নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https:/facebook.com/ar.kabir.79

কবির ইয়াহু

সদা সর্বদা সত্যের পক্ষে ।

কবির ইয়াহু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামে নৈতিকতা : কোরআন এবং হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ অধ্যায়:ধর্ষণ (পর্ব-১)

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২১

যখন থেকে মানুষ নিজের অস্তিত্বকে অনুভব করতে শিখেছে, একটি প্রশ্ন তাকে দগ্ধ করে চলেছে, আর তা হল আমরা কোথা থেকে এলাম ! চার শব্দের এই বাক্য মানব সভ্যতায় জন্ম দিয়েছে অঞ্চল ভিত্তিক শতশত ধর্ম; যার কিছু হয়েছে বিলুপ্ত, আর কিছু মানুষকে পরিণত করেছে দাসে, আবদ্ধ করে রেখেছে বিশ্বাসের শৃঙ্খলে । প্রতিটি ধর্ম মানুষকে দিয়েছে একেকটি বিশ্বাসের স্বতন্ত্র সাম্রাজ্য, যেখানে যুক্তি অন্ধ, বিজ্ঞানের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ । মানুষ নিজেকে আবৃত করেছে পরিবার প্রদত্ত ধর্মে, স্বজ্ঞানে নয়–অজ্ঞানে, যা তাদের মানুষথেকে পৃথক করে রেখেছে বহুকাল ধরে; তাদের মাঝে জন্ম দিয়েছে বিকৃত নৈতিকতা আর আঁকড়ে ধরতে শিখিয়েছে অপবিজ্ঞান । যা মানুষ হয়ে অসম্ভব, তা ধর্মের আড়ালে বিশুদ্ধ, কিছু আবার পুরুস্কারযোগ্য—যার প্রলোভন রয়েছে উক্ত ধর্মের সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রধান ঐশীগ্রন্থে ।

বর্তমানে টিকে থাকা দ্বিতীয় প্রধান ধর্ম, ইসলাম, সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ২১ শতাংশ লোক যার অনুসরণ করে চলেছে, সেই ধর্ম এবং তাতে বর্নীত সৃষ্টিকর্তার নির্দেশনা কতখানি সংগতঃ তা আলোচনা কল্পেই মূলত এই লেখার অবতারণা । প্রায় ১৪০০ বছর পুর্বে জন্ম নেওয়া ধর্মটি মানুষ কে কতখানি নৈতিকতা শেখায় অথবা বিশ্বাসের অন্তর্জালে আবদ্ধ মানুষগুলো কে কতখানি ভালবাসতে শেখায় তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ । ইসলামি ঐশীগ্রন্থ, কোরআন, যার নির্দেশনা যতখানি না দৈব তার থেকে অনেক বেশি হিংস্র মনোভাবাপন্ন মানবীয়, মানুষকে ব্যাবহার করে মধ্যযুগীয় পন্থায় । যাতে স্বার্থ রক্ষা হয় মুসলিম পুরুষের, অনেকটা বর্বর প্রথায়, আর দুর্ভোগ ডেকে আনে তাদের ওপর যারা নারী অথবা যারা স্বীকার করে না কোরআনের ঐশী বানী ।

ইসলামে বর্নীত সৃষ্টিকর্তা, আল্লাহ, যার অস্তিত্ব অবতীর্ন হয়েছ সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত পুরুষ নবী মুহম্মদের মাধ্যমে, মুসলিম জাতির পথ প্রদর্শনে পাঠিয়েছেন কোরআনের ঐশীবানীগুলো—যা অপরিবর্তনীয় এবং অবশ্য পালনীয় । নবীর কার্যকলাপ এবং বক্তব্য নিয়ে লিপিবদ্ধ হয়েছে হাদিস, একজন বিশ্বাসীর জন্যে যা আল্লাহ অনুমোদিত জীবন নিয়ন্ত্রণ ব্যাবস্থা—ব্যাখ্যা করে কোরআনে বর্ণীত আয়াতের প্রেক্ষাপট । কোরআন নিজে অসম্পূর্ণ, একজন বিশ্বাসীর ধর্মীয় জীবনে পূর্ণতা এনে দিতে সে অক্ষম; হাদিসে লিপিবদ্ধ বাক্যগুলোই তাকে করে তোলে যথার্থ ধার্মিক ।

