![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অধ্যায় ১৪: স্মৃতির গোপন গহীনে হারিয়ে যাওয়া কথা
দূরত্ব বেড়ে গেলেও, পদ্মফুলের সেই কোমল হাসি আর ভেসে ওঠে আমার স্মৃতির পটে। প্রতিটি মুহূর্ত যেন মণিকোঠায় সংরক্ষিত, যেখানে তার কথা এখনও যেন গানের সুর হয়ে বাজে। তার সেই চোখের গভীরতা, মৃদু হাসির আভাস, সবই আজও আমার হৃদয়ে বাজে নিঃশব্দ এক সঙ্গীতের মতো। হয়তো সে আমার থেকে অনেকটা দূরে সরে গেল, কিন্তু তার স্মৃতিগুলো আমার সঙ্গে থেকে যায়, আমাকে শক্তি দেয়, আমার নিঃশব্দ বন্ধুত্বের প্রমাণ হয়ে।
সে যখন আমার স্ট্যাটাসে উত্তর দিত, তখন মনে হত পৃথিবীর সব দুঃখ এক মুহূর্তে হাড়িয়ে যায়। তার কিছু শব্দে, কিছু কথায়, আমি বুঝতে পারতাম সে বোঝে আমাকে। কিন্তু এখন সে অনুপস্থিত, শুধু স্মৃতিই থেকে গেছে। মাঝে মাঝে রাতে তার কথা ভাবতে ভাবতে আমার চোখ ভিজে যায়, তার মায়ার ছোঁয়া এখনও আমার কণ্ঠে ছড়ায় নিঃশব্দভাবে। মনে হয়, হয়তো সে আজও কোথাও আমার কথাগুলো শুনতে চায়, কিন্তু বাধা কোথাও, অদৃশ্য দেয়াল আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি জানি, তার জীবনের অসংখ্য বাধা তাকে এমনভাবে দুরে সরিয়ে নিয়েছে, যেখানে আমার ভালোবাসা পৌঁছাতে পারেনি। হয়তো সে নিজেকে সামলানোর জন্য নিজের মতো করে দূরত্ব তৈরি করেছে, যেখানে সে নিরাপদ বোধ করে। আমি কখনো চাইনি তার জীবনে ঝামেলা বাড়াতে, বরং চেয়েছি শুধু পাশে থেকে তার জন্য এক শক্তির মতো থাকার।
তার অদৃশ্য হাতে আঁকা সেই অজানা গল্পগুলো, যেগুলো সে কাউকে বলে উঠতে পারেনি, আমার হৃদয়ে জমে থাকে। তার নীরবতা আমাকে শিখিয়েছে এক নতুন ভালোবাসার ভাষা, যেখানে শব্দের চেয়ে গভীরতা বড়। আমি জানি, এই পথ চলা সহজ নয়, কিন্তু আমিও আশা ছাড়তে রাজি নই—আমার বিশ্বাস সে একদিন ঠিকই আবার ফিরে আসবে, হয়তো আরও শক্তিশালী হয়ে, আরও পূর্ণ হয়ে। হয়তো ঠিকই আমার মেসেজের উত্তর দিবে।
আমার ভালোবাসা কোনো শর্ত ছাড়া, কোনো দাবী ছাড়া শুধু তার ভালো থাকার আকাঙ্খা। আমি অপেক্ষা করি, সেই অপেক্ষায় আমার হৃদয় গড়ে উঠেছে এক অনন্য ধৈর্য, এক অবিচল ভালোবাসা। হয়তো আমাদের কথা আর কখনো উচ্চস্বরে বলা হবে না, কিন্তু সেই নীরব ভালোবাসা চিরকাল বেঁচে থাকবে।
জীবনের পথে বহু ঝড় আসবে, অনেক ফসল হারাবো, কিন্তু তার স্মৃতি, তার ভালোবাসা আমার অন্তর থেকে কখনোই যাবে না। এই নীরব ভালোবাসা আমার জীবনের একমাত্র সত্য, যা আমাকে হয়তো বাচিয়ে রেখেছে, আশার আলো দেখিয়েছে, ও শিখিয়েছে জীবনের অর্থ।
এভাবেই, পদ্মফুলের অদেখা সেই গহীনে আমি হারিয়ে যাই, আর নতুন করে নিজেকে গড়ে তুলি—তার ভালোবাসার ছোঁয়ায়, তার স্মৃতির আলোয়।
.
