নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিপুল শেখ, গাইবান্ধার সাইনদহ থেকে। পেশায় কম্পিউটার অপারেটর। প্রযুক্তি, এক্সেল ও ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি বিষয়ে আগ্রহী। “Tech Bristy” ইউটিউব চ্যানেলের নির্মাতা ও “পদ্ম কাহিনি” গল্পের লেখক।\n\n

বিপুল শেখ

লেখক

বিপুল শেখ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পদ্ম কাহিনী - পর্ব - ১ - বিপুল শেখ

২২ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:০১

জীবনে কখনো কখনো কিছু সম্পর্ক হয়, যেগুলোর শুরু হয় জানাশোনার আগেই। আমি তখনও তাঁকে চিনতাম না। দেখিও নাই কখনো।

অধ্যায় ১: পরিচয়ের আগে

তবে ভাগ্য কেমন জেনো সহায় ছিল। কোনো একদিন আমার এক পরিচিতজন, কথার ভেতর হঠাৎ বললেন, “ভাই, আমার পরিচিত একজন আছেন যে কিনা ফেসবুকে ভিডিও বানান। রান্নার ভিডিও। ওর নাম পদ্মফুল” সেদিনই প্রথম শুনি ‘পদ্মফুল’।


না, ওর আসল নাম নয় এটা। তবে শুনেই কেমন যেন একটা টান লাগল মনে পদ্মফুল? যে ফুল জলে ফোটে, তবু কাদার গন্ধ গায়ে মাখে না। কেমন যেন এক পবিত্রতা এই নামের মধ্যেই।

কৌতূহলবসত সেই সন্ধ্যেই ফেসবুকে খুঁজে বের করলাম তাঁকে।
প্রোফাইলটা একদম সাদামাটা। কোনো ঝলক নেই, নেই সাজানো কিছু ছবি তবু যেন এক অদ্ভুত মায়া!
নিমগ্ন শুধু একজোড়া চোখ ... পোস্টে কখনো বাচ্চাদের নিয়ে ছোট ছোট ভিডিও, কখনো সবার অগোচরে তোলা সূর্যের ছবি। রান্না-বান্না ইত্যাদি।

আমি কিছু না ভেবেই ‘Follow’ দিয়ে দিলাম।
বেশ কিছুদিন হয়তো এমনই চলল- আমি প্রতিটা পোস্টে লাইক দিই, কখনো কখনো মন্তব্য করি—“অসাধারণ”, “ভালো লাগল”, “দারুণ মজার” ইত্যাদি…
তবে ওর তরফ থেকে কোনো সাড়া নেই। আমি তখনও ওর কাছে অচেনা, অজানা কেউ।

ধীরে ধীরে কমেন্ট থেকে কথাবার্তা শুরু হয়।
প্রথমবার যখন সে আমার কমেন্টে রিপ্লাই দিল, আমার ভিতরটা কেঁপে উঠল।
মনে হল, যেন এক আকাশজোড়া চুপচাপের মধ্যে কেউ হঠাৎ ডেকে উঠল আমার নাম ধরে।

একদিন সাহস করে ইনবক্সে গেলাম।
নম্রভাবে বললাম-
"আপনি কি অমুকের বান্ধবী? আমি তাঁর প্রতিবেশী। আপনার কিছু পোস্ট দেখে খুব ভালো লেগেছে। তাই মনে হল কথা বলি। ইত্যাদি"

সেই থেকেই শুরু।

তবে সে ছিলো খুবই কৌতুহলী আমাকে দেখার জন্য। তার ইচ্ছে, যে মানুষটা সর্বক্ষন আমার বিভিন্ন্য পোস্টে লাইক কমেন্ট করে তাকে সামনা সামনি দেখতেই হবে সে আসলে কে বা কেমন।
একটা ছোট্ট পরিচয়ের ভেতর দিয়ে আমি ধীরে ধীরে এক গভীর জীবন কাহিনির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম—যার কেন্দ্রে ছিল এক পদ্মফুল।
সেই পদ্মফুল, যে হাসে—তবু কাঁদে না;
যে কষ্ট পায়—তবু কাউকে দোষ দেয় না;
যে ভালোবাসে—তবু তা কাউকে জানায় না।

এভাবেই তাঁকে একদিন সামনা সামনি দেখলাম—একেবারে সরাসরি।
তাঁর চোখে একরাশ অভিমান আর শ্রান্তির ছায়া, কিন্তু ঠোঁটে একটুকরো মায়াবী হাসি।
সেই মুহূর্তে বুঝলাম, আমি শুধু একজন নারীকে দেখিনি—আমি এক জীবনদুঃখিনী হৃদয়কে দেখেছি। যদিও সেটা কথা বলার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছি।

আর এইভাবেই শুরু হল আমার যাত্রা, পদ্মফুলের নীরব জগতে...