কোরআন যদি হয় সরাসরি আল্লাহ-র থেকে পাঠানো নির্দেশনা, একজন মুসলিমের বিশ্বাসে যিনি সমগ্র মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, হতে হবে সমগ্র মানব জাতির কাছে গ্রহনযোগ্য এবং নির্ভুল একটি প্রস্তাবনা । ঐশীগ্রন্থ কোরআন, সেই সাথে হাদিসও, হতে হবে সকল সময় এবং সকল স্থানের মানুষের জন্যে সর্বোৎকৃষ্ট জীবন নিয়ন্ত্রণ ব্যাবস্থা । কোন সৃষ্টিকর্তা যদি থেকেই থাকেন, যদি আদৌ কোন নির্দেশনা দিয়েই থাকেন, তা মানব জাতিকে শেখাবে মানবিকতা, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও সহমর্মিতা; ওতে স্থান পাবে না কোন বর্বরতা, কিংবা কোন হিংসাত্মক কর্মকান্ডের সমর্থন ।

প্রথম অধ্যায় : ধর্ষণ

ধর্ষণ নিঃসন্দেহে একটি অমানবিক কাজ, যেখানে এক বা একাধিক পুরুষ কোন নারীর ওপর তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিনা সম্মতিতে জোর-পূর্বক, ভয়ভীতি প্রদর্শন অথবা ছলনার আশ্রয় নিয়ে সঙ্গমে লিপ্ত হয় । নারীর ওপর পুরুষের চরম আধিপত্যের উদাহরণ ধর্ষণ । সাম্রাজ্য বিস্তারের আদি-পর্ব থেকেই যুদ্ধ হয় পুরুষে-পুরুষে, আর ফল ভোগ করে নারী – বিজেতা কতৃক ধর্ষিত হওয়ার মাধ্যমে, যেন বিজিতের ঔরসে জন্ম হয় বিজেতার পৌরুষ । কোন ধর্মীয় গ্রন্থ, যাতে ধর্ষণ অনুমোদিত, যতটা না ঈশ্বর প্রদত্ব তার চেয়ে অনেক বেশি পুরুষ-সৃষ্ট । এর ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বিশ্বাসের সাম্রাজ্যে পুরুষ হয়েছে ক্ষমতাধর, আর নারী সর্বদা পুরুষের অধীন, যাতে তারা নিয়ন্ত্রন করতে পারে সে নারীদেহ ।

ঐশীগ্রন্থ কোরআন-এ ধর্ষণ জাতীয় কোন শব্দের উল্লেখ নেই, যেমনটি নেই এমন কোন নির্দেশনা যা পরোক্ষভাবে হলেও জোর-পুর্বক যৌন উৎপীড়ন কে নিরুৎসাহিত করে । বরং রয়েছে এমন কিছু আয়াত যা অবস্থা বিশেষে অনুমোদন দেয় নারীর ওপর পুরুষের বল প্রয়োগের চরম রূপ–ধর্ষণকে ।

নিচের আয়াত গুলোকে বিশ্লেষণ করা যাক ।

[সুরা আন-নিসা আয়াত ২৪]

এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া (তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়) সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ–এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয়।

Also (prohibited are) women already married, except those whom your right hands possess: Thus hath Allah ordained (prohibitions) against you: Except for these, all others are lawful, provided ye seek (them in marriage) with gifts from your property,- desiring chastity, not lust.

[সুরা আল-মুমিনুন আয়াত ৫-৭]

(সেই সকল মুমিনগণ সফলকাম) যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদেরকে (স্ত্রী এবং অধিকৃত দাসী) ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালংঘনকারী হবে।

Who abstain from sex, except with those joined to them in the marriage bond, or (the captives) whom their right hands possess – for (in their case) they are free from blame.

[সুরা আল-আহযাব আয়াত ৫০]

হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ব করে দেন ।

O Prophet! We have made lawful to thee thy wives to whom thou hast paid their dowers; and those whom thy right hand possesses out of the prisoners of war whom Allah has assigned to thee.