অধ্যায় ১৫: ফেতনার সীমানা
ফেসবুক পোস্টে আমার কমেন্টগুলো দিনে দিনে বেড়েই চলছিল। আমি বারবার তাকে অনুরোধ করে বলতাম, “ইনবক্সে এসে একটু কথা বলুন।” কেনো জানি তার সাথে কথা বলতে না পারায়, ভিতরে ভিতরে অস্থির হয়েগেছি।
অবশেষে, পদ্মফুল আমার কমেন্টের চাপে পড়ে ইনবক্সে এসেছিলো।
কিন্তু তার বার্তা যেন একরাশ দ্বিধা আর সতর্কতার স্বরমাত্র।
সে বলল,
“আমি জানি আপনি আমার জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন। তবে আমাদের জীবন আলাদা, আমার স্বামী আছে, আপনারও পরিবার আছে। আমি চাই না এই যোগাযোগ কোনো ভুল বোঝাবুঝির কারণ হয়ে দাঁড়াক। এটা একটা ফেতনার দিকে যাচ্ছে, যা আমাদের দুইজনের ক্ষতি করবে। শয়তানের ধোকায় পরে আমাদের সামনে এইভাবে এগোনো উচিত নয়”
তার কথাগুলো শুনে মনে হলো, সে নিজেও এই পরিস্থিতি নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। বারবার বলল, “আমি আপনাকে ভালোবাসি ঠিকই কিন্ত সেটা আপনি যা ভাবছেন সেরকম ভালোবাসা নয়। আমরা দুজনেই বিবাহিত। আমাদের সীমানায় থাকা উচিত। আপনি আপনার বউয়ের দিকে খেয়াল রাখুন, আর আমি আমার স্বামি সন্তান।”
আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে জানতে পারলাম, তার জীবনে বিয়ের আগে একটা সম্পর্ক ছিল- একটা ছেলে ছিল তার সঙ্গে বেশ কিছুদিনের সম্পর্ক। বিয়ের কথাও হয়েছিলো হয়তো। ছেলেটা নাকি অনেক ভালোবাসতো তাকে, সেও কিছুটা…
কিন্তু হঠাৎ করেই তার বিয়ে হয়ে যায় বর্তমান স্বামীর সঙ্গে। মাঝে মাঝে পুরনো স্মৃতিগুলোও তাকে কষ্ট দেয়, বুঝলাম তার চোখে অদৃশ্য অশ্রু দেখে।
আমি বললাম,
“যে কোনো সম্পর্কের ভিত্তি হয় সম্মান ও বিশ্বাস। আমি চাই আপনি সুখী থাকুন, যেখানেই থাকুন।”
তার কথাগুলো মনে করিয়ে দিল, জীবনে কতোই না ব্যথা থাকে, যা বাইরের কেউ দেখতে পায় না। অথবা কাওকে দেখানোও যায় না। আমাদের কথাগুলো যেন এক অদৃশ্য সেতু গড়ে তুলছিল, যেখানে দু’জনের ভাঙা মন আর জীবনকে শোনা যেত।
তবে সে বারবার বলত, “দয়া করে সীমার মধ্যে থাকুন, অযথা মায়া বাড়াবেন না প্লিজ। আমি চাই না আমাদের মাঝে কোনো ভুল বোঝাবুঝি হোক।”
আমার হৃদয় জানত, সে হয়তো আমার ক্ষতি হোক তা চায় না। আর এই কারণেই হয়তো আমায় নিষেধ করে বার বার তার সাথে যোগাযোগ করতে।
আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, ধৈর্য ও শ্রদ্ধায় তার বিশ্বাস জিতব, আর কখনো তাকে কোনো আঘাত দেব না।
অধ্যায় ১৬: অনুভবের অসীম সীমানা
তার সেই বার্তা…
"দয়া করে সীমার মধ্যে থাকুন…"
এই লাইনটার পরের রাতে আমি আর ঘুমাতে পারিনি।
