রব পরে গেল। সবাই অপরিচিত আমাকে দেখছে। মনে করছে ঘটনার নেপথ্যে আমি। হয়ত কোন অশোভন কাজ কেরেছি। কিন্তু আসল ঘটনা জানার পর সবাই আশ্চর্য হয়ে গেল। তারপরও কেন যেন সবাই আমার দিকে সন্দেহের নজরে তাকাতে থাকল। কোথাও মিন্টুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি একজনকে জিজ্ঞাসা করালাম এখানে কোন ভৌতিক এলাকা আছে কিনা। সে জানাল ঐদিকে ছাড়া ভিাটায় একটা কবরস্থান আছে। যেখানে ঐ মহিলাকে কবর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঐ শিশুর লাশ পাওয়া যায় নি। আমি সবাইকে বললাম দ্রুত ঐ কবরস্থানে চলেন। আমরা সবাই দৌড়ে সেখানে গেলাম। গিয়ে দেখি মিন্টু একটা কোদাল দিয়ে কবর খোঁড়ছে। ঠিক যেখানে ঐ মহিলার কবর ছিল, সেখানেই খোঁড়ছে। সবাই গিয়ে মিন্টুকে ধরতেই মিন্টু অজ্ঞান হয়ে পরে গেল। ওকে ধরাধরি করে বাড়ি নিয়ে এল। কোথা থেকে যেন ভূত তারানো একজন হুজুর নিয়ে এল। সে অনেক ঝাড়ফুঁক করে ভূত তাড়াল। এসব করতে করতে সারা রাত কেটে গেল। পরের দিন আমি কয়েকজনকে নিয়ে নদীর পাড় গেলাম। নতুন জায়গা তাই ঠিক ঠাহর করতে পারছিলাম না। নদীর পাড় ধরে খোঁজাখুজি করে এক জায়গায় শিশুর একটা জামা পেলাম। রাশিদা ভাবির স্বামী জামাটা দেখে বলল এটাই আমার বাবুর জামা। জামাটা হাতে নিয়ে কান্নাকাটি জুরে দিল। তাকে ধরাধরি করে বাড়ি নিয়ে এল।

এদিকে গ্রামের লোকজন অনেক দূর থেকে একজন বড় মাওলানা নিয়ে এলেন। পুরো গ্রাম বন্ধ করা হল। আর নদীর পাড়ে পাওয়া ছোট্ট বাবুর জামাটা রাশিদা ভাবির কবরে দাফন করা হল। তারপর কবরস্থানের চার কোনায় চার মাওলানা দাঁড়িয়ে আযান দিয়ে কবরস্থান বন্ধ করে দিল। এদিকে মিন্টু অনেকটা সুস্থ। গ্রামের অনেকে ভাবছে আমিই নাকি এই ভূতের আছড়ের হেতু। তাই ঐ দিনই রাতের লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলাম। মিন্টু কিছুতেই আসতে দিতে চাইল না। উপায় না দেখে ও অসুস্থ শরীর নিয়ে আমার সাথে রওয়ানা হল। অনেক বুঝিয়ে ওকে রেখেই ঢাকা পৌঁছালাম।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুন, ২০২১ দুপুর ১:১৫

রানার ব্লগ বলেছেন: গল্প ভালই !!!! ভুত দেখা আরো ভালো বিশেষ করে রমনীর ভুত তাও আবার ভাবি শ্রেনীর B-)

২৮ শে জুন, ২০২১ দুপুর ১:৩৮

কবির সরদার বলেছেন: ধন্যবাদ, ঐ শ্রেনীটা আমার বিশেষ পছন্দের তাই দেখলাম আর কি।

২| ২৮ শে জুন, ২০২১ দুপুর ২:০২

রানার ব্লগ বলেছেন: বলেন তো ছেলেরা মেয়ে ভুত আর মেয়েরা ছেলে ভুত কেনো দেখে ?

২৮ শে জুন, ২০২১ দুপুর ২:৪০

কবির সরদার বলেছেন: কেন, আপনি চুম্বকীয় থিওরী জানেন না?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.