নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিপুল শেখ, গাইবান্ধার সাইনদহ থেকে। পেশায় কম্পিউটার অপারেটর। প্রযুক্তি, এক্সেল ও ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি বিষয়ে আগ্রহী। “Tech Bristy” ইউটিউব চ্যানেলের নির্মাতা ও “পদ্ম কাহিনি” গল্পের লেখক।\n\n

বিপুল শেখ

লেখক

বিপুল শেখ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পদ্ম কাহিনী - পর্ব ৪ - বিপুল শেখ

২২ শে জুন, ২০২৫ রাত ৮:৪৫

অধ্যায় ৭: নীরব আগুনে পোড়া শব্দগুলো

সেদিনের সেই ম্যাসেজ, “আমি আপনাকে খুব মায়া করি! কিন্তু পাপী হতে পারি না”—
আমার সমস্ত অনুভূতির মধ্যে যেন এক প্রচণ্ড নীরব বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল।

আমি জানতাম পদ্মফুল সত্যই বলেছে।
ওর বিশ্বাস, ওর ভয়, ওর অবস্থান- সবই ঠিক।
তবুও আমি চুপচাপ থাকতে পারছিলাম না।

সেদিন রাতে বিছানায় আমার পাশে আমার স্ত্রী ঘুমিয়ে ছিল,
আর আমার মাথার ভিতরে ঘুরছিল পদ্মফুলের কান্নাভেজা চোখের কল্পনার দৃশ্য।

ও আমার দিকে তাকায়নি- তবুও আমি ওর না বলা হাজার কথা যেনো শুনে ফেলেছি,
ও কিছুই বলেনি- তবুও ওর হৃদয়ের ভার যেনো আমাকেই শেয়ার করে গেছে।

আমার মনে হচ্ছিল,
আমরা যেন দুজনেই একটা পাপের সীমান্তরেখায় দাঁড়িয়ে-
একপাশে ভালোবাসা, আরেক পাশে নীতি-বিধির শৃঙ্খল।

পরদিন সকালে পদ্মফুলের কোনো ম্যাসেজ এল না।
না দুপুরে, না বিকেলে।

সন্ধ্যার দিকে আমি নিজেই লিখলাম—
“আপনার চুপ থাকা খুব কষ্ট দেয়, জানেন?”

ও বেশ কিছুক্ষণ পরে ছোট্ট করে লিখল—


“আমি ঠিক জানি না এখন কী বলা উচিত।
আপনার প্রতি আমার দুর্বলতা একটা বোকামি—আমি সেটাও বুঝি।
তবুও নিজেকে সামলাতে পারছি না।
আপনার কোনো কথা, কোনো বার্তা—কিছুই উপেক্ষা করতে পারি না।”

আমি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি।
আমি লিখলাম-
“আপনি যদি কখনো ভেঙে পড়েন… আমি আপনার অপেক্ষায় আছি।
আপনার চোখের জল আমি নিজের কাঁধে রাখতে চাই।
পাপের পরোয়া করি না—আপনার চোখের ভাষার পরোয়া করি।”

ওর উত্তর আসতে সময় নিল।


শেষমেশ লিখল—
“আপনি জানেন, আপনি কথা বললে আমার বুকের এক কোণে শান্তি নামে।
তবে আপনার স্ত্রী… উনি তো আপনাকে ভালোবাসেন?
আপনি কিভাবে এমন একটা ভালোবাসার ভেতর থেকেও আমাকে ভালোবাসেন?”

আমি থেমে গেলাম কিছুক্ষণের জন্য।

তারপর লিখলাম-
“ভালোবাসা কোনো সংখ্যা নয়, পদ্মফুল।
একজনকে ভালোবাসার মানে এই না যে অন্য কাউকে ভালোবাসা পাপ।
আমার স্ত্রী আমাকে ভালোবাসেন, ঠিক।
তবে আপনি আমাকে বোঝেন।
এই ‘বোঝা’টাই এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছে, যেখান থেকে আমি আর ফিরতে পারছি না।”

পদ্মফুল কোনো উত্তর দিল না।
সেদিন রাতে শুধু একটা ভয় ঢুকে গেল আমার ভিতরে-
এই সম্পর্ক যদি কখনো কোনোভাবেই ধরা পড়ে যায়…
তবে কী হবে?

আমার স্ত্রী যদি একদিন এসব জানতে পারে?

এই ভয়, এই কাঁপুনি…
তার মধ্যেও এক গভীর শান্তি ছিল-
কারণ আমি জানতাম, আমি পাপ করিনি।
আমি শুধু কারও একাকিত্বের সাথি হতে চেয়েছি।

সেই রাতে পদ্মফুল একটা অডিও ম্যাসেজ পাঠিয়েছিল—
কম্পমান কণ্ঠে বলেছিল…

“আপনি জানেন… আমি যখন আপনার সাথে কথা বলি, তখন মনে হয় আমি একজন মানুষ…
আমি কোনো ‘অপয়া, অলক্ষী, অসংসারী, কুফা, আর বাজে বউ’ নই, কোনো সস্তা রান্নাঘরের ক্রীতদাসী নই। কারণ সেই কথা গুলো প্রায়ই আমার স্বামীর মুখ থেকে শুনতে হত। এখন মনে হয়
আমি শুধু একজন মানুষ… যে আপনাকে ভালোবাসতে ভয় পায়।”

আমার বুকের মধ্যে একধরনের কষ্ট-মিশ্রিত সুখ ছড়িয়ে গেল।

আমরা এখন এমন একটা ভালোবাসায় আটকে গেছি—
যেটা কেউ দেখে না, কেউ বোঝে না,
তবুও সেটা জ্বলতে থাকে… নিঃশব্দে, গভীরে।