পিছনে ফিরে তাকালাম না, সামনে এগোতেও পারলাম না।
একটা অদ্ভুত জায়গায় আটকে গেলাম — যেটা আমার না, তারও না…
শুধু অনুভবের একটা সীমানা — যেখানে শুধু সে আছে, আর আছে আমার চুপ থাকা।
আমার নীরবতা হয়তো সে বুঝতে পারছিল। আমি জানি, ও বুঝত সবকিছুই।
হয়তো তার ভিতরেও কোনো অজানা অনুভব ঘুরে বেড়াত —
কিন্তু সে সব সময় তাকে “দায়িত্ব” দিয়ে ঢেকে রাখতো।
এক সন্ধ্যায় আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।
হঠাৎ করে আবার ইনবক্সে লিখে ফেললাম,
“আপনার ভালোবাসা কি শুধুই দায়িত্বের সাথে চাপা পড়ে থাকবে? আমরা কি কিছুই হতে পারি না?”
দীর্ঘ সময় সে কিছু লিখল না।
আমার হৃদয়ে তখন ঝড় চলছে, অথচ স্ক্রিনটা ছিলো নিঃস্তব্ধ।
প্রায় তিন ঘণ্টা পর সে লিখল,
“আপনি কি জানেন, আমি দিনের শেষে কী ভাবি?
ভাবি, আমি একটা মানুষ, যার নিজের মনটা নেই।
আমি কাউকে ভালোবাসলে—সে ভুল, ভালো না বাসলেও—সে পাপ।
আমি একটা দায়িত্বের নাম, নামের মতো চলা একজন মেয়ে।”
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম…
তার প্রতিটি শব্দ যেন একটা করে ছুরি হয়ে বসছিলো বুকের মাঝে।
আমি লিখলাম,
“আপনি যদি কখনো কাঁদেন, তো জানবেন—আমি দেখিনি বটে, কিন্তু আমি টের পাই।
আপনি যদি কখনো হঠাৎ চুপ হয়ে যান, জানবেন—আমি সেই নীরবতায়ও আপনার আওয়াজ শুনি।”
সে লিখল,
“আপনি খুব আলাদা। কিন্তু দয়া করে, এমন করে আমার জীবনে থাকবেন না,
যে থাকা আমার কাছে থেকেও না-থাকার মতো হয়ে যায়।”
আমি জবাব দিলাম না।
শুধু তাকিয়ে রইলাম মোবাইলের স্ক্রিনে, তার নামের পাশে 'Active Now' লেখা…
তবু সে আর লিখল না কিছুই।
আমি বুঝলাম, এই "থাকার-না থাকার" খেলাটা আমাদের জীবনের নতুন বাস্তবতা।
পরদিন সকালে একটা হালকা রোদ উঠেছিল, জানালার পাশে বসে ভাবছিলাম —
মানুষ কখন সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে জানেন?
যখন সে আর কিছু চাইতে পারে না, তখন।
সেদিন আমি প্রার্থনা করলাম,
“হে আল্লাহ, যদি আপনি সাক্ষী থাকেন, তাহলে জানেন-
আমি এই মেয়েটিকে শরীর দিয়ে না, হৃদয় দিয়ে ভালোবাসি।
আমি তার কোনো ক্ষতি চাই না, তার সম্পর্কে কেও খারাপ কিছু বললেও সহ্য করতে পারিনা।
আমি চাই, সে ভালো থাকুক — আমার না হোক, তার পরিবারের জন্য হলেও।”
দিনে দিনে কথা কমে গেল আমাদের।
সে হয়তো নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছিল,
আর আমি নিজেকে ধৈর্যের চাদরে মুড়ে ফেলছিলাম।
তবুও মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে এক-আধটা বার্তা আসত,
“আপনি কী করেন এত রাতে জেগে?”