[সুরা আল-মা’আরিজ আয়াত ২৯-৩০]

(তারা স্বতন্ত্র) যারা তাদের যৌন-অঙ্গকে সংযত রাখে, কিন্তু তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভূক্ত দাসীদের বেলায় তিরস্কৃত হবে না।

Except the observers of prayer, those who guard their private parts (abstaining from sexual activities), except from their wives or those their right hands possess, for indeed, they are not to be blamed.

উপরোক্ত আয়াত গুলো অনুযায়ী, একজন ইসলাম অনুসারি পুরুষের নিজ স্ত্রীগণ এবং যুদ্ধেবন্দিনী (দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়) বা দাসিদের সাথে যৌন সংসর্গ আল্লাহ কতৃক অনুমোদিত । এখানে আয়াতটি বুঝতে হলে তা কোন প্রেক্ষিতে নবী মুহম্মদের ওপর নাজিল হয়েছিল জানা আবশ্যক । হাদিস থেকে পাই, হুনাইন যুদ্ধের সময় নবী মুহম্মদ ও তার সহচরদের হাতে বন্দী হয় বেশ কিছু পরাজিত পুরুষ, যারা বিধর্মী, আর তাদের স্ত্রীগণ । যোদ্ধাদের দ্বিধা ছিল ঐসমস্ত নারীদের সাথে জোর-পুর্বক সঙ্গমে লিপ্ত হতে, যেখানে উপস্থিত ছিল তাদের স্বামীরা; ফলস্বরূপ অবতীর্ণ হয় আয়াত ৪:২৪ ।

[সহিহ মুসলিম বই ৮ হাদিস ৩৪৩২]

আবু সাইদ আল খুদরি বর্ণনা করেছেন যে, হুনাইন যুদ্ধের সময় আল্লাহর নবী আওতাস-এ এক সৈন্যদল পাঠালেন, সেখানে তারা শত্রুপক্ষের সম্মুখীন হলেন এবং তাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন । যুদ্ধে জয়ী হলে তাদের হাতে কিছু বন্দী আসলো, আর নবীর অনুসারিদের দেখে মনে হল তারা আটককৃত নারীদের সাথে যৌন-ক্রিয়ার লিপ্ত হতে দ্বিধাগ্রস্থ, যেহেতু তাদের মুর্তিপূজক স্বামীরা সেখানে উপস্থিত । সেই মুহুর্তে মহান আল্লাহ পাঠালেন কোরআনের আয়াত, ‘‘এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া (তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়) সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ’’ (৪:২৪) –অর্থাৎ বন্দিনী নারীদের সাথে যৌনতা আমাদের জন্যে বৈধ হয়ে গেল ।

একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যাবে [সহিহ মুসলিম বই ৮ হাদিস ৩৪৩৩ এবং সুনান আবু দাউদ বই ১১ হাদিস ২১৫০]

খ্যাতনামা কোরআন ব্যাখ্যাকারী, ইবনে কাথির, আয়াত ৪:২৪ নিয়ে কি বলেছেন দেখা যাক ।

‘‘ আয়াতটি বলছে, ‘তাদের ছাড়া, তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়, সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ’– অর্থাৎ তোমাদের জন্যে সেইসব স্ত্রীলোক বিয়ে করার জন্যে নিষিদ্ধ যারা ইতিমধ্যে বিবাহিত, তবে তাদের ছাড়া যাদের তোমরা যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে বন্দী করে এনেছো, তবে তার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে যেন তারা গর্ভবতী না হয় । ইমাম আহমেদ উল্লেখ করেছেন যে, সাইদ আল খুদরি বলেছেন, আওতাস অঞ্চল থেকে আমরা কিছু নারী আটক করলাম যারা আগে থেকেই বিবাহিত ছিল, আর আমরা তাদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হতে অপছন্দ করলাম যেহেতু তাদের প্রত্যকের স্বামী ছিল । ফলে আমরা আল্লাহর নবীকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম, আর তখন আয়াত নাজিল হল, ‘‘আর তাদের ছাড়া, তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়, সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ’ । ফলস্বরূপ আমরা তাদের সাথে বিনা দ্বিধায় যৌন সংসর্গ করতে পারলাম । হাদিসটি আত-তিরমিজি, আন-নাসাঈ এবং সহিহ মুসলিম কতৃক সমর্থিত । ’’