অধ্যায় ২: নীরবতা যন্ত্রণার ভাষা বোঝে

পদ্মফুল আমার ইনবক্সে তখনও খুব একটা কথা বলতেন না। তাঁর জবাবগুলো ছিল সংক্ষিপ্ত, ভদ্র এবং সীমার ভেতরে। আর কৌতুহলি।
কিন্তু আমি তো শুধু কথা খুঁজছিলাম না—আমি খুঁজছিলাম তাঁকে, যাঁর নাম শুনে মনের মধ্যে অদ্ভুত এক অনুভব জন্ম নিয়েছে।

একদিন খুব সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম,
“আপনি তো খুব সুন্দর করে কথা বলেন, লিখেনও ভালো। কখনো ভাবেননি—এই জিনিসগুলো নিয়ে কিছু করুন?”

একটু সময় নিয়ে তিনি লিখলেন—
“ভালোলাগে করতে। কিন্তু লোকে কি বলবে… এই ভাবনাটাই বাঁধা। তা ছাড়া ভাল মানের সাপোর্টও সে পরিবার থেকে পাচ্ছে না।” এমনকি পরিবার থেকে অনেক অনেক বাধা বিপত্তি পোহাতে হয়েছে এটার জন্য।

এই এক লাইনের জবাবই আমার মনে হাজারটা কথা বলে গেল।
একজন মানুষ যখন নিজের ভালোবাসা, নিজের ইচ্ছে গুলোকে 'লোকে কি বলবে' এই একটার নিচে গলিয়ে ফেলে—তখন বুঝতে হয়, সে ভেতরে ভেতরে অনেকখানি মরে গেছে।
তাঁর পোস্টে কখনো কখনো এমন লাইন থাকত—
"ভালো থেকো... যারা আমায় দেখে কষ্ট পায়, আমায় দুর্বল ভাবে..."
তখন আমি বুঝতাম, হাসির আড়ালে একটা যুদ্ধ লুকানো।

আমি একদিন জিজ্ঞেস করলাম—
“আপনি কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন না?”

তিনি বললেন—
“বিশ্বাস করে যদি বারবার আঘাত পেতে হয়, তখন মানুষ নিজেকে বিশ্বাস করতে শেখে।”

এই কথায় আমি স্থির হয়ে গেলাম।
আমি জানি, এ কথা কেউ হঠাৎ করে বলে না।
এর পেছনে থাকে শত রাতের কান্না, অব্যক্ত লাঞ্ছনা, চুপ করে সহ্য করা অনেক অসম্মান।

একটা সময় তাকে অনেক অনুরোধ করায় তিনি নিজেই বলতে শুরু করলেন...
না, হঠাৎ করে না—ধীরে ধীরে, ছোট ছোট টুকরো করে...

তিনি বললেন তাঁর সংসারের কথা—
তাঁর স্বামী ছোটখাটো একটা চাকরি করেন।
তবে তাঁর পরিবার—বিশেষ করে শাশুড়ি আর ননদ—তাঁকে কোনোদিনও মেনে নেয়নি।
গরিব ঘর থেকে এসেছেন বলেই যেন প্রতিদিনের অজুহাত হয়ে থাকেন তিনি।
একদিন রাগে বলেই ফেলেছিলেন-
“আমার দোষ কী জানেন? আমি শুধু গরিব ঘরের মেয়ে, ব্যস!”

আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম।
তারপর বললাম-
“আমি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম, আপনি অনেক সাহসী একটা মেয়ে। ”

তিনি কেবল একটা সাদা হৃদয় ইমোজি পাঠালেন।
সেই সাদা হৃদয়ের মধ্যেই আমি তাঁর কষ্টের সমস্ত ইতিহাস বুঝে ফেললাম।

চলবে......?

নতুন উপন্যাস কেমন লাগছে জানাবেন।

একটি 'পদ্ম কাহিনী'কে রেটিং করুন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.