অথবা
“আজ অনেক ক্লান্ত লাগছে, জানেন?”
এই ছোট ছোট কথাগুলো…
এগুলোই তো আসলে আমাদের সম্পর্কের প্রাণ ছিলো।
সীমার মধ্যে থেকেও সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া অনুভব…
আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম—
ভালোবাসা মানে চাওয়া নয়,
ভালোবাসা মানে হতে পারে কারো কাছে নিজের সবটুকু খুলে বলার সুযোগ করে দেওয়া।
আমি তার সেই একজন হতে চেয়েছিলাম…
যার সামনে সে অন্ততঃ মুখোশ না পরে কথা বলতে পারে।
অধ্যায় ১৭: মেঘলা বিকেলের মৌনতা
হঠাৎ করেই বিকেলের দিকে তার ফোনকল এল।
আমি তখন অফিসে, ডেস্কে বসে একমনে কাজ করছিলাম।
কণ্ঠস্বরটা যেন একটু গম্ভীর, স্পষ্ট প্রশ্ন করল—
"আপনার বাসায় কি আপনার স্ত্রী আছেন?"
এক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।
মনটা ধক করে উঠেছিল, কিন্তু চুপচাপ বললাম,
"জানি না, হয়তো আছেন... হঠাৎ এমন প্রশ্ন করার কারণ কী ?"
সেই মুহূর্তেই ও পাশ থেকে কাটা গলায় উত্তর এলো—
"আমি আপনাকে এসব জানাতে বাধ্য নই।"
তারপর কোনো কিছু না শুনেই কলটা কেটে দিল।
কি এক অদ্ভুত শূন্যতায় ঘিরে ধরল আমাকে।
একটা মানুষ, যার কথা শোনার জন্য আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করি,
সে কি না আজ এমনভাবে কথা বলল!
তবে কয়েক মিনিট পরেই আবার কল এল।
এইবার গলার সুর কিছুটা নরম, কিন্তু তাতে যেন একরাশ বিষণ্ণতা মিশে ছিল।
"আপনি আমাকে নিয়ে আজ যে লেখাটা দিয়েছেন, সেটা পড়ে ফেলেছি।
খুব গভীর ছিল, জানেন? মন ছুঁয়ে গিয়েছিল।
তবে আমি চাই না আপনি আমার প্রতি আরও দুর্বল হোন।
তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি—আর কখনও ইনবক্সে কিছু বলব না।"
এটুকু বলেই আবার কল কেটে দিল।
এমন এক অনুভূতি তৈরি হল, যেটা ভাষায় বোঝানো কঠিন।
মনটা যেন হঠাৎই আমার অনেকটা ভার হয়ে উঠল,
মনে হল কিছু একটা হারিয়ে ফেললাম, অথচ কিছুই ছিলও না কখনো!
সন্ধ্যায় যখন অফিস শেষে বাসায় ফিরলাম,
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখি সে এসেছে—
হাতে কিছু খাবারের প্যাকেট।
চোখে মুখে ক্লান্তি, তবুও একরাশ হাসি মাখা মুখে রুমের ভিতরে এলো।
"মা কিছু রান্না করে বাড়ি থেকে এনেছে। তাই ভাবলাম আপনাদের জন্যেও কিছুটা নিয়ে যাই"
কথাটা বলার সময় তার চোখে যে মায়ার ছায়া দেখলাম, সেটা আমি লেখায় প্রকাশ করতে পারব না।
কিন্তু জানেন, আমি তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।
ভেতরের যন্ত্রণাগুলো যেন ফেটে পড়ল হঠাৎ।
বলেই ফেললাম—
"আর আনতে হবে না।
আমি চাই না আপনি আমার বাসায় আসেন।
আমি চাই না আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠুক। আপনি কোন সম্পর্কে এগুলা আনেন, দয়াকরে দূরত্ব বাড়িয়ে দিন। প্লিজ…"
সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার কী জানেন?