আল-জালালাইন থেকে প্রাপ্ত তাফসীর, ।

‘‘ তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ বিবাহিত মহিলারা (স্বাধীন-মুসলিম-নারী হোক বা না হোক), যাদের স্বামী বর্তমান, তবে বিয়ে করতে পারো যদি তারা তাদের স্বামী দ্বারা পরিত্যাক্ত হয়; আর আয়ত্তে রাখো, যাদেরকে তোমাদের দক্ষিণ হস্ত অধিকার করে রেখেছে যুদ্ধ বন্দিনীদের ভেতর থেকে, যাদের সাথে তোমরা হয়তো যৌন-কার্য করেছো, শত্রু শিবিরে স্বামী থাকতে পারে জেনেও, তবে অবশ্যই আগে নিশ্চিত হওয়ার নাও যে তারা গর্ভবতী নয় (রজঃচক্র সম্পূর্ণ হওয়ার পর); আর এটাই আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন । ’’

ইবনে আব্বাস থেকে প্রাপ্ত তাফসীর,

‘‘ আর যুদ্ধবন্দিনীদের ভেতর থেকে সমস্ত যুবতী বা বিবাহিত নারী, যদি তাদের স্বামী যুদ্ধভূমিতে অবস্থানও করে, তারা গর্ভবতী নয় নিশ্চিত হলে এবং রজঃচক্র সম্পন্ন হওয়ার পর তোমাদের জন্যে (যৌন সংসর্গের উদ্দেশ্যে) বৈধ হয়ে যাবে । ’’

এবার দেখা যাক আয়াত ২৩:৫-৭ নিয়ে ইবনে কাথির কি ব্যাখ্যা দেন,

‘‘ আয়াত বলছে, তারাই সঠিক পথের যারা কোন অবৈধ কাজ থেকে নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, এবং সেসব কাজ করে না যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন (যেমন ব্যাভিচার, সমকামিতা) এবং অন্যকারো প্রতি নিজের কামনা প্রকাশ করে না, তাদের ছাড়া যারা তার স্ত্রী, আল্লাহ যাদের বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন, আর তাদের ছাড়া যাদেরকে তারা যুদ্ধবন্দিনীদের ভেতর থেকে লাভ করেছে (ক্রীতদাসি) । কেউ যদি তার জন্যে আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত কিছু বেছে নেয় তবে সেটার জন্যে অভিযুক্ত হবে না, কিংবা তাতে কোন গুনাহ নেই । ’’

নিচের হাদিসটি উপরোক্ত বিবরণ কে আরো খোলসা করে,

[সুনান আবু দাউদ বই ১১ হাদিস ২১৫৩]

রুয়ায়ফি ইবনে তাবিত আল-আনসারি কতৃক বর্ণীত, আমার কি বলা উচিত নয় হুনাইন যুদ্ধের দিনে আমি কি শুনেছি আল্লাহর নবীর থেকে:যে ব্যাক্তি আল্লাহ এবং আখিরাতে বিশ্বাস করে, তার জন্যে কোন গর্ভবতী নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক করা বৈধ নয়, কিংবা বৈধ নয় এমন কোন যুদ্ধবন্দি নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক করা যার রজোঃচক্র চলছে, এবং আরো বৈধ নয় ভাগ করার পুর্বেই যুদ্ধেলব্ধ মাল বিক্রয় করা ।

