![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অধ্যায় ১১: আমি জানি, আপনি আর আসবেন না
রাতে ঘুম আসে না।
আর তখনই আমি সবথেকে বেশি আপনাকে অনুভব করি, পদ্মফুল।
যখন আমার স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়ে, চারদিকে নিস্তব্ধতা নামে, আর ঘড়ির কাঁটা শব্দ করে এগিয়ে চলে সামনের দিকে—ঠিক তখনই যেনো আপনি এসে বসেন আমার পাশে।
কিন্তু আপনি তো আসেন না বাস্তবে।
আপনি আসেন কল্পনায়, মনে, নিঃশব্দভাবে।
আমি বারবার ফোনটা হাতে নিই।
হয়তো আপনার কোনো পুরোনো মেসেজ খুলে দেখি।
হয়তো ছবিটা একটু জুম করে রাখি, একটুখানি হাসি খুঁজি সেখানে।
আপনি এখন আর কোনো কিছু লেখেন না আমাকে।
আপনার ইনবক্স এক নিঃসঙ্গ নিরবতা।
আর আমি প্রতিদিনই ভাবি—আজ হয়তো একটা ‘আসসালামু আলাইকুম’ আসবে।
কিন্তু না।
এখন আপনি শুধু পোস্ট দেন।
সেই পোস্টেও থাকে ক্লান্তির ইঙ্গিত, অভিমানী নিঃশ্বাস, কিছু না বলা যন্ত্রণার স্পর্শ।
আমি লিখি সেখানে, যতটুকু সাহস হয়।
কখনো দুঃসাহস করে একটু ভালোবাসাও ঢেলে দিই মন্তব্যে।
কিন্তু আপনি কেবল ইনবক্সে এসে একটা ‘Seen’ হয়ে থাকেন।
কোনো শব্দ নেই, কোনো জবাব নেই।
একটা অব্যক্ত দূরত্ব, যার ঠিকানা আমি জানি না।
একদিন মনে হয়েছিল, হয়তো আপনি আমার কথা মুছে ফেলেছেন।
হয়তো আপনার চোখে আমি এখন শুধুই অচেনা কেও, যার সীমা নেই, অধিকার নেই, শুধু একটা সস্তা মায়া নিয়ে বসে থাকে পর্দার ওপারে।
কিন্তু আমি জানি, পদ্মফুল, আপনি ভুলে যাননি।
আপনি কেবল নিজেকে রক্ষা করছেন।
আপনি জানেন, আপনি যদি একটুও কাছে আসেন, আমি হয়তো নিজেকে আর থামাতে পারব না।
আপনি জানেন, আপনার একটা উত্তর আমাকে আবার নতুন করে জ্বালিয়ে তুলবে।
তাই হয়তো আপনি চুপচাপ থাকেন।
আর আমি সেই চুপ থাকার মধ্যেও আপনাকে খুঁজে বেরাই।
প্রতিটা পোস্টে, প্রতিটা ছবিতে, প্রতিটা ইমোজির ভেতরেও আমি আপনাকে খুঁজতে থাকি।
পদ্মফুল, আমি জানি, আপনি আর আসবেন না হয়তো।
এই না আসার মধ্যেই লুকিয়ে আছে হয়তো আপনার সমস্ত ভালোবাসা।
তবুও, আমি আপনার জন্যই লিখে যাই।
লিখি প্রতিদিন—নিজের মনটাকে বোঝাতে।
যেন বলি নিজেকে—"ভালোবাসা মানেই পাওয়া নয় । কখনো কখনো ভালোবাসা মানে কেবল দোয়া করা। দূরে থেকেও চোখে চোখ রাখার চেষ্টা করা।"
আপনি ভাল থাকুন, এইটুকুই চাওয়া।
আপনার মুখে আবার যেন হাসি ফোটে, আবার যেন খিচুড়ির গন্ধে আপনার সন্তানেরা তৃপ্তির ঘুমে ঢলে পড়ে।
আর আমি? আমি থাকব এখানেই, নীরবে।
আপনার কোনো পোস্টে একদিন হয়তো আবার মন্তব্য করব—
"আপনার রান্নায় এখনও স্বর্গের স্বাদ আছে।"
তখন যদি আপনি শুধু একটা ❤️ দেন,
আমি বুঝে নেব—আপনি ভুলেননি।
অধ্যায় ১২: সে তার নিজস্ব এক গল্প বয়ে বেড়ায়