আমি কথাগুলো বলেছিলাম আমার স্ত্রীর সামনেই। একরাশ অভিমান নিয়ে, যদিও সেগুলা আমি বলতে চাইনি, হয়তো বলতে চেয়েছিলাম, আপনি আমাকে কেনো বুঝতে পারেন না। মায়া তো ঠিকই করেন, ভালোও তো বাসেন তাহলে এরকম দূরে দূরে থাকেন কেনো। কেনইবা আমার সাথে কথা বলতে চান না, অভিনয় করেন।
তবে সেই কথা গুলো শুধু মনের মধ্যেই রয়ে গেলো। মুখ ফুটে আর বলতে পারলাম না।
সে কিছু বলল না।
শুধু একবার তাকাল—তাতে কোনো অভিমান ছিল না,
ছিল একরাশ হতাশা আর অজানা ক্লান্তি।
তারপর সে নীরবে চলে গেল।
যাবার আগে অবশ্য বললো যে মায়া কাটানোর চেষ্টায় আছে।
আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।
বুঝতেই পারছিলাম না, নিজেকে কেন এমন করে ফেললাম!
আমি কি সত্যিই চাই না, সে আমার জীবনে থাকুক?
না কি শুধু চেয়েছিলাম, সে থাকুক—
কিন্তু নিঃশব্দে, কারও চোখে না পড়ে, কারও প্রশ্নের মুখে না পড়ে?
চেয়েছিলাম ভালোবাসা হোক—
কিন্তু যেন সেটা দোষের কিছু না হয়!
না কি, আসলে আমি নিজের মধ্যেই দ্বন্দ্বে পড়ে গিয়েছি—
কি চাই, কী না চাই—সেই বোঝাটাই হারিয়ে ফেলেছি।
রাতে জানালার পাশে বসে ছিলাম অনেকক্ষণ।
চাঁদের আলো জানালায় পড়ে ছিল,
কিন্তু চোখের ভেজা ভাবটা আড়াল করতে পারেনি।
নিজের অজান্তেই মনে মনে বলছিলাম—
“তাকে যদি একান্তই রাখতে হয়,
তাহলে থাকুক আমার দোয়ায়—দূর থেকে, নিরাপদে।
সে যেন অন্তত জানে,
কেউ একজন আছেন, যে তাকে স্পর্শ না করেও ভালোবাসে।
যে তাকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন দেখেন, যে স্বপ্নে থাকে হাজারো সুখ ভালোবাসা আর শান্তি”
সেই রাতটা আমার জীবনে এক নীরব উপলব্ধির রাত হয়ে থাকল।
ভালোবাসা যে কখনো চাওয়া নয়—
ভালোবাসা কখনো কখনো হয়ে ওঠে কেবল পাশে থাকবার নাম।
তাকে কিছু না বলেও যে প্রতিদিন ভাবি,
তার জন্য চিন্তা করি, দোয়া করি—
এই নিরব ভালোবাসাগুলোই হয়তো সবচেয়ে সত্য।
(চলবে…)
অধ্যায় ১৮: দূরত্বের দেয়ালে হঠাৎ চুপচাপ
সেদিনের পর আর কোনো মেসেজ আসেনি।
না কোনো ফোন, না কোনো ইনবক্সে "আপনি কেমন আছেন?"—
সবকিছু হঠাৎ করেই থেমে গেল।
প্রথমে ভাবলাম, হয়তো ব্যস্ত।
লাইনে আসার সাথে সাথেই আমি প্রতিদিনের মতই কিছু একটা লিখে দিলাম। হয়তো আপনাকে খুব মিস করছি, ইত্যাদি। কিন্ত কোনো উত্তর এলো না।
সে লাইনে আছে, বিভিন্য পোস্ট করছে। অনেকের সাথে কমেন্টেও দুস্টামিও করছে।
কিছুটা অস্থিরতা কাজ করল আমার।
অনেকটা পরে বুঝলাম,
সে নিজেই সব থামিয়ে দিয়েছে।
ফোনে কল দিয়েছিলাম—রিসিভ করেনি।
একটা মেসেজ দিয়েছিলাম, "সব ঠিক তো?"