কোরআন, একজন সৃষ্টিকর্তা প্রেরিত ঐশীগ্রন্থ, এটা অন্তত স্পষ্টতই নির্দেশ করছে যে, প্রকৃত ইসলাম অনুসারী সেই যে তার যৌন জীবনকে মোহর-প্রদানকৃত স্ত্রীগণ এবং যুদ্ধেপ্রাপ্ত বন্দিনী কিংবা দাসিদের ভেতরেই সীমাবদ্ধ রাখে । ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইসলামের অগ্রসর সম্ভব হয়েছে যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে; যেখানে যুদ্ধেলব্ধ নারী বিজেতার দ্বারা ধর্ষিত হওয়াই ছিল পরম্পরা । আর তা অমানবিক থেকে বিশুদ্ধ হয়েছে কতগুলো ঐশী বানীর মাধ্যমে; মধ্যযুগীয় যেসব রীতি মুসলিম জাতির জন্যে পথ-প্রদর্শন করে আসছে বহু বছর ধরে ।

কোন নারীর সাথে তার স্বামী হন্তক কতৃক, কিংবা বন্দী স্বামীর সামনে আক্রমণকারীর দ্বারা যৌন সংসর্গ বলপুর্বক, আর তা ধর্ষণ, যে অনুমোদন কখনোই দৈব নয়, বরং পুরুষ-স্বার্থে রচিত । পরবর্তি প্রথায় বন্দী নারীদের দাস হিসেবে কেনা-বেচার অনুমোদনও দেয় ইসলাম, যা বর্বর । দাস প্রথায় কোন বন্দিনী গর্ভবতি হলে তার জন্যে ভালো দাম ওঠে না; ফলস্বরূপ মুসলিম দের মাঝে আজল (coitus interruptus যোনীর বাইরে বীর্যপাত) প্রকৃয়া অনুসরণের বিবরণ পাওয়া যায় । যদিও নিজ স্ত্রীর ক্ষেত্রে এরূপ তখনই করা যাবে যখন তার থেকে অনুমতি মিলবে, তবে দাসি কিংবা যুদ্ধবন্দিনীদের বেলায় অনুমতি নিষ্প্রয়োজন ।

নিচের হাদিস গুলো দেখা যাক,

[সহিহ বুখারি বই ৫৯ হাদিস ৪৫৯]

ইবনে মুহাইরিজ বর্ণনা করেছেন, আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম আর আবু সাইদ আল খুদরি কে পেলাম । আমি তার পাশে বসে পড়লাম আর আজল সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম । আবু সাইদ বললেন, ‘‘আমরা আল্লাহর নবীর সাথে বানু মুস্তালিকের যুদ্ধে গেলাম, এবং আমরা কিছু আরব নারী যুদ্ধবন্দিনী হিসেবে পেলাম । আমাদের জন্যে কৌমার্য পালন করা অসাধ্য হয়ে উঠেছিল, আর তাই আমরা তাদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হতে চাইলাম এবং আমরা তখন আজল করতেই ভালবাসতাম । তবে আমরা যখন আজল করার সিদ্ধান্ত নিলাম তখন চিন্তা করলাম, আল্লাহর রসুল আমাদের সাথেই আছেন, এই অবস্থায় আমরা তাকে জিজ্ঞাসা না করে কিভাবে আজল করি । আমরা তাকে আজলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি উত্তর দিলেন, ‘তোমাদের জন্যে উত্তম হবে এটা না করা, কেননা যা জন্ম হবার তা হবেই’ ।’’

[সহিহ বুখারি বই ৬২ হাদিস ১৩৭]

আবু সাইদ আল খুদরি বর্ণীত, যুদ্ধেলব্ধ মাল হিসেবে আমরা কিছু যুদ্ধবন্দিনী পেলাম, আর আমরা সাধারনত তাদের সাথে আজল প্রকৃয়াই অনুসরণ করতাম । তাই আমরা আল্লাহর রসুল কে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, ‘তোমরা কি বরাবরই এমনটা করে থাকো ?’ তিনি তিন বার প্রশ্নটি উচ্চারন করলেন । এবং আরো বললেন, ‘আখিরাত পর্যন্ত যতগুলো আত্মা সৃষ্টি হবে তার প্রত্যেকটি জন্ম গ্রহন করবে’ ।

একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যাবে [সহিহ বুখারি বই ৯৩ হাদিস ৫০৬ এবং সহিহ মুসলিম বই ৮ হাদিস ৩৩৭১, ৩৩৭৩]

