নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সোনার মানুষ খুঁজি

কাজী জাকির হোসেন

প্রাক্তন সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক

কাজী জাকির হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নগরবাসীর মরণফাঁদ মেডিক্যাল বর্জ্য

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০২

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মহানগরীগুলোর পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ মেডিক্যাল বর্জ্য। যাকে চিকিৎসা বর্জ্য বা হাসপাতাল বর্জ্য বা ক্লিনিক্যাল বর্জ্য বলেও অভিহিত করা হয়।মেডিক্যাল বর্জ্য বলতে যা বুঝায়, তা হচ্ছে, রোগীর কফ, থুতু, রোগীর ব্যবহূত সুচ, নজল, সিরিঞ্জ, রক্ত ও পুঁজযুক্ত তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, হ্যান্ডগ্লাভস, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অংশবিশেষ, টিউমার, ওষুধের শিশি, রক্তের ব্যাগ, ওষুধ, স্যালাইন ব্যাগসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য।

এরূপ প্রায় ১৮ প্রকারের বর্জ্য রয়েছে, যেগুলো সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো থেকে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে নিঃসরিত হচ্ছে। এসব বর্জ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য যেমন মারাত্মক হুমকিস্বরূপ, তেমনি পরিবেশের জন্যও ভীষণ ক্ষতিকর। মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে খোলা জায়গায় এসব বর্জ্য ফেলায় নাগরিকদের যক্ষা, চর্মরোগসহ নানা ধরনের সংক্রামক রোগ হচ্ছে। পাশাপাশি ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইসিস সি এবং এইডসের ঝুঁকিতেও পড়ছে মানুষ।

তথ্য অনুযায়ী, জনবহুল শহরগুলোতে দৈনিক যে বর্জ্য সৃষ্টি হয়, তার মধ্যে ৮০ শতাংশ সাধারণ গৃহস্থালি বর্জ্য আর ২০ শতাংশ হচ্ছে মেডিক্যাল বর্জ্য। সাধারণ বর্জ্যের চেয়েও মেডিক্যাল বর্জ্য স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। ২০ শতাংশ মেডিক্যাল বর্জ্য কোনো না কোনোভাবে ৮০ শতাংশ সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে পুরো বর্জ্যই জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।


মেডিক্যাল বর্জ্য উন্মুক্ত স্থান বা সাধারণ ডাস্টবিনে ফেলা যায় না। এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য 'চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বিধিমালা-২০০৮ রয়েছে। যে বিধিমালা বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠনাগুলো যথাযথভাবে মানছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় ৫০ টন চিকিৎসা বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে প্রিজম নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাত্র চার টন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয়। অবশিষ্ট প্রায় ৪৬ টন বর্জ্য রাস্তায় উন্মুক্ত সাধারণ ডাস্টবিন, নালা, নর্দমা ও নদীতে গিয়ে জমা হত।যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনতে পারে।বর্তমানে ঢাকা সিটি করপোরেশন মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্বে রয়েছে।

অনেক সময় দেখা যায়, রোগীর ব্যবহৃত সিরিঞ্জ-ব্যাগ ইত্যাদি পুনরায় বাজারজাত হচ্ছে এবং তা মানুষের চিকিৎসায় পুনরায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে একজন সাধারণ মানুষও ভয়াবহ রোগে সংক্রমিত হতে পারে। এসব বিষয়ে যেসব হাসপাতাল বা ক্লিনিক বিশেষ নজর দিচ্ছে না তারা স্বাস্থ্যসেবার নামে রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বর্জ্য গৃহস্থালি বর্জ্যের চাইতেও বেশি ক্ষতিকর। বিশেষত সিরিঞ্জ ও স্যালাইনের ব্যাগ হেপাটাইটিস বি ও সিসহ বেশকিছু রোগের জীবাণু ছড়ায়। এ সংক্রান্ত তরল পদার্থ নর্দমায় ফেলে রাখাও বাঞ্ছনীয় নয়। কেননা ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে টাইফয়েড ও আমাশয়ের মতো পানিবাহিত রোগের জীবাণু বহুদিন বেঁচে থাকে। বর্জ্যের বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ হতে শ্বাসতন্ত্রের রোগ, চর্মরোগ এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। কোনো কোনো বর্জ্যের কারণে যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া এমনকি এইডসের ন্যায় মরণব্যাধিরও ঝুঁকি বাড়ে। তাই মেডিক্যাল বর্জ্যের ব্যাপারে অবহেলা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।

বাংলাদেশে বিভিন্ন শিল্প উদ্যোগে বর্জ্য শোধনাগার গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য ইটিপি স্থাপনকে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। অনুরূপভাবে বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিজেদের উৎপন্ন বর্জ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ ও ধ্বংসসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে নগরবাসী এটাই প্রত্যাশা করে।

সরকারি-বেসরকারি ও অনুমোদিত-অননুমোদিত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় দুহাজার। মহানগরী চট্টগ্রামে এ সংখ্যা প্রায় দেড়শ। স্বাস্থ্যসেবাদানকারী এসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকা আবশ্যক। এ ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ এখনো অপ্রতুল। নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে হলে এবং পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে অনতিবিলম্বে শুধু রাজধানী ঢাকা শহরই নয়, অন্যান্য মহানগর ও শহরেও মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

লেখাটি তৈরিতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশ বেতারের মহানগর অনুষ্ঠানে পঠিতব্য

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.