![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইলেক্ট্রনিক্স এবং ইলেক্ট্রিক্যাল পণ্যের ব্যবহার হু হু করে বাড়ছে। কিন্তু ই-পণ্যের এই যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে তৈরি ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কতটুকু জ্ঞান আছে আমাদের কিংবা ই-বর্জ্যের ক্ষতিকর ভয়াবহ পরিণতির ব্যাপারে কতটুকু সচেতন আমরা? ই-বর্জ্য হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক্স ও ইলেক্ট্রিক্যাল বর্জ্যের অপর নাম। ব্যবহারের অযোগ্য ইলেক্ট্রনিক্স ও ইলেক্ট্রিক্যাল পণ্যকেই ই-বর্জ্য বলে। পরিত্যক্ত রেফ্রিজারেটর, ওভেন, টেলিভিশন, মুঠোফোন, মনিটর, এয়ারকন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, ডিভিডি প্লেয়ার, সিএফএল বাল্ব ইত্যাদি ই-বর্জ্যের অন্তর্ভুক্ত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো ই-পণ্য বাতিল হচ্ছে, মানুষ গ্রহণ করছে নতুন নতুন মডেল। কিন্তু বাতিল পণ্য যে বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে, সে বর্জ্য কোথায় যাবে তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই উৎপাদক, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক কিংবা ব্যবহারী কারোরই।
বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পণ্যের যেমন দ্রুতগতিতে প্রসার ঘটছে, তেমনি এর অপ্রয়োজনীয় উপাদানের যথাযথ সংরক্ষণ কিংবা ব্যবহারযোগ্যতা নিয়ে দক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠায় পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে মানব সভ্যতা ও বৈশ্বিক পরিবেশ। ই-পণ্য থেকে মানব সভ্যতা যেমন দুহাত পেতে সাহায্য নিচ্ছে, সেই হারে ই-বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে এখনো ভাবনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি মানুষ। যার ফলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি মোকাবেলায় লক্ষ্যণীয় কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। অথচ বিশ্বজুড়ে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির বর্জ্য বা ই-বর্জ্য ২০১৭ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতিসংঘভিত্তিক এক গবেষণায় অনুমান করা হচ্ছে, সারা বিশ্বের এসব বর্জ্যের ওজন হবে প্রায় ২০০টি এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের (নিউইয়র্ক) ওজনের সমান।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনপি) বলছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অসচেতনতার কারণে বেশিরভাগ ই-বর্জ্যই ওই সমস্ত দেশে পাচার হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে উন্নত দেশগুলো ই-বর্জ্যের ভাগারে পরিণত করছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনীতি ও প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এমার্জিং টাইগার। বর্তমান সরকার দেশকে ইতোমধ্যে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করে তুলেছে। এই উন্নয়নের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ প্রচেষ্টা। সঙ্গতকারণেই সরকারকে প্রযুক্তির ব্যাপকভিত্তিক ব্যবহার, প্রচার ও প্রসারের প্রতি জোর দিতে হয়েছে।সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বহু কার্যক্রম এরই মধ্যে ডিজিটাইলাইজেশনের আওতায় এসে গেছে। যে কারণে দেশে ই-পণ্যের ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে গেছে। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ই-বর্জ্যের পরিমাণ। তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন বছরে ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টন ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এই বর্জ্য অপসারণ কিংবা পুনঃব্যবহারের তেমন কোনো কার্যতকর ব্যবস্থা নেই। অথচ ই-বর্জ্য পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য যে মারাত্মক হুমকি, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইলেকট্রনিক্স পণ্য শুধু প্লাস্টিক, লোহা–তামা বা কঠিন ধাতব পদার্থ দিয়েই তৈরি হয় না, এগুলো তৈরিতে আরও ব্যবহার করা হয় সিসা, মার্কারি, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক, বেরেলিয়াম, ফাইবার গ্লাস, কার্বন, সিলিকন, পারদ- পণ্যের প্রয়োজন অনুযায়ী আরও বিভিন্ন উপাদান। এসব বিষাক্ত উপাদান ই-বর্জ্য হয়ে মাটিতে এবং পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। চক্রাকারে তা আবার মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। মানুষের শরীরে এটি প্রথমত ত্বকের বিভিন্ন রোগ এবং পরবর্তী পর্যায়ে কিডনি, ফুসফুস, ব্রেন, হার্ট, স্নায়ুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এছাড়া ই-বর্জ্য উচ্চমাত্রায় গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ করে, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে আরও ত্বরান্বিত করছে।
বাংলাদেশে পুরানো ইলেকট্রনিক্স পণ্যে ধ্বংস বা পুনর্ব্যবহারের জন্য কোন স্থান বা অবকাঠামো নেই। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এগুলো অল্প দামে কিনে সেটা ভেঙে এর প্রয়োজনীয় উপাদান রেখে বাকিটা বিক্রি করে দিচ্ছেন ভাঙারি দোকানির কাছে। তারা এগুলো থেকে যেটুকু প্রয়োজন মনে করছেন রাখছেন অবশিষ্ট অংশ ফেলে দিচ্ছেন আবর্জনার স্তুপে । যেসব বর্জ্য দিনের পর দিন যেখানে-সেখানে পড়ে থাকছে আর এর ক্ষতিকর উপাদান মাটি-পানির সঙ্গে মিশে গিয়ে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনছে।
আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, ২০১৩ সালে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালার একটি খসড়া করা হয়। কিন্তু এরপর আর সেটির কাজ এগোয়নি। এখন এ ব্যাপারে নতুন করে একটি আইনি কাঠামো তৈরির কাজ চলছে। যত তাড়াতাড়ি এ ধরনের বিধিমালা তৈরি হবে ক্রম উন্নতিশীল এই দেশের জন্য তা ততই মঙ্গলজনক।
আইনি কাঠামোর পাশাপাশি ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় থ্রি-আর কৌশল প্রয়োগের কথা বলছেন কেউ কেউ। থ্রি আর কৌশল হচ্ছে, বর্জ্য হ্রাস, বর্জ্য পুনর্ব্যবহার এবং বর্জ্যের পুনর্চক্রায়ন, যার মাধ্যমে ই-বর্জ্য আবার ই-পণ্যে পরিণত হতে পারে। ফলে তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করতে পারে।ই-বর্জ্য নিয়ে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। আশা করা যায়, এ ব্যাপারে যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। অন্যান্য বিষয়ের মতো যদি ই-বর্জ্য বিষয়েও আমরা নাক ডেকে ঘুমাই তবে এর কুফল আমাদের অচিরেই গ্রাস করবে। ধেয়ে আসছে এর ভয়াবহ পরিণতি।
লেখাটি জাতীয় দৈনিক এবং অনলাইন গণমাধ্যমের সহায়তায় তৈরি। বাংলাদেশ বেতার মহানগর অনুষ্ঠানে পঠিতব্য।
©somewhere in net ltd.