হাদিস থেকে সাক্ষ্য পাচ্ছি, ইসলামের নবী অধিকৃত নারী ধর্ষণের ব্যাপারে কোন বাধা তৈরী করেননি, বরং সঙ্গম পরবর্তী বীর্য-স্থলন ধর্ষিত নারীর দেহের বাইরে ঘটানো কে অনুৎসাহিত করছেন । যারা সাধারণত আজল প্রকৃয়া অনুসরণ করতে ইচ্ছুক ছিল তাদের মুলত দুইটি উদ্দেশ্য ছিল — প্রথমত, তারা চায়নি ধর্ষিত নারীরা গর্ভবতী হয়ে যাক, এবং দ্বিতীয়ত, তারা যেন পরবর্তিতে বিক্রি করার মত অবস্থায় থাকে । কেননা, কোন যুদ্ধবন্দিনী এরূপ বল-পুর্বক সঙ্গমে গর্ভবতী হয়ে পড়লে বিক্রি করা সম্ভবপর হত না । মধ্যযুগীয় আরবে দাস কেনা-বেচা ছিল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, যার প্রমান মেলে সমগ্র কোরআন ও হাদিসে । ধর্মের প্রসার এবং যুদ্ধের নামে বিধর্মী নিরস্র মানুষের ওপর অতর্কিত হামলা চালানোর উদ্দেশ্য ছিল মুলত যৌন-দাসি সংগ্রহ এবং বন্দীদের দাস হিসেবে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন ।

নিচের হাদিসটি উক্ত বিষয়ের ওপর আরো একটু আলোকপাত করে,

[সহিহ মুসলিম বই ১৯ হাদিস ৪৩৪৫]

সালামা কতৃক বর্ণীত : আমরা ফযরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম, আর আবু বকর আমাদের সেনাপতি ছিলেন যাকে আল্লাহর নবী নিযুক্ত করেছিলেন । রাতের শেষ ভাবে আমরা তাদের ওপর চারিদিক থেকে অতর্কিত আক্রমণ করি, এবং তাদের পানিপূর্ণ স্থানে পৌছাই যেখানে তাদের সাথে যুদ্ধ সংগঠিত হয় । শত্রুদের কিছু হত্যা করা হয় আর কিছু বন্দী হিসেবে নেওয়া হয় । আমি কিছু মানুষের জটলা দেখতে পাই যাদের সবাই হয় নারী নয় ছোট বাচ্চা ছিল । আমি আশংকা করছিলাম তাদের ধরার আগেই তারা পাহাড়ের ওপাশে চলে যাবে, তাই তাদের আর পাহাড়ে মাঝে আমি তীর নিক্ষেপ করলাম । এটা দেখে তারা পালানো থেকে বিরত থাকল । তারপর আমি তাদের ধরে নিয়ে আসলাম । তাদের ভেতর বনি ফযরদের এক নারী ছিল, আর সাথে ছিল তার কন্যা, বলা যায় আরবের সুন্দরী রমনীদের মাঝে সে একজন । আমি তাদের তাড়িয়ে নিয়ে আসলাম আবু বকরের কাছে, আর তিনি ঐ মেয়েটিকে আমাকে দিলেন যুদ্ধে-লব্ধ মালের ভাগ হিসেবে ।

অপেক্ষা....পর্ব ২ এর জন্য...।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৪

আজমান আন্দালিব বলেছেন: আলোচনা চলুক....পক্ষে বিপক্ষে

২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৪

আজমান আন্দালিব বলেছেন: আলোচনা চলুক....পক্ষে বিপক্ষে

৩| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৬

সারাহেপি বলেছেন: আল্লাহ পাক এই সব আবালদের সঠিক ভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা দান করুন। মিথ্যে কথা বলা আর Google মামার কাছে থেকে ইসলামের ইতিহাস নিয়ে জ্ঞান অর্জন করা থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন।

৪| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৭

মেহেদী হাসান শীষ বলেছেন: ভাই আপনাকে সালাম এইরকম ইসলামিক পোস্ট দিবেন অনেক কিছু জানতে পারব

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.