কোনো উত্তর আসেনি।
একটা ‘Seen’ মার্কও পড়েনি,
মানে—সে দেখেও দেখছে না।
মনটা ছটফট করছিল।
আমি জানি, আমার সেই কথাগুলো ওর মন ভেঙে দিয়েছে।
কিন্তু সেগুলো তো আমি অভিমানে বলেছিলাম, মন থেকে তো বলিনি!
আমি চাইনি সে কষ্ট পাক…
আমি তো শুধু চাইছিলাম—সে বুঝুক,
আমি ওকে চাইলেও সমাজ, সংসার, বাস্তবতা—এসব আমাকে আটকে রাখে।
অনেক টা পর, এক রাতে, ইনবক্সে ছোট্ট একটা মেসেজ এলো।
"আপনি আমায় বার বার ইনবক্সে ডাকেন কেনো?"
হৃদপিণ্ড যেন থমকে গেল।
চোখেমুখে হাজার প্রশ্ন—কী বলব, কী লিখব, কি করে বুঝায় তাকে!
আমি লিখলাম,
“আপনি আমায় এত এত ইগ্নোর কেনো করেন? আপনি জানেন আমি সারাটা দিন খুবই মন খারাপে কাটিয়েছি। আপনার জন্য আমার বুকের ভিতরে এক অজানা অনুভিতি সৃষ্টি হয়েছে। আপনি কেনো আমার সাথে এমন করেন? আপনি কি চান আমি কষ্ট পাই? আমার কষ্টে কি আপনার হাসি আসে? আপনি…”
সে থামিয়ে দিয়ে বললো—
"সেদিন যেসব কথা বলেছিলেন… খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
বিশ্বাস করুন, আমি যে রান্না নিয়ে এসেছিলাম,
তা শুধুই মায়া ছিল না…
ছিল একরাশ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর অপ্রকাশিত অনুভব।
আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন,
তবে আপনি আমাকে দূরে ঠেলে দিলেন—
সেই সত্যিটা মানতেই পারিনি।
ভেবেছিলাম, আপনি শুধু আমার মনের মানুষ,
আর কিছু চাই না।
কিন্তু যেদিন আপনি বললেন—
'আমি চাই না আপনি আমার বাসায় আসেন…
চাই না কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠুক…'
সেদিন মনে হয়েছিল, আমি বুঝি খুব ভুল জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছি।"
আমি অনেকক্ষণ কোনো উত্তর দিতে পারিনি।
মনে হচ্ছিল, চোখের সামনে দিয়ে কেউ ধীরে ধীরে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে,
আর আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।
শেষে শুধু লিখেছিলাম—
“আপনাকে দূরে যেতে বলেছিলাম, কারণ নিজেকে হারিয়ে ফেলছিলাম।
ভেবেছিলাম, এই ভালোবাসা হয়তো অন্যায়।
কিন্তু দূরে গিয়ে বুঝলাম, অন্যায় নয়—অপরাধ নয়—
আপনাকে ভালোবাসা আমার জীবনের সবচেয়ে পবিত্র অনুভূতি। আর যা বলেছিলাম সেদিন সবটাই ছিলো অভিমান।”
সে পড়ল। অনেকক্ষণ কোনো উত্তর এলো না।
পরে শুধু লিখল—
“ভালোবাসা কি শুধুই পাশে থাকার নাম?
না কি দূরে থেকেও কারও জন্য দোয়া করার নাম?”
আমি জানতাম, উত্তর তার কাছে আগে থেকেই ছিল।
সে শুধু নিশ্চিত হতে চেয়েছিল—
আমি এখনও ওকে নিঃশব্দে ভালোবাসি কিনা।
©somewhere in net ltd.