![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
।।উলগুলানের* শেষ নাই, মহাশ্বেতার মরণ নাই।।
*উলগুলান=লড়াই
চলে গেলেন প্রিয় কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী। গত একমাসে বেশিরভাগ সময়ই পড়ছিলাম মহাশ্বেতা দেবীর উপন্যাস ‘অরণ্যের অধিকার’, ‘চোট্টি মুণ্ডা এবং তার তীর’ এবং ‘কবি বন্দ্যঘটি গাঞির জীবন ও মৃত্যু’। বার বার পড়ছিলাম। ২০০৬ সালে প্রথম যখন ‘অরণ্যের অধিকার’ পড়ি, বিরসা মুণ্ডা এবং তাঁর অনুসারীদের প্রতি ঘটে যাওয়া অন্যায় নিপীড়ন নির্যাতনের জ্বলজ্যান্ত কাহিনি পড়ে পড়ে মনে হলো মানুষের প্রতি মানুষ শাসনের নামে এমন দমন-পীড়ন চালাতে পারে! মানুষের প্রতি মানুষের এমন অসভ্যতা সভ্যতার নামে এমন অবলীলায় ঘটতে পারে! আজও যা ঘটে চলেছে নির্বিবাদে! উপন্যাসের শেষ পৃষ্ঠায় গিয়ে অঝোর ধারায় নিজের চোখের পানি ঝরছিল! চোখের পানির ওপর নিজের আর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। সেই সাহিত্যিক মহাশ্বেতা!
জীবদ্দশায় তাঁর কাছে যেতে পারতাম, দেখা করে শান্তি পেতে পারতাম। কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয় নি। একটা বাধা সেই সৌভাগ্য ঘটতে দেয় নি আর তাহলো, বড় বড় সাহিত্যিকের প্রতি মানুষের লোকদেখানো ভালোবাসা কাছে ঘেঁষা এত বেশি যে তার আর ইচ্ছে হয় নি। কিন্তু দূর থেকে প্রিয় সাহিত্যিককে তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ভালোবেসেছি। কাছে গেছি। অভিন্ন হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছি। মানুষের অধিকার ভূলুণ্ঠিত যেথায় সেথায় যন্ত্রণার্ত হচ্ছি। প্রিয় মহাশ্বেতা!
মহাশ্বেতার চেয়ে ন্যূন কত লেখককে নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয়েছে অথচ তাঁকে দেওয়া হয় নি। দু’একবার তাঁর নাম তালিকায় উঠেছিল বলে জানা যায় কিন্তু নোবেল কমিটি বুঝতে পারে নি মহাশ্বেতাকে। বহু তৈলদায়ী ব্যক্তিকেও তারা পুরস্কারটি দিয়েছে কিন্তু মহাশ্বেতাকে দিতে পারে নি। তেমন মহাত্মা হয়তো তাদের ছিল না। প্রয়োজন নেই। হয়তো সেটি হলে মহাশ্বেতার লড়াই ম্রিয়মাণ হতো। সুতরাং মহাশ্বেতা সমস্ত প্রাইজের ঊধ্র্বে। তিনি ছিলেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সত্যিকার মহাত্মা। প্রিয় মহাশ্বেতা!
মহান এই সাহিত্যিককে বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁর অমর আত্মা যুগ যুগান্ত মানুষের মনে অধিকারের মশাল জ্বালবে। অনন্তকাল তিনি পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের মনে বেঁচে থাকবেন। ‘উলগুলানের শেষ নাই, বিরসার মরণ নাই।’ প্রিয়জন, প্রিয়মানুষ, প্রিয় সাহিত্যিক মহাশ্বেতারও মরণ নেই।
তথ্য অনুযায়ী, গুরুতর অসুস্থ হয়ে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই ২০১৬) বেলা ৩টা ১৬ মিনিটে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। গত ২২ মে ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন এই হাসপাতালে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেছেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মহাশ্বেতা দেবীর প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ রবীন্দ্রসদনে রাখা হবে। এরপর মরদেহ নিয়ে কলকাতায় মহাশোক মিছিল হবে। এরপর দুপুরে কেওড়াতলায় মহাশ্মশানে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
মহাশ্বেতা দেবীর জন্ম বাংলাদেশের ঢাকাতে। ১৯২৬ সালের ১৪ জানুয়ারি। তাঁর লেখা ‘হাজার চুরাশির মা’, ‘সংঘর্ষ’, ‘রুদালি’সহ বেশ কয়েকটি উপন্যাসের চলচ্চিত্র হয়েছে। পেয়েছেন তিনি সাহিত্য একাডেমি ও জ্ঞানপীঠ পুরস্কার। আরও পেয়েছেন পদ্মবিভূষণ, র্যামন মেগসাইসাই পুরস্কার ইত্যাদি।
কাজী মোঃ জাকির হোসেন's photo.
©somewhere in net ltd.