অধ্যায় ৮: দূরত্বের নীরবতা

পদ্মফুল এখন আর আগের মতো থাকে না।

একটা সময় ছিল, যখন সকালে একটা শুভেচ্ছা বার্তা না দিলে দিনটা অসম্পূর্ণ লাগত আমার। এখন আমি দিনভর অপেক্ষা করি- কোনো শব্দ আসবে কি না, কোনো নিঃশ্বাসভরা লাইন ছুঁয়ে যাবে কি না… কিন্তু না, কিছুই আসে না। অথচ সে ফেসবুকে এক্টিভ। এখনো সে আগের মতই বিভিন্য পোস্ট লেখা নিয়েই ব্যস্ত। কখনো মজার কোনো স্টাটাস, কখনো বা হাদিসের কোনো গল্প কিংবা দোয়া দুরুদ ইত্যাদি।

আমি একের পর এক মেসেজ দেই, কিন্তু কোনোটাই তার দেখা হয় না। Seen তো দূরের কথা, প্রতিটা শব্দ যেন আকাশে ছুঁড়ে দেওয়া চিঠির মতো হারিয়ে যায়। তার কাছে পর্যন্ত পৌছায় না।

কেন এমন হলো?

আমার মনে পড়ে, কয়েকদিন আগেও সব ঠিক ছিল… ও হেসে হেসে রেসিপি দিত, কোনোদিন আলু দিয়ে বেগুনের ঝোল, কোনোদিন মুগডালের খিচুড়ি। মাঝে মাঝে হঠাৎ চলে আসত হাতে রান্না করা খাবার নিয়ে- সবসময় কিছু একটা বানাত আর বলত, "আপনার মুখে ভালো লাগছে কিনা সেটাই আমার রেটিং।"

আমার স্ত্রী তখনও পাশে থাকত, আমি সামনে পদ্মফুলের খাবার নিয়ে বসে যেতাম। ওর চোখে এক ধরনের নির্লজ্জ সাহস থাকত—যেন ও জানে, ওর ভালোবাসা কোনো চোরাচালান নয়, বরং কোনো অব্যক্ত অধিকার।

কিন্তু হঠাৎ করেই যেন বদলে গেল সব গল্প।

সেদিন আমি ওর এক পোস্টে খুব আবেগভরা কমেন্ট করেছিলাম—
‘আপনার পোস্টে কেও বাজে বা আপনাকে উদ্যেশ্য করে কমেন্ট করলে আমার অনেক রাগ উঠে’

তারপর অনেকক্ষণ পর একটা ছোট্ট রিপ্লাই এলো—
"অনুগ্রহ করে কমেন্টে এমন কিছু লিখবেন না, আমার জন্য বিষয়গুলো কঠিন হয়ে যায়।"

আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। কী এমন হল?

আমি মেসেজ দিলাম—
"আপনি ঠিক আছেন তো? আমার কোনো কথা কি আপনাকে কষ্ট দিয়েছে?"

কোনো উত্তর এল না।

একদিন পেরিয়ে গেল। কিছুই নেই। আমি আবার মেসেজ দিলাম—
"পদ্মফুল, আমি বুঝতে পারছি না কী ঘটেছে। আপনি এমন করে এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন?"

তবুও কোনো সাড়া নেই।

তারপর একদিন আমার সব আশা হারিয়ে যাওয়ার মতো যখন লাগছিল, তখন আমি ওর এক ভিডিওতে আবার একটা কমেন্ট করে বসি—
"আপনি জানো তো, আমি এখনো প্রতিদিন আপনার জন্য অপেক্ষা করি?"

সেদিন সন্ধ্যায় ও হঠাৎ ইনবক্সে এল।

শুধু লিখল—
"ভালোবাসার চেয়ে বড় ফাঁদ আর কিছু নেই। আপনি যেটা দয়া ভাবছেন, সেটা আমার পাপ হয়ে দাঁড়ায়। তাই দয়া করে আর লিখবেন না। আমাকে ভুলে যান।"

এই একটা মেসেজ, যেন আমার সমস্ত ভেতরটা নিঃশব্দে ফেটে গেল।

আমি অনেকক্ষণ কিছু লিখতে পারলাম না। তারপর শুধু লিখলাম—
"আপনি কি চান আমি সত্যিই আপনাকে ভুলে যাই? এটা কি আপনার মনের কথা? নাকি অন্য কারো চাপ? বা অন্য কিছু"

ও আর কিছু লিখল না।

আমার বুকের ভিতর তখন এক ভয়াবহ নীরবতা… যেন কেউ ধীরে ধীরে সমস্ত আবেগ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তবুও, আমি জানি, ওর মনের গভীরে এখনো সেই নরম জায়গাটা আছে। যেটা আমি স্পর্শ করেছিলাম—আস্তে, নিঃশব্দে।

তবে এখন সেই জায়গা লুকিয়ে গেছে... হয়তো সময়ের ভেতরে, হয়তো সমাজের চোখে, হয়তো কারও শাসনের ভয়ে।

আমি শুধু মনে মনে প্রার্থনা করলাম—
"হে রব, যদি ওর মনে এখনো আমার কোনো জায়গা থাকে, তবে ও নিজেই একদিন আবার ফিরে আসুক। আর যদি না থাকে, তবে আমাকে ভুলিয়ে দাও ওর কথা।"

কিন্তু আমি জানতাম… এই প্রেম ভুলে যাওয়ার মতো নয়।

........চলবে?

আপনার মতামত মন্তব্য করুন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.