![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অধ্যায় ৩: ছোট ছোট গল্প, লুকোনো কষ্ট
আমি প্রতিদিনই ওর সাথে একটু একটু করে কথা বলতাম। তবে সেগুলো বড় কিছু নয়—খুব ছোট ছোট আলাপ। কখনো বলতাম,
"আপনার রান্নার ভিডিওটা দারুণ হয়েছে!"
তখন ও কেবল হেসে বলত,
"সত্যি বলছেন তো?"
এমন এক-দু’টা বাক্যের মধ্যে দিয়ে কীভাবে জানি একটা ভালো লাগা গড়ে উঠছিল। জানি, একতরফা ছিল সেটা, তবুও খুব নিজের লাগত মেয়েটাকে।
একদিন খুব সকালে ওর এক স্ট্যাটাস দেখলাম।
"ঘুম আসে না… কিচ্ছু ভালো লাগে না আজকাল।"
কিছু না ভেবেই লিখে ফেললাম ইনবক্সে—
“ঘুম আসে না মানে? ঠিক আছেন তো?”
অনেকক্ষণ পর লিখল—
“ভালো থাকার অভিনয় করতে করতে ক্লান্ত...”
সেদিন প্রথম বুঝলাম, এই মেয়েটার ভেতরে যে কষ্টটা জমেছে, সেটা সামান্য নয়। হয়তো দিনের পর দিন এমন একটা ঘরে আছে, যেখানে ওর কথা কেউ শুনে না, ওর চোখের পানি কেউ দেখে না।
জীবনে এমন অনেক কিছু থাকে যেগুলো কারো সঙ্গে ভাগ করে নিলেই হালকা লাগে। কিন্তু পদ্মফুল সে পথটা ভুলে গিয়েছিল।
আমি বলতাম,
"আপনি যদি চান, বলতে পারেন। আমি একজন ভালো শ্রোতা হতে পারব হয়তো।"
সে একদিন হঠাৎ বলে উঠল-
"আপনার সাথে কথা বললে কেমন যেন একটা শান্তি পাই… কিন্তু ভয়ও পাই।"
আমি অবাক হলাম-
“ভয় কেন?”
সে বলল-
“কারণ, আমি জানি না কেউ কতদিন পাশে থাকবে। আমি কাউকে আর হারাতে চাই না। এমনকি সে ফেতনার কথাও বারংবার স্বরণ করে দিতো”
সেদিন মনে হল, পদ্মফুল যেন একটা সজীব অথচ নির্জন পুকুরে ফোটা ফুল। রোদের দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু জানে রোদ তার গায়ে এসে পড়ে না।
তারপর একদিন বলল—
“আপনার মতো কেউ আগে কখনো এমনভাবে খোঁজ নেয়নি…”
আমি শুধু লিখেছিলাম—
“কারণ আমি আপনাকে বোঝার চেষ্টা করি, বদলানোর নয়।”
সেদিন আমার একটা লাইন ও খুব মনে রাখল, বলেছিল—
“এই কথাটা আমি সারাজীবন মনে রাখব…”
আমি জানতাম না, এত ছোট্ট একটা লাইন কারো জীবনে এত গভীর ছাপ ফেলতে পারে।
এভাবেই চলছিল—সামান্য কথাবার্তা, কিছু গল্প, কিছু নীরবতা।
কিন্তু সেই নীরবতাতেই আমি খুঁজে পেতাম এক অসীম আর্তনাদ।
আর আমি প্রতিদিন একটু একটু করে বুঝে ফেলছিলাম, আমি কেবল একটা সম্পর্ক গড়ছিলাম না—আমি একটা ভাঙা মন জোড়া দেয়ার চেষ্টা করছিলাম।
অধ্যায় ৪: মুখোশের পেছনে
পদ্মফুলের জীবনটা বাইরে থেকে দেখলে কারও মনেই হবে না, যে ভেতরে এতোটা কষ্ট চাপা আছে তার।
ওর প্রোফাইলে বিভিন্য মজার মজার খাবারের ছবি, রঙিন স্ট্যাটাস, আর মাঝেমধ্যে ছেলেমেয়েদের সাথে মিষ্টি কিছু কমেন্টের কথাবার্তা—সবকিছুই যেন এক সাজানো বাস্তবতা।
কিন্তু আমি জানতাম, এই হাসির পেছনে আছে না বলা শত গল্প।
আমরা মানুষরা হয়তো কষ্টগুলো লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করি, কিন্ত কষ্ট গুলো যে লুকানো থাকতে চায় না! সেটা আমরা অনেকেই জানিনা।
একদিন রাতে ইনবক্সে একটা লম্বা ম্যাসেজ পাঠাল ও।
“জানেন, আমার স্বামী কখনো আমার চোখের দিকে তাকায় না। কথা বলে খুব কম, শুনেও না ঠিকঠাক। সবসময় রাগা-রাগী করে কথা বলে। শুধু তার মা আর বোন যা বলে সেটাই সত্যি ধরে নেয়।
আমি যে একটা মানুষ, সেটা সে যেন বোঝেই না।
আমার কাছে মনে হয়, আমি এই বাড়িতে শুধু একজন কাজের মানুষ।
বউ না, মেয়ে না, কেউ না… শুধু একটা দায়িত্ব।”
আমি চুপ করে থাকলাম অনেকক্ষণ। কীবোর্ডের সামনে বসে আঙুল চলছিল না। মাথার ভেতর শুধু একটা কথাই ঘুরছিল—
এই মেয়েটা কী করে প্রতিদিন বেঁচে থাকে এতসব কিছু সহ্য করে?
আমি ধীরে ধীরে লিখলাম—
“আপনি তো খুব সাহসী… আমি হলে এতদিনে ভেঙে পড়তাম।”
ও লিখল—
“ভেঙে পড়েছি… কেবল কেউ দেখে না।”
সেই রাতে আমি ঘুমাতে পারিনি। শুধু ভাবছিলাম, একটা মেয়ে যদি নিজের সংসারে এমন অদৃশ্য হয়ে যায়, তাহলে সে কোথায় গিয়ে একটু শান্তি খুঁজবে?
আমাদের সমাজে মেয়েদের কষ্টগুলোকে খুব সহজে স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া হয়।
‘শ্বশুরবাড়ি মানিয়ে নিতে হয়’—এই বাক্যটার আড়ালে যে কত চোখের জল লুকিয়ে থাকে, সেটা আমরা কেওই ভাবি না কখনো।
আর পদ্মফুল? ও তো এত কিছু জানে, বোঝে, তবুও নীরবে সহ্য করে যাচ্ছে, কারণ ওর মধ্যে এখনো একটা বিশ্বাস আছে—একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ।
আমি বুঝে গিয়েছিলাম, ওকে একা ফেলা যাবে না।
আমি কিছু করতে পারি বা না পারি, পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ওর চোখের ভাষায় পড়ে নিয়েছিলাম।
তখনও আমি জানতাম না, এই পাশে থাকার ইচ্ছেটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আবেগ হয়ে উঠবে।
চলবে......?
বিঃদ্রঃ এই গল্পটি একটি বাস্তব জীবনের অনুপ্রেরণায় রচিত। লেখার ক্ষেত্রে বা বর্ণনার কোথাও কোনো অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটি থাকলে, তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।
©somewhere in net ltd.