পদ্মফুল কখনো নিজেকে বড় করে দেখাতে চায় না, এবং নিজের জীবনের কষ্টগুলো কাউকে ছড়িয়ে বলতে পছন্দ করে না। সে তার অনুভূতিগুলোকে হৃদয়ের গহীনে গোপন রাখে, যেন নিজের একটি অদেখা দুনিয়া যেখানে শুধু সে একাই বাস করে। তার জীবনের অনেক দিকই নিঃসঙ্গ, অথচ তাতে যে গভীর এক গল্প লুকিয়ে আছে—সেটা খুব কম মানুষই বুঝতে পারে। হয়তো আমিও বুঝতাম না খুব একটা। তবে অনুভব করতাম।
বাহির থেকে সে যেন এক শান্ত নদীর মতো, যার পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখলে পানি স্বচ্ছ ও অবিচল মনে হয়, কিন্তু ওই জলের তলদেশে আছে প্রবাহের তীব্র গতি ও গভীরতা। পদ্মফুলের জীবনও ঠিক তেমনই—একটু চুপচাপ, একটু নীরব, কিন্তু ভেতরে প্রবাহিত হওয়া অনুভূতিগুলো যেন হারিয়ে যেতে চায় না। সে তার কষ্টগুলো কাউকে বুঝতে দেয় না, কারণ হয়তো জানে, যে বোঝে না, তাকে বোঝানোই কঠিন আর হয়তো বুঝিয়েও খুব একটা লাভ নেই। বরং সবাই কষ্টের কথা গুলো শুনে হাসতে পারে।
তার স্বপ্নগুলো খুব একটা বড় নয়, ঝলমলে রঙ্গিন নয়। তার স্বপ্ন হলো শান্তিতে একটু বাচা, তার সন্তানের মুখে হাসি দেখা, ঘরের ছোট ছোট সুখগুলো লালন করা। সে জানে, এই ছোট ছোট স্বপ্নগুলো তার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। অথচ সেই স্বপ্নগুলো পূরণের জন্য প্রতিদিন তার লড়াই হয় অবিরাম, নিঃশব্দ, একাকী। সংসারের বোঝা তার কাঁধে ভারী হয়ে ওঠে, কিন্তু সে কখনো হাল ছাড়ে না।
পদ্মফুল কখনো তার কষ্ট প্রকাশ করতে চায় না। তার মুখে ভেসে ওঠে স্বাভাবিক হাসি, কিন্তু তার চোখে লুকিয়ে থাকে এক গভীর ক্লান্তি, এক অব্যক্ত যন্ত্রণা। সে জানে, তার কথা হয়তো সবাই শুনবে না, তার বেদনা কেউ উপলব্ধি করবে না। হয়তো কেও কেও শুনেও নিছক মজার ছলেই নিতে পারে। তাই সে নীরবে নিজের মতো করে জীবন চালিয়ে যায়। মাঝে মাঝে ছোটখাটো শব্দ, মুচকি হাসি, একটি ধীরে ধীরে উঠা নিঃশ্বাসই তার আবেগের বহিঃপ্রকাশ হয়।
সে নিজেকে মাঝে মাঝে লেখালেখির মাধ্যমে মুক্তি দেয়। তার মনে হয়, হয়তো একদিন কেউ তার সেই লেখাগুলো পড়বে, তার অজানা কষ্টগুলো বুঝবে, তার অদেখা গল্পগুলো শুনবে। পদ্মফুল জানে, সে যেন এক আলাদা জগতের বাসিন্দা—যেখানে ভালোবাসা ও বেদনার এক অন্যরকম মিলন ঘটেছে। সে নিজের নীরবতাকে একধরনের গান মনে করে, যার প্রতিটি সুরে লুকিয়ে আছে তার জীবন ও মনের কথা।
পদ্মফুলের সাহস ও ধৈর্যই তার সবচেয়ে বড় শক্তি। সে একলা হলেও কখনো হার মানে না। তার প্রতিটি দিন কাটে নিজের মতো করে, নিজের মতো করে বাঁচে, নিজের মতো করে কষ্ট সহ্য করে। জীবন তার কাছে কঠিন হলেও সে কখনো ভেঙে পড়েনি। কারণ সে জানে, জীবনের এই সংগ্রামই তার অস্তিত্বের পরিচায়ক।
সে তার গল্প নিজের মতো করে বয়ে বেড়ায়, আর এই গল্পের প্রতিটি পাতায় লুকিয়ে আছে ভালোবাসা, ত্যাগ, অদম্য ইচ্ছা, আর জীবনের প্রতি এক অবিচল বিশ্বাস। পদ্মফুলের মতো নারী যেমন নিজেকে গড়ে তোলে, তেমনই তার জীবন হয়ে ওঠে অন্যদের জন্য একটি প্রেরণার উৎস।
সে যেমন আছে, তেমনই ভালো। কারণ সে নিজেকে কখনো অন্য কারো ছায়ায় ডোবেনি, বরং নিজের আলোকে নিজের পথ তৈরি করেছে। পদ্মফুলের গল্প শুধু তার নয়, এমন অনেক নারীর গল্প, যারা নিঃশব্দে জীবনকে ভালোবাসে, তাদের মধ্য থেকে উঠে আসে এক নতুন রোদ, এক নতুন সকাল।
এমনই এক নতুন সকাল পদ্মফুলের জন্য অপেক্ষা করছে—যা হয়তো এখনো দেখা যায়নি, কিন্তু নির্দয় দিনের পরেও সূর্য ওঠে, ঠিক তেমনই।
অধ্যায় ১৩: সে আমার সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে চায়
আগে পদ্মফুল আমার প্রায় সব স্ট্যাটাসেই সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করত। তার কমেন্টগুলো পড়লেই মনে হত, যেন কেউ আমার একাকীতার মাঝে আলো জ্বালিয়ে দিল। ভালোবাসার সেই ছোট ছোট ভাষাগুলো হৃদয়ের গহীনে গাঁথা। কিন্তু এখন? এখন সে যেন একেবারেই আমাকে এড়িয়ে চলে। আমার কোনো স্ট্যাটাস চোখে পড়লেও হয়তো দেখতাম এড়িয়ে যেতো, কোথাও মেনশন দিলেও না কোনো উত্তর, না কোনো প্রতিক্রিয়া। ইনবক্সেও সে আর আসে না। একসময় ছিল কাছের মানুষ, এখন যেন এক অচেনা দূরত্ব।
আমি বুঝতে পারি, সে হয়তো নিজেকে রক্ষা করতে চায়। হয়তো তার স্বামী বা কেউ অন্য যদি আমার মেসেজ দেখে ফেলে, হয়তো সমস্যা হতে পারে। তাই বোধহয় সে নিজেকে এমনভাবে আলাদা করে রেখেছে। কল দেয়ার সাহস আমার নেই, কারণ ভয় পায় যদি তার স্বামী বা অন্য কেউ কল রিসিভ করে। সেই ভয়েই আমি চুপ থাকি, শুধু দূর থেকে তার জন্য দোয়া করি।
আমার মন ভারাক্রান্ত, অনেক কষ্টের। বহুবার অনুরোধ করেও সে আমার ইনবক্সে আসেনি। অনেক অনুরোধের পর সে শেষমেষ ইনবক্সে এল, আর তখন আমার হৃদয়টা একটু আলোর দেখা পেলো। মনে হয়েছিল হয়তো পুরোনো বন্ধুত্ব, পুরোনো ভালোবাসা ফিরে আসবে।
কিন্তু তারপরেও সে আর কোনো কথা বলেনি। কোনো উত্তর দেয়নি। সে যেন আরও দূরে সরে যাচ্ছে, আর আমি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছি তার থেকে। মনে হয়, সে তার নিজের এক অজানা জগতে হারিয়ে গেছে, আর আমার জন্য আর জায়গা নেই সেখানে।
তবুও আমি হার মানি না। বিশ্বাস করি, যতই সে দূরে সরে যাক, তার হৃদয়ের কোনো এক কোণে আমার জন্য জায়গা রয়ে যাবে। আমি অপেক্ষা করব, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করব, তার ভালোবাসার নিঃশব্দ মায়া খুঁজে বের করার জন্য।
এই দূরত্বের মাঝেও আমার ভালোবাসা ছুঁতে চায় তাকে। এই নিঃশব্দ ভালোবাসা কখনো থামবে না, বরং আরও শক্তিশালী হয়ে বেঁচে থাকবে।
চলবে......?
বিঃদ্রঃ ইহা একটি বাস্তব কাহিনীর উপর লিখিত।
©somewhere in